রফিকুন নবী বাংলাদেশের সমকালীন চিত্রের ভুবনে এক শীর্ষশিল্পী। তিনি রোমান্টিকতাকে পরিহার করে ছবি আঁকেন। বাস্তবধর্মিতা তাঁর সৃষ্টির প্রধান গুণ। জীবনের নানা অনুষঙ্গকে তিনি সন্ধান করেছেন নদী, নিসর্গ ও সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক সংগ্রামের মধ্যে। সাম্প্রতিক চিত্রে শৈশব ও যৌবনকালের নানা স্মৃতি তাঁর চিত্রের বিষয় হয়ে উঠেছে। তাঁর দেখা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদী ও নিসর্গও কখনো-সখনো তাঁর সৃজনে উঁকি দিয়ে যায়। তাঁর সাম্প্রতিক কাজে এই অনুষঙ্গ প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।
জলরং, কাঠখোদাই ও তেলরঙের কাজে তিনি যথেষ্ট পারদর্শিতা ও সিদ্ধি অর্জন করেছেন। ষাটের দশকে বাংলাদেশের স্বরূপ-অন্বেষার আন্দোলনের সময় থেকে তাঁর সামাজিক অঙ্গীকারের চেতনা প্রখর হয়েছে। বাস্তববাদী চেতনায় তাঁর শিল্পিত মানস ঋদ্ধ হলেও রফিকুন নবীর সৃষ্টিতে নিরীক্ষার ছাপও স্পষ্ট। জলরঙে যে-কজন হাতেগোনা শিল্পী চারিত্রিক বিশিষ্টতা অর্জন করেছেন তিনি তাঁদের একজন। রফিকুন নবী বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন রনবী নামের কার্টুনিস্ট হিসেবে। টোকাই-চরিত্রের সৃষ্টি তাঁর বিশেষ কীর্তি।
১৯৬৪ সালে তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩-৭৬ সালে গ্রিসের এথেন্স স্কুল অব আর্টস থেকে ছাপচিত্রে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। এই শিক্ষা গ্রহণ তাঁর শিল্পচৈতন্যে নবমাত্রা সঞ্চার করেছিল। গতানুগতিক ধারামুক্ত তাঁর কাঠখোদাই সেই সময় থেকে শিল্পরসিকদের কাছে ভিন্ন মর্যাদা লাভ করেছে এবং তাঁর কাঠখোদাই হয়ে উঠেছে শিল্পগুণ সমৃদ্ধ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন পদ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর বর্তমানে ফ্রিল্যান্স শিল্পী।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.