নদী কারো নয়

সৈয়দ শামসুল হক
\ ২১ \

আজ থেকে নদী তবে আর আমার নয়! এই আধকোশা এতকাল পরে তবে পর হয়ে গেলো। এখন সে সীমান্তