ছিন্নমূল মানুষের বেঁচে থাকার কান্না

মোস্তফা অভি

 

প্রশান্ত মৃধা ডুগডুগির আসর উপন্যাসে সমকালীন রাজনৈতিক আবহের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক নিম্নপেশার মানুষের শ্রেণিচেতনা, বঞ্চনা, প্রেম এবং জীবন-জীবিকার কথা বলেছেন।  এ-উপন্যাসে তিনি মজমাওয়ালা, খেলাওয়ালা, ক্যানভাসার পেশার মানুষের অনবদ্য যে-জীবনচিত্র এঁকেছেন তা যে-কোনো পাঠককে আগ্রহী করে তুলবে।

উপন্যাসের পস্নট বাগেরহাট আদালত চত্বর থেকে শুরু হয়ে বাগেরহাট লঞ্চঘাট, নাগেরবাজার, মোরেলগঞ্জ, ফকিরহাট, পিরোজপুরের মংলা রোড, কাটাখালি হয়ে সেই খুলনা পর্যন্ত বিসত্মৃত। কাহিনির প্রয়োজনে এসেছে বাগেরহাট জেলা হয়ে খুলনা এবং দুই জেলার মধ্যবর্তী গ্রামীণ চিত্রপট। আছে উপন্যাসের চরিত্রের সঙ্গে মিশে থাকা হরেক মানুষের জীবনালেখ্য, যা শুধু একটি নির্দিষ্ট সীমায় আটকে থাকে না; স্থানিকতার সীমা পেরিয়ে হয়ে ওঠে সকল স্থানের, এমনকি পুরো দেশের।

গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থির সময়, দ্বন্দ্বময় সমাজের নৈরাজ্য, মফস্বল শহরের নিম্নবিত্ত মানুষের মনোজগৎ, এমনকি মনস্তত্ত্ব সংকট ইত্যাদিকে তিনি নিপুণ দক্ষতায় উপন্যাসে তুলে এনেছেন। এরশাদের শাসনামলে একসময় মফস্বল শহর বাগেরহাটের ট্রেন তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়। এতে রেলস্টেশন অথবা আদালত চত্বরে পেট ও পেশার দায়ে থাকা মানুষগুলোর মুখে ফুটে ওঠে চিন্তার রেখা। এমনিতেই আদালতের কাজকর্ম উপজেলায় স্থানান্তরিত হয়েছে। সে-কারণে আয়-রোজগার কমে গেছে সাধারণ পেশার মানুষের। তার ওপর রেললাইন উঠে গেলে তাদের অন্নের সংস্থান আর যে থাকেই না বলতে গেলে। উপন্যাসের একপর্যায়ে আমরা মফিজ শেখ চরিত্রটি হাতে লেখা কাগজের কবিতা পড়ে আদালত চত্বরের মানুষকে শোনায়,

শোনেন শোনেন শোনেন, শোনেন দিয়া মন,

ও বাগেরহাটবাসী আর থাকপে না টেরেন \

বাগেরহাট থেকে রেললাইন তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আন্দোলনে নামে সাধারণ মানুষ-স্থানীয় ছাত্রসমাজ। একসময় টনক নড়ে সরকারের। ট্রেন কলেজস্টেশনে থামার সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলনের সময় আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানে যেন বিগত শতকের আশির দশকের বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। সেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামাজিকতার যে-পরিবর্তন সে-সময় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল লেখক সেই বাস্তবতাকে অন্তর্লোকে অবলোকন করে উপন্যাসে তুলে এনেছেন।

আছে বাগেরহাটের ইতিহাসের কথা। জনৈক রবার্ট মোরেল নামক ইংরেজ পত্তনি নিয়ে আসেন এই জনপদে। স্থানীয় ভূস্বামী রহিম শেখের সঙ্গে তার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। নিহত হয় রহিম শেখ। আর এই মামলা কোর্টে উঠলে তৎকালীন খুলনা মহকুমার ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র মোরেলগঞ্জ আসেন। তিনি কলকাতায় ফিরে গিয়ে মোরেলগঞ্জে একটি থানা স্থাপনের সুপারিশ করেন। সেই থানার প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বন্ধু গৌরদাস বসাক।

নাগরিক জীবনে যারা মাটির কাছে বসবাস করে এমনসব মজমাওয়ালা ক্যানভাসারের সংগ্রামী জীবনের কথা বিধৃত হয়েছে উপন্যাসজুড়ে। এই শ্রেণির মানুষের নিরুৎসব জীবনে আনন্দ নেই। নেই স্বপ্ন। আছে সীমাহীন জীবনের ক্লেদ। প্রাণান্ত পরিশ্রমে খেলা দেখানোর সব কৌশল ব্যবহার করে দিনশেষে তারা যা উপার্জন করে তা দিয়ে জীবন নির্বাহ করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য। বর্ষা-বাদলায় যখন ঝুম বৃষ্টি নামে, তখন বন্ধ থাকে তাদের পেট-চালানোর ধান্ধা। সে-সময় এই মানুষগুলোর দিন কখনো কখনো না-খেয়েই কাটে।

