জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর গল্পে চেনা স্বর

আশরাফ উদ্দীন আহ্মদ

জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর (১৯১২-৮২) জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। একই জেলায় আরেক প্রবাদপুরুষ সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-৫১) জন্মেছিলেন। মল্লবর্মণের মতো নন্দীও দারিদ্র্য আর অভাব নিয়ে জন্মেছিলেন। ১৯৩৬ সালে মাত্র চবিবশ বছর বয়সে তাঁর ছোটগল্প ‘নদী ও নারী’ পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশের পরপরই গাল্পিক হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ আবার কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র। আত্মকেন্দ্রী-নির্জন আত্মনিবাসী এবং কবিতাকেন্দ্রী হয়েও তিনি যে-জগৎ সৃষ্টি করেছেন, তা এককথায় বৈচিত্র্যময়। তাঁর গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো এসেছে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের বিচিত্র এলাকা থেকে। কখনো মনে হয়েছে তারই মতো ভেসে এসেছে কুলহারা-স্বজনহারা সব, ১৯৩৪ সালে জীবিকার সন্ধানে কলিকাতায় (কলকাতা) চলে যান, কলকাতা গিয়েও প্রথম জীবনে দীর্ঘসময় টিউশনিই ছিল তাঁর পেশা, যদিও অনেক পরে সাংবাদিকতার পেশাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেন। নির্লিপ্ত আর নির্জনতাপ্রিয় মানুষটি জীবনের অনেকগুলো বছর ক্ষুদ্র পরিসরের মেসবাড়ির জীবন অতিবাহিত করেছেন এবং সেখানকার কত বাস্তব জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন; কত সমস্যা কত কাহিনির জন্ম তিনি দেখেছেন এখানে। মানুষ এবং মানুষের বিচিত্র ঘটনা-উপঘটনা এবং তাদের সংগ্রামমুখর পথচলা সবই তার হৃদয়কে স্পর্শ করে গেছে। তাদের পেশা-বয়স-মানসিকতা সবই ভিন্ন, বারো ঘর এক উঠোন (১৯৫৫) উপন্যাসে বস্তিজীবনের কাহিনি বিধৃত। উপন্যাসটি একটি স্মারক স্তম্ভ। নিম্নমধ্যবিত্ত নগরবাসী বাঙালির অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী উপন্যাসে তৎকালীন বাংলাদেশের রূপক নির্মাণ করেছেন নির্মম ও দুঃসাহসিকতায় এবং সে-নিরাসক্তি প্রায় নিষ্ঠুরতার শামিল। তাকে তিনি প্রজ্বালিত অগ্নিগিরির মতো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন উপন্যাসে। বিংশ শতকের ত্রিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে বাংলা সাহিত্যের জন্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটা যুগ। গল্প-উপন্যাসের যে-জন্মবেদনা এবং সাহিত্যিকদের উঠে আসার সময়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯২৪-২৮) শুরু এবং শেষের সীমা নির্দিষ্ট ছিল পাশ্চাত্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৩৯, যার শেষ হয় ১৯৪৫ আনুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৪৩-এর প্রথম দিকে প্রাকৃতিক ঝড়, দুর্যোগ এবং মন্বন্তর, ১৯৪৬-এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বাস্ত্তহারাদের  সহায়-সম্বল হারানোর তীব্র বুকভাঙা