মহাশ্বেতা দেবীর সাক্ষাতকার

সাক্ষাতকার গ্রহণ বদরুন নাহার

সাহিত্য ও জীবনকে নিজ কর্মক্ষেত্রের সমামত্মরাল ভূমিতে পরিণত করে নিয়েছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। এ-অবস্থান আমি আর কারো মাঝে খুঁজে পাইনি। সাহিত্যকর্ম ও যাপিত জীবনকে এক প্রেক্ষাপটে নিয়ে এসে সাহিত্যিক তিনি এক স্বতন্ত্র ধারার ব্যক্তিত্ব; বাংলা সাহিত্যের দলিত মানুষের কারিগর। উপমহাদেশে সাবঅলটার্ন তত্ত্ব বিশেস্নষিত হওয়ার আগেই তিনি তাঁর উপন্যাসে তা প্রয়োগ করেছেন।

কথাসাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা বহুদিন থেকেই। অবশেষে ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর দেখা হলো তাঁর সঙ্গে। যিশুর জন্মদিনের উৎসবে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট বর্ণিল হয়ে উঠেছিল সেদিন, সেই সকালে সহযোদ্ধা কবি অভীক সোবহান ও কলকাতার তরম্নণ কবি প্রজিত ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলাম রাজডাঙ্গার নারকেলবাগান, মহাশ্বেতা দেবীর বাড়ি।

সময় তখন বেলা বারোটা, বাড়ির সামনে নেমপেস্নটে মহাশ্বেতা দেবীর নাম দেখেই ভীষণ রকম উত্তেজনা বোধ করলাম; কিন্তু সহসাই মনটা ভীষণ খারাপও হয়ে গেল, বাড়ির নেমপেস্নটের ওপরটা চোখে পড়তেই, সেখানে টানানো সাক্ষাৎকারের সময়সূচি। আজ তাঁর কারো সঙ্গে দেখা করার দিন নয়। গেটের ভেতরে ঢুকে কথা হলো মহাশ্বেতা দেবীর সহকারী এবং বর্তিকার কার্যকরী সম্পাদক জয় ভদ্রের সঙ্গে। তিনি জানালেন, আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, দেখি। নতুন করে উদ্দীপ্ত হই। ছোট্ট দোতলা বাড়ির নিচতলায় বর্তিকার অফিস। দোতলায় থাকেন তিনি। জয় এসে জানালেন দেখা হবে। তিনি আমাদের সঙ্গে করে ওপরের ঘরটিতে নিয়ে গেলেন, অপেক্ষা করছি।

খানিক বাদেই মহাশ্বেতা দেবী রম্নমটিতে ঢুকতে-ঢুকতে বলেন – কই? কে এসেছে… তারপর আমাকে দেখে বলে উঠলেন – ওমা… এ দেখি ছোট্ট একটা মেয়ে! বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি সেই মুহূর্তের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না। কিছুক্ষণ কথা বলতেই পারলাম না। অভীক, জয় আর প্রজিত ইতোমধ্যে আড্ডায় মেতে উঠেছে। আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না, বেশ খানিক নীরবতার পর বললাম : কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক হাসনাত ভাইয়ের কাছ থেকে আপনার ঠিকানা নিয়েছিলাম।

মহাশ্বেতা বললেন : কালি ও কলমের এক কপি এনেছ?

আসলে পত্রিকা সঙ্গে আনার কথা মাথায় আসেইনি, জানতাম কালি ও কলম নিয়মিত কলকাতায় পাওয়া যায়। কলকাতার লেখকেরাও নিয়মিত সেখানে লিখে থাকেন। বললাম : না, সঙ্গে তো আনিনি।

ইতোমধ্যে জয় ভদ্র, অভীক সোবহান আর কবি প্রজিত শহীদুল জহির প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। শহীদুল জহিরের গল্প-উপন্যাস এবং অকালমৃত্যু প্রসঙ্গে। বর্তিকার একটি সংখ্যায় শহীদুল জহিরের ওপর বেশ কিছু লেখা তাঁরা ছেপেছেন। আর সেই সূত্র ধরেই হয়তো মহাশ্বেতা বেশ বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন : ইলিয়াস চলে গেল। ওর ওয়াইফের সঙ্গে দেখা হয়?

আমি বললাম : না।

আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস প্রসঙ্গে তখন আমাদের বিচ্ছিন্ন কিছু আলাপ হলো। মহাশ্বেতার কণ্ঠে ছিল ইলিয়াসকে হারানোর জন্য মন খারাপের সুর, এবং তা এত তীব্র যে, সহসা অাঁচ করা যায় কতটা প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিলেন কথাশিল্পী আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস এই কলমযোদ্ধার মাঝে। আমরা তখন মহাশ্বেতা দেবীর টেবিলের চারপাশে বসেছি। জয় এবং অন্য যাঁরা তাঁর সঙ্গে থাকেন তাঁরা সবাই মাসিমা মাসিমা বলে ডাকছিলেন। আমি বললাম – আমি আপনাকে কী বলে ডাকব?

মহাশ্বেতা দেবী দৃঢ়কণ্ঠে বলে উঠলেন – কেন, তুমি আমাকে মহাশ্বেতা বলে ডাকবে।

মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি। আমি মুগ্ধ চোখে তাঁকে কিছুক্ষণ দেখে নিলাম। বয়স তাঁর কণ্ঠকে এতটুকু স্পর্শ করেনি, শরীরে হয়তো বাড়তি কিছু ভাঁজ এনে দিয়েছে। তাঁর অনুমতি নিয়েই আমাদের আলাপচারিতা রেকর্ড করতে লাগলাম।

বদরম্নন নাহার : আপনার আদিবাসী জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস অরণ্যের অধিকারের বীর বীরসার তীরকে ধানী মু-ার মাধ্যমে তুলে দেওয়া হলো চোট্টিমু-ার হাতে। যদিও বীরসা এসেছে ইতিহাস থেকে, সত্যিকারের বিপস্নবী ছিল সে। অন্যদিকে চোট্টি মু-া এবং তাঁর তীর উপন্যাসে চোট্টি একটি কাল্পনিক চরিত্র, অথচ চোট্টিমু-া পাঠেই বেশি আনন্দ পেয়েছি।

মহাশ্বেতা দেবী : চোট্টিমু-া আমার সমগ্র আদিবাসী চিমত্মার সমাহার। সমগ্রটা এক জায়গায়।

বদরম্নন নাহার : আপনার বই থেকে জানতে পারি, আপনি পথে যেতে-যেতে তীরন্দাজ-মেলা থেকে চোট্টিমু-াকে পেলেন। একটা চরিত্রকে খুঁজে পেয়ে তাকে চোট্টির মতো ব্যক্তিত্বে তুলে ধরা কোনো সহজ কাজ নয়। যে-মু-া সমাজের লিখিত কোনো লিপি নেই, কেবল ওরাল ভাষা থেকে…

মহাশ্বেতা : আমি কোনো চোট্টিমু-াকে দেখিনি। সব চিমত্মার ভেতর থেকে এসেছে। ওইসব জায়গার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। ওদের মধ্যে গিয়ে সংগঠন করেছি। ওদের নিয়ে কাজ করেছি।

বদরম্নন : আপনার অরণ্যের অধিকার পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছিল…

মহাশ্বেতা :  প্রশ্ন বলো।

বদরম্নন : অরণ্যের অধিকার উপন্যাসে বীরসা মু-াকে বীর করার জন্য যে লোকসংগীতগুলোকে এনেছেন তা ধর্মীয় প্রার্থনাসংগীতের মতো উপস্থাপন করেছেন, মনে হয়েছে তাকে শুদ্ধ ক্যারেকটারাইজ করার চেষ্টা। একজন নেতা হওয়ার জন্য আইডল যা, সেটা তৈরি।

মহাশ্বেতা : বীরসা সম্পর্কে কিন্তু ওই অঞ্চলের মানুষ কয়েক জেনারেশন ধরে ওই কথাগুলোই বিশ্বাস করে আসছে।

বদরম্নন : বীরসা যখন ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়লেন, শোনা যায় তখন তাঁর সঙ্গে তিনজন নারীসঙ্গী ছিল। আপনি বীরসার আদিবাসী আন্দোলনকে তুলে ধরলেন কিন্তু এই প্রসঙ্গ তেমন উঠে এলো না।

মহাশ্বেতা : কী, মেয়েদের ভূমিকা?

