দুটি কবিতা

মিনার মনসুর

আমি শুধু তাহাদের যাওয়া-আসা দেখি

মুখোমুখি বসে আছি। যেন কতো কাছে। শরতের সপ্রতিভ মেঘের মতো ওরা আসে। আপনমনে হাসে কদাচিৎ। ফের ভেসে যায়। তার অবাধ্য চুল এসে ডাকাতের মতো হামলে পড়ে কামরাঙা ঠোঁটে। চলে খুনসুটি। আমার ভারি ঈর্ষা হয়।

একদা যার পদভারে প্রকম্পিত হতো বিশ্ববেহায়ার বুক – তাকেও হেঁটে যেতে দেখি টলোমলো পায়ে। কাকতাড়ুয়ার মতো বেশভুসা। রুক্ষ চুল। উদ্ভ্রান্ত চাহনি। আমার ভারি মায়া হয়।

যাঁদের বটবৃক্ষ বলে জেনেছি চিরকাল – চীনের প্রাচীর পার হয়ে তাঁরাও আসেন। কত দীর্ঘ অদর্শন! বুকের পাঁজর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে তৃষ্ণার্ত হৃদয়। কাঙালের মতো বাড়িয়ে দেয় তার দগ্ধ হাত। তাঁরা ব্যস্ত ভীষণ। মধ্যরাতের ট্রেনে নাকি যেতে হবে বহুদূর। কারো দিকে তাকাবার ফুরসত কোথায়! আমার ভারি কান্না পায়।

মুখোমুখি বসে আছি। ওপারে প্রিয় মানুষের দীর্ঘ কাফেলা। যেন কত কাছে। হৃদয় লাফিয়ে ওঠে। দেয়ালে ঠুকে যায় তার মাথা। আমি শুধু তাহাদের যাওয়া-আসা দেখি। তারাও কি আমাকে দেখে? ফেলে দীর্ঘশ্বাস?

 

আমি আর অ্যানাকোন্ডা

সে আমাকে দ্যাখে। আমি তাকে। মুখোমুখি বহুকাল। বিশাল এক ডুবোপাহাড়ের মতো তার বিদঘুটে মুখটিই কেবল ভেসে আছে। দেহের বাকি অংশ অদ্ভুতভাবে মিশে আছে থকথকে কাদাজলে –  যেন সুররিয়ালিস্ট কোনো ক্ষ্যাপাটে শিল্পীর রঙের কারসাজি সব।

তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আলস্যের মখমল চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা রহস্যময় যুবতীর মতো নিরাসক্ত চোখে সে আমাকে দ্যাখে। আমি তাকে। আমার বড্ড তাড়া। অগোছালো পড়ে আছে সব। স্বপ্ন চুলোয় যাক। সামান্য পাথেয় তো অন্তত থাকা চাই অনিচ্ছুক এই ভ্রমণের অনিশ্চিত পথে!

কিছুই হয় না করা। শুধু নিষ্ফল হাত-পা ছোড়া। শুধুই নাদান হৃৎপিন্ডের করুণ রক্তস্রোতে নিরন্তর ভেসে যাওয়া। অ্যানাকোন্ডার আশ্চর্য শীতল অতল চোখের শেকলে আটকে আছে পা।