জনৈক স্তন্যপায়ী যিনি গল্প লেখেন

শাহাদুজ্জামান

স্তন্যপায়ীদের জন্য খেলা একটি জরুরি কর্মকান্ড। শরীরতত্ত্ববিদরা জানাচ্ছেন, বিবর্তনের ইতিহাসে খেলা স্তন্যপায়ীদের সারভাইভালের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। যাবতীয় স্তন্যপায়ীর জন্য শৈশবে খেলা বেঁচে থাকার, বেঁচে ওঠার একটা অপরিহার্য শর্ত। বাস্তবের নকল করে একটা কপট বাস্তব নিয়ে খেলা। বাঘ-শাবকরা একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, কপট কামড় দেয়, যেন একে অন্যের শত্রু, যেন সে শত্রুর মোকাবেলা করছে। এ নেহাত খেলা। এই খেলা তার বেড়ে ওঠার জন্য জরুরি। শিশুরা খেলনা হাঁড়ি-পাতিলে রান্না করে, নকল মেহমান দাওয়াত দিয়ে ইটের তৈরি মাংসের তরকারি দিয়ে নকল খাওয়া খায়, তলোয়ার দিয়ে

নকল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে। এসব খেলা তার বেড়ে ওঠার জন্য দরকার। শরীরতত্ত্ববিদরা বলছেন, এসব পয়েন্টলেস কিন্তু ইউজফুল কাজ তার জন্য দরকার। কিছু কিছু স্তন্যপায়ীর অবশ্য শৈশব আর ফুরোয় না। তারা সারাজীবন শুধু খেলে। তারা শুধু নকল পৃথিবীতে থাকে, বাস্তবে কখনো ঢোকে না। যেমন ধরা যাক, কিছু স্তন্যপায়ী যারা গল্প লেখে। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও গল্প লেখার মতো পয়েন্টলেস অথচ পক্ষান্তরে ইউজফুল কাজটা করে। মতিন কায়সার তেমন একজন                  স্তন্যপায়ী।

তবে মতিন কায়সারের এইটুকু হুঁশ আছে যে, গল্প লিখলেই তাকে গল্প বলা যায় না। গল্পের এই নকল পৃথিবীর ভেতরও আসল আছে, আবার নকলের নকল আছে। কেউ গল্প বানিয়ে তোলে, কারো গল্প হয়ে ওঠে। কোন গল্পটা বানিয়ে তোলা সেটা অন্তত মতিন কায়সার খুব ভালো বুঝতে পারে। কারো কারো গল্প পড়লে বুঝতে পারে, এ একেবারে রঙ্গিণীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বানিয়ে তোলা। ‘নববিবিবিলাসে’ যেমন প্রবীণা গণিকা, নতুন গণিকাকে তালিম দিচ্ছে :

‘তোমার রূপ-লাবণ্য এ পর্যন্ত আছে তথাচ প্রত্যহ প্রাতে উবটান, বৈকালে সাবান দ্বারা অঙ্গ মার্জিত করিয়া দাঁতে মেশি ও মাথায় মাথাঘষা সোন্ধা দিয়া, আতর-গোলাপ লাগাইয়া, গহনা পরিয়া উত্তম মিহি কাপড় পরিধান করিবা এবং প্রতি কথায় রঙ্গ দেখাইবা। যেন গায়ের লোমাদি এবং নিতম্বের প্রতিকৃতি দেখা যায় এইরূপ বেশভূষা করিয়া বাবুজনের সহিত আমোদ-প্রমোদ করিবা। তুমি লোকের নিকট সম্ভ্রমে অম্বর সম্বরণ করিয়া অথচ সম্ভ্রমে ভ্রম উপলক্ষ করিয়া অঙ্গভঙ্গ আর রঙ্গস্থান সকলি দেখাইবা।’