বদরম্নন : হ্যাঁ, ন্যাচারাল ওয়েতে বিষয়টা দেখছি। আমাদের সামাজিক গ– আমরা যেভাবে তুলে ধরছি, আদিবাসী সামাজিক গ– সেভাবে ছিল না। যা আসেনি, যতটা বিশদভাবে এসেছে আদিবাসী আন্দোলন।

মহাশ্বেতা : এর মধ্যে আরো অনেক কথা আছে। বীরসা মু-া, আমাদের যে আলটিমেটলি ফরেস্ট প্রটেকশনের যেসব আইন, তার সঙ্গে বীরসার আদিবাসী-আন্দোলনের একটা ভূমিকা আছে। সাঁওতাল বিদ্রোহেরও একটা ভূমিকা আছে। আমি সেগুলোই ডকুমেন্ট করার চেষ্টা করেছি।

বদরম্নন : আপনার আরেকটি উপন্যাস টেরোড্যাকটিল, পূরণসহায় ও পিরথা। এই যে হারিয়ে যাওয়া টেরোড্যাকটিলকে নিয়ে চরিত্রগুলো তৈরি করলেন, কেন?

মহাশ্বেতা : টেরোড্যাকটিল হচ্ছে একটা সময়। সে-সময় যুক্ত হয়ে গেছে অতীত থেকে বর্তমানে। পূরণসহায় ও পিরথা, পিরথা নামটা পৃথিবীর সমান। নামগুলো তো আমার করা; কিন্তু ওইসব জায়গায় যে আমি গেছি সেই সমগ্র ন্যাচার, সেখানকার মানুষ, জঙ্গল এসব তো ছিল।

বদরম্নন : কিন্তু  টেরোড্যাকটিল যেই সময়ে আর নেই, তখন আপনি টেরোড্যাকটিল নিয়ে এলেন?

মহাশ্বেতা : এটা অতীত থেকে ন্যাচারের কন্টিনিউটি বোঝাতে। অতীতকালের পাখি ফিরে এসেছে।

বদরম্নন : সিলেটে আমাকে একজন বলেছিল

চা-বাগান নিয়ে আপনার নাকি একটা উপন্যাস আছে। মূলত আসাম-সিলেট জোনের চা-বাগান নিয়ে। আমি অনেক খুঁজেছি, পাইনি।

মহাশ্বেতা : চা-বাগান নিয়ে আমি কাগজে অনেক রিপোর্ট লিখেছি। কোনো উপন্যাস লিখিনি। আমি তো আসাম যাই-ই নি। আমি জানিও না।

বদরম্নন : হাজার চুরাশির মা, আপনার অন্যতম বই।

মহাশ্বেতা : হ্যাঁ, সবার খুব প্রিয় বই।

বদরম্নন : সেই সময়ের রাজনৈতিক উত্তাপ, মাতৃত্ব আপনার কি মনে হয় এই সময়ে এসে…

মহাশ্বেতা : মাতৃত্বটা কোনো সময়ের সঙ্গে বদলায় না। সেটা থেকেই যায়।

বদরম্নন : বিষয়টা বললাম কারণ আপনার এক সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম আপনার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক রিলিফ এসেছিল এই হাজার চুরাশির মা লিখে। এটা লেখা, লেখার পরও যে প্রশামিত্ম আসে…

মহাশ্বেতা : হ্যাঁ, নিশ্চয়ই… আর অগ্নিগর্ভ লিখেও খুব। অগ্নিগর্ভে যে আমার লেখাটা আছে, অগ্নিগর্ভ লিখে

