হুমায়ূন মালিক
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের কথাসাহিত্য যাঁদের সাধনায় সমৃদ্ধি অর্জন করেছে তাঁদের মধ্যে মিরজা আবদুল হাই বিশেষভাবে উ‡লস্নখের দাবি রাখেন। কিন্তু তাঁর অবদান প্রায় অনালোচিত থেকে গেছে। কারণ তাঁর মৃত্যুর পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কিছু স্মৃতিচারণমূলক লেখা, পরবর্তী সময়ে বাংলা একাডেমি থেকে তাঁর একটি জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হলেও বস্তুত আমাদের কথাসাহিত্যে তাঁর যে-অবদান তার কোনো মূল্যায়নই হয়নি বলা চলে। ফলত তিনি এখন প্রায় বিস্মৃত লেখকদের কাতারে। অথচ তাঁর বেশকিছু গল্প ও উপন্যাস বাংলা কথাসাহিত্যকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
মিরজা আবদুল হাই পঞ্চাশের একেবারে গোড়ার দিকে সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করলেও স্বাধীনতা-পূর্বকালে তাঁর কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। ছায়া প্রচ্ছায়া ও বিস্ফোরণ উভয় গ্রন্থই প্রকাশিত হয় স্বাধীনতা-উত্তরকালে। অথচ তারও আগে তিনি সার্থক ছোটগল্পকার হিসেবে চিহ্নিত।
১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ছায়া প্রচ্ছায়া। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পরপর লেখকের দক্ষতাপূর্ণ স্বাক্ষর এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে সাড়া জাগায়। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও আসে এই গ্রন্থ প্রকাশের পর। ১৯৭৬ সালেই তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৭৭ সালে লাভ করেন ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’। তাঁর গল্প সম্পর্কে হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তিনি আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ গল্প-লেখকদের একজন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ যথার্থই বলেছেন, মোপাঁসার শক্তি তাঁর লেখায় আছে। তাঁর গল্প অনন্যসাধারণ। তাঁর লক্ষ্যভেদ অর্জুনের লক্ষ্যভেদের মতোই। তিনি পাখি দেখেন না, একেবারে পাখির চোখ দেখেন।’১
ছায়া প্রচ্ছায়ায় ‘মেহেরজানের মা’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘বন্ধনী’, ‘শকুনি’, ‘উত্তরাধিকার’, ‘আকাশ পর্বত মৃত্তিকা’, ‘কিসের বাদ্য বাজে’, ‘ছায়া প্রচ্ছায়া’ ইত্যাদি গল্প স্থান পেয়েছে।
এই লেখকের দর্শন মূলত আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উৎসারিত। এবং এই উৎসধারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যায় সম্পৃক্ত হয়ে প্রবাহিত। তাঁর এ-সত্যকে বিশেষভাবে ধারণ করে আছে ‘মেহেরজানের মা’। গল্পের মূল চরিত্র রকীবা অর্থাৎ মেহেরজানের মা বেনাপোলের একজন খুদে স্মাগলার। ‘রকীবার পেটেপিঠে, শাড়ির নিচে, চটের থলিতে সুপারি বাঁধা, হাতে মবিলের টিন।’ রকীবার পথচলায় বহু বাঁক, বহু ভাংচুর আর চড়াই-উতরাই। ‘প্রাপ্তির হিসাব পাঁচটার গাড়ীতে নাভারণে ফিরলে এখন শুধু ভয়, মারধর জেল ফটকের।’ কিন্তু তবু রকীবার চরিত্র পবিত্রতা, মাতৃত্ব আর সামাজিক মর্যাদাবোধে সমৃদ্ধ। রকীবার চরিত্রে তারও অধিক আরো কিছু আছে, যা কেবল মনোযোগী পাঠকের উপলব্ধির সম্পদ। রকীবা তার মেহেরজানকে বাঁচাতে মরিয়া। তাই ‘আমাদের কোনো ভয় নেই। বিপদে-আপদে তারাই দেখবে’ মেহেরজানের কথা শুনে রকীবা ‘পেট্রোলের মধ্যে জ্বলন্ত দেয়াশলাইর কাঠি।’ শেষ পর্যন্ত মেহেরজানকে সে আগলে রাখতে পারেনি। মেহেরজান স্বেচ্ছায় তাদের শিকার। ‘বেনাপোলে চোখে পড়ল মেহেরকে। চেনা যায় না যেন। নতুন লাল-সবুজ চেক শাড়ি, ছাপার বস্নvউজ। একপোচ পাউডারও হয়তো লাগিয়েছে পুষ্টু মুখের ওপর। চোখ ফেরানো যায় না।’ কিন্তু হেরে যায়নি রকীবা। হেরে যায়নি বলেই মেহেরজানকে সে স্বীকার করতে চায় না। চায় না প্রশ্রয় দিতে। কিন্তু সবকিছুকে হারিয়ে দিয়ে জীবন বড় জয়ী। তাই তো রকীবা কঠোর পারিপার্শিবকতার চরম পরিণতি। রকীবা রুদ্ধ নিশ্বাসে অতিকষ্টে যেন চিৎকার করে উঠল, ‘আমি, আমি মেহেরজানের মা। চিনতে পারছ না।’ এই দোহাইয়ের মধ্যেই গল্পের চরম ট্র্যাজেডি।
‘মেহেরজানের মা’ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্যই অনেক বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয় এবং দেশের বিভিন্ন গল্পসংগ্রহে সম্পাদকরা এটিকেই নির্বাচিত করেছেন।
বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় ‘মেহেরজানের মা’কে চিত্ররূপ দিতে চেয়েছিলেন। শিল্পকে একরূপ থেকে অন্য মূর্তিতে রূপান্তর করা যায় না। তাতে শিল্পমান ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। তাছাড়া শিল্পীর মূল সৃষ্টিকে সেখানে পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় না। ‘মেহেরজানের মা’ বিষয়াঙ্গিক মিলিয়ে এমন একটি গল্প যার চিত্ররূপ দেওয়া সত্যি একটি কঠিন কাজ।
‘শকুনি’ও আমাদের আর্থ-সামাজিক সমস্যা থেকে সৃষ্ট। হাজীবিবি মড়া খুঁজে বেড়ায়। জীবন নির্বাহের আর কোনো পেশা না পেয়ে সে লাশ গোসলের কাজটিই খুঁজে নেয়। আর সেজন্যই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের মানুষের কাছে এই বর্ষীয়সী মহিলা অশুভের ইঙ্গিত।
‘সূর্যগ্রহণ’ গল্পে আনিস মোলস্না হয়ে গেলেন আনিস চৌধুরী। আনিস মোলস্নার যখন কেরানি বা পাঠশালার পণ্ডিত হওয়া, এমনকি ছাতির মাপের কমতির জন্য যুদ্ধে যাওয়া পর্যন্ত কিছুই হলো না, তখন তিনি দর্জির কাজ শিখলেন মহাজনপট্টির এক খলিফার দোকানে। ধরলেন কাপড়ের ব্যবসা। ‘একটা রাজনৈতিক দলের নাম ধরে কাজ হাসিল করা। আজকাল তো রাজনীতিরই দিন।’ এই কাপড়ের ব্যবসা আর রাজনীতির সিঁড়ি ভেঙে আনিস মোলস্নv উঠে এলেন অনেক ওপরে। তার জীবন-ইতিহাস আমাদের সমাজে অনেক বুর্জোয়ার উঁচুতলায় ওঠার ইতিহাস।
‘আকাশ পর্বত মৃত্তিকা’ বস্তুত একটি প্রেমের গল্প। রেজিনা আর মারগালা পাহাড় আমার চোখে এক হয়ে গেছে। গল্পের শুরুতে নায়কের মনে রেজিনাকে গভীরভাবে উপলব্ধির সুর। রেজিনা হয়ে ওঠে আদর্শের মূর্তপ্রতীক। ‘মহীয়সী রেজিনা। দয়া-দাক্ষিণ্য, সহানুভূতি, মনের প্রসারতা সব মিলিয়ে সে মহারানী।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাকি ভাইয়েরও চোখ খুলে গেল। ‘রেজিনাও নেমে এসেছে আর সবার মতো মাটির সমতলে। নিজেকে আর অতটা ছোট মনে হচ্ছে না আমার।’
‘আকাশ পর্বত মৃত্তিকা’ নিছক প্রেমের গল্প বললেও ভুল হবে। কারণ মানুষের মনের মানবিক প্রসারতা এবং সীমাবদ্ধতার প্রতিক্রিয়াই গল্পের চমক এবং পরিণতি।
গ্রন্থের শেষ এবং শ্রেষ্ঠ গল্প ‘ছায়া প্রচ্ছায়া’। কয়সর গাঁয়ের ছেলে। জায়গির এসেছে জিলানি সাহেবের বাসায়। জিলানি সাহেবের স্ত্রী, যিনি খালাম্মা নন শুধু খালা, ‘কর্ণফুলীর মোহনা। সেখানে আদিগন্ত জলোচ্ছ্বাসের মাঝে তরঙ্গের পর তরঙ্গের অন্তহীন আত্মবিলয়ের দৃশ্যে অদ্ভুত মোহময় রোমাঞ্চ।’ মনে হয় এ-বাড়িতে তার মাতৃ অভাব পূরণ হচ্ছে কিন্তু ‘একটি মানুষেরই দুটি ছায়া। অন্যদিকে যৌবন তার চামড়ার নিচে রক্ত কণিকায় প্রতিস্পন্দনে কথা বলছে, গান গাইছে, শিস দিচ্ছে।’ তার দেহজ উত্তাপ তাকে তাড়া করে। খালা তার কাছে ‘পুঞ্জীভূত একরাশ যৌবন এলায়িত অসম্বৃত, উন্মুক্ত, অকপট।’ এদিকে ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে এগোচ্ছিল তাকে অতিক্রম করে একটি মাত্র সংক্ষিপ্ত সংলাপ। মা গল্পের সর্বশেষ লাইন। সঙ্গে সঙ্গে কানে এলো ‘কে রে বাবা, কসু?’ তাঁর প্রায় গল্পেই সার্থক এই চমকটি দেখা যায় গল্পের শেষাংশে। যেমন – ‘আমি, আমি মেহেরজানের মা। চিনতে পারছ না।’
এটি মিরজা আবদুল হাইয়ের গল্পের একটি বিশেষ উ‡লস্নখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
লেখকের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ বিস্ফোরণ প্রথম গল্পগ্রন্থ থেকে সার্থকতর বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর নয়। বরং ছায়া প্রচ্ছায়ার গল্পগুলোর শেষাংশের চমকীয় বিশিষ্টতা এখানে গতানুগতিক ঢালাইয়ে রূপান্তরিত। এই গ্রন্থে ‘নোনতা’, ‘ভেষজ’, ‘ওরা মরে না’ উৎকৃষ্টমানের গল্প। ‘নোনতা’ এবং ‘ওরা মরে না’ দুটি গল্পে বেশ মিল লক্ষণীয়। শাজাদা ও রাজা দুই গল্পের দুই কিশোর নায়ক। উভয় গল্পের মূল উপকরণ আর্থ-সামাজিক রূঢ়তা। শাজাদা হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে উপলব্ধি করে বাবাকে। তাই রোজগার করে টাকা পাঠায়।
রাজা জমা করে মায়ের কাছে; তার স্বপ্ন দোকানের মহাজন হবে। বাড়তি পয়সা লাভের আশায় জাহাজ থেকে লাফিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর মাত্র দুই টাকা তারপর চাঁচুড়ির হাটের জিনিস কিনে তার স্বপ্নের সূচনা হবে। বাড়তি লাভের আশায় চলতি জাহাজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাসপেন্স, অ্যাডভেঞ্চার, থ্রিল অনুভব করে নির্দয় সাহেব।