যন্ত্রণা, ১৯৪৭-এ দেশভাগ, দুটো স্বাধীন দেশের মানচিত্র অর্থাৎ ধর্ম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বিভাজিত দেশের উদ্বাস্ত্ত সমস্যা – সেই গভীর সমস্যা থেকে অবক্ষয়-অনন্বয়-অস্তিত্বের সংকট, উদ্ভব ঘটে নতুন ধনিকশ্রেণির, প্রান্তিক মানুষকে চুষে খাওয়ার সেই রক্তচোষার দলেরা ঐক্যবদ্ধ হয়। মুখোশ খুলে সামনে এসে দাঁড়ায় পুঁজিবাদি-কালোবাজারি-মুনাফাখোর-মজুতদার-দাদন ব্যবসায়ী – ১৯৫০ অবধি এদের দৌরাত্ম্যের কাছে হার মানে রাষ্ট্র, ক্রমে ক্রমে তা আবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এ-সময় মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে ওঠে। ভাত-কাপড়-বাসস্থানের অভাবের সঙ্গে আরো কিছু প্রয়োজনীয় অভাব দেখা দেয়। বাঁচার মতো বাঁচার জন্য বিনোদন-সংস্কৃতি চায়। এ-সময়ে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজ থেকে গজিয়ে ওঠেন একঝাঁক সাহিত্যিক। মূলত যাঁরা সাহিত্য-সংস্কৃতির নেতৃত্বে আসীন হন, তাঁদের পদচারণে এ-সময় বাংলাসাহিত্যের ভূমি উর্বর হয়। নতুন অভিনব জীবনের কথাকাররা বেরিয়ে আসেন তিক্ত-অভিজ্ঞতায় বলিষ্ঠ হয়ে। কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-৭৬) অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-হুমায়ুন কবীর-নরেন্দ্রনাথ মিত্র-অমিয়ভূষণ মজুমদার-শওকত ওসমান-কমলকুমার মজুমদার-আবুল ফজল-সন্তোষকুমার ঘোষ-আবু জাফর শামসুদ্দীন-মনোজ বসু-আবু রুশ্দ-অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়-জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী-সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-শাহেদ আলী-নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-সরদার জয়েনউদ্দীন-সমরেশ বসু-গোলাম কুদ্দুস-আবদুল জববার-সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ প্রমুখ। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর গল্প বা উপন্যাসে ব্যক্তিক ও পারিবারিক অস্তিত্বের সংকট নিয়ে যে-কাহিনি গড়ে তুলেছেন তা এককথায় মর্মস্পর্শী বা হৃদয়স্পর্শী বলা অপেক্ষা রাখে না।  তাঁর রচনার বিষয়ে প্রবলভাবে অপবাদ দেওয়া হয় যে, তিনি কবিতা দ্বারা আক্রান্ত-অধিকৃত। কথাটা হয়তো পুরোপুরি সত্য। এও তো চিরসত্য, তাঁর লেখা বাস্তবতা থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। তাঁর প্রিয় কবি জীবনানন্দের মতোই জ্যোতিরিন্দ্র চিত্রময়তাকে আশ্রয় করে এগিয়ে যান, যার কারণে চিত্রকল্প-চিত্রকলা উপমা-রূপক প্রতীক ইত্যাদি কবিতার অলংকার গদ্যে অবিরল ধারায় বহুল ব্যবহার করেছেন। তাতে অবশ্যই রচনার মান উতড়ে গেছে। বিভূতিভূষণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কবিতা-আশ্রিত ভাষা। তাতে কি তাঁর রচনার মান নেমে গেছে কেউ বলবেন, বরং তার ভাষাশক্তিতে বলীয়ান হয়েছে গল্প-উপন্যাসগুলো। এরিস্টটল বলেছেন, ‘কাহিনির চরিত্রগুলো থেকে আমরা গুণাবলির পরিচয় পাই। পাই তাদের ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে। আর আমরা যা করি, তা হচ্ছে, হয় আমরা এতে সুখী হই, নয়তো এর বিপরীতটাই ঘটে।’ জ্যোতিরিন্দ্রের সাহিত্যের প্রধান বিষয় যদিও মানুষ এবং প্রকৃতি। তাঁর তাবৎ চরিত্রে দারিদ্রে্যর সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। কিন্তু তিনি কখনো শ্রেণিসংগ্রামের কথা ভাবেননি। তার প্রকৃতি বাস্তবিকই নিজের অর্থাৎ স্বতন্ত্র, রবীন্দ্রনাথ বা বিভূতির প্রকৃতির মতো এক নয়। তাই তো দেখা যায় মানুষ এবং প্রকৃতিকে তিনি একটা সামান্তরালে এনে দাঁড় করিয়েছেন। এও সত্য, তাঁর রচনা যৌনতায় ভরপুর; অনেকটা যৌনতাই উপজীব্য যেন। তার পরও তাঁর মানুষ, তাঁর প্রকৃতি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ বা প্রকৃতিকে নিজের মতো করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমানভাবে (গল্প-উপন্যাসে) স্থান দিয়েছেন। শুধুমাত্র পটভূমিকায় বিরাজিত নয়, প্রকৃতি কখনো নিষ্ঠুর – শুধুই পেলব নয়, মানুষের অন্তঃপ্রকৃতি যেমন, বিমুগ্ধতা তাকে বিবরে অথবা কোটরে  প্রবেশ করিয়েছে, চরিত্র হয়েছে সজীব-সাবলীল। তাই তাঁর  গল্প-উপন্যাস আকাশপ্রমাণ সাফল্য বয়ে এনেছে। সত্তর বছরের আয়ুষ্কালে দরিদ্রতা-স্বেচ্ছাবৃত-নিঃসঙ্গতায় কেটেছে। মন্বন্তর-মহামারি-দাঙ্গা-দেশভাগের কারণে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশটি উপন্যাস এবং কুড়িটির মতো গল্পগ্রন্থ রচনা করেছেন এবং আরো অজস্র অগ্রন্থিত রচনা রয়েছে। নিম্নবিত্তরা তাঁর অধিকাংশ রচনার কেন্দ্রীয় চরিত্র। আজীবন তিনি একাকিত্বের সাধনা করেছেন, যা তাঁর রচনাতেও প্রতিফলিত। গল্পের গভীরের শক্তিকে বিস্ময়করভাবে স্পর্শ করতে পেরেছেন, যা নিঃশব্দে সেই মুখোশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পেরেছেন বিভূতিভূষণ-জীবনানন্দ-প্রেমেন্দ্র-তারাশঙ্কর এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীর গল্প-উপন্যাসেও সেই শক্তির ঘ্রাণ পাওয়া যায়। জটিল অনুভবের দোটানায়, মানবিক সম্পর্কের অচেনা হাতছানি, জীবনের কঠিন বেড়াজালের সুখানুভূতির স্পর্শে, আত্মিক নিষ্কৃতির চোরাটানে নন্দীর কাহিনি কাঠামো পেয়ে যায় বলেই হয়তো সিদ্ধলাভ করেছে তাঁর গল্প-উপন্যাস। নতুন রীতি বা আঙ্গিকের উদ্যোক্তা বিমল কর অবশ্যই নন্দীকে তাঁর নতুন রীতির শ্রেণিভুক্ত করে নিয়েছিলেন গত শতকের পঞ্চাশের দশকে। তাঁর কয়েকটি গল্প নিয়ে আলোচনা করলে দেখব, জীবনকে তিনি কতটা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। মনস্ব জটিল জীবনের গল্প বারবার তার কলমে ধরা দিয়েছে। হয়তো জীবনকে এভাবেই দেখেছেন, যেভাবে জগৎ এবং জগতের যাবতীয় উপাদানকে উপলব্ধি করেছেন।