আমার খুব শামিত্ম হয়েছিল। চোট্টি মু-া লিখেও আমার খুব শামিত্ম হয়েছিল।

বদরম্নন : আপনি তো তিতুমীরকে নিয়েও উপন্যাস লিখেছেন।

মহাশ্বেতা : তিতুমীর আজো বারাসাতে খুব প্রিয় নাম।

গানে-গানে চলে আসছে।

বদরম্নন : ইতিহাসের চরিত্র নিয়ে এসেছিলেন নটী, যমুনা কি তীর উপন্যাসে যেমন মোতিলাল, তেমনি বাইজি-নাচ নিয়েও লিখেছেন।

মহাশ্বেতা : যতদূর সম্ভব সবকিছু আগে জেনে নিয়েছি। ইতিহাস আমার সবচেয়ে প্রিয়। যদিও আমার অনার্স ও এমএ-এর সাবজেক্ট ইংরেজি। লিখলাম বাংলায়।

বদরম্নন : ঘরে ফেরাসহ আরো কিছু উপন্যাস লিখেছেন সত্তরের দিকে, তখন সেই উপন্যাসে সময়ের রাজনৈতিক বিচ্যুতির বিষয় ছিল। আমার মনে হয়েছে তখনকার সেই রাজনীতি প্রসঙ্গে বা রাজনীতি থেকে বিচ্যুত মানুষ সম্পর্কে আপনার একটা ক্ষক্ষাভ ছিল। এখনকার রাজনীতি সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়?

মহাশ্বেতা : এখন যারা শাসন করেন রাজনীতিকে, মাটিকে। তারা মাটিকে যথেষ্ট ভালোবাসেন কিনা, গাছকে ততটা ভালোবাসেন কিনা। একেবারে সাধারণ মানুষকে তাদের সঙ্গে একীভূত করতে পারেন কিনা। – এখন এসব মনে হয়।

বদরম্নন : একজন লেখক যে-বিষয় নিয়ে লিখছে, জীবনটাকেও সেই কর্মকা–র সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেছে। এটা আমাদের লেখকদের মধ্যে দেখা যায় না। যে-কারণে আপনার প্রতি আমি আগ্রহী হয়ে আমার এম ফিল গবেষণার কাজে আপনাকে বেছে নিয়েছিলাম।

মহাশ্বেতা : এখন তো আর দিতে পারি না মা। তবে পুরম্নলিয়ায় আমার আদিবাসী সংগঠন আছে। তাদের অরগানাইজ এখনো কাজ করে চলছে।

বদরম্নন : আপনি তো পেশা হিসেবেই লেখাকে বেছে নিয়েছিলেন। তারপরও অনেক কাজ করেছেন।

মহাশ্বেতা : যা কাজ করেছি তা লেখাকে সহায়তা করেছে। এটাকে সাহায্যই করেছে। ওদের মধ্যে না গেলে তো আর ওদের জানতে পারতাম না।

বদরম্নন : আমাদের দেশে আদিবাসী সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং টিভি সাক্ষাৎকারে (২০১০ সালে এটিএন বাংলায়) তাদের ইতিহাস জানা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস থেকে জেনেছেন।

মহাশ্বেতা (উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জয়কে উদ্দেশ করে বললেন) : শুনেছ জয়… এটা কত মসত্মবড় প্রাপ্তি আমার।

বদরম্নন : এখন কী লিখছেন?

মহাশ্বেতা : এ-বাড়িতে তো বেশিদিন আসিনি, জয়, এ-বাড়িতে আমরা কদ্দিন এসেছি? (জেনে নিয়ে, বুকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন) এখানে এলেই লিখে ফেলব। এখানে তো আসবে না, আসবে (হাতটা এবার মাথায় তুলে) এখানে। আসুক।

বদরম্নন : আচ্ছা, আপনি তো রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছিলেন?

