কিস্সা বলেন শেহ্রজাদে

রবিশংকর বল

 

\ ৯ \

 

ধ্ব ংসসত্মূপ-প্রায় একটা বাড়ি।

উইয়ে-ধরা কাঠের ছোট গেট খুলে ঢুকতে হয়। সামনে ছোট একফালি বাগান ছিল একদা, এখন জংলা গাছ আর কাঁটাঝোপে ভরা। একটা গিরগিটি অনেকক্ষণ রঘুপতির চোখের দিকে তাকিয়ে স্থির বসেছিল; তারপর ঝোপের ভেতরে হারিয়ে গেল।

বাড়িটার পস্নাস্টার উঠে গিয়ে পোকা-ধরা, ক্ষয়ে-যাওয়া দাঁতের মতো ইট বেরিয়ে আছে। এরকম এক মুখগহবর কোথায় যেন দেখেছিল রঘুপতি। মনে হয়েছিল, সেই গহবর থেকে কিলবিল করতে করতে পোকারা বেরিয়ে আসবে। হ্যাঁ, মনে পড়ছে। লোকটা একটা বাক্স নিয়ে দাঁত থেকে পোকা বার করার জন্য ঘুরে বেড়াত। তার বাক্সের ভেতরে ছোট ছোট শিশিতে নানারকম, হরেক রঙের তেল, তুলো, শন্যা, আরো কী সব যন্ত্রপাতি থাকত। লোকটা তার হাত চেপে ধরে বলেছিল, ‘একবার হাঁ করুন, দেখে দিই। ভয় পাবেন না স্যার। পোকারা কখন ঢুকে পড়ে মানুষ বুঝতেও পারে না।’ রঘুপতি দেখেছিল, লোকটার নাক-কানের ফুটো দিয়ে সারি বেঁধে পিঁপড়ে ঢুকে যাচ্ছে। লোকটা কি মরে গিয়েছিল? অনেক অতৃপ্ত আত্মার মত এই শহরে ঘুরে বেড়াত?

তেমনই মনে হলো বাড়িটাকেও। যেন এক অতৃপ্ত আত্মা তার সমূহ ধ্বংস নিয়ে বন্দরে নোঙর করা একটা ভাঙা জাহাজের মত দাঁড়িয়ে আছে, যে আর কখনো বড় নদীতে, সমুদ্রে পাড়ি দেবে না। তাকে ঘিরে ঘন হয়ে উঠেছে শ্যাওলা, বিষাক্ত লতাপাতার সংসার আর আশ্চর্য সব প্রাণী সেই জঙ্গলের ভেতর থেকে উঁকি মারছে; যেন তারা হিয়েরোনিমাস বশ্-এর ছবি থেকে বেরিয়ে এসেছে।

বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে রঘুপতি বিড়বিড় করে বলছিল :

কালোয়ার আসে, কয়লাখনির মাফিয়া আসে, আবার ভদ্র গৃহস্থ পরিবারও আসে, দেখে যায়, ভাবে বাড়িটা কিনলে লাভ ছেড়ে লোকসান নেই। জানলা দরজা সব বন্ধ, তালামারা, বারান্দায় শুধু সেই ভোলা কুকুরটা শুয়ে থাকে, দেখে, কী যেন বলতে চায়। লোকজন সিঁড়ি পর্যন্ত এগোতেই – ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছে নয়নে নয়নে’ – তালমানলয়ে স্বর বসিয়ে-বসিয়ে গেঁথে-গেঁথে খেলিয়ে-খেলিয়ে সুমিষ্ট একটি নারীকণ্ঠ গান গেয়ে ওঠে। গাছপালা-ভোলা কুকুরসমেত সমসন্ত বাড়িটা দুলতে-দুলতে স্থির সমাধিতে চলে যায়। আগন্তুকের দল চার কদম এগিয়ে মোহাবিষ্টের মতন চারদিকে তাকাতে-তাকাতে থমকে যায়। হঠাৎ মাঝপথে গানটা থামিয়ে সেই নারীকণ্ঠ উঁচুগলায় বলে ওঠে : এ-বাড়ি বিক্রি হবে না, ভেতরে আমি থাকি, চিরদিন থাকব, তোমরা যাও।

কে কথা বলে? কে আছে? কে চিরদিন থাকবে?

বাসন্তবিক, একটা কুকুর তখন মুখ তুলে রঘুপতিদের দিকে তাকিয়ে আছে। লোলচর্ম, ঘেয়ো, বৃদ্ধ এক কুকুর, মুখ থেকে লালা ঝরেই যাচ্ছে, চোখ ঘোলাটে। মাঝে-মাঝে ডেকে উঠছে, কিন্তু কেমন কান্নাজড়ানো গলায়।

– এই যাঃ – যাঃ – যা বলছি – । হাত-পা নেড়ে কুকুরটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করে সিন্দবাদ। কিন্তু কুকুরটা নড়ে না জায়গা থেকে। – আচ্ছা, ঠ্যাঁটা কুকুর দেখছি।

– ওকে তাড়ানো তোমার কম্মো নয়। সিঙ্গম বাঁকা হেসে বলে।

– কেন? কেন?

– তা ও থাকলেই বা ক্ষতি কী?

– ঘেয়ো কুকুর একটা। বলতে বলতে একদলা থুতু ফেলে সিন্দবাদ।

– আয়নায় নিজেকে দেখেছ?

– কী দেখব?

– তুমিও তো ঘেয়ো।

-কোথায় ঘা? কোথায়? দেখাও-

-সব কি আর দেখা যায়? সময় কত ঘা রেখে যায় শরীরে – কত পুঁজ-রক্ত –

রঘুপতি বিরক্ত গলায় বলে, ‘কিন্তু তুমি আমাদের কোথায় নিয়ে এলে সিন্দবাদ?’

– কেন? চেয়ে দেখুন – সামনেই তো কিস্সামহল। সিন্দবাদ হাসি হাসি মুখে বলে।

– এই ভাঙাচোরা বাড়িটা কিস্সামহল?

– শেহ্রজাদে যদি সব কিস্সা ভুলে যেতে পারে, তবে এ-বাড়ি কেন কিস্সামহল হবে না, হুজুর?

– কেউ থাকে এখানে?

– আসুন না, আমার সঙ্গে। সিন্দবাদ বাড়ির দিকে এগোতে থাকে।

এমন সময় একটি জানলা খুলে যায়। রঘুপতি দেখল, জানলা-জড়িয়ে অপরাজিতার লতায় নীল ফুল ফুটে আছে। তারপর এক বৃদ্ধার মুখ ভেসে উঠল জানলায়। সেই মুখে আকর্ণ হাসি; সময়ের কত রকম কাটাকুটি খেলা। বৃদ্ধা প্রায় চিৎকার করে ওঠে, ‘দাদা এলি? আমাকে মেলায় নিয়া যাবি না?’

– কে উনি? রঘুপতি কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে।

– চিনতে পারলেন না? সিন্দবাদ চোখ বড় বড় করে তাকায়।

চেনা-চেনা মনে হয়, কিন্তু বৃদ্ধা কে, নাম কী, কিছুই মনে পড়ে না রঘুপতির। তারও কি মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল? মৃত স্নায়ুকোষেরা আর কেউ কাউকে খবর পাঠাতে পারছে না?

সিন্দবাদের সঙ্গে দরজার সামনে এসে দেখল, ধূলিমলিন, অস্পষ্ট, মাকড়সার জাল-ছড়ানো ট্রেনের তালিকার একটি বোর্ড ঝোলানো আছে। এটা কি কোনো স্টেশন? সিন্দবাদের এই কিস্সামহল? নাকি সিন্দবাদ কোনো জাদুর খেলা দেখাচ্ছে? কয়লার ইঞ্জিনওয়ালা রেলগাড়ি ছাড়ার ঝকঝক শব্দ, হুইসল্ শুনতে পেল রঘুপতি।

রেলের সময়সারণির দিকে অভিনিবেশে তাকিয়ে রইল রঘুপতি :

সময়               গন্তব্য                        পস্ন্যাটফর্ম নং

৪-৩০              খুলনা                                ৭

৪-৪০               কৃষ্ণপুর                             ৫

৬-৩৫             চাটগাঁ এক্সপ্রেস                    ৬

৭-৪৫              শিলিগুড়ি                           ৬

১০-০০            সুরমা মেইল                       ৫

১১-৩০            গোয়ালন্দ                           ৫

১৩-০০            আসাম মেইল                      ৫

১৩-৩০            বরিশাল এক্সপ্রেস                 ৭

১৪-২৫             লালগোলাঘাট                     ৬

১৮-৩০            খুলনা                                ৫

২০-৩৫            লালগোলাঘাট                     ৬

২১-১০             ইস্টবেঙ্গল এক্সপ্রেস              ৫

 

এই সারণি তাহলে স্বাধীনতা-দেশভাগের আগের? শিয়ালদহ স্টেশন থেকেই তো ছাড়ত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের এসব গাড়ি। বাবার মুখেই শুনেছিল রঘুপতি। দেশভাগের অনেক আগেই বাবা-জেঠারা কলকাতায় চলে এসেছিল। বাবা কাপড়ের গাঁটরি কাঁধে ঝুলিয়ে শহরে ঘুরে-ঘুরে শাড়ি-ধুতি-জামা-ফ্রক বিক্রি করতেন। আর জেঠার ছিল যাত্রার নেশা। কাব্যসংলাপ বলার সময় উত্তেজিত হয়ে পড়তেন। যাত্রার একেক দলে নাম লিখিয়ে কয়েক জায়গায় পালা করে ফিরে আসতেন। কোনো দলেই নাকি বেশিদিন টিকতে পারতেন না।

খুলনা-চাটগাঁ-গোয়ালন্দ-বরিশাল। শব্দগুলো মাথার ভেতরে মৌমাছির মতো ভোঁ ভোঁ করে পাক খেতে থাকে। তারা হুল বিঁধিয়ে চলেছে। দুই হাতে মাথা চেপে ধরে রঘুপতি।

– কী হলো, জনাব? মাথাব্যথা করছে? সিঙ্গম বলে।

হতচকিতের মতো সিঙ্গমের দিকে তাকায় রঘুপতি। ক্লান্তস্বরে বলে, ‘ট্রেনের টাইমটেবিলটা দেখো’ –

– কোথায়?

-ওই যে ঝুলছে –

– যেমন এই বুড়ো সিন্দবাদ, তেমন আপনি। ভাঙা বাড়ির দেয়ালে ট্রেনের টাইমটেবিল দেখতে পাচ্ছেন? সিঙ্গম হেসে ওঠে।

– কে কী দেখবে, তুমি ঠিক করে দেবে নাকি? সিন্দবাদ ঝাঁঝিয়ে ওঠে। রঘুপতিকে বলে, ‘কী দেখছেন হুজুর?’

– সাত নম্বর পস্ন্যাটফর্ম থেকে দুপুর দেড়টায় বরিশাল এক্সপ্রেস ছাড়বে সিন্দবাদ। রঘুপতি আচ্ছন্ন স্বরে বলে।

– সে তো ঠিকই বলেছেন।

– তুমি দেখতে পাচ্ছো?

– দেখব না কেন? আপনি কি বরিশাল এক্সপ্রেসে চাপতে চান, হুজুর?

রঘুপতি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। – তাহলে মন্দ হতো না। আমার একবার খুব বরিশাল যেতে ইচ্ছা করে। মুনিনাগ গ্রাম। শুনেছি, বরিশাল শহর থেকে অনেক রাস্তা, নদী, খাল-বিল উজিয়ে যেতে হয় সেই গ্রামে। এখন নাকি স্বরূপকাঠি উপজেলার সারেংকাঠি ইউনিয়নে। পুবদিকে সন্ধ্যা নদী। উত্তরে সোহাগদল গ্রাম, দক্ষিণে বাটনাতলা।

– হুজুররা কি জমিদার ছিলেন? সিন্দবাদ দুহাত কচলায়। সিঙ্গম হেসে ওঠে।

– হাসছ কেন? সিন্দবাদ কপট রাগ দেখায়।

– এপারে যারা উদ্বাস্ত্ত হয়ে এসেছে, সবাই বলে, তাদের জমিদারি ছিল। তাহলে ওপারে কত জমিদার ছিল? সিঙ্গম আবার হেসে ওঠে।

– হুজুরের চেহারা দেখেই বোঝা যায়, শরীরে জমিদারি রক্ত বইছে। রঘুপতির দিকে তাকিয়ে সিন্দবাদ বলে।

জানলা দিয়ে আবার বৃদ্ধা মুখ বাড়ায়। ফোকলা দাঁতে বলে, ‘দাদা মেলায় নিয়া যাবি না?’

আমি এই বৃদ্ধার দাদা? রঘুপতি ভাবল। কোন মেলায় নিয়ে যাব? কখনো কি তাকে মেলায় নিয়ে গিয়েছিলাম? কিন্তু এই বৃদ্ধা কে? চেনা চেনা মনে হয়, যেন ঘষা কাচের ভেতর দিয়ে দেখা দৃশ্য। এই সিন্দবাদ যেন তাকে এক কৃষ্ণগহবরের ভেতরে ঠেলে ফেলে দিয়েছে।

শোনো সিন্দবাদ। নিজের সঙ্গেই কথা বলে রঘুপতি, আমরা জমিদার ছিলাম না। মুনিনাগ গ্রামে গেলে পূর্বপুরুষের ভিটেও দেখতে পাব না। আমার ঠাকুরদা ছিলেন জমিদারের গোমস্তার সহকারী। গোমস্তাবাবুর সঙ্গে খাজনা আদায়ে যেতেন, হিসাবপত্র দেখতেন। এক রাতে খাজনা আদায়ের কাজ সেরে তাঁরা নদীপথে গ্রামে ফিরছিলেন। তখনই নৌকায় ডাকাত পড়ে। গোমস্তাবাবু আর ঠাকুরদাকে খুন করে তাঁদের কেটে জলে ভাসিয়ে দেয়। দুটি মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি। নিশ্চয়ই বড় বড় মাছ আর জলের পোকাদের খাদ্য হয়েছিলেন তাঁরা। আমার বাবা তখন ঠাকুমার গর্ভে, সাত মাসের ভ্রূণসন্তান। জেঠা ও পিসি তখন বালক-বালিকা। ঠাকুমা তাদের হাত ধরে বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠলেন। ছেলেমেয়ের খাওয়া-দাওয়া আর তাদের বড় করার জন্য উদয়াসন্ত খাটতে হতো ঠাকুমাকে। তেরো-চোদ্দো বছর বয়স হতেই বাবা তার দাদার সঙ্গে চলে এলো কলকাতায়। নিশ্চয়ই এখানে গ্রাসাচ্ছাদনের কোনো উপায় পাওয়া যাবে, কোনো কাজ মিলবে। তারপর মা-বোনকে নিয়ে আসবে। কিন্তু ঠাকুমা এ-শহরে আসেননি। বরিশালেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাবা খবর পেয়ে গিয়েছিলেন।

‘বরিশাল এক্সপ্রেসে চেপে?’

জানি না, সিন্দবাদ। হয়তো গোয়ালন্দ গিয়ে অনেক দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তাকে মুনিনাগে পৌঁছতে হয়েছিল। জেঠা তখন কোনো যাত্রাদলের সঙ্গে নিরুদ্দেশে। মায়ের পারলৌকিক কাজকর্ম সেরে তার দিদিকে নিয়ে শহরে চলে এলেন বাবা। শিকড় চিরদিনের মতো ছিঁড়ে গেল। বাবা আর কখনো বরিশাল যেতে চাননি, সিন্দবাদ। কেন, আমি জানি না, কখনো জিজ্ঞাসা করা হয়নি। হয়তো জন্মের আগেই পিতৃহীন, মামাবাড়িতে অবহেলায় মানুষ হওয়া ছেলেটির কোনো নাড়ির টান ছিল না বরিশালের প্রতি। মা আর আমার দাদু-দিদিমার মুখে শোনা বরিশালের কথা শুনে শুনে কী এক অদম্য টান তৈরি হয়ে যায় আমার, যেন সেই জলজঙ্গলের দেশেই জন্ম হয়েছিল আমার।

বরিশালের ছবি আমি প্রথম দেখি আমাদের এক কবির লেখায়। তাঁর মৃত্যুর পর খুঁজে পাওয়া উপন্যাসে বরিশাল কখনো হয়ে গেছে জলপাইহাটি, কখনো বাসমতী। কুসুম-কুমারী – তাঁর মা সম্পর্কে একটি লেখায় তিনি লিখেছিলেন, মনে পড়ে বরিশালের শীতের রাতগুলো; যখন খুব ছোট ছিলাম, প্রথম রাতেই চারদিক নিসন্তব্ধ হয়ে যেত – আমাদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া শেষ হতো। বাবা বাতি জ্বালিয়ে অনেক রাত অবধি লিখতেন। টের পেতাম মা রান্নাঘরে আছেন। সংসারের শেষ মানুষটির খাওয়া-দাওয়া সাঙ্গ হলে তবে তিনি ঘরে ফিরতেন। কিন্তু যত রাতই হোক-না কেন, মা ঘরে না ফিরলে দুচোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসলেও ঘুম প্রতিরোধ করে জেগে থাকতে চাইতাম। মা ঘরে এলে তবে ঘুমোব। খুব দেরিতে আসতেন, চারদিকে শীতের রাত তখন নিথর, নিসন্তব্ধ; আমাদের বাড়ির থেকে খানিকটা দূরে নারিকেলবীথির ভেতর থেকে বাজকুড়ুল পাখি ডাকত, প্রহরে প্রহরে সেই পাখি দুটো – বরিশালের শীতের শিয়রে অনন্ত অন্ধকারে দেবযানী আত্মাদের সঙ্গে। মা ঘরে এসে ঘুরতেন-ফিরতেন এবং সেবা করতেন – দূরে পাখির ডাক – আমি এখনো জেগে আছি কেন – কতদূর কী পড়াশোনা করেছি জিজ্ঞেস করতেন। ঘুমিয়ে পড়তে বলতেন। বাইরে পৃথিবীর অন্ধকার – অঘ্রাণ-পৌষের শীত।

আবার ধরো একটা গল্পে… সকালবেলা গিয়ে স্টিমারে দেশের স্টেশনে পৌঁছোয়। স্টেশনে নেমেই সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটা চোখে পড়ে -ফাল্গুন মাসেই সেটা ফুলে ভরে যায় –

একদিকে একটা ডালপালায় মসন্ত বড় শিমুল গাছ – মাঘের শেষেই নীল আকাশের মাথায় আগুন লাগিয়ে দেয় যেন; এমন রক্তাক্ত শিমুল কোথাও কোনোদিন সে দেখেনি আর : যেন সিঁদুর-মাখা সুন্দরী সধবার লেলিহান চিতা জ্বলে উঠেছে।

স্টেশনের ধারে এই শিমুল গাছটার বয়স ঢের। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে প্রভাত – দাঁড়কাক ঠুকরে ফুল ছিঁড়ত – ফুল পাকত – ফল শুকনো হয়ে ফেটে আকাশে-বাতাসে তুলো ছড়াত; একদল ছেলেমেয়ের হাসি-ঝগড়া-কলরব এই ফুল ও তুলোর সঙ্গে কতদিন এসে মিশেছে যে!

জেটির থেকে বেরিয়ে তক্তার সিঁড়ি ধরে তারপর স্টেশনে লাল কাঁকরের রাস্তায়; রাস্তার দুধারে কৃষ্ণচূড়া আর ছাতিমের সারি; সবুজ ঘাসের ওপর কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো ছড়িয়ে থাকে; মসন্তবড় পলস্নবিত ছাতার মতো কৃষ্ণচূড়ার মাথাগুলো সবুজ পাতার নিবিড় ঘাসে নিরবচ্ছিন্ন রক্তিম ফুলের আভায় নীল আকাশের গায় খেলা করে; ছাতিম গাছের নিচে প্রতিবারই একদল নিরীহ ভেড়া ও ছাগলের ভিড় সে দেখে…

বরিশালের এরকম ছবিই আমি দেখেছি, সিন্দবাদ।

– হুজুর। সিন্দবাদ চেঁচিয়ে ডাকে।

– বলো। স্বপ্নোত্থিতের মতো সাড়া দেয় রঘুপতি।

– আমাদের কিস্সামহলে ঢুকবেন না? r (চলবে)

কৃতজ্ঞতা : রঞ্জিত সিংহ