শিল্পবোধ মানুষের রুচিকে অনেকখানি সমৃদ্ধ করে। একজন শিল্পীই জানে, তা শিল্পচাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান মানুষকে কখনো ওপরে, কখনো নিচে নামিয়ে দেয়। ‘খালপোল ও টিনের ঘরের চিত্রকর’ গল্পটিতে জ্যোতিরিন্দ্র একজন অভাবগ্রস্ত চিত্রকর উমেশের আর্থিক চিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে বাণিজ্যিক ছবির একটা অবস্থান তুলে ধরেছেন। ধনিকশ্রেণির শিল্পবোধের মধ্যে  আকাশ-পাতাল ব্যবধান। উমেশের ভেতর মানুষের যে-রূপ তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যক্ষ করে পাঠক বিমোহিত না হয়ে পারে না। গল্পের তথাকথিত আঙ্গিক ভেঙে জ্যোতিরিন্দ্র সত্যি সত্যি জনতার যাবতীয় উত্তেজনার উৎসের সন্ধান জেনে গেছেন বলেই স্বতন্ত্র প্রেক্ষাপট রচনা করেছেন। উমেশ বাঁচার সঞ্জীবনীমন্ত্র পেয়ে যাওয়ার কারণ মানুষের মধ্যে তার শিল্পের কদর বেড়েছে। হয়তো এভাবেই মানুষ শিল্পের কাছে অর্থাৎ শিল্পীকে ভালোবেসে তাঁর শিল্পকে মূল্যায়িত করে, শিল্পকে ভালোবেসে পূর্ণতা অর্জন করে, জটিল মনস্তত্ত্বের এ-গল্পে নতুন দিনের যে সকাল উদিত হতে দেখা যায়, তা হয়তো কেবলই জীবন-জগতের বৃহৎ পরিমন্ডল থেকে নেওয়া রূপের বিন্যাস। ‘সামনে চামেলি’ গল্পে প্রতিবন্ধী এক সাতাশ বছরে পা রেখেছে এমন যুবকের কাহিনি ফুটে উঠেছে। হোমিওপ্যাথির ডাক্তার বাপের বড় ছেলে, যে কি-না লেখাপড়া শিখে একদিন মানুষ হবে, জগৎ-সংসারে সেবা করবে, মানুষজন ধন্য ধন্য করবে; কিন্তু তা হয়নি। রাস্তায় গাড়িচাপা পড়ে একটা পা হারায়। সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যুবক রাস্তাটাকে দেখে আর রাস্তার মধ্যে জীবনের সূত্রভেদ খোঁজে, যদিও তার একটা চাকরি আছে প্রাইমারি স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে পড়ানোর। চাকরিটাও জুটিয়ে দেয় বন্ধুর বাবা প্রভাবশালী মানুষ হওয়ার দরুন। একশ কুড়ি টাকার সঙ্গে আরো দুটো টিউশনি, তাতেই বুড়ো বাবা-মা ও তিন ভাইবোনকে নিয়ে সংসার। এছাড়া আর কোনো স্বপ্ন নেই, স্বপ্ন থাকতেও নেই। যদিও কলেজে ঢোকার আগের বছর কবিতা লিখেছিল, সাত-আটটা কবিতা লেখে; কিন্তু সেগুলো কোথাও ছাপতে দেয়নি, হয়তো জীবনটা কবিতার মতো ছন্দময় হয়নি। আজ তার আশা নেই, ভালোবাসা নেই, সব হারিয়ে গেছে শুধুই করুণাপ্রার্থী সে। গায়ের জামা-কাপড় পুরনো মলিন। গরিবি চেহারার মানুষ। রোগগ্রস্ত-অপুষ্টি এবং স্বপ্ন-আশাহীন সাতাশ বছরের এক যুবকের জীবনাচরণ জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী তুলে এনেছেন। শহর জীবনের ঘিঞ্জি বসতির চিত্ররূপ যেভাবে এঁকেছেন এবং ক্র্যাচে ভর দেওয়া যুবকের মনের অতৃপ্তির কথা বয়ান করেছেন, তাতে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের ছবিটাকে পাঠক প্রত্যক্ষ করে। হতাশার ভেতর দিয়ে গল্পটি সমাপ্ত হলেও ভিখিরি ভেবে কোনো এক দিদিমণি পয়সা ছুড়ে দিলে সে যেন নির্লজ্জ বেহায়া, হেসে মাথা নাড়ল। বুকের ভেতরের অনেক কথাকে হাসির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করল যুবক, হয়তো এখানেই লেখকের সার্থকতা ‘সামনে চামেলির’ গল্পে। মধ্যবিত্তের টানাপড়েনের একটা চিত্র জলছবির মতো উঠে এসেছে এখানে।