বহু গল্পে এরকম রঙ্গস্থান দেখানোর প্রবণতা মতিন কায়সার লক্ষ করেছে। তার গল্প যাতে কিছুতেই তেমন বানিয়ে তোলা না হয়ে ওঠে, মতিন কায়সার সে-ব্যাপারে সতর্ক থাকে। তবু এও বোঝে, তার গল্প ঠিক হয়ে ওঠে না।

মতিন কায়সারের এই হুঁশও আছে যে, গল্পের মতো গল্পের পাঠক-পাঠিকার ভেতরও আসল-নকল আছে। বিস্তর পাঠক-পাঠিকা আছে, যারা শুধু তাদের চেনা ভূগোলের গল্প খোঁজে।  যে-গল্পের ধরন-ধারণ, বিষয় অচেনা পৃথিবীর মনে হয় তারা সেগুলোকে এড়িয়ে চলে। চেনা পৃথিবীতে বিচরণ করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু মতিন কায়সার অভিযাত্রী ধরনের পাঠক-পাঠিকাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন পাঠক-পাঠিকা সে খোঁজে, যারা নতুন মানচিত্রে পা রাখতে ভয় পায় না। এমন এক মানচিত্র যার নদী, পাহাড়, লোকালয় তাদের অপরিচিত। অনেক গল্প আছে একেবারে নিখুঁত, দারুণভাবে সুগঠিত, প্রতিটি শব্দ সুনির্বাচিত, গোছানো, মসৃণ কিন্তু সে-গল্প মৃত। বরং খানিকটা অগোছালো, আপাত এলোমেলো কিন্তু জীবন্ত, এমন গল্পই লিখতে চায় মতিন কায়সার। এমন গল্প লিখতে চায়, যেটা পড়ে পাঠক-পাঠিকার মনে হবে সে, এমন এক দেশে গিয়ে পৌঁছল, যেখানে সে আগে কখনো যায়নি। সেখানে যাওয়ার পথ অাঁকাবাঁকা, বন্ধুর; কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর মনে হবে, এলাম নতুন দেশে। কিন্তু তেমন নতুন দেশে যাবার গল্প লিখবার ক্ষমতা তার সম্ভবত নেই, এমনই মনে হয় মতিন কায়সারের। আবার মনে হয় ক্ষমতা তো আপেক্ষিক। একজন বামনও পাহাড়ের ওপারের দিগন্ত দেখবার ক্ষমতা রাখে, যদি সে কোনো দৈত্যের কাঁধে গিয়ে বসতে পারে। কিন্তু সে কি দৈত্য না দৈত্যসন্ধানী এক বামন, নিশ্চিত হতে পারে না মতিন কায়সার।

মতিন কায়সার সেই বয়স পেরিয়ে এসেছে, যখন মদপান না করেও লোকে অবিরাম মাতাল থাকে। যখন তারা বস্ত্তত একেকটা পশু; কিন্তু জানে না যে তারা পশু। একটা ষাঁড়ের মতো তখন তাদের শুধু ঘন ঘন শ^াস পড়ে। সেই বয়সে মতিন কায়সার  প্রতিজ্ঞা করেছিল কাঁধে শক্ত জোয়াল বেঁধে সে বিস্তর মাটি চাষ করবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পর এখন তার মনে হচ্ছে কাঁধে জোয়াল সে বেঁধেছে ঠিকই; কিন্তু চাষ করেছে বাতাস। কিন্তু তাই বলে শুধু বাতাস চাষের এই পাগলামির জন্য তার কোনো আফসোস নেই। কোনো রকম পাগলামি ছাড়া যারা জীবন কাটিয়ে দেয় তাদের জন্য করুণা হয় মতিন কায়সারের। শায়লার সঙ্গে তার সম্পর্ক একটা পাগলামিরই ফল। শায়লাকে এক বিকেলে ছাদের কার্নিশে বসে মুখে লিচু পুরে চুষতে দেখে ভালোবেসে ফেলেছিল মতিন কায়সার। শায়লার কণ্ঠ এমন অদ্ভুত যে, শুনলে মনে হবে ভোর হচ্ছে। মতিন কায়সার দীর্ঘদিন ফলভারে নুয়ে থাকা গাছের মতো অপেক্ষা করেছে কেউ এসে ফলগুলো পেড়ে তাকে ভারমুক্ত করুক। শায়লা তা করেছিল। শায়লার মাধ্যমেই মতিন কায়সার জানতে পারে মেয়েদের অন্যরকম ঘ্রাণ থাকে। শায়লার মাধ্যমেই প্রথম মেয়ে বোতাম খোলার অভিজ্ঞতা হয় তার। কিন্তু সেসব তাকে কোথাও পৌঁছে দেয়নি। নারীর ঘ্রাণের ঘোর ধীরে ধীরে কেটে গেছে তার। তার মনে হয়েছে, এর চেয়ে একটা হয়ে ওঠা গল্প লেখার সংগ্রাম আরো প্রহেলিকাময়।

সেই প্রহেলিকার কুয়াশা গায়ে মেখে নগরের বাতাসে একা একা হাঁটে মতিন কায়সার। তার মনে হয়, যদিও সে চেয়েছিল কামড়কে চুম্বনে রূপান্তরিত করতে; কিন্তু দেখেছে দিনশেষে লোকের আগ্রহ কামড়ানোতেই। চারদিকের ঈর্ষা, গসিপ, অ্যারোগেন্সের ক্যাকটাস-কাঁটা পাশ কাটিয়ে সে অবশ্য একা একা নগরের বাতাসে হাঁটার কৌশল শিখে ফেলেছে। লোকে তাকে কখনো ভেবেছে গুপ্তচর, কখনো পাগল, কখনো ফেরিওয়ালা। বাসস্টপে যখন এক ভিক্ষুককে গান গাইতে শুনেছে, ‘কেহই করে বেচাকেনা, কেহ কান্দে রাস্তায় পড়ে ধরবি যদি তারে চলো মুর্শিদের বাজারে’, তখন তার মনে হয়েছে বাজারে গিয়ে কেনাবেচার বদলে রাস্তায় পড়ে যে-লোকটা কাঁদছে, সেই লোকটাই আসলে সে, এই মতিন কায়সার। মুর্শিদের বাজারে গেলে লোকে তাকে ধরতে পারত। কিন্তু তাকে ধরবার ব্যাপারে লোকের কোনো আগ্রহ নেই। সে তাই রাস্তায় পড়ে কাঁদে। তার কখনো কখনো মনে হয়, এই নগরের বাতাসও বুঝি তাকে উপেক্ষা করে। একদিন বাতাসকে কানে কানে মতিন কায়সার জিজ্ঞাসা করে, ‘হে বাতাস তুমি কি মাটিতে মিশে থাকা ঘাসের চেয়ে বিশাল বটগাছের সঙ্গে বেশি মিষ্টি করে কথা বলো?’

কনফেকশনারি দোকানের নানা কিসিমের বিস্কুটের প্যাকেটের মতো নানা কিসিমের গল্পে তার বিশ^াস নেই। প্রগতিশীল গল্প, মাটিলগ্ন গল্প, উত্তর-আধুনিক গল্প নয়, সে শুধু একটা হয়ে ওঠা গল্প লিখতে চায়। সেই আশায় প্রাপ্তবয়স্ক শিশুর খেলার মতো লিখে চলে সে, ছাপায়ও। নিজের ছাপা লেখা কাউকে যাচিয়ে দেখার বালখিল্যতা তার নেই। কোনো বিপদের আশঙ্কা না করে চুপচাপ নিরীহ পাখির মতো যতই তার ছাপানো গল্প কোনো এক গাছের ডালে বসে থাকুক না কেন পাখি শিকারির চোখে তা পড়েই এবং সেই পাখিকে গুলি করে মাটিতে না নামানো পর্যন্ত শিকারির যেন শান্তি নেই। কোনো প্রশংসা মতিন কায়সার প্রত্যাশা করে না। কারণ এ-সত্য, মতিন কায়সার বহু আগেই টের পেয়েছে যে, লোকে ভাবে কাউকে প্রশংসা করা একটা পরাজয়। ফলে অন্যের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সে নির্বিকার। সে জানে, সে একটা হয়ে ওঠে গল্প লেখার সংগ্রামে আছে। সে-সংগ্রাম তার নিজেরই সঙ্গে। সে তার যাত্রা অব্যাহত রাখবে। কারণ তার হিব্রু প্রবাদটা ভালো জানা আছে যে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কুকুর যতই চিৎকার করুক ক্যারাভান চলে যাবে। তারপরও কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই তার। সবার প্রতি বরাবর সদয় থাকে মতিন কায়সার। কারণ কে জানে কী কারণে কার জন্ম হয়েছে পৃথিবীতে? ফলে সে সবকিছুর দিকে এমনভাবে তাকায় যেন দেখছে প্রথমবার এবং শেষবার। এভাবে তাকিয়ে দেখতে দেখতে তার বেশ ভালো বোঝা হয়ে গেছে যে, কখনো কখনো বিজয়ী হওয়ার চেয়ে বিজিত হওয়া ভালো। তার জীবন সব মিলিয়ে বস্ত্তত খুবই সরল আর এ-কারণেই লোকে মতিন কায়সারকে ভাবে খুবই কমপ্লিকেটেড। কিন্তু কাউকে কিছু ব্যাখ্যা করার স্পৃহা মতিন কায়সারের নেই।

গল্পে সে কোন সত্য খোঁজে সে-ব্যাপারেও সে নিরুত্তর। কারণ সত্যকে সে ঢাকঢোল পিটিয়ে পলাতক আসামির মতো খোঁজে না। সে অপেক্ষা করে, কারণ সে জানে বাঁকে বাঁকে সত্য তার কাছে আলতো করে এসে উপস্থিত হবে। এ অনেকটা প্রজাপতি ধরার মতো। প্রজাপতির পেছনে ছুটলে তাকে ধরা দুষ্কর; কিন্তু বাগানে চুপচাপ বসলে প্রজাপতি আলতো করে এসে বসতে পারে তার মাথায়। সে অনেক আগেই টের পেয়েছে পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রয়োজনের না, জ্ঞানের না, রূপ সৃষ্টির। সে টের পেয়েছে জ্ঞান তার দরকার কিন্তু তার দাস হিসেবে, প্রভু হিসেবে নয়। টের পেয়েছে জ্ঞান হলো বিভ্রম, সিদ্ধান্ত, সংশয়ের যুগলবন্দি। কোনো জ্ঞান, কোনো সত্যকে অাঁকড়ে ধরে থাকার ইচ্ছাও তার নেই। কারণ সে জানে যে, অাঁকড়ে ধরলেই ফসকে যাবার সম্ভাবনা থাকে। মতিন কায়সার কোনো কিছু অাঁকড়ে ধরে না – ফলে তার হাত থেকে কিছু ফসকেও যায় না। মতিন কায়সার জানে, সে জ্ঞান দিয়ে             বাস্তবতায় ঢুকতে পারবে না, বাস্তবতাকে পুরোপুরি বুঝতে পারবে না, বদলাতেও পারবে না। ফলে সে ভেবেছে এসব অক্ষর সাজিয়ে সাজিয়ে গল্প লিখে যে চোখ সেই বাস্তবকে দেখে তাকে হয়তো খানিকটা বদলে দেবে। কিন্তু মতিন কায়সার এ-ও খুব ভালোমতো জানে যে, এই অক্ষর সাজানো বড় মারাত্মক এক খেলা। এই খেলা ঘোরালো এক গোলক ধাঁধায় ডেকে নিয়ে মাঝখানে ছেড়ে দেয়, তারপর ডাকেও না পেছনে ফিরতেও দেয় না।  দূর বনে কোথায় কোন আশ্চর্য ফুল ফুটেছে তার খবর যেমন শুধু মৌমাছি জানে, এ-খেলার খেলোয়াড়রাও জানে গোপন মধুর খোঁজ। কিন্তু মতিন কায়সার মৌমাছিকে তার নিজের তৈরি মধুতে ডুবে মরতে দেখেছে।

