আবুল মনসুর
এক
কিছু আলিঙ্গন বাকি থেকে গেল
মনে হয়েছিল সব কাজ সাঙ্গ করে এসেছি বুঝি
করতল খালি করে মিটিয়েছি সব পাওনা-দেনা সঞ্চয় ও পুঁজি
তবু কিছু আলিঙ্গন সারা হয়নি তো
রয়ে গেছে অলক্ষ্য অপেক্ষায় হারানো ছেলেবেলার মতো
চলে যেতে হবে তবু
সর্বংসহা প্রিয়তমার হাতের আঙুল থেকে হাত যাবে ছুটে
সন্তানেরা, তাদের পরিবার নিয়ে
যুগান্তরের তীব্র স্রোতের টানে ভেসে যাবে নিজেদের যথাস্থানে
প্রজন্ম বদল হবে, পৃথিবীও বদলাবে আদিগন্ত
বৃথা আলিঙ্গনে না বেঁধে তাদের যেতে দিতে হবে
রয়ে যাবে শুধু মহাকাশ অনন্ত বিস্তারে ছেয়ে
মেঘেদের লুটোপুটি আর তারায় তারায় উৎসব মাখামাখি
এইসব অনাদিকালের মায়া আরেক অনাদিকালের দিকে বয়ে যাবে
তাদের বিবশ আলিঙ্গনে কোনোখানে আমারও আভাস রয়ে যাবে।
দুই
সন্তব্ধ কাচজল ভেঙে যায় আঙুলের ছোঁয়ায়
নিজেকে দেখি ভাঙাচোরা আয়নায় প্রতিবিম্বের মতো
তবু আমি ঠিক চিনে নিই লোকটাকে
সেই চুল মাথাভর্তি কাঁচাপাকা এত বয়সেও, অনেকের হিংসের কারণ
একটি ভুরু কালো আর একটিতে সাদার প্রাধান্য – কী বিব্রতকর।
বাঁ-গালের জন্মসাথি পুরনো আঁচিলটিও আছে
আমার প্রতিটি দাঁত আমি চিনি, ট্যারাবেঁকা – তবু চিনি
আমার শরীরের প্রতিটি তিল-জড়ুল আমার চেনা
হাঁটুর নিচে পুরনো ক্ষত স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেছে
হাতের দশটি আঙুল প্রতিটির বৈশিষ্ট্য রেখেছি চিনে
ডানহাতের মধ্যমায় কলমের কালশিটে –
অর্থহীন দিনযাপনের খাতা লিখে লিখে।
আরো কত কত আয়োজন আমাকে আমি করে তুলবার কারখানায়
এর সবকিছু ভাঙা আয়নায়ও চিনে নিতে পারি আমি
এরা সব খুলে খুলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে চলে যাবে আমাকে ছেড়ে
আমাকে ছাড়িয়ে, নির্নিমেষ অন্ধকারে বয়ে চলা স্রোতস্বিনীর পানে –
আমি কি শুধুই নার্সিসাস ফুল হয়ে ফুটে রবো আদিম জলের মাঝখানে।