শেষাবধি দেখা গেল, এক বৃষ্টির রাত্রে জলে-কাদায় লুটোপুটি খাচ্ছে মাধবিলতা গাছটা। ডুমুরের ডালের বেড়াটা ভেঙে তছনছ হয়ে আছে আর সাধের সেই পেঁপেগাছের চারাটি নেই। গল্পের মধ্যে একটা চুরির গন্ধ থাকলেও সেটা চুরি নয়, সুকুমারদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে যেদিন মদন চলে এলো এবং পিন্টুদের বাড়িতে কাজ পেল, আশ্রয় পেল, ঠিক সেদিন থেকেই সুকুমার এবং তাদের বাড়ির প্রতি একধরনের ঈষৎ মদনের ছিল। সে যতই পিন্টুকে বা ওর বাবা-মাকে আপন করুক না কেন, আসলে মনেপ্রাণে সে চাইছিল আবার ওই বাড়িতে কাজ পেতে। জ্যোতিরিন্দ্র যে কিশোর চরিত্র নিয়ে মনস্তত্ত্বমূলক গল্প লিখেছেন, ‘চোর’ গল্পটি অবশ্যই তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ গল্পের দাবিদার। মানুষের মধ্যে যে দুটো রূপ থাকে – ভালো এবং মন্দ – যা সবসময় হয়তো দেখা নাও যেতে পারে, তার পরও মানুষের ভেতরের হিংস্রভাবটা কদাচিৎ ফুটে বের হয়ে আসে। কিশোর মদনের ভেতরের ভয়ংকর সাপ একদিন সত্যি সত্যি বের হয়। তখন সে আর মানুষের খোলসে থাকে না। একটা কালসাপে পরিণত হয়। তবে সত্য হলো বিলাসবসন ছেড়ে কে দারিদ্রে্যর মধ্যে বড় হতে চায়। কারণ সুকুমাররা ধনী, পিন্টুরা গরিব। গল্পে ধনী-গরিবের ব্যবধান মুখ্য হয়ে চিত্রায়িত হয়েছে। তেমনভাবে বোঝা না গেলেও একটা ইঙ্গিত তো আছেই। একটা সময় দেখা যায়, সুকুমার আগের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছে পিন্টুর। তখন পিন্টুও ওই বাড়িতে পড়ে থাকে। ভালো লাগে হয়তো। তখন মনে হয় পেঁপেগাছটা মদন চুরি করেনি, পিন্টুই চুরি করেছে ওই পেঁপেগাছটা। বৃত্ত ভাঙার যে-আকাঙ্ক্ষা মানুষের আজন্মকাল, সে-প্রচেষ্টা সফল হয়েছে এ-গল্পে পিন্টুর চুরি যাওয়া পেঁপেগাছের সঙ্গে। এমন নগণ্য একটা বিষয়কে গল্পের ছাদে সাজানো যে, সে সাহিত্যিকের কর্ম নয়। জ্যোতিরিন্দ্রের গল্পের শরীরে ভেতরের মানুষের যে লালিত স্বপ্ন এবং তার ভেতর দিয়ে একটা বোধ, তা স্পষ্ট লক্ষ করা যায়, ‘রাইচরণের বাবরি’ গল্পে। বিষয়বস্ত্ত তেমন কোনো মুখ্য নয়, একটা উপলব্ধি আদ্যোপান্ত ধরা পড়ে। রাইচরণের দৃষ্টিনন্দন কেশবিন্যাস গল্পের প্রধান বিষয়াবলি। অকৃত্রিম তার এই কেশ নিয়ে সে সর্বদা গর্বিত। একশ পঁচিশ টাকার থিয়েটারে অভিনেতা হিসেবে কাজের চেয়ে বাবরির মর্যাদা তার ঢের বেশি থাকুক, অভাব-অভিযোগ, খলিফার দোকান থেকে জীবন চলছে চলুক, তার পরও নিজের খানদানি বাবরির মর্যাদা কোনোক্রমে ধূলিসাৎ করতে চায় না। প্রতিভা যেমন বিধাতাপ্রদত্ত, সখ বা নেশাও রুচির ওপর নির্ভরশীল, কেউ কখনো তার বোধকে বিকিয়ে সফলকাম হয় না, রাইচরণ পারেনি আপস করতে নিজের সঙ্গে। আসলকে আসল এবং নকলকে নকল বলতেই চেয়েছে। এর বাইরে সে শুধু একমাত্র ছাপোষা মানুষ।

তারিণী শেষাবধি মারা গেল। ঠেলাগাড়ি তার ওপর দিয়েই গেছে বলে লোকে বলাবলি করে। নিম্নমধ্যবিত্ত শহরজীবনের ‘তারিণীর বাড়ি বদল’ গল্পে এক পিতাকে দেখা যায়, যিনি সামান্য বেতনের প্রেসের চাকুরে, দশ-দশটা ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী নিয়ে যার বিশাল সংসার, এমন একটা সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তারিণী। কলকাতা শহরের প্রায় অভিজাত এলাকায় বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে; কিন্তু একদিন বাড়ি বদল