মফস্বল থেকে আদালত চত্বরে প্রতিদিন মানুষ আসে মামলা-মোকদ্দমার কাজে। অনেক লোকের সমাগম হয়। এ জনসমাগমেই কেউ কেউ আসে কিছু কামানোর ধান্ধায়। মামলা-মোকদ্দমা, অফিস-কাছারির কাজ ফুরালে জনশূন্য হয়ে পড়ে চত্বরটি। শুধু বিভিন্ন কোণায় পড়ে থাকে পেট আর পেশার দায়ে এখানে আসা মানুষগুলো। তাদের সামগ্রিক পরিচয় তারা ক্যানভাসার। আদালত চত্বরে ডুগডুগি বাজিয়ে এবং মুখে বিশেষ কায়দায় আউ, আউ শব্দ করে তারা লোক জড়ো করে। কথার জাদুতে মানুষের কাছে বিক্রি করে নিজেদের তৈরি কাপড় ধোয়ার পাউডার। কেউ দেখায় বানরের খেলা। কেউ আবার হাতের কারসাজি দেখিয়ে মানুষকে বিনোদন দিয়ে পয়সা চায়। আদালত চত্বরের আশপাশে আছে দাঁত তোলা পথের ডাক্তার, আছে কান খোঁচানোর বাক্সওয়ালা। সেইসঙ্গে দেখা মেলে যৌনশক্তিবর্ধক তেল-বিক্রেতার। এই আদালত চত্বরের কিনারে নিভৃতে বসে থাকে একটি অদ্ভুত চরিত্র, বই-বিক্রেতা বারিক। আরো আছে মেঘনিশ গাছটি ছাড়িয়ে ছোট কাছারি ঘরে পেশাদার টাইপিস্ট মানুষগুলো। এছাড়া উকিল, মুহুরি এবং সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে থাকে একশ্রেণির দালাল। আরো দেখা যায় ভাসমান কয়েকজন নারীকে।

উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে মোসলেম উদ্দিন, আজগর, সুকুমার, দিলদার, আলতাফ, ইব্রাহিম শেখ এবং দুই নারী চরিত্র জরিনা ও ঝিলিক উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি অনুজ্জ্বল চরিত্র। এসব চরিত্রের একক নির্দিষ্ট কোনো কাহিনি নেই। একেকজনের জীবনচিত্র আলাদা। আবার সেসব আলাদা গল্প যেন এক জায়গায় এসে মিশে যায়। তখন সকলের কাহিনিই অভিন্ন, যেন এক সুতোয় বাঁধা। পোশাকে ধোপদুরস্ত মোসলেম উদ্দিন আদালত চত্বরে মজমাওয়ালা ক্যানভাসারদের প্রতিনিধি। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে সে আদালত চত্বরের মেঘনিশ গাছের ছায়ায়  বসে বিড়ি টানে আর অপেক্ষা করে মজমার সময়ের।  সে কাপড় ধোয়ার পাউডার বিক্রি করে। সঙ্গে আছে ফোঁকলা দাঁতের মলিন বস্ত্রবেশধারী উসকোখুসকো চুলের আজগর। সে বানরের,  খেলা দেখায়। সে বুড়ো বানরদুটো নাচায় আর বলে, এই যে ল্যাংড়া পাহাড়ের বুড়া-থুড়া যায়! আছে কাঁচাবয়সী সুন্দর কথনে পারদর্শী সুকুমার। তার কথা বলার ঢংয়ে শিক্ষার ভাব আছে। এসব ছিন্নমূল মানুষের থাকার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই; কোনোরকম জীবনকে টেনে নেওয়া আর কি।