মহাশ্বেতা : বোলপুরে যখন ভর্তি হলাম শামিত্মনিকেতনে, রবীন্দ্রনাথ তখন জীবিত।

বদরম্নন : আপনাকে দুটো কবিতা উপহার দিয়েছিলেন।

মহাশ্বেতা : আমিই রবীন্দ্রনাথকে বলেছিলাম, তুমি অত বই লিখো না। বললেন – কেন রে? না, আমার বাবা সব তোমার বই কেনেন আর কেনেন আর কেনেন। অত-অত বই সব আমি পড়তে পারি না।

বদরম্নন : আপনি তখন কতটুকু ছিলেন?

মহাশ্বেতা : আমার তখন দশ বছর বয়স। উনি বললেন – তুই কি সব পড়িস? আমি তো সব পড়তে পারি না। বাবা সব হাতের নাগালের মধ্যে এনে রাখত। তাতেই আমি যথেষ্ট পড়েছি। দশ বছর বয়স থেকেই। একেবারে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুকালীন সময়ে আমি শামিত্মনিকেতনে ছিলাম।

বদরম্নন : আপনি দুদফা শামিত্মনিকেতনে ছিলেন?

মহাশ্বেতা : শেষ দফা যখন গেলাম তখন তো আর উনি ছিলেন না।

বদরম্নন : আপনার পছন্দের লেখক কে ছিলেন? আপনার আগের…

মহাশ্বেতা : আমি যা পেয়েছি তাই পড়েছি।

বদরম্নন : এবার একটু অন্য প্রসঙ্গ, বর্তমান সময়ের সামাজিক জীবন সম্পর্কে আপনার কী মনে হচ্ছে?

মহাশ্বেতা : বর্তমান সময়ে, যেটা আমাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে তা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে।

বদরম্নন : এটা কী কারণে ঘটছে বলে মনে হয়। নারী-অধিকার কিংবা অসচেতনতার জন্য?

মহাশ্বেতা : অভাবের জন্য যে হচ্ছে, তা না। সবকিছুর পরেও হচ্ছে। বাংলাদেশের কথা আমি তত ভালো জানি না।

বদরম্নন : বাংলাদেশেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তবে আগের চেয়ে মেয়েদের অবস্থানগত পরিবর্তন এসেছে।

মহাশ্বেতা : অ্যাক্টিভিজমও তো অনেক বেড়েছে।

বদরম্নন : আপনার সম্পাদিত বর্তিকা দেখেছি বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক হয়েছে, যেমন কৃষক সংখ্যা, আদিবাসী সংখ্যা। আপনার বাবা মণীশ ঘটকের সময়ও কি বিষয়ভিত্তিক বের হতো?

মহাশ্বেতা : না, না। বাবা পত্রিকা এডিট করতেন, সেই কারণেই। বাবা যে আরম্ভ করেছিলেন, আমি চালিয়ে যাচ্ছি। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। তিনি অত্যমত্ম মুক্তমনা মানুষ ছিলেন।

বদরম্নন :  ঋত্বিক ঘটকও তো খ্যাতিমান, আপনার কাকা।

মহাশ্বেতা : ঋত্বিক তো আমার ছোট কাকাও বটে, আবার আমার ঠাকুরমার শেষ সমত্মানও। বয়সে আমার চেয়ে মাত্র তিন মাসের বড়। কাজেই কোনো দিন ওকে কাকা বলিনি। আমরা ভাইবোনের মতো বড় হয়েছি।

বদরম্নন : আপনার সঙ্গে দেখা করে আমার খুবই ভালো লাগছে। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমার সৌভাগ্য।

মহাশ্বেতা : শোন কী বলছে, সৌভাগ্য আবার কী! বলো আনন্দ লাগছে।

মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আনন্দময় সময় শেষে হাতে থাকা প্যাড এগিয়ে দিলাম অটোগ্রাফ চেয়ে। তিনি সেখানে লিখলেন – ‘বদরম্নন নাহার/ একটি ছোট্ট মেয়ে/ ও আমার নাতনি হতে পারত/ কিন্তু ৫ মিনিটে ও আমার বন্ধু হয়ে গেল।/ ওকে অনেক ভালোবাসা \/ মহাশ্বেতা দেবী।’

অসাধারণ এক অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম।