মারুফ রায়হান
ফ্ল্যাটের বিড়াল
স্বজন স্বজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন বিদগ্ধ এক প্রাণ
বসে থাকে দিনভর সূর্যের থাবায় পিঠ দিয়ে
ভঙ্গিটি আয়েশি নয়, ঋজু, উৎসুক, গভীর চিন্তাশীল
নিজ শব্দ নেই কোনো, সাড়া নেই সশব্দ সংস্রবে
তার চোখদুটো দেখি – নিপাট বিড়াল-চোখ
এই গ্রহ ভেদ করে দূর কোনো নির্জন নক্ষত্রে
ছড়িয়ে পড়েছে দৃষ্টি, সেখানে রয়েছে বুঝি
কাক্সিক্ষত আরাধ্য স্বস্তি, ভাব –
বিনিময়যোগ্য বিড়ালজনম
এই শহরের ব্যস্তত্রস্ত ইঁদুরজীবন
যত প্রতারণা, রুদ্ধশ্বাস-ছোটা, প্রভূত তাড়না
কোনোদিকে নেই তার সাগ্রহ ভ্রুক্ষেপ
তবু সব দ্যাখে, জানে সমস্তই, বোঝে সবিশেষ
বসে থাকে স্থাণু, প্রশান্ত সুস্থির, যেন
সুদক্ষ শিল্পীর ক্যানভাসে চিরসমাসীন
ধূসর রোমশ লেজ তার সূক্ষ্ম তরঙ্গপ্রবণ
বলে দিচ্ছে তুলিতে ফুটিয়ে তোলা জীব নয় কোনো
বরং সে আঁকে মগ্নমোহে অজ্ঞাত জীবনচক্র
সেইখানে মনুষ্যসমাজ নেই, নেই নৃশংসতা
বেজি-দন্তে নেই সুদর্শন সাপের মসৃণ, আর
সাপ-মুখে নেই কোনো শাপগ্রস্ত মুমূর্ষু মূষিক
‘ধ্যানী দার্শনিক’ সম্বোধন যথাযথ হবে নাকি
বিড়ালের আড়ালে সে নয় বুঝি
আমারই অপর সত্তা!
ক্লিভেজ
অদৃশ্য হওয়ার জাদু জানে ওই
জলজ্যান্ত রেখা, গিরিখাদ
নিমগ্ন শিল্পীর আঁকা আশ্চর্য অগাধ
শার্প লাইন, রহস্য আর ভ্রান্তি অথই
টলটলায়মান টিলা তার পথ-রচয়িতা
এ-রেখা বিমূর্ত ফণা তুলত না যদি
বিব্রত বর্তুল দুটি না হতো জয়িতা
সহিষ্ণু অনুসরণ করো তার গতি, বোধি,
এবং লম্ফন – তার গন্তব্য কোথায়
কোন সুগভীর শিল্পের কোঠায়
একখ- ওড়না বা আচ্ছন্ন আঁচল
মেঘবস্ত্র শুধু, শুধু ছল
কেবল উছিলা
পূর্ণিমার দুটি চাঁদ-অভিমুখী টানটান ছিলা
জোছনা-লুকনো ওই অন্ধকার অন্ধ করে দিলো
কত চক্ষুষ্মান
তার টানে কত না পাপীর হলো শির খানখান
ক্লিভেজ কী ভাঁজ!
আহ্ বিনা মেঘে সূক্ষ্ম বাজ
সূর্যরশ্মিও এইখানে এসে ভাজা-ভাজা
লাগ ভেলকি, বাহাত্তরে মড়া অকস্মাৎ তরতাজা!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.