করে বেলেঘাটার দিকে অল্প পয়সার ভাড়ায় যেতে চাইলেন। খবর শুনে তার কাছে পাওনাদাররা ছুটে আসে এবং তারা সবাই নগদ অর্থ দাবি করল; কিন্তু সে তাদের ঠিকানা দেয় এবং বলে, সময়মতো বাকি টাকা পরিশোধ করে দেবে। অথচ এককড়ি মুদি-কয়লার দোকানের রামশরণ-গয়লানি কমলাদের ওই এক কথা পাওনা টাকা না নিয়ে এক পা-ও নড়তে দেবো না, ঠেলাওয়ালাকে ধমকে দূরে দাঁড় করায়। সেক্ষেত্রে তারিণীও এককাঠি ওপরে। সে যাবেই, যেভাবে পারে। অবশেষে দেখা যায়, ঠেলাগাড়ি নিজেই ঠেলে নিয়ে যায়। কিছু রাস্তার ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী ঠেলেছিল। একে-একে সবাইকে ঠেলায় উঠিয়ে নেয়। নিজেই তখন ঠেলা ঠেলে যেতে গিয়েই এই অনাসৃষ্টি কান্ড বাধায়। এ-গল্পে মধ্যবিত্তের কষ্ট এবং যন্ত্রণার ছবি পরিষ্কার উঠে এসেছে। মানুষ কতখানি অসহায় দারিদ্রে্যর কাছে। আর্থিক অসঙ্গতি একজন মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। মানসম্মান খুইয়ে মানুষ এভাবে বাঁচতে চায় না। তাই হয়তো সমস্ত বোঝা একাই নিজের কাঁধে নিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছে, বেলেঘাটার দিকে যেতেই তার জীবনে সত্যিই কী ঘটল তার ইতিহাস কেউ হয়তো আর নেয়নি, নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। এভাবে একটা শহরকেন্দ্রিক নিম্নবিত্তের সমস্যাকে গল্পের আঙ্গিকে ফেলে পাঠকের সামনে তুলে এনেছেন এবং হয়তো সে-কারণে তিনি সার্থক একজন সাহিত্যিক। হোক গ্রামীণ অথবা নাগরিক প্রতি গল্পের বাঁকে বাঁকে জ্যোতিরিন্দ্র তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন মানুষকে, মানুষের ভেতরের আরেক মানুষকে। মনস্তাত্ত্বিক গল্প লেখার ক্ষেত্রে জ্যোতিরিন্দ্রের জুড়ি মেলা ভার। তিনি গল্পের ভাঁজে ভাঁজে যে জীবনের সন্ধান দেন, তা প্রকৃতঅর্থে জীবনের গভীর চোরাবালি থেকে সংগ্রহ করা। জীবন ও জগতের মাঝখানে যে মানুষ, তাকেই তিনি সন্ধান করে চলেন গল্পের আখ্যানভাগে। ‘নদী ও নারী’ এমনই একটি মনস্তাত্ত্বিক গল্প, জীবনআখ্যান। গল্পের দৃশ্যপটে দেখা যায়, সুরপতি-নির্মলা নৌকাযোগে পদ্মায় হাওয়া খেতে বের হয়। সেখানে আরেক দম্পতির আগমন টের পান এবং সেই আধুনিকা রমণীর রণরঙ্গিণী রূপ যেমন তাকে পরিচিত করে তোলে, তেমনি আবার গানের সুরের মাধুরীতে ভরে ওঠে রাত্রের নিমগ্নতা। একসময় তথ্যতল্লাশ করে জানা যায়, আধুনিকা রমণীর বাইরের খোলস আসলে একটা আবরণ, মূলত মেয়েটি সতী-সাধ্বী নারী, যে একজন বিকলাঙ্গ ও যক্ষ্মারোগগ্রস্ত এবং অন্ধ স্বামীকে নিয়ে ডাক্তারের নির্দেশে প্রায় তিন বছর ধরে নদীবক্ষে ভেসে বেড়াচ্ছে বেঁচে থাকার মন্ত্র জোগাতে। গল্পটির মধ্যে মানুষের ভেতরের চিত্রটি তুলে ধরার যে-প্রয়াস তা বেশ সুস্পষ্ট অনুধাবন করা যায়। মানুষকে চেনা বা তার ভেতরের মানুষটিকে বোঝাই মূলত গল্পের বিষয়বস্ত্ত, কোনো ঘনঘটা ছাড়াই গল্পটি একটা পরিণতির জায়গায় পৌঁছে গেছে। আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক গল্প ‘চন্দ্রমল্লিকা’ উত্তমপুরুষে লেখা। বন্ধুপত্নী বিনতাকে, যার স্বামী রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে, তার জন্য সমবেদনা জানাতে বর্ষা পার করে শরতের এক সোনাঝরা দিনে আগমনের গল্প। অপরেশ মরে গেছে তাই রমেশকে চাকরিটা দেওয়া হয়েছে। কারণ অপরেশের অবর্তমানে আরেকজনের চাকরি না করলে যে সংসারটা চলত না। পুত্রশোকে মা কাশীবাসী হয়েছেন; কিন্তু বিনতার কোথাও যাওয়া হয়নি। সে একটা চন্দ্রমল্লিকা হয়ে থেকে গেছে এবং থাকবে। জীবনটা হয়তো এমনই। নয়টায় ফোটে আর বারোটাই শেষ। এত স্বল্প আয়ু নিয়ে বাঁচতে হয় যাদের, তাদের আনন্দও ওই সীমিত। তার পরও কথা থেকে যায়। যতক্ষণ বাঁচল, সুন্দর হয়ে বাঁচার মধ্যেই সুখ। একটা মানুষকে সমবেদনা জানাতে এসে তার স্মৃতির ভেতর হারিয়ে নিজেকে চরমভাবে খুঁজে ফেরা এবং সেখান থেকে নিজেকে আবিষ্কার করা। সত্যিই জীবন বড় বিচিত্র, মানুষ এবং জগৎ কখনো সময়ের কাছে বাধা হয়ে যায়। কখনো মনে হয়েছে, জ্যোতিরিন্দ্র কেনো প্রেমের চেয়েও অপ্রেমের গল্প বেশি বেশি লিখতে গেলেন। তার জীবনটাই কি প্রেমহীনতায় ঠাঁসা? কখনো হিংস্র-জটিল-কুটিল অথবা আপন অস্তিত্বে বিভোর একজন মানুষ সমগ্র সৃষ্টির কাছে পরাজিত হয়। ‘গিরগিটি’ গল্পে সেই মানুষটাকে প্রত্যক্ষ করি আমরা, যার চোখে মায়াকে একটা চিতাবাঘিনী রূপে বিন্যাস করা হয়েছে। সত্যিকার মনস্তাত্ত্বিক একটা গল্প ‘গিরগিটি’ ‘প্যাঁকাটির মতো সরু জিরজিরে হাত-পা, শুকনো খটখটে ক’খানা পাঁজর, শনের মতো পাকা একমাথা লম্বা রুক্ষ চুল ও হলদে ফ্যাকাশে চোখ-জোড়া নিয়ে কালেভদ্রে যদি কখনো লোকটা তার সামনে এসে দাঁড়ায় কী পাশ কেটে চলে যায়, মায়ার মনেই হয় না একটা মানুষ, একজন পুরুষ, ঠিক বুড়ো হয়েছে বলে নয়, ওর ক্ষীণ হাত-পা, নিষ্প্রাণ চাউনি, মন্থর চলার মধ্যে এমন একটা কিছু মিশে আছে যে, মায়ার কখনো কখনো ওকে দেখলে ডুমুরতলার ওধারের পুরনো ভাঙা পাঁচিলটা কি পেঁপে-জঙ্গলের পাশের মৃত নিষ্প্রাণ সহস্রক্ষতচিহ্নযুক্ত মাদার গাছটার চেহারা  মনে পড়ে।’ মায়া বরাবরই প্রতিবেশী বুড়ো ভুবন সরকারকে এভাবেই দেখে এসেছে, একটা মানুষ কতটা অসহায়-অথর্ব হতে পারে, তা মায়া প্রত্যক্ষ করে এবং মনজুড়ে করুণা উথলে ওঠে। মায়ার দুবছরের ছোট্ট সংসার। ওর স্বামী প্রণব নয়টা-পাঁচটা চাকরি করে। প্রণবের সঙ্গে মায়ার শারীরিক সম্পর্ক, প্রণবের মুখে রাতদিন তার রূপযৌবনের অঢেল লাবণ্যের প্রশংসা শুনতে মায়ার বিরক্ত লাগে এবং সে-কারণে প্রণব ক্রমশ তার কাছে একঘেয়ে বিবর্ণ-ক্লান্তিময় হয়ে ওঠে। পাশাপাশি বুড়ো ভুবন সরকারকে ভালো লাগে, কারণ সে মায়ার পছন্দের জিনিস বা রুচি বুঝে কথা বলে, যার জন্য মায়া ওকে একটু একটু ভালোবেসে ফেলে, অথচ ক্রমে ভুবনের ভেতরের রঙটা বেরিয়ে আসে, গিরগিটি যেমন তার রং বদলায়। যখন বুড়ো ভুবন জানায়, উল্টাডাঙার শশী বায়না, বিধবা ভাগ্নির মেয়ে, সোমত্থ মেয়ে… মায়া হাসি থামিয়ে বলল, বলেন কি এই বয়সে আবার! শশীকে বলে দিন, এই বয়সে আর ওসব হয় না… পরক্ষণে ভুবন জানাল, পিপাসা যে মেটে না, পিপাসার যে নিবৃত্তি নেই। মায়া অকস্মাৎ পাথরের মতো স্থির শক্ত হয়ে যায়। নিজেই যেন নিজের মধ্যে শামুকের মতো সেঁধিয়ে যায়। মায়া ভয়ে অাঁতকে উঠলেও হঠাৎ তার কান্না পায় এবং পরমুহূর্তে যুবক স্বামীর কথা ভুলে যায়। কোমল হাতটা মরা শুকনো কাঠের গায়ে তুলে দিয়ে অবলীলাক্রমে মায়া হেসে বলল, বিশ্বাস করি, তা না হলে কি আর দুপুররাত্রে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে এই আয়নার সামনে দাঁড়াই – জ্যোতিরিন্দ্র মনস্তাত্ত্বিক গল্প লেখার ক্ষেত্রে এক বিরল প্রতিভা। তিনি উঠতি বয়সী টিনএজদের নিয়েও অনেক গল্পের আঙ্গিক নির্মাণ করেছেন। ‘নীল পেয়ালা’ গল্পটি কৈশোর-উত্তীর্ণ একটা ডকুমেন্টারি লেখা। বৈদ্যনাথ এখানে একজন দর্শক বললেই হয়, যে পৃথিবীর তাবৎ তরুণদের সমস্যা চাক্ষুষ করছে। তিপ্পান্ন বছরের একজন মানুষ, যার জীবিকার্জনের উপায় এ-জি অফিসের একটা চাকরি, দশটা-পাঁচটা ছকে বাঁধা জীবন, তার সঙ্গে পরিচয় বিবেকানন্দ রোডে মামাবাড়ি বেড়াতে আসা একটা তরুণের, বিলাসবাসনে থাকা বাবা-মা কানপুরে থাকে, গাড়ি-বাড়ি সবই আছে। ছেলেটি স্কুল ফাইনাল দেবে। বছরে দু-একবার কলকাতা বেড়াতে আসে। ভালো লাগে আবার লাগেও না; কিন্তু ছেলেটি আত্মহত্যা করতে চায়। জীবনে অনেক কিছু দেখেছে আবার দেখেনি অথচ এরই মধ্যে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে, হাতে অঢেল অর্থকড়ি, ভালোবাসা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ হয়তো তার কোনো কিছুতেই কমতি নেই। তার পরও মরতে চায় তার মন, এমন একটা জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারে না বৈদ্যনাথ; কিন্তু পার্কে বেড়াতে আসা একটা সুন্দর গায়ের রঙের মেয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বৈদ্যনাথ যখন জানায়, জীবন বাস্তবিক সুন্দর, ওই মেয়েটির মতোই, এমন সময় ছেলেটি দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে এবং বলে, আপনি আরেকবার আমার মৃত্যুর পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়বার মরতে তৈরি হতে বলছেন…। এখানেই বোঝা যায় যে, কঠিন কোনো ব্যামো নয়, প্রকৃতঅর্থে ছেলেটি আপনজনের সান্নিধ্য বঞ্চিত নিরাশায় নিমজ্জিত, ব্যর্থতা-নিসঙ্গতা তাকে কুরে কুরে নিঃশেষ করছে। গল্পটি তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী একটি উল্লেখযোগ্য রচনা, অনেক চাওয়া-পাওয়ার পরও আরো অনেক বাকি রয়ে যায়, যার ছবি ‘নীল পেয়ালা’য় ফুটে উঠেছে সুস্পষ্ট। এখানেই জ্যোতি অনবদ্য। আলোর অনেক বিচিত্র অনুভূতি দিয়ে জীবনের চলমান নৌকাটিকে কখনো কূলে নয়তো গভীর সমুদ্রে নিয়ে যেতে পারেন। বিষয়ের পাশাপাশি গল্পের প্রকরণগত বৈশিষ্ট্যকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তো প্রতীক-প্রয়োগে নিরাসক্তি, সূক্ষ্ম কবিত্বময়তা সৃষ্টি এবং গভীর অভিজ্ঞতাকে তিনি সমন্বিত করেছেন, সাহিত্য সৃজনে মানুষের অস্তিত্বের শিরায়-উপশিরায় গাছের গভীর সঞ্চারকে রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারে উদ্বোধিত করেছিলেন, তাই আমরা জ্যোতিকে সার্থক একজন উত্তরাধিকার হিসেবে শনাক্ত করতে পারি।