দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন গভীরতাহীন চমক দেখা যায় রিজিয়া রহমান

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : স্বকৃত নোমান

স্বকৃত নোমান : কদিন আগেই শেষ হলো একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
রিজিয়া রহমান : বইমেলা লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্কের ব্যাপার। বইমেলা শুরু হয় একটা উদ্যম দিয়ে, শেষ হয় বিষাদ দিয়ে। শেষ হলে মনে হয়, আহ্, শেষ হয়ে গেল। প্রতিবছরই বইমেলার সময় একটা উদ্দীপনা লক্ষ করা যায় বাংলা একাডেমির মাঠে। লেখকদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ লেখকদের মধ্যে বইমেলা একটা বিশাল উদ্দীপনার বিষয়। এরা সারা বছরই বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে। কে কয়টা বই বের করল ইত্যাদি ব্যাপার থাকে। খুব আশা এবং উদ্যমে তাই মেলার জন্য অপেক্ষা করে। কোনো কোনো লেখক প্রেসে সারারাত বসে থেকে বইটা করিয়ে নেয়। তাদের কাছে মনে হয় এটাই জীবনের সবচাইতে বড় উৎসব।
স্বকৃত নোমান : মেলার খারাপ কোনো দিক কি আপনার চোখে পড়েছে বা শুনেছেন?
রিজিয়া রহমান : হ্যাঁ, ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। আমি শুনেছি, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রকাশকরা টাকা নিয়ে বই করেন। আমাদের সময়ে প্রকাশকরা টাকা নিয়ে বই করতেন না, বরং উলটো রয়্যালিটি দিতেন। যেসব ছেলেমেয়ে টাকা জোগাড় করতে পারে না, তাদের বই করার সুযোগ হয় না। এতে তারা খুবই মর্মাহত হয়। সুতরাং এ-দিকটা নিয়ে চিমত্মা করার আছে। মেলার অনেক দিকই তো উন্নত হচ্ছে। কিন্তু যাঁদের নিয়ে মেলা, যাঁদের বই নিয়ে মেলা – তাঁরা যাতে ভালোভাবে মেলায় আসতে পারে, বই করার খরচটা যাতে তাঁদের সাধ্যের বাইরে না যায়, সে-চিমত্মা করতে হবে। অনেক লেখক আছেন যাঁরা ভালো লেখেন, তাঁদের নাম কেউ জানে না, তাঁদের বই প্রকাশ করা উচিত।
স্বকৃত নোমান : এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি?
রিজিয়া রহমান : শুধু মাঠটা ভাড়া দিয়েই বাংলা একাডেমির কাজ শেষ নয়, আরো কিছু দায়িত্ব আছে। কারা কারা বই ছাপতে চান আগে থেকে তাদের নাম, বইয়ের নাম, বইয়ের বিষয় ইত্যাদি তালিকা করে পা-ুলিপি রিজার্ভে রাখতে হবে। পা-ুলিপি ভালো হলে প্রকাশককে বলবে। প্রকাশক যদি রাজি না হন তবে বাংলা একাডেমি অনুদান দিয়ে বইগুলো করবে। এরকম করলে মেলা আরো প্রাণবন্ত ও সত্যিকারের একটি সুন্দর মেলা হবে।
স্বকৃত নোমান : মানসম্পন্ন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন?
রিজিয়া রহমান : আমি আগেই বলেছি যে, এ-ব্যাপারে বাংলা একাডেমির একটা ভূমিকা থাকা উচিত। স্ট্রংলি এটাকে কন্ট্রোল করা উচিত। প্রকাশকদের নিয়ে একটা কমিটি করতে হবে। সুপ্রিম পাওয়ার থাকবে বাংলা একাডেমির। যেহেতু তারা বাংলা একাডেমি। শুধু মেলা করাই তাদের দায়িত্ব নয়, তাদের আরো দায়িত্ব আছে। বইমেলা তারা করছেন; কিন্তু সেই মেলায় কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটাও দেখা উচিত। বাংলা একাডেমিতে অনেক যোগ্য লোক আছেন, এ-ব্যাপারে তাদের চিমত্মা করতে হবে। প্রতি মেলায় এত বই প্রকাশিত হয়, এরপরও বাংলা সাহিত্য উন্নত হয় না। লিখলেই যে একটা বই প্রকাশ করা যায়, তা আমরা জানতাম না। আমাদের সময় এত পুরস্কারও ছিল না। চেষ্টা ছিল ভালো লেখার। এখন তো স্টান্ট বা চমকের যুগ। সাহিত্য ক্ষেত্রে তো বটেই, দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন গভীরতাহীন চমক দেখা যায়। বাজার অর্থনীতিতে যেটা হয় আর কী। আমি আশা করি, আমাদের সাহিত্যিকরা এ-চমকের বাইরে আসবেন। নিশ্চয়ই এ-অর্থনীতি দীর্ঘস্থায়ী থাকবে না, বদলে যাবে। কিন্তু লেখার মান তো অনেক নেমে গেল, লেখকের মান তো অনেক নেমে গেল। সুতরাং লেখকের একটা দায়িত্ব আছে এখানে। তিনি ঔপন্যাসিক হোন, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার বা কবি – যা-ই হোন না কেন। সেই কমিটমেন্ট ও দায়িত্বটা হচ্ছে সাহিত্যের প্রতি, বাংলা ভাষার প্রতি এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি। এ তিনটি জিনিস আমাদের মনে রাখা উচিত। এটা আমি সহজভাবে বুঝি।
স্বকৃত নোমান : অনেক লেখক অভিযোগ করেন, প্রকাশকরা লেখকদের ঠিকমতো রয়্যালিটি দেন না। ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রিজিয়া রহমান : আগে ধরাবাঁধা একটা নিয়ম ছিল এ-ব্যাপারে। যেমন আমার বইগুলো মুক্তধারা করেছে প্রথম অবস্থায়। তখন তো লেখকদের সম্মান ছিল। লেখক রয়্যালিটি চাইতেন। কত পার্সেন্ট দেবেন প্রকাশক তা বলতেন। প্রকাশক রাজি হলে কন্ট্রাক্ট সাইন করে, সাক্ষী রেখে লেখককে অগ্রিম দিয়ে তারপর পা-ুলিপি নিতেন। প্রতিবছর বৈশাখ এলে কত কপি বই বিক্রি হয়েছে, কত কপি ছাপিয়েছে তার হিসাব দিত এবং রয়্যালিটি পাঠিয়ে দিত। তার মানে তখন একটা কমিন্টমেন্ট ছিল। এখন দেখছি অনেক প্রকাশকই লেখকদের সঙ্গে কোনো চুক্তিপত্রই করেন না। এটা লেখকের জন্য যেমন ক্ষতিকর, প্রকাশকের জন্যও ক্ষতিকর। লেখক যে-কোনো সময় তাঁর বই তুলে নিয়ে যেতে পারেন। অনেক প্রকাশক আছে বই নিয়ে তিন-চার বছর ফেলে রাখেন। নিয়ম হচ্ছে যে, এত বছরের মধ্যে না ছাপলে সে ছাপতে পারবে না। বাংলাদেশের কপিরাইট আইন যাঁরা দেখেন তাঁদের উচিত এটা দেখা যে, লেখকরা ঠিকমতো রয়্যালিটি পাচ্ছেন কিনা।
স্বকৃত নোমান : এবারের বইমেলায় তো আপনার চারটি বই প্রকাশিত হলো। কোনটিতে বেশি সাড়া পেলেন?
রিজিয়া রহমান : মাত্র তো বই বেরিয়েছে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ যে-বইটা করেছে, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সেটা আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। ঐতিহ্য প্রকাশনীকে পা-ুলিপি দিয়েছি দেরি করে, তাই ছাপতেও দেরি হয়েছে। বই দেরিতে পেয়েছি। প্রকাশকদের এখনো জিজ্ঞেস করিনি কী রকম সাড়া মিলল। আসলে এই বয়সে এসে এত বই লেখার পরে আর সাড়া নিয়ে ভাবি না। বইটা ঠিকমতো হলো কিনা, ভুলত্রম্নটি বেশি রইল কিনা, সময়মতো বাজারে গেল কিনা, পাঠকদের হাতে পৌঁছল কিনা – এটুকু পর্যন্ত চিমত্মা করি। প্রথম প্রথম সাড়া নিয়ে চিমত্মা করতাম, এখন আর করি না।
স্বকৃত নোমান : নদী নিরবধি তো আপনার স্মৃতিকথামূলক দ্বিতীয় গ্রন্থ। অভিবাসী আমি ছিল শৈশবকেন্দ্রিক। ওটা পড়ে জেনেছি ছোটবেলা থেকেই আপনি বই পড়তেন খুব। বই পড়তে পড়তেই কি লিখতে ইচ্ছে হলো?
রিজিয়া রহমান : বই পড়তে পড়তে লিখতে ইচ্ছে হয়েছে কিনা এখন আর মনে নেই। তবে হ্যাঁ, আমি খুব বই পড়তাম। একেবারে বইয়ের পোকা ছিলাম যাকে বলা যায়। একদিন লিখে ফেললাম একটা কবিতা। কবিতা থেকে গল্প। এভাবে আসেত্ম আসেত্ম লিখতে শুরু করি।
স্বকৃত নোমান : নদী নিরবধিতে কোন সময়কালকে প্রাধান্য দিয়েছেন?
রিজিয়া রহমান : আগের বইটাতে, অভিবাসী আমি, ছিল শৈশবের শুরুটা। নদী নিরবধিও শৈশব-কৈশোর নিয়ে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত আমরা যে-শহরে ছিলাম সে-পর্যন্ত আমি লিখব। এত বছর পর আমি লিখতে গিয়ে দেখছি, এ-জীবনটা, মানে পরিণত জীবনের চাইতে শৈশবজীবনটাই আসল, খাঁটি। কারণ, ওই সময় পৃথিবীতে সব নতুন। চোখের সামনে পর্দার পর পর্দা খুলে যাচ্ছে। সবকিছু জানা-চেনা-বোঝা – এটা একটা বিশাল অভিজ্ঞতা মানুষের জীবনের জন্য। ওই অভিজ্ঞতাগুলোকে ভিত্তি করে মানুষ আসেত্ম আসেত্ম অন্য জিনিসগুলোকে উন্মোচিত করে, বা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রকৃত পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের পরিচয় শৈশব থেকে শুরু হয়। তাই শৈশবটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।
স্বকৃত নোমান : সেক্ষেত্রে আপনার স্মৃতিকথায় শৈশবের অংশটা বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে না?
রিজিয়া রহমান : হ্যাঁ, হচ্ছে। শেষের দিকটা লিখতে গেলে অত বড় হবে কিনা জানি না। এত কিছু বলার থাকবে কি না তাও জানি না।
স্বকৃত নোমান : কত সময় নিয়ে নদী নিরবধি লিখেছেন?
রিজিয়া রহমান : ২০০৪ থেকে লেখা শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তারপর ঐতিহ্য প্রকাশনী প্রথম বইটি করল। আবার সবাই তাগাদা দেওয়া শুরু করল। এবারেরটা ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। বাকিটা লেখা শুরু করেছি। কালি ও কলমেও কিছু ছাপা হয়েছে।
স্বকৃত নোমান : জীবনের যেসব প্রসঙ্গ বলতে চেয়েছেন সব কি বলতে পেরেছেন বইটিতে?
রিজিয়া রহমান : পৃথিবীটা তো অনেক বড়। যদিও গ্রহ-নক্ষত্র, সৌরম-লী থেকে পৃথিবী খুবই ছোট, তবে পৃথিবীটা মানুষের জন্য অনেক বড়। অনেক মানুষ, অনেক জীবন, অনেক কিছু এখানে। এখন মনে হয় যে, শৈশব থেকে শুরু করে মানুষের জীবনটা এত বড় যে, সব তো বলে শেষ করা যাচ্ছে না, আরো বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখানে একটু সংক্ষিপ্ত করে বলছি। না হলে ওই একই সময়ের কথা, পরিবেশ আর এত ঘটনা বলতে বলতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং সব কথা কি সবসময় বলা যায়? কিছু তো থেকেই যায়।
স্বকৃত নোমান : আত্মজীবনীতে জীবনের সব প্রসঙ্গ বলা আসলে কতটা জরুরি?
রিজিয়া রহমান : আমার মনে হয় না জরুরি বলে কোনো বাধ্যবাধকতা আছে। যিনি লিখবেন স্মৃতিকথা, তাঁর স্মৃতিতে যতটুকু আছে, যেটা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে, যেটা তাঁর মনে পড়ে, তিনি সেগুলোই সাধারণত লেখেন। শৈশবে তো লুকাবার কিছু নেই। জরুরি বা অজরুরিও কিছু নেই। তাঁর যে পরিবেশ, তাঁর যে-বন্ধু, মা-বাবা, বাড়িঘর, চারপাশ, প্রকৃতি – সে যা দেখেছে তাই লেখে। এখানে জরুরি কথাটা আমি চিমত্মা করি না।
স্বকৃত নোমান : আপনি তো মূলত ঔপন্যাসিক। উপন্যাস না লিখে স্মৃতিকথা রচনায় কেন উদ্বুদ্ধ হলেন?
রিজিয়া রহমান : না, আমাকে যেভাবে ঔপন্যাসিক হিসেবে ট্রেডমার্ক করা হয়েছে, আমি কিন্তু তা নই। আমি প্রথমে কবিতা দিয়েই শুরু করেছিলাম, তারপর অনেকগুলো ছোটগল্প বেরোনোর পরেই উপন্যাস লেখা শুরু করেছি। স্মৃতিকথা লেখার জন্য কেন উদ্বুদ্ধ হয়েছি তা বলেছি আমার অভিবাসী আমি বইটির ভূমিকায়। আমি মনে করি, আমার সময়ে যাঁরা জন্মেছেন – যেমন আমি, হাসান আজিজুল হক, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আমরা কাছাকাছি সময়ের। ওই সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমি দেখেছি। তখন আমি খুবই ছোট। তারপর দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, ভারত-পাকিস্তানের বিভক্তি, রাজনৈতিক টানাপড়েন, রাজনৈতিক পরিবর্তন – এই যে অস্থিরতার সময়টা, এ-সময়টা আমি দেখেছি। ওই সময়টা আমাদের রাজনীতি, সাহিত্য, সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি ও আমার সমসাময়িক যাঁরা তাঁদের স্মৃতিকথায় এ-কথাগুলোই বলেছেন। আমার তখন যে-বয়স, সেই বয়সটায় এসব ঘটনা মনের ওপর ছাপ ফেলে। তাই স্মৃতিকথা রচনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া। তাছাড়া তখনকার সমাজ, পরিবেশের সঙ্গে এখনকার ব্যবধান বেড়েই চলেছে। সুতরাং ওই সময়টাকে ধরে রাখার জন্যই লেখা। এগুলো তো ভুলে যাই। যদি লিখে রাখি তাহলে বই উলটে দেখে নিতে পারি যে, এ-সময়টায় ওই ঘটনা ঘটেছিল।
স্বকৃত নোমান : আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা – সাহিত্যের এই ধারায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? কেমন লেখা হচ্ছে?
রিজিয়া রহমান : আত্মজীবনী যদি সেরকম সাহিত্য রসসমৃদ্ধ হয় তাহলে খুবই ভালো। এক ধরনের উপন্যাসকে বলে আত্মজৈবনিক উপন্যাস। এ-ধারার রচনা উপন্যাসের চেয়েও অনেক চমকপ্রদ ও বাস্তবধর্মী হতে পারে। সুতরাং এটা উপন্যাসেরই একটা শাখা হিসেবে ধরা যায়। বিচিত্র মানুষ, সমাজ, পরিবেশ সবকিছুই তো আছে। সুতরাং এটাকে আলাদা কিছু আমি মনে করি না।
স্বকৃত নোমান : একজন সৃজনশীল লেখক স্মৃতিকথা লিখতে গেলে তাঁর মৌলিক লেখা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না?
রিজিয়া রহমান : না, আমার তো তা হয়নি। তার কারণ, আমার যখন যেটা লিখতে ভালো লাগে, সেটা আমি লেখি। আমাকে যে সারাক্ষণ উপন্যাস আটকে রাখবে সেটা আমি মানতে রাজি নই।
স্বকৃত নোমান : এবারে প্রকাশিত আপনার আজব ঘড়ির দেশে বইটি কিছুটা ব্যতিক্রম বলেছিলেন? কেন ব্যতিক্রম? শিশুদের কোন বিষয়টি এখানে গুরুত্ব পেয়েছে?
রিজিয়া রহমান : এটা আসলে সায়েন্স ফিকশন। পৃথিবীর জন্ম বা উৎপত্তি থেকে পৃথিবী কত স্তর পরিবর্তন করে, কীভাবে আবহাওয়া, প্রাণীর বিবর্তন হতে হতে আধুনিক পৃথিবী পর্যন্ত মানুষ এলো, সেই পর্যন্ত সময়টাকে আমি এটার মধ্যে ধরতে চেষ্টা করেছি। খুব উপভোগ্য করে কিশোর উপন্যাসের ধারায় আমি এগুলো উপস্থাপন করেছি। বাংলাদেশের কিশোরদের জন্য এটা খুবই শিক্ষামূলক একটা বই। এটা তারা উপভোগ করবে এবং অনেক কিছু শিখতে পারবে।
স্বকৃত নোমান : বাংলাদেশের সমকালীন শিশুসাহিত্য সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রিজিয়া রহমান : ভালো হচ্ছে। তবে একটা জিনিস, শিশুদের জন্য কিন্তু আলাদা একটা ভাষা আছে। শিশুদের জন্য ভাষা আলাদা, কিশোরদের জন্য আলাদা আবার বড়দের জন্য আলাদা। অনেকে ভাষার এ-পার্থক্যটা ধরতে পারেন না। ফলে ছোটদের জন্য বড়দের ভাষা ব্যবহার করেন। অনেকে ভালো লিখছেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তো খুব ভালো কাজ করেছেন। আরো অনেকে আছেন। সবার নাম করতে চাই না এখানে।
স্বকৃত নোমান : প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই কালে শিশু-কিশোররা আদৌ কি সাহিত্য পড়ছে?
রিজিয়া রহমান : প্রযুক্তির উৎকর্ষ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অগ্রগতি। অগ্রগতি বন্ধ তো হয়নি। একসময় রেডিও-টেলিভিশন
ছিল না। বই ছিল আমাদের বিনোদন। এখনকার ছেলেমেয়েদের অনেকে টেলিভিশনেই সবকিছু দেখে। অনেকে একেবারেই পড়ে না। টিভি সিরিয়ালে বা কম্পিউটারে অনেক কিছু পেয়ে যায়। শিশুদের জন্য বই পড়ার অভ্যাসটা করে দেওয়া নির্ভর করে তার মা-বাবার ওপর। আমার ছেলেকে ছোটকাল থেকে আমি গল্প বলতাম, গল্প পড়ে শোনাতাম। তাতে তার এমন নেশা হয়েছে যে, বই ফুরিয়ে গেলে বই কিনে দিতে হতো। নইলে কান্নাকাটি করত। তো আসেত্ম আসেত্ম যদি বইয়ের অভ্যাস হয়ে যায় তবে আর কোনো সমস্যা থাকে না। সে বই পড়বেই।
স্বকৃত নোমান : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উপন্যাসচর্চার অবস্থা সম্পর্কে যদি বলেন।
রিজিয়া রহমান : সবার উপন্যাস তো আমি পড়ার সুযোগ পাই না। এটা তাই বলাও মুশকিল। তবে এখন নতুনরা নতুনভাবে চিমত্মা করছে। তাদের ভাষা অন্য, তাদের চিমত্মা, প্রকাশভঙ্গি অন্য। আরো কিছুদিন না গেলে এ-সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
স্বকৃত নোমান : অনেকে বলেন, উপন্যাসচর্চায় একটা বন্ধ্যাকাল চলছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো ঔপন্যাসিক বেরিয়ে আসছে না। এটা কেন?
রিজিয়া রহমান : না, সবাইকেই যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হতে হবে এমন তো কথা নেই। আমাদের দেশে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরও কিন্তু অনেক বড় লেখক এসেছেন। যেমন শহীদুল্লা কায়সার, শামসুদ্দিন আবুল কালাম, আবু জাফর শামসুদ্দীন। এঁরা নিঃসন্দেহে ক্ল্যাসিক লেখক। তাঁরা তাঁদের সময়কে ধরতে পেরেছেন। এখনকার ছেলেমেয়েরা পড়ে খুব কম। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন ঔপন্যাসিক হতে গেলে একটা ধারাবাহিকতা লাগে। বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম উপন্যাস এনেছেন বাংলা সাহিত্যে। তারপর শরৎচন্দ্র। তারপর আধুনিক উপন্যাস কিছু লেখা হয়েছে। আধুনিক উপন্যাস প্রবর্তন করলেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর যে-ধারাটা এলো, কাউকে পথ বেঁধে দিতে হয়নি, আসেত্ম আসেত্ম উঠে এসেছে। তো দুশো বছরের যে-ধারা সেটা এখানে পঞ্চাশ-ষাট বছরে তুলনা করাটা মনে হয় ঠিক হবে না।
স্বকৃত নোমান : বাংলাদেশের উপন্যাস সাহিত্যের ভবিষ্যৎ কী? আপনার কী মনে হয়?
রিজিয়া রহমান : মানুষ যদি উপন্যাস পড়ে তাহলে ভবিষ্যৎ ভালো, না পড়লে খারাপ, এই আর কি।
স্বকৃত নোমান : জনপ্রিয় উপন্যাস ও মূলধারার উপন্যাস, অনেকে উপন্যাসকে এ-দুটি ধারায় ভাগ করে থাকেন। আপনি কীভাবে দেখেন বিষয়টি?
রিজিয়া রহমান : জনপ্রিয় উপন্যাস বা মূলধারার উপন্যাস কথাটির মধ্যে আমার আপত্তি আছে। উপন্যাস সবই উপন্যাস। একজন লেখকের একটা উপন্যাস খুবই জনপ্রিয় হতে পারে, আরেকটা হয়তো ভারি, তথ্যভিত্তিক, সেটা খ্যাতি পেতে সময় লাগে। তাই আমি আলাদা করতে রাজি নই। তবে কিছু আছে চটুল উপন্যাস। অনেক ভালো উপন্যাসও অনেক জনপ্রিয় হতে পারে। শেষের কবিতা অত্যন্ত ভালো উপন্যাস, কিন্তু অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই আমি বিভক্ত করতে রাজি নই। কিছু চটুল, অগভীর উপন্যাস আছে। যেগুলো ছেলেমেয়েরা পড়লে তাদের সময় কাটে, তারা উপভোগ করে। জীবনের গভীরতাহীন এবং বাস্তব থেকে একটু দূরে। এ-ধরনের উপন্যাস খুব বেশি তো আমাদের দেশে লেখা হয় না।
স্বকৃত নোমান : হয় আপা। বইমেলা এলেই দেখা যায় এসব চটুল উপন্যাস।
রিজিয়া রহমান : সেক্ষেত্রে টাকা থাকলেই যে একাই একজন লেখক হয়ে যাবে, সেটা কোনো কথা নয়। আমার কাছে টাকা আছে, আমি প্রকাশককে টাকা দিয়ে বই করে ফেললাম ইচ্ছেমতো – এটা তো মানা যায় না। সেক্ষেত্রে কোন বইগুলো মেলায় প্রকাশিত হবে আর কোনগুলো হবে না, বাংলা একাডেমির বোদ্ধারা পড়ে দেখুন না এগুলো সাহিত্যের জন্য পদবাচ্য হয় কিনা!
স্বকৃত নোমান : শিল্পচর্চার জন্য জনপ্রিয়তা কি ক্ষতিকর?
রিজিয়া রহমান : অনেক সময় ক্ষতিকর, অনেক সময় ক্ষতিকর না। অনেক সময় উদ্বুদ্ধ করে, অনেক সময় ক্ষতি করে। ক্ষতি করে এভাবে, যদি লেখক অত্যন্ত আত্মতৃপ্ত হয়ে যান, বা চান যে পাঠকরা আমাকে এভাবে ভালোবাসুক। পাঠক কী কী পছন্দ করে লেখককে তাই লিখতে হবে। কেন? একজন লেখক তো সেটা করতে পারেন না। তিনি কী দেবেন সেটাই পাঠক গ্রহণ করবে – এটা হওয়া উচিত। এটা ক্ষতিকর। আবার ভালো করে এ-কারণে যে, একজন লেখক জনপ্রিয় যদি হন তাঁর লেখা পাঠকরা বেশি পছন্দ করে। কোন বয়সী পাঠক, গভীর পাঠক না অগভীর পাঠক, সেটা আমি এ-মুহূর্তে বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। জনপ্রিয়তা অনেক সময় লেখককে উন্নতও করে। সুতরাং জনপ্রিয়তাকে আমি দোষের কিছু মনে করি না।
স্বকৃত নোমান : আপনার উপন্যাসের ভাষায় একটা স্বাতন্ত্র্য আমরা দেখতে পাই। উপন্যাসের ভাষা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
রিজিয়া রহমান : ২০১১ সালে বসে তো আমি নিশ্চয়ই বঙ্কিমের ভাষা বা প্যারীচাঁদ মিত্রের ভাষা কি তাঁর পরবর্তী ঔপন্যাসিকদের ভাষা ব্যবহার করব না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার পরিবর্তন হবে, ঔপন্যাসের ভাষারও পরিবর্তন হবে। আমরা যেমনভাবে কথা বলি, যেমনভাবে চিমত্মা করি, উপন্যাসের ভাষা তেমনই হবে। তার মানে এটা নয় যে, একটা নিম্নমানের বাংলা, একটা অশুদ্ধ বাংলা দিয়ে লিখব। লেখার ভাষাটা উন্নত হতে হবে।
স্বকৃত নোমান : অনেকে বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে এখন একটা নৈরাজ্য চলছে। আপনার কি তাই মনে হয়?
