দুটি কবিতা

হাসান হাফিজ

 

 

ডুবে গেছে কুসুমিত চাঁদ

 

অনুরাগ কী সূক্ষ্ম কোনো ব্যথা?

সুনিপুণ লতিয়ে সে ওঠে

ভালোবেসে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে জড়ায়

জাগরণ ভিন্ন কোনো গত্যন্তর নাই যে-ভুবনে

ঘুমের বন্দর দূরে অত্যন্ত সুদূরে

এ জীবনে ধারেকাছে পৌঁছানো দুষ্কর।

অনুরাগে হয়তো কোনো লুকোনো চুরোনো পাপ

স্মৃতিভ্রষ্ট ভাপও কিছু সংমিশ্রিত আছে

ভালোবাসা পুণ্য জলে তাতে শুদ্ধ পরিস্রুত

হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুষি মনের ভিতরে

ওগো মন দুঃখজাগানিয়া পলকা মন

যে-গান শোনাবে বলে কথা ছিল

স্মিত হেসে বিরহের পাপড়িগুচ্ছ ছড়াতে ছড়াতে

কোথায় যে চলে গেছে নিজেও জানে না

যেখানে গিয়েছে ডুবে কুসুমিত চাঁদ

সেই পরমাদ সাধ সঞ্চয়ের সুধাপাত্রে

একা একা জীবনযাপন করে সঙ্গী কেউ নাই।

কবির কেমন কষ্ট

 

অন্ধতা তো আছেই কবির।

শব্দ খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ, হয়রানির সীমা শেষ নাই।

উপযুক্ত শব্দ হাতড়ে বার করা

অতিশয় সুকঠিন কাজ। পাথর সরে না প্রভু।

রবীন্দ্রনাথের নেই নৃত্যনাট্যে যেরকম আছে

‘তোমা লাগি যা করেছি কঠিন সে কাজ

আরো সুকঠিন আজ তোমারে সে-কথা বলা।’

কবির সিদ্ধির পথে রক্ত ঝরে

প্রাণঘাতী কাঁটার জখমে হয় হৃৎপিন্ড বিধুর

শ্বাসকষ্ট রক্তচাপ স্নায়ু বিকলন ঘোর

এইসব উপসর্গ নিশ্চিত রয়েছে

তারপরও কবির মগজে ঘূর্ণি –

কবিতার জন্যে এই লিপ্ত থাকা

পাথরে পুষ্পিত ছবি ফোটানোর

হাড়ভাঙা মর্মভাঙা শ্রম

মজুরি নিতান্ত কম, পোষায় না

জ্ঞানপাপী মানুষেরা এই কষ্ট বুঝবে না

বোঝার শক্তিও হয়তো নাই

সুতরাং দোষ দিয়ে তুষ্টি খোঁজা অনুচিত কাজ।