অন্যদিকে শাজাদা গল্পের ট্র্যাজেডি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নয়, অমোঘ বিড়ম্বনা আর যন্ত্রণায় বেঁচে থাকায়। সোনা মিয়া সেসব মানুষের একজন, যারা নির্দয়ভাবে অন্যকে কাজে লাগিয়ে পয়সা লোটে। শাজাদার পাশের ছেলেরা যখন লেখাপড়া আর খেলাধুলায় মত্ত তখন বিড়ম্বিত বাসনা তাকে কাঁদায়। তারও সাধ বাবার স্বপ্নের মতো হাকিম কিংবা একটা কিছু হবে। কিন্তু ‘আজ তো সে ‘শালা ঘাটু’। খাজাকে ধরতে এখনও অনেক পথ। ধারাপাত, ভূগোল, কতকিছু – খেলার মাঠ অনেক দূর। পরচুলা বস্নাউজ নারকেল মালা আর ঘাঘরা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষ কাছে যেতে পারে না – শুধু সোনা মিয়া, সিপাই আলvদাদ খাঁ এরা ছাড়া।’ সুস্থ-শৈল্পিক পরিবেশের প্রতি যত্নবান লেখক সমকামিতাকে ‘নোনতা’ গল্পে নগ্নভাবে না এনে কেবল আভাসে-ইঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন। ‘চোখ ঠারেই আলvদাদের সঙ্গী অপর সেপাই ঘায়েল। জড়িয়ে ধরতে যায় শাজাদাকে।’ জীবনের নোনতা স্বাদের উপলব্ধি শেষ লাইনগুলোতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
বিষয়বস্তু এবং শৈল্পিকমানের বিচারে ‘নোনতা’ কেবল গ্রন্থেরই শ্রেষ্ঠ গল্প নয়, বরং আমাদের ছোটগল্পের ভুবনে একটি উৎকৃষ্ট সংযোজন।
সর্বকালের এবং সার্বজনীন আবেদনে সমৃদ্ধ ‘রক্তটিপ’ পঞ্চাশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষেতেলেখা। একশ্রেণির নিষ্ঠুর স্বার্থপর মানুষ ছাড়া কেউ যে এটা সমর্থন করে না তা লেখকের বর্ণনায় স্পষ্ট। ‘যে সামান্য কজন যাত্রী ছিল কামরায় তারা নিশ্চিত বাঁচার অধিকার নিয়েই আছে তবু কথা ফুটছে না কারো মুখ দিয়ে, বোবা হয়ে আছে সবাই।’ ‘যে সিঁদুর ছিল এতক্ষণ রক্ষাকবচ এখন তাই টেনে আনবে ঘাতকের দল’ – এখানেই সম্প্রদায়গত তাৎপর্য কী চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে।
‘ভেষজ’ মেঘনার নির্মম ভাঙনের গল্প। বন্যায় তাড়া খাওয়া দিশাহীন মানুষের গল্প। হাজি সাহেবের ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বার্থ উদ্ধার আর রমিজ ডাক্তারের সব রোগে মকরধ্বজ দেওয়ার গল্প। মেঘনাপারের মানুষের ভাঙা-গড়ার এমন শৈল্পিক ইতিহাস সত্যিই বিরল।
‘কেউ জানে না’ গল্পে হাসির খোরাক পাওয়া যায়। স্যুটকেসের ভেতর হয়তো সোনা-দানা, হীরা, জহরত…। নইলে পুলিশের ভয়ে তরফদার সাহেব এত বিব্রত কেন। সব কৃতজ্ঞতাবোধ, আদর্শবোধ মুছে ফেলে জাফর। অথচ স্যুটকেসভর্তি পাথর, টিনের টুকরা আর শ্রীমতী সাহা চৌধুরীর নাম লেখা অ্যালবাম। তার প্রতি পাতায় যুগল বিদেশি নর-নারীর আদিম রূপ। তরফদারের মতো সৎ লোকের এটা চুরি কি যৌনব্যাধি আক্রান্ত হৃদয়ের ফল।
‘বিস্ফোরণ’ গল্পটি যা গ্রন্থের নামগল্প তা শৈল্পিক মানের বিচারে ভালো গল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না। চমৎকার বিষয়বস্তু যা প্রায় তাঁর প্রত্যেক গল্পের সম্পদ তা এখানেও অনুপস্থিত নয়। কিন্তু গল্পটি উপস্থাপনায় স্থূলতার মেদে ভারাক্রান্ত। অতিরিক্ত বিশেস্নষণধর্মিতা এর একটা বিশেষ ত্রম্নটি। তবে এর বিশেষ কিছু অংশ পাঠককে মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। কুমুদিনী শরীরের থাকে থাকে কামনার ঢেউ বইয়ে দিয়ে, এক প্যাঁচে পরা আনকোরা আসমানি শাড়ি। তার চোখের সামনে থেকে আস্ত কুমুদিনী যেন উবে গেছে – শুধু পড়ে আছে প্যাঁচানো সিল্কের মতো সাদা পাড়ের একখানা আসমানি শাড়ি।
গ্রন্থভুক্ত আলোচিত গল্পগুলো ছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর অনেক গল্প প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গল্পের সামগ্রিক ভুবনটি বিবেচনায় রেখে তাঁর গল্পের মূল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শাহেদ আলী বলেন, ‘লেখকের যে আন্তরিকতা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের মধ্যে লেখক যে তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলেছেন তাতে তাঁর গল্পগুলো বাস্তবধর্মী হয়েছে এবং আমি মনে করি, এই বাস্তবতা মিরজা আবদুল হাইয়ের রচনার একটা বড় বৈশিষ্ট্য।’২
লেখকের গ্রন্থাকারে প্রকাশিতব্য তিনটি গল্পগ্রন্থের মধ্যে তর্কে বহুদূর একটি। গ্রন্থের শিরোনামে ব্যবহৃত গল্পটি সন্ধানীতে প্রথম প্রকাশিত হয়। এদেশের সংস্কারাচ্ছন্ন জীবন, পীর, ফকির আর তাদের আস্তানার ইতিহাস এ-গল্পের পটভূমি। ফরিদ আলী ‘দজ্জাল বউ’ তছিরনের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে মানুষের হাতে পীর হয়ে গেল। ভণ্ডামি চলছিল ভালোই; কিন্তু বন্যায় সব ল-ভ- হয়ে গেল। তার আস্তানায় এখন বিরাট দরগা। কিন্তু এমন চমৎকার গল্পে, পঁয়তালিস্নশ লাখ টাকার ট্যাক্স বাঁচাতে লেখকের দরগায় আসাটা জুতসই হয়নি। আরো একটি প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ তবু ভয়ের গল্পগুলো ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গল্পগুলো হচ্ছে – ‘মৃত সৈনিকের স্ত্রী’, ‘আমরা ফুল দিতে যাবো’, ‘হেমমেত্ম বৈশাখী মেঘ’, ‘পাগলা হাওয়া’ এবং ‘তবু ভয়’।
‘মৃত সৈনিকের স্ত্রী’র স্বামী মৃত নয়। রুমা নিমার জন্মদাতা হয়েও নিম্নস্তরের জীব। সীমা চৌধুরী নাটক করেন। রোবটের মতো কাজ করেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। স্বামীর সব অত্যাচার মেনে নেন। কারণ, ‘ও মাই চাইল্ড আই লিভ ফর দি সুইট মাই চাইল্ড।’
আত্মবর্ণনামূলক গল্পে শ্রদ্ধাপূর্ণ হৃদয়ের উচ্চারণ ‘ফুল দিতে যাবো’। ‘ব্রা’র প্রতি মোহে পাগলা হাওয়ায় আক্রান্ত হয় পরানপুরের মফিজউলস্নvর বউ আজিমন। স্বামীর উপহারে পাওয়া ব্রা দিয়ে স্বামীকে প্রহারের ঘটনা সমারসেট মমের দি রেইন নাটকের ফাদারের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
‘বিত্তের দ্বীপে আলাদা’ উচ্চবৃত্তের নিখুঁত ছবি। ‘তবু ভয়ে’ ববির বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সাদিক সাহেবের ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার মাধ্যমে গল্পের সার্থক পরিণতি এসেছে।
‘তবু ভয়’ গল্পটি নিঃসন্দেহে আমাদের ছোটগল্পের ভুবনে একটি উলেস্নখযোগ্য সংযোজন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
মাও সে তুংও স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য যতই প্রগতিশীল হোক না কেন তাতে যদি শৈল্পিক নির্লিপ্ততা ঘটে শিল্পের ভুবনে তার কোনো ঠাঁই নেই। মিরজা আবদুল হাই তাঁর রচনায় কোনো ইজমকে এস্টাবলিশ করতে ব্যস্ত হননি। তিনি তাঁর চিমত্মার ভুবনকে চাষ করেছেন শৈল্পিক ফসলের স্বপ্নকে বাঁচানোর জন্য। স্থূলভাবে কোনো ইজমকে প্রশ্রয় দিলে ‘মেহেরজানের মা’, ‘বাজিয়েছে দামামা’, ‘মৃত সৈনিকের স্ত্রী’, ‘তবু ভয়’ শিল্পের ভুবনে উত্তীর্ণ হতে পারত না।
ছোটগল্পের মতো উপন্যাসেও মিরজা আবদুল হাই তাঁর সূক্ষ্ম দৃষ্টি এবং বস্তুনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার সার্থক স্বাক্ষর রেখেছেন।
প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাস ফিরে চলো পাকিস্তানে আটকেপড়া বাঙালিদের খোলা বন্দিত্ব আর বাদশা-খানদের সোনাদানা, চরস ইত্যাদি নিষিদ্ধ পণ্যের মতো মানুষ স্মাগলিংয়ের দলিল। কিশোরী ঈভুর মতোই সাবের আহমেদ, আলমগীর খান কেউ এতদিনের প্রিয় জিনিসপত্র ছেড়ে দিতে রাজি নন। তবু ছাড়তে হয়েছে সব, মাতৃভূমির ডাকে। ধন-মান-প্রাণ বাজি রেখে আইন ভেঙে প্রচ- শীতে হিন্দুকুশ অতিক্রম যেন বাঙালির আরো এক স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। সুলেমানের বিচার চাওয়া, সব বাঙালির বাড়িতে লেখা কতল, হিন্দুকুশে ঈভুকে চিরদিনের জন্য ফেলে আসার আশঙ্কা ইত্যাদি অজস্র চমৎকার ঘটনার সমাহার ফিরে চলোর পূর্ণতা এনেছে। দি বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীর গ্রন্থ-আলোচনা কলামে জামাল আরসালান ফিরে চলো উপন্যাস সম্পর্কে যথার্থই বলেন, ‘The novel does not confine itself merely to the adventurous but in true nineteenth century tradition of the novel covers a hundred and one different topics which makes the book very interesting. Pakistani families are shown specially in their relationship with Bengalis revealing that in any relationship while race, religion and social status make a difference it is friendliness which is the ultimate basis.’৩
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত সামাজিক উপন্যাস উন্মাদাশ্রম প্রথম প্রকাশিত হয় ঈদসংখ্যা সচিত্র স্বদেশে। কোর্ট-কাছারির চমৎকার একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার মাধ্যমে উপন্যাসটির শুরু। এই কোর্ট-কাছারির প্রভাবই নায়ককে নিয়ে আসে উন্মাদাশ্রমে। এখানে ময়েজুদ্দিন দারোগা শিক্ষিত বউ ফেলে অন্যের বউ নিয়ে আসে। বড় ভাই গাঁজা টানে। চন্দন মেল প্রস্টিটিউট। ‘হাফ ক্র্যাক ক্যাপটেন গার্ল’ বিন্নি মুক্তি নেয় সুহাসের প্রেমে।
নায়কের দৃষ্টিতে সমকামী চরিত্রহীন দুলালও সরল, বিশ্বাসী, বিপদের অভয় আশ্রয়। আরেক উন্মাদাশ্রমে বাদশা মিয়া নামক ঠিকাদার ধর্মীয় লেবাসের