সেই হাসপাতাল ওয়ার্ডটার কথা মনে পড়ে মতিন কায়সারের। যেখানে পাঁচজন মাত্র রোগী। সবাই মৃত্যুপথযাত্রী। কে কোনদিন মারা যাবে তা জানা নেই কারো। সেই হাসপাতাল ওয়ার্ডে একটি মাত্র জানালা। ফলে সেই জানালার পাশে যে-রোগীটি শোয়া, শুধু সে ওই জানালা দিয়ে দেখতে পায় বাইরের দৃশ্য? বাকিরা শুয়ে থাকে বিছানায় দিনের পর দিন। যে-রোগী জানালার পাশে, সে প্রতিদিন জানালায় দেখা দৃশ্যগুলো বয়ান করে তার শয্যাশায়ী সহরোগীদের। জানায়, সেদিনের ভোরের সূর্যটা কতটা লাল, জানায় গাছের পাতা কেমন হলুদ থেকে সবুজ হয়ে উঠছে। দূরে নদীর পারে কেমন নিবিড় বসে আছে এক প্রেমিক যুগল আর তাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে নীলকণ্ঠ পাখী। কোনো কোনো রাতের অন্ধকারে জানালার ওপাশে কিম্ভূত প্রেতেদের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যও বয়ান করে জানালামুখী রোগী। বাকি রোগীরা উদগ্রীব উত্তেজনায় সেই বয়ান শোনে, মনে মনে স্বপ্ন দেখে কোনো একদিন তারও হয়তো সৌভাগ্য হবে ওই জানালার পাশের বিছানাটায় শোবার। তারপর একদিন হঠাৎ জানালার পাশের সেই কথক রোগী মারা যায়। তার মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা হয় সৎকারের জন্য। শূন্য হয় জানালার পাশের সেই বিছানা। বাকি চার রোগী তখন উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করে কার সুযোগ ঘটবে ওই মহামূল্যবান বিছানায় যাবার। শুভ্র পোশাকে নির্বিকার নার্স এসে ওই বিছানার অধিবাসী নির্বাচনে লটারি করে। লটারিতে তৃতীয় রোগীটিই নির্বাচিত হন সেই কাঙ্ক্ষিত বিছানার অধিকারী হিসেবে। পরদিন তৃতীয় রোগীটিকে স্থানান্তর করা হয় জানালার পাশের ওই শূন্য বিছানায়। বিছানায় শুয়েই উত্তেজনায়, আবেগে বিভোর রোগী বহুপ্রতীক্ষিত সেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। কিন্তু তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় সে। বিভ্রান্ত বোধ করে, কী ব্যাপার কিছুই বুঝে উঠতে পারে না সে। কারণ ওই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সে শুধু দেখতে পায় একটা উঁচু নিরেট দেয়াল। সে-দেয়াল ভেদ করে কোথাও কিছু দেখা যায় না। বাইরে তাকিয়ে সে শুধু দেখতে পায় সাদা, শীতল একটা ইটের দেয়াল। আর কিছু না।

মতিন কায়সার জানে জানালার পাশের সেই মৃত কথক রোগী বস্ত্তত সেই হয়ে ওঠা গল্পের গল্পকার, যে এই মৃত্যু চিহ্নিত পৃথিবীর নিরেট দেয়ালে অলীক পৃথিবীর ছবি এঁকে এঁকে সবার বাঁচার আশাকে জাগরূক রেখে নিজের তৈরি মধুতে ডুবে একদিন মারা যায়।