রিজিয়া রহমান : হ্যাঁ, নৈরাজ্য তো দেখতে পাচ্ছি। আমি স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় ‘ভুল’ বানান ভুল লিখেছিলাম। আমার ক্লাস টিচার যিনি বাংলা পড়াতেন তিনি আমাকে ‘ভুল’ শব্দটি পঁচিশ বার লিখিয়েছিলেন। আমি জীবনে আর ‘ভুল’ বানান ভুল করিনি। বাংলা বানান নিয়ে একটা উদ্ভট নিয়ম চলছে। আমরা যেরকম বানান শিখেছি তার কিছু বানান বাংলা একাডেমি বদলে প্রমিত বানান করে দিয়েছে। হয়তো একটা পত্রিকায় আমি লেখা দিলাম, প্রম্নফ রিডার সব ঈ-কারকে ই-কার করে দিলো, আবার সব ই-কারকে ঈ-কার করে দিলো। প্রম্নফ রিডাররা এখন বড় বানান বিশারদ। তারা শ, স, ন, ণ-এর প্রয়োগ বোঝে না। তারা ভাবে, লেখকরা বোধহয় বানান জানেন না, তাই ঠিক করে দেয়। তাই আমার মনে হয়, একটা নির্দিষ্ট বানান হওয়া উচিত। আজকাল টেলিভিশনে ভুল বানান, ভুল শব্দ, ভুল বাক্য ব্যবহার হয়। এত পুরনো একটা ভাষা, যতই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হোক, বাক্য তো আমি ভুল লিখতে পারি না। অবশ্যই সেটা শুদ্ধ হতে হবে। মুখে আমি যাই বলি না কেন, লেখার ভাষায় অবশ্যই একটা মান থাকতে হবে। তার মানে এ নয় যে, অলংকারবহুল জবরজং একটা ভাষা আমাকে লিখতে হবে। আমি লিখব স্ট্যান্ডার্ড, পরিচ্ছন্ন এবং একটা শুদ্ধ ভাষা।
স্বকৃত নোমান : বাংলাদেশের গল্পচর্চার সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে যদি বলেন।
রিজিয়া রহমান : আমরা যারা সিনিয়র, বা আমার চেয়ে যাঁরা সিনিয়র আছেন, আমার মনে হয় এখন গল্প তরুণদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমি বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে প্রতিষ্ঠিতদের চাইতে অনেক তরুণের ভালো লেখা দেখি। সেগুলো অনেক সুন্দর। তারা লিটল ম্যাগে লেখেন। তাদের বড় পত্রিকায় খুঁজে পাই না। ঈদ সংখ্যা বা বিশেষ সংখ্যায় তাদের লেখা দেখি না। দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা যাঁরা দেখেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাহিত্যের মান নির্ণয় করার ক্ষমতা তাঁদের কিছুটা কম। তাঁরা সেটাকে একটা রাজত্ব বলে মনে করেন। যাঁকে পছন্দ করেন তাঁর লেখা ছাপেন। দৈনিকগুলো প্রতিষ্ঠিতদের লেখা ছাপে। একটা মেয়ে ভালো লেখে, তার একটা লেখা ছাপানোর জন্য এক পত্রিকায় আমি পাঠালাম। আমাকে বলা হলো যে, আমরা তো নামকরা লেখকদের লেখা ছাড়া নিই না। এটা দুঃখজনক। ঈদ সংখ্যাগুলো একটা বাণিজ্যিক ব্যাপার হয়ে গেছে। লেখকদের নাম বিক্রি করে স্পন্সর নেয়। সুতরাং কোনো তরুণ লেখক উঠে এলো কি এলো না তাতে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তরুণদের নিলে তো স্পন্সর পাওয়া যাবে না। এটা মোটেই উচিত নয়। সম্পাদকরা এক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা করছেন। 

রিজিয়া রহমানের গ্রন্থপঞ্জি

ক. উপন্যাস
১. ঘর ভাঙা ঘর, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৪, উপন্যাসসমগ্র-১, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা ২০০১।
২. উত্তরপুরুষ, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৭, উপন্যাসসমগ্র-১, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা ২০০১।
৩. রক্তের অক্ষর, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৮, মুক্তধারা, ঢাকা জুন ১৯৭৮, চতুর্থ সংস্করণ ১৯৯৭।
৪. বং থেকে বাংলা, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৮, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৭।
৫. অরণ্যের কাছে, প্রথম প্রকাশ ১৯৮০।
৬. অলিখিত উপাখ্যান, মুক্তধারা, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ১৯৮০।
৭. শিলায় শিলায় আগুন, মুক্তধারা, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ১৯৮০, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৯৮৬।
৮. ধবল জ্যোৎস্না, প্রথম প্রকাশ ১৯৮১, উপন্যাসসমগ্র-১, আগামী, প্রকাশনী, ঢাকা ২০০১।
৯. সূর্য সবুজ রক্ত, প্রথম প্রকাশ ১৯৮১, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ২০০৪।
১০. একাল চিরকাল, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৪, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৪।
১১. প্রেম আমার প্রেম, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৫, উপন্যাসসমগ্র-১, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা ২০০১।
১২. সবুজ পাহাড়, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৫, উপন্যাসসমগ্র-১, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা ২০০১।
১৩. ঝড়ের মুখোমুখি, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬, উপন্যাসসমগ্র-১, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা ২০০১।
১৪. একটি ফুলের জন্য, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৬, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৪।
১৫. শুধু তোমার জন্য, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৩।
১৬. হারুণ ফেরেনি, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৪, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৫।
১৭. প্রজাপতি নিবন্ধন, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৫।
১৮. নিঃশব্দ শব্দের খোঁজে, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৫।
১৯. বাঘবন্দি, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২০. ডাইম নিকেল, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২১. আবে-রওয়াঁ, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২২. সুপ্রভাত সোনালী দিন, মনন প্রকাশ, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২৩. অতলান্ত নীল, শব্দশৈলী, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২৪. অন্ধকারে বেতোফেন, শব্দশৈলী, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২৫. তৃণভূমি বাইসন, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৬।
২৬. কাছেই সাগর, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৭।
২৭. গোলাপ তবু তুমি, দর্পণ, ঢাকা ২০০৮।
২৮. চন্দ্রাহত, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৮।
২৯. উৎসে ফেরা, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০০৯।
৩০. আলবুর্জের বাজ, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১০।
৩১. সীতা পাহাড়ে আগুন, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১০।
৩২. পবিত্র নারীরা, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১০।
৩৩. বান্ধবী প্রিয়দর্শিনী ও অন্যান্য (বান্ধবী প্রিয়দর্শিনী, জগৎ জুড়িয়া কান্দে, জ্যোৎস্নায় নীল সীমানায়), ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১২।

খ. গল্পগ্রন্থ
১. অগ্নি-স্বাক্ষরা, প্রকাশক আবুল বাসার মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা আশ্বিন ১৩৭৪।
২. দূরে কোথাও, সাহিত্য বিলাস, ঢাকা জুন ২০০৪।
৩. খাওয়া-খায়ির বাঙালি, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১০।
৪. চার দশকের গল্প, ঐতিহ্য, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১১।

গ. আত্মজীবনী
১. নদী নিরবধি, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা ফেব্রম্নয়ারি ২০১১।
২. প্রাচীন নগরীতে যাত্রা, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা ২০১২।

ঘ. শিশুসাহিত্য
১. আজব ঘড়ির দেশে
২. ঝিলিমিলি তারা
৩. মতিশীলের বাড়ি ও অন্যান্য

ঙ. অনুবাদ
১. Caged in Paradise and Other Stories (২০১৩)
২. সোনালী গারদ (১৯৯৫)