লঞ্চঘাট ছাড়িয়ে নদীর কূল ধরে কাঁচা রাস্তায় বাজারের দিক এগিয়ে গেলে একটি দোকানের পাশে আজগরের ঝুপড়ি। লেখক আজগরের কথা এভাবে বলেছেন, – ‘জীবনটা কোর্টের চত্বরে, লঞ্চঘাটে, রেলস্টেশনে, বান্দরের পাছায় কুরুত দিয়ে কাটিয়ে দিল। এই জীবনে কোনোদিনও চালের তলায় মাথা দিল না, মেয়েমানুষ প্রায় গায়ের কাছে ঘেঁষতে দিল না।’ কিন্তু আজগরের এই ছন্নছাড়া জীবনেও জুড়ে যায় অনির্দিষ্ট গন্তব্যের জরিনা। কিন্তু জরিনার সঙ্গ তাকে সংসারের স্বপ্ন দেখায় না। আজগরের মনে হয়, এই যে জরিনা তার সঙ্গে আছে, থাকুক। গায়ের রং কালো, দাঁত নেই, দলা পাকানো চুল, বানর নাচানো আজগরকে যদি তার ছেড়ে যেতে মন চায় তো চলে যাক। যখন সন্ধ্যায় আদালত চত্বর থেকে আজগরের ঝুপড়ির সামনে জরিনা আসে আজগর তখন তাকে বলে, ‘আচো থাহো। যদি কোনওদিন চইলগা যাইতে মন চায় চইলগা যাবা। কিন্তু কয়দিন থাইয়া ওই ঘর করার বাসনা … না।’ আজগর সংসারবিরাগী। জরিনাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকার স্বপ্ন তাকে আকৃষ্ট করে না। দুটো বানর নাচিয়ে সে জীবনের উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে চলে। জরিনাও বন্ধনহীন স্রোতের শ্যাওলার মতো। তবু আজগরের দুঃখে সে কাতর হয়, তার অসুখে প্রাণান্ত সেবা করে। আজগরের জ্বর হলে সে মোসলেমকে ডেকে আনে, সুস্থ করার জন্য ব্যস্ত হয়। আবার জ্বর সেরে গেলে ভরা জোয়ারের জল দিয়ে নাইয়ে দেয়। রাতে ঝুপড়িতে শুয়ে খুনসুটিতে মাতে, দুজনে রঙ্গ করে। লেখক এভাবে বলেন, ‘জরিনার চোখ আবার ঘুমে জড়িয়ে আসে। কিন্তু আজগর না আসা পর্যন্ত আর সে ঘুমাবে না। কিন্তু চাইলেই কী তা হয়। কোনও কোনও দিন সে আজগরকে একেবারে নিঃস্ব করে দিতে চায়, কোনও দিন আজগর তাকে নিঃস্ব করে দেয়, একেবারে শরীরে তখন আর বল ভরসা থাকে না। এই নিঃস্ব করে দেওয়ার কায়দাটা বুড়ো ভালোই জানে।’

ওদিকে মোল্লারহাটের ভক্তের মামাত ভাই সুকুমার। সে এ-জায়গায় ও-জায়গায় ফুটবল খেলে বেড়ায়। ম্যাট্রিক পাশ করে খেলার নেশায় আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি। ভক্ত গিয়েছিল মোরেলগঞ্জের হোগলাবুনিয়ায় ধান কাটতে। সেখানে দেখা হয় সুন্দরী ঝিলিকের সঙ্গে। ঝিলিককে নিয়ে হাজির হয় সুকুমারদের বাড়ি। তারপর কালীখোলায় বিয়ে করে কিছুদিন থাকে এখানে। সুকুমারদের টানাটানির সংসার। ভক্ত একদিন ঝিলিককে রেখে চলে যায় খুলনা শহরে, কাজের সন্ধানে। তারপর একদিন সুকুমারকে নিয়ে ঝিলিকও চলে যায় খুলনায় স্বামীর কাছে। ভক্ত কাজ করে বাইরে, সুকুমার প্রাইভেট পড়ায় আর বউদির সঙ্গে নিত্য রঙ্গ করে।

রসিকজনের মতো লেখক ঝিলিকের সঙ্গে সুকুমারের রসালাপ এভাবে দেখিয়েছেন, ছাপরায় ঢুকে সুকুমার গামছা খুঁজতে খুঁজতে বলে, ‘হ্যাঁ মাইজে বউ, আমি তোমার মতো খেলোয়াড় নাকি?

– আমি আবার কবে খেলোয়াড় অইলাম, শুনচি তুমি খেলা দেখাও বল দিয়ে।

সুকুমার হাসে। ঝিলিক হাসতে হাসতে ছাপরায় ঢুকে একই হাসিমুখে সুকুমারের দিকে তাকায়। সুকুমার বলে, ‘তুমি খেলা দেখাও ভক্তদারে। আমি মানুষেরে দেখাই এক বল দিয়ে, তুমি দেখাও দুই বল দিয়ে।’

‘আইজ পিঠে সত্যি সত্যি গরানের চলা ভাঙব, দেওরা!’ … ঝিলিক সুকুমারের শরীরে লেপ্টে যায়। অথবা সুকুমার তাকে লেপ্টে ফেলে, এমনকি এই স্মৃতি আরো বহুদিন মনে থাকে ঝিলিকের। এমন নিঃস্ব তাকে কোনওদিনও করেনি ভক্ত।’

