কবি

দিলারা হাফিজ

 

আমি কবি

যখন আমিও থাকবো না

সকরুণ এ-বাংলায়

বিজয়ের তারাবাতি তখনো

জ্বলবে এই আকাশ পাড়ায়;

শিশুদের অফুরান হাসিতে

ঝরবে পতাকার তীব্র লাল

সবুজ দ্বীপের মতো আশা

জাগানিয়া সতত ষোলই ডিসেম্বর

বুকের গভীরে খুব বাজাবে খঞ্জনা,

আমার শৈশবে ভর করে নেচে যাবে

ভবিষ্যৎ সূত্রধর অহম বালক;

 

আমি কবি

যখন আমিও থাকবো না

বিজয়ের তারাবাতি তখনো

জ্বলবে এই আকাশ পাড়ায়;

আরিচার ঘাটে ঘাটে

কামার-কুমার-জেলে আর মাঝি মিলে

শক্ত হাতে ফের বেঁধে দেবে

প্রত্যাশার স্বপ্নতরী,

পদ্মার পাগলপারা জলে মাধুরী

মদিরা ঢেলে দেবে ঢেউ

শিশিরে ডোবানো চাঁদ প্রদীপের

মতো জ্বলে পৌষের মায়ায়,

মরিচা বাতির নানা উজ্জ্বলতা

নিয়ে বিস্মৃত কার্নিশে জাগে

চারশত বছরের প্রাচীন নগর

বঙ্গের রাজন্য এক রাজধানী

ঢাকার শহর,

 

আমি কবি

যখন আমিও থাকবো না

বিজয়ের তারাবাতি তখনো

জ্বলবে এই আকাশ পাড়ায়;

রাত্রির বিভূতিময় এই রূপে

রঙে কবরের

ঢাকনারা আজ খুলে যায় দ্রম্নত

যে যার মতন,

মা-বোনকে সঙ্গে নিয়ে তারা

আসে বিজয়ীর বেশে;

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চেনা পথে

হেঁটে যেতে যেতে

তিরিশ লক্ষের কণ্ঠে শুনি সেই

অমৃত সংগীত

বিহবল মনোরথে সারারাত

জেগে শোনে তাঁরা

লালনের গান – ধুলোমাখা যার

সাধ

 

আমি কবি

যখন আমিও থাকবো না

বিজয়ের তারাবাতি তখনো

জ্বলবে এই আকাশ পাড়ায়;

তখনো আমার নানা রং ইচ্ছের পাখিরা

ডানা মেলে দেবে জানি তুমুল হাওয়ায়

আর স্বপ্নগুলো ফের

সুন্দরবনের হরিণের মতো

আদিগন্ত ছুটে ছুটে বেড়াবে চঞ্চল,

সমুদ্র-মাটির মর্মে ভেজা

আকাঙক্ষার মায়াজাল।

 

আমি কবি,

যখন আমিও থাকবো না

সকরুণ এ-বাংলায়

বিজয়ের তারাবাতি তখনো জ্বলবে

এই আকাশ সীমায়।

 

২৮/১১/১৮ ধানম–, ঢাকা