অন্তরালে খলপ্রবৃত্তির লোক। আপন মেয়ে নাজমাকে টোপ ফেলে হানাদার বাহিনীর কাছে। সব ফেলে নায়ক শেষ পর্যন্ত পালাচ্ছে। কিন্তু নাজমা ‘পাগলা গারদের একটি মাত্র সুস্থ আর নিষ্পাপ আত্মা বিবেকের কঠিন নির্মম বেড়াজালে চিরজীবনের মতো বন্দি হয়ে থাকবে। এভাবেই উন্মাদাশ্রম সুখপাঠ্য উপন্যাস হয়েও এক বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক মাত্রা পায়। এই উপন্যাসের আলোচনা প্রসঙ্গে ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, ‘বাস্তবনিষ্ঠা মিরজা আবদুল হাইর জীবনবোধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। এ কারণেই তাঁর সৃজিত কথাসাহিত্যে মানব চরিত্রের বহু বঙ্কিম জটিলতা উন্মোচনের পাশাপাশি জীবনের স্থিরচিত্রিক উপস্থাপনাও সহজলভ্য।’৪
মিরজা আবদুল হাইয়ের তোমার পতাকা প্রথম প্রকাশিত হয় বিচিত্রার ঈদসংখ্যা ’৮১-তে। পরবর্তী সময়ে উপন্যাসটি ’৮৪-তে মুক্তধারা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশের পরপরই তা বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যাঁরা প্রথম ধারার লেখক, যাঁরা যশের জন্য লেখেন তাঁরা বিষয়বস্তু খুঁজে পান না। এ বই পড়ে আমার মনে হয়েছে এই লেখকের বিষয়বস্তুর অভাব কোনোদিন হবে না। তিনি অনেক কিছু দেখেছেন, এবং অভিজ্ঞতাগুলো তাঁর অনুভবের মধ্যে পর্যবসিত হয়েছে।’৫
সমাজ-জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের শিল্পসম্মত উপস্থাপনের জন্য তোমার পতাকা সার্থক সামাজিক উপন্যাসের মর্যাদায় আসীন।
উপন্যাসটি শুরু হয় এভাবে – ‘সেই আগেরকালে, পালে চলা জাহাজের নাবিক চিনত ধ্রম্নবতারাকে, ঠিক তেমনি এ তলস্নাটের লোক চেনে তিনটি নাম। আরোগ্য কুটির, ডক্টর এস কে দাস আর সিস্টার।’ এই তিনটি নামকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে উপন্যাসের বিষয়বস্তু। গ্রামজীবনের মূল তথ্যকেন্দ্র খেয়াঘাট। এই খেয়াঘাট থেকেই তিন নাম আরোগ্য কুটির, সিস্টার আর সুবল ডাক্তারের পরিচিতির বিশেস্নষণের মাধ্যমে উপন্যাসের কাহিনি এগোয়।
‘আরোগ্য কুটির এ অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু।’ আর আরোগ্য কুটিরের কেন্দ্রবিন্দু লিলি বিশ্বাস। যাকে এ-উপন্যাসের নায়িকা বলা যায়। ডাক্তারবাবু তাকে কুড়িয়ে এনেছিল মেডিক্যাল কলেজের সতেরো নম্বর ওয়ার্ড থেকে। একদিন লিলি শওকতের হাত ধরে ঘর ছেড়েছিল। ‘শওকতকে যদি তখন অতটা ভালো নাও বাসত তবু সে ছাড়া গতি ছিল না।’ বাবা রশীদ ফরেস্টারকে হারানোর পর প্রতিভাময়ী লিলি বিশ্বাসের আর তো কোনো উপায় ছিল না। আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিস্ট্রি করেই সে ঘর বেঁধেছিল। কিন্তু যাকে নিয়ে সে ঘর বেঁধেছিল সে অসমর্থ শওকতও একদিন ব্যাধিগ্রস্ত স্ত্রীকে ফেলে পালাল।
চিতলডাঙ্গার লিলি হাঁটতে হাঁটতে এসে শয্যা নিল মেডিক্যালের সতেরো নম্বর ওয়ার্ডে। ডা. রহমান সাধ্যমতো চিকিৎসা চালালেন। তারপর আরোগ্য কুটির। এখানে এসে মহান ব্যক্তিত্ব সুবল ডাক্তারের প্রভাবে লিলি বিশ্বাস হয়ে উঠল ত্যাগী, মহীয়সী। খুঁজে নিল জীবনের মহৎ অর্থকে। ডা. রহমান, মিসেস রহমান, ডা. এস কে দাস, আরোগ্য কুটির – লিলি বিশ্বাস হারিয়ে গেল। ধীরে ধীরে জন্ম নিল সিস্টার। নিঃস্বার্থ সমাজসেবী সুবল ডাক্তারের প্রভাবে লিলি বিশ্বাস হয়ে উঠল ত্যাগী, মহীয়সী। খুঁজে পেল জীবনের মহৎ অর্থকে।
সুবল ডাক্তারের কণ্ঠে জীবনের অন্য এক আমন্ত্রণে তার কণ্ঠনালি বন্ধ হয়ে আসে। ‘তুমি কি চাও না আর দশজন নারীর মত কাউকে ভালোবাসতে, তার ঘর করতে, সমত্মান বুকে ধরতে?’
সুবল ডাক্তার আর লিলি বিশ্বাসের পাশাপাশি সমাজ-সংস্কারক মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর হোসেনকে মিরজা আবদুল হাই এই উপন্যাসে আরো একটি উলেস্নখযোগ্য চরিত্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। গস্নvনিময় অতীতকে অতিক্রম করে এই সেকান্দর হোসেনের হাত ধরে লিলি চলে যেতে পারত জীবনের অন্য ঠিকানায়। কিন্তু তার সামনে তখন সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অসহায় মানুষের আর্তি। সুবল ডাক্তারের আরোগ্য কুটির। ‘ডাক্তারবাবুর স্বচ্ছ শরীরটা সামনে এসে দাঁড়াল। …সিস্টার তুমি চলে গেলে আমার চলে কী করে? আমার আরোগ্য কুটির, আমার স্বপ্ন।’ কিন্তু এখানেই তার চারিত্রিক মহিমার শেষ সীমা নয়। সুবল ডাক্তার যখন তারই জন্য নুরুজ্জামানের গুণ্ডাদের হাতে মার খেল, তখন। তখন তার বুকের ভেতর অনেক রুগ্ণ যুক্তি, অনেক কথা এসে ভিড় করে। তার জন্য ডাক্তারবাবুকে এত কষ্ট সহ্য করতে হবে কেন। তার মতো সমাজের কাছে নীচ ঠাঁইহীন একটি মেয়েকে রেপ করলে কী এমন ক্ষতি হতো।
আরোগ্য কুটিরে আবার লিলির সঙ্গে শওকতের দেখা এবং দুজনের মধ্যে রহস্যময় দেয়াল সৃষ্টি করা মিরজা আবদুল হাইয়ের এ-উপন্যাসের দুর্বল অংশ, যা পাঠকের কাছে পীড়াদায়ক হতে পারে।
সুবল ডাক্তারের ভেতর আমরা এমন একজন সেবককে পাই সমাজে যার তুলনা হয় না। কিন্তু তাকেও মুখোমুখি হতে হয় বহু বাধার, বহু চক্রামেত্মর। পার হতে হয় পারিবারিক, সামাজিক অনেক চড়াই-উতরাই।
আগেই বলা হয়েছে, আরোগ্য কুটির এ-অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। কেন্দ্রবিন্দু উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহেরও। এই আরোগ্য কুটির ছিল একদিন ভোগবিলাসী সামন্তদের ‘নূপুর নিকেতন’। আর এখন নিঃস্বার্থ, উদার সুবল ডাক্তারের হাতে সেবা নিকেতন।
সুবল ডাক্তারকে স্পেশালিস্ট মডেল কিংবা সরকারি ডাক্তারের পাশাপাশি দাঁড় করালে তার চারিত্রিক মহিমা, ব্যক্তিত্বের স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
একজন নারীর যা চাওয়ার তা সুপ্রিয়ারও ছিল। স্বামী সিভিল সার্জন হবে। ছুটিতে বেড়াবে দিলিস্ন, দার্জিলিং, শিলং। জেলখানার ডাক্তার হলে কয়েদিরা হবে হুকুমের গোলাম। কিন্তু সুবল ডাক্তারের কাছে জীবনের অন্য অর্থ। তার আনন্দের উৎস মানুষের সেবায়।
তাই তো সুবল ডাক্তারের হাতে পড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয় সুপ্রিয়ার।
আত্মহননে মুক্তিকামী লিলি বিশ্বাসের প্রতি সুবল ডাক্তার যে আশার বাণী, সান্তবনার কথা উচ্চারণ করেছেন তা থেকে পরদুঃখকাতর, সহানুভূতিশীল মানুষের পরিচয় মেলে। ‘এই সুন্দর পৃথিবীতে এত কাজ… আপনি সহযোগিতা না করলে আমরা কিছুই করতে পারব না। পৃথিবীর কাঠিন্য দেখে সরে পড়বার মতো মেয়ে বলে তো আপনাকে মনে হয় না।’
লিলি বিশ্বাসকে সুবল ডাক্তার শুশ্রূষা দিয়ে, বিশ্বাস দিয়ে ফেরালেন মরণের দ্বার থেকে। তার ‘আরোগ্য কুটির’ তো এরই জন্য। অসহায়, আশাহীন, ভাষাহীন, অসমর্থ মানুষের জন্য। এই আরোগ্য কুটিরই তো তার সবচেয়ে বড় ভালোবাসা, তার দেশপ্রেম।
সুবল ডাক্তারের ভেতর আমরা সমাজের তুলনাহীন এক ব্যক্তিত্বকে আবিষ্কার করি। তবু তার পথে বহু বাধা, আছে কলঙ্ক সিস্টারকে নিয়ে। সিস্টারের জন্য দৈহিক পীড়নেরও মুখোমুখি হতে হয় তাকে।
দুর্নীতিবাজ সরকারি ডাক্তার রোগীদের প্রতারণা করে, তবলিগও করে। এই ডাক্তার আর কুচক্রী নুরুজ্জামানদের চক্রান্ত চলে আরোগ্য কুটির ভেঙে দেওয়ার। কিন্তু সত্যনিষ্ঠ এসডিও সব উপলব্ধি করতে সমর্থ হন।
সুবল ডাক্তার চরিত্রে সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য ধর্ম-বর্ণ-শত্রম্ন-মিত্র নির্বিশেষে অসুস্থদের সেবা – মানবতাবাদী হৃদয়ের ফসল।
আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা তার দেশপ্রেমের একটি দিক; কিন্তু তিনি পাকিস্তানের রক্ষক মেজরকেও বলেছেন, ‘হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ? …এ্যানি পেশেন্ট?’
এই উপন্যাসকে পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত করা যুক্তিসংগত নয়। মুক্তিযুদ্ধ কেবল অধ্যায় এগারো এবং বারোতে এসেছে, এসেছে বর্বরদের হাতে মহান সেবক সুবল ডাক্তারের শেষ পরিণতিতে। উপন্যাসের বিসত্মৃত পটভূমিতে এসেছে অনেক ক্ষুদ্র মহৎ ঘটনাপ্রবাহ। এসেছে গ্রামীণ সাধারণ জীবনের উপাখ্যান। খেয়া পারাপারের নিখুঁততম ছবি। সমাজের কুচক্রীদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এসেছে কেবল শেষ দুটো অধ্যায়ে এবং উপন্যাসের পরিণতি এসেছে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার মাধ্যমে। যখন ঢাকা ছেড়ে লোক পালাচ্ছে – এক কাপড়ে, বউ-বাচ্চার হাত ধরে, কাদাপানি ভেঙে নদী সাঁতরে আসছে গ্রামে। গ্রাম থেকে ছুটছে আরো দূরে। তখন ডাক্তারবাবু বলছেন, ‘ঔষধের বাড়তি প্রয়োজনের দিন তো এসে গেছে সিস্টার। কিছুদিন পরই বুঝবে।’ কিন্তু সেই মহান সেবক ডাক্তারবাবুর লাশ। ‘বুকটা তখনো খুনে রাঙা হয়ে আছে। বুক মাপার নলটা গলার মধ্যে তখনো পেঁচ মাইরা আছে।’
ডা. এস কে দাস মরল কিন্তু শিল্পীর অপূর্ব পোর্ট্রেট সুবল ডাক্তার পাঠকের কাছে অমর। সুবল ডাক্তার বাংলা উপন্যাসে একটি অনবদ্য সৃষ্টি।
সুবল ডাক্তারের মৃত্যুর পরও উপন্যাস এগিয়ে গেছে সেকান্দর হোসেনের ডাক্তারকে বাঁচানোর জন্য ক্যাম্প আক্রমণের বর্ণনার মধ্য দিয়ে। উপন্যাস এগিয়েছে লিলি বিশ্বাসকে নিয়ে, যে-লিলি বিশ্বাস ডাক্তারের দীক্ষায় দীক্ষিত এক মহীয়সী সেবিকা। লিলি বিশ্বাস কি এখন এই পথ ছেড়ে দেবে?