একদিন সুকুমার রেলস্টেশনের কাছে সার্কাসের প্যান্ডেলে খেলা দেখে। তার মনে বাসনা জাগে ফুটবল খেলার যে ক্যারিশমাটা সে জানে সেটা সার্কাসে দেখানোর। বল এক পা থেকে অন্য পা, তারপর হাঁটুতে, ঊরুতে, ঘাড়ে, মাথায়। এই একটা খেলাই জানে সুকুমার। মনের ইচ্ছার কথা সুকুমার ঝিলিককে জানায়। যদি সুযোগ হয়, সে সার্কাসের দলে নাম লেখাতে পারে। আবার একদিন চলেও যায় ভক্ত আর ঝিলিকের ঘর ছেড়ে, এই খেলা দেখানোর নেশায়। অনেক জায়গা ঘুরে সুকুমার যখন যশোর, তখন সে জানতে পারে, ভক্তদা এক মহিলাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ। মানুষের ধারণা, সে নাকি ভারত গেছে। সঙ্গে নিয়ে গেছে ছেলে ভরতকে। আর ঝিলিক? সে স্বামী হারিয়ে, ছেলে হারিয়ে দিশেহারা। অবশেষে খবর পায় পথের দেবর সুকুমারের। তারপর একদিন সন্ধ্যায় মোরেলগঞ্জের লঞ্চে আসে বাগেরহাট। তারপর আদালত চত্বর হয়ে লঞ্চঘাট, কিছুদিন থাকেও সুকুমারের সঙ্গে। পরে ঝিলিক চলে যায় ছেলের সন্ধানে। যেন স্রোতের টানে চলে আসা, আবার স্রোতের টানেই ফিরে যাওয়া।

এই উপন্যাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বই-বিক্রেতা বারিক। যদিও লেখক এই চরিত্রটি সংযমের সঙ্গে রূপায়িত করেছেন; কিন্তু চরিত্রটির নিগূঢ় রহস্য অনেক। বারিক বুড়ো মজমাওয়ালাদের আরেকটু দূরে, মেঘনিশ গাছটার তলায় বই বিক্রি করে। সারাক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে সে। ঢুলুঢুলু ভাব, ঘুমজড়ানো চোখ, সামনে সাজানো বইয়ের পসরা। মোসলেম, আজগর, সুকুমার, জরিনা এমনকি ঝিলিক এসে মাঝেমধ্যে বারিক বুড়োর সঙ্গে আলাপ জমায়। কেউ বইয়ের তলা থেকে যৌনরসাত্মক বই বের করলে সে চোখ খুলে তাকায়। যেন তার বন্ধ চোখের আড়ালে আছে তৃতীয় নয়ন। সবাই তার কাছে সমস্যা নিয়ে আসে, আলাপ করে। যেন সে আদালত চত্বরের একটি বটবৃক্ষ, সকলের প্রতিনিধি অথবা একজন বিবেক। প্রতীকী অর্থে সে-ই প্রতিনিধিত্ব করে আদালত চত্বরের সাধারণ ক্যানভাসারদের। গভীর অর্থে এই উপন্যাসের বারিক চরিত্রটি একজন মূক-পথনির্দেশক।

ডুগডুগির আসর উপন্যাসের ভাষাবৈচিত্র্যের দু-চার কথা না বললে মনে হয় কিছু বাদ থেকে যায়। এই উপন্যাসের ভাষা ব্যবহারে আমরা নতুন এক প্রশান্ত মৃধাকে আবিষ্কার করি, যা তাঁর আগের সব লেখা থেকে স্বতন্ত্র। লেখক এখানে বাগেরহাট এবং তৎসংলগ্ন জনপদের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে ব্যবহার করেছেন সংলাপে, এমনকি আখ্যান বর্ণনায়।

এ-উপন্যাসে কোনো চরিত্রকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের মর্যাদা দিয়ে নায়কের আসনে বসানো মুশকিল। মোসলেম আদালত চত্বরে ক্যানভাসারদের প্রতিনিধিত্ব করলেও উপন্যাসের শেষের দিকে তার কর্তৃত্ব প্রায় থাকে না। আর আজগরের পুরো উপন্যাসজুড়ে যদিও বিচরণ তবে কোথাও সুকুমার চরিত্রটি আজগরকে ছাপিয়ে আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই অর্থে আজগর এবং সুকুমার চরিত্রদ্বয় সমান মর্যাদার। তবে নারী চরিত্রে ঝিলিকের তুলনায় জরিনা জ্বলজ্বলে তারার মতো উপন্যাসজুড়ে শেষ পর্যন্ত আলো ছড়াতে থাকে।

১৫৯ পৃষ্ঠার উপন্যাসে সর্বহারা, ছিন্নমূল, পথের মানুষদের জীবন পরম মমতার সঙ্গে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। লেখকের পরিণত জীবনমনস্কতায় মানুষের জীবন ও সমাজের বিস্তার ঘটেছে।