ডাক্তারের মৃত্যুতে সিস্টার অনুভূতিহীন শূন্যতায় সমাহিত। কিন্তু তার দীক্ষাই সিস্টারকে জাগিয়ে তুলেছে। আবার সিস্টার এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের সেবায় – রাতের অন্ধকারকে উপেক্ষা করে। পূর্বদিক তখন একটু একটু করে ফরসা হয়ে আসছে। নৌকাও ঘাটে পৌঁছে যায় এবং সেখানেই তোমার পতাকা উপন্যাসের সার্থক যবনিকা।
মিরজা আবদুল হাই এ-উপন্যাসকে পূর্ণতা দিতে অজস্র সার্থক সুন্দর ঘটনাপুঞ্জের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। যার বিশেস্নষণের প্রয়োজন আছে; কিন্তু সীমিত পরিসরে এর ইতি ও নেতিবাচক সবদিক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশেস্নষণ একটি দুরূহ কাজ।
এ-উপন্যাসে কিছু টুকরো কাহিনি এবং বিশেস্নষণধর্মিতার মেদ যদিও পাঠকের কাছে ত্রম্নটিপূর্ণ মনে হয় না, তবু এটা স্পষ্ট যে, উলিস্নখিত ত্রম্নটিসমূহ না থাকলে সমঝদারদের কাছে উপন্যাসটি আরো মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠত।
বস্তুনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার আলোকে সেকান্দর হোসেন, লিলি বিশ্বাস, ডা. এস কে দাস – এই তিনটি চরিত্রে অবাস্তবতার অলংকারের সমৃদ্ধি চোখে পড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু শিল্প বিচারে ‘সে-ই সত্য যাহা রচিবে তুমি’। ডা. রহমান, মিসেস রহমান, শওকত, লাইজু, এসডিও নুরুজ্জামান, সুপ্রিয়া, আইনুদ্দিন – এরা সবাই হয়তো দক্ষ ক্যামেরাম্যানের সার্থক ফটোগ্রাফ; কিন্তু সেকান্দর হোসেন, সিস্টার, সুবল ডাক্তার শিল্পীর আপনমনের মহিমা মেশানো পোর্ট্রেট।
তোমার পতাকা উপন্যাসের বিশেষ উলেস্নখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এর ঘটনাবিন্যাস, ঘটনা-কাহিনির প্রবল গতিপ্রবাহ। উপন্যাসটির উপস্থাপন পাঠকের মনে এক আশ্চর্য গতিপ্রবাহের সঞ্চার করে। ঘটনাগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত যে, পাঠক যতই অগ্রসর হবেন, আগ্রহও আশ্চর্যভাবে ত্বরান্বিত হবে। অথচ অনেক সার্থক আধুনিক উপন্যাসেও তা নেই। থাকলেও এমনভাবে নেই। এখানেই মিরজা আবদুল হাই অনন্য, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিজয়ী। তোমার পতাকা যেন সেলুলয়েডের ফিতায় উঠে আসা চিত্রনির্মাতার এক উজ্জ্বল শব্দচিত্রায়ণ। এখানে জীবন ও অভিজ্ঞতা অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।
এরপর ১৯৮২ সালে সাপ্তাহিক বিপস্নব পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ঊর্ণনাভ। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই।
রূপক, প্রতীকের ঐশ্বর্যে মিরজা আবদুল হাইয়ের প্রতিভার বিস্ময়কর স্বাক্ষর যমনিস সংবাদ। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক পূর্বাণীতে। মুক্তধারা থেকে তা ১৯৮৪ সালে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
পূরবীতেও রবীন্দ্রনাথ আক্রান্ত ছিলেন জীবন দেবতা আর সৌন্দর্য লক্ষ্মীর। শেষের কবিতায় নায়কের উক্তির মাধ্যমে নিজের এই সীমাবদ্ধতার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। এমনই হয়, কেবল স্থান-কাল-পাত্র আর উপস্থাপনার কৌশল পালটে লেখকরা একই উপহার নিয়ে আসেন। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার অলীক স্থান, কাল, পাত্র-পাত্রী সংবলিত সম্ভাব্য উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর লিখিত এবং পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে (যমনিস সংবাদ) মিরজা আবদুল হাই এমন কিছু নিয়ে এলেন, যা তাঁর সমগ্র রচনাবলি থেকে আলাদা। পাঠকের চোখের সামনে তাঁর প্রজ্ঞার নতুনতর ভুবন খুলে দিলেন।
তাঁর গল্পের শেষাংশে যেমন থাকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের সমৃদ্ধি। তেমনি তাঁর উপন্যাসের সূচনাও একধরনের বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। এর শুরুতেই থাকে মোহ, থাকে সমগ্র উপন্যাসের প্রচ্ছন্ন আবেদন ‘ছোট বেলায় মনটা থাকে কাঁদার মত নরম, ভালো করে যদি একবার কোনো ছাপ তাতে বসে যেতে পারে তাহলে মোক্ষমভাবে আড্ডা গাড়ল, দ্রব্যমূল্য বাড়ার মতো। চাপা দেবার যত চেষ্টাই কর, ঠিক মওকা বুঝে মাথাচাড়া দেবেই। তখন কার সাধ্য দাবায়।’ আর এই ছাপই আজিজকে যমনিস অর্থাৎ ‘যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ নিবারণী সংস্থা’ গঠনের অনুপ্রেরণা জোগায়।
‘রাজনীতি একবার যার মাথায় ঢুকেছে, নাচনেওয়ালি বুড়ির মতো মৃদঙ্গের তালিতে কি সে বসে থাকতে পারে? সেই আজিজ খুলনা সেন্টারের পরীক্ষার্থী বরিশালে সেস্নাগান মেরে বিএটা ঠিকই পাশ করে গেল। হয়তো রাজনীতি সে ছাড়ত না’; কিন্তু ওই সময় ‘অপটু’ হাতে বাবা ঘুষ খাওয়ায় ধরা পড়ে হাজতে গেলেন।
এই সংকটময় মুহূর্তে কানাই মিয়ার সঙ্গে দেখা। ভাগ্য খুলে গেল। এর মধ্যে নিজেকেও সে তৈরি করে নিল। ‘বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং, ফুড প্রসেসিং, সিটি পস্ন্যানিং ইত্যাদির ওপর কয়েকটা শর্ট কোর্স করে সার্টিফিকেট বাগিয়েছে।’ সে, পরিকল্পনামতো কাজও এগোল। তাঁর সারাজীবনের স্বপ্ন যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ এবং কুকুর আর মানুষের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টির ব্যাপক ভূমিকা নেওয়া হলো। এক আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, জাতিসংঘের প্রতিনিধি এবং সব প্রচারমাধ্যমের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ‘গণশৌচাগার’ উদ্বোধন করলেন।
‘যমনিসে’র জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আনা হলো। কিন্তু মি. আজিজ রহমানও জানে, ‘এদের সঙ্গে অত্যন্ত ট্যাক্টফুলি চলতে হবে। এরা হচ্ছে ভীমরুলের জাত। চাক বেঁধে থাকে, ঝাঁক ধরে কামড়ায়। ভীমরুলের কামড়ে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।’
‘যমনিস’ শিল্প-সংস্কৃতিতেও হাত দিলো। ছবিও হলো। নায়িকা ‘প্রচ- যৌন আবেদনময়ী জিপসি মেয়ে। মাথায় উজবেগি কায়দায় সিল্কের স্কার্ফ, বিপুল সাইজের উদ্ধত আর তীক্ষ্ণাগ্র স্তন যুগল মাত্র চুমকি ও আয়নার টুকরো বসানো দামি কালো মখমলের কাঁচুলির আবরণে ঢাকা।’
এভাবে লেখক নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন দেশের নির্যাতক শ্রেণি, আমাদের রাষ্ট্রীয় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবন।
এই উপন্যাসে তিনটি প্রধান নারী-চরিত্র ফাতেমা, মনিকা এবং পলি। মনিকা ও পলি আধুনিকতার ছাঁচে ঢালাই। অন্য বিবেচনায় পলি মুক্ত। স্বামীহীন বিত্তবান বহুচারিণীর প্রতীক। মনিকা ও ফাতেমা বৃত্তাবদ্ধ। মনিকা পদস্থ কর্মচারী বা বুর্জোয়াদের অফিস উপপত্নীর প্রতিনিধি। ফাতেমা বেগম মি. রেহমানের স্ত্রী, সাধারণ গৃহবধূ। ফাতেমা বেগমও টের পান তার মতো রেহমানের বিপরীত রক্তস্রোতের অতলামেত্মও নস্টালজির ফল্গুধারা বহমান।
নায়ক কালিন্দীর মজাদীঘির ঘাটে স্নানরতা পানি দূষণকারী নারীদের দেখেছিলেন যে বায়নোকিউলারে তার দুটি চোখে স্থান নিয়েছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর দূরদর্শিতা। তারই সুদূরপ্রসারী ফলে হয়তো রেহমান আজ বিত্তের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্মানের সিঁড়িতে।
কিন্তু যমনিসের পতন ঘটল। যমনিসের করণিকদের খেতে হলো বহু নাকানি-চুবানি, জেল-জরিমানা। কোথা গেল সেই ‘গণশৌচাগার’। ধসে পড়া ছাদ আর দেয়াল। সিলোফেন আর চটের গোঁজামিল। উদ্বাস্তু আর ভিখারির আস্তানা। সামনে দু-তিনজন হাত-পা-চক্ষুবিহীন করুণাপ্রত্যাশী।
কিন্তু এমন হলো কেন! ‘তার নিজের নিয়তেই তো গড়বড় ছিল। না হলে কি শৌচাগারগুলো কুষ্ঠাশ্রমে পরিণত হয়! সেই কুষ্ঠ রোগী বৃদ্ধা! স্বামী-ছেলে সবার কুষ্ঠ হচ্ছে। নাকি সারাদেশটাকে কুষ্ঠরোগে ধরেছে।’
এখন মি. রেহমান চলে যাচ্ছেন কিংবা বলা যায় পালাচ্ছেন। কিন্তু ‘গাছপালা, ঘাস, পানি সব তাকে ধরে রাখতে চাইছে। কিন্তু ধরতে পারছে না। অনেকগুলো হাত অনেক লম্বা হয়ে তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। একটা হাত যেন তাকে প্রায় ধরেই ফেলেছে। এ-হাতে আঙুল নেই একটাও। সমস্ত দেশটাই যেন একটা হাত হয়ে গেছে। এ-হাতের পেছনের মানুষটাও দৌড়াচ্ছে। নাকে-মুখে মাংস নেই।
গায়ে কাপড় নেই। স্তন দুটো ঝুলে আছে। হ্যাঁ, এই আমাদের মায়ের ছবি তথা মাতৃভূমির ছবি। রেহমানের মতো সমত্মানেরা যাকে কুষ্ঠরোগী বানিয়ে ফেলে যাচ্ছে। এরকম ট্র্যাজিক বর্ণনার মাধ্যমে উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটেছে।
সাপ্তাহিক বিচিত্রার লেখালেখি কলামে মাহমুদ শফিক যমনিস সংবাদের উপস্থাপন কৌশল সম্পর্কে বলেন, ‘লেখকের ভাষা নিরলঙ্কার, নির্ভার। ফলে তিনি যা বলতে চান, তা পাঠকদের কাছে সহজে পৌঁছে যায়। পরিবেশ বর্ণনার মাধ্যমে তিনি উপন্যাসকে আড়ষ্ট করে তোলেননি। বরং চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বর্ণনার মাধ্যমে উপন্যাসকে পাঠকদের কাছে সহজসাধ্য করে তুলেছেন। আর মিরজা আবদুল হাইয়ের এখানেই নিজস্বতা।’৬
কৃষান চন্দর, সাদাত হাসান মান্টো, খাজা আহমেদ আববাস প্রমুখের লেখার মতো যমনিস সংবাদও মিরজা আবদুল হাইয়ের আন্তর্জাতিক খ্যাতির সৌভাগ্য লাভের স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
যমনিস সংবাদ অভিনব বিষয়ের পাশাপাশি সফল নিরীক্ষার জন্য বাংলা উপন্যাসে একটি উ‡লস্নখযোগ্য সংযোজন।
তথ্যনির্দেশ
১. ‘কথাশিল্পী মিরজা আবদুল হাই’, দৈনিক বাংলা, সাহিত্য
সাময়িকী, ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪।
২. প্রাগুক্ত।
৩. Jamal Arsalan : Books, The Bangladesh
Observer, 14 March 1982.
৪. ভীষ্মদেব চৌধুরী, ‘মিরজা আবদুল হাই’, বাংলা একাডেমি,
ঢাকা, ফেব্রম্নয়ারি ১৯৮৯, পৃ ৯৬।
৫. ‘কথাশিল্পী মিরজা আবদুল হাই’, দৈনিক বাংলা, সাহিত্য
সাময়িকী, শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪।
৬. মাহমুদ শফিক, যমনিস সংবাদ, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১৩ বর্ষ,
১৭ সংখ্যা, ৫ অক্টোবর ১৯৯৪, পৃ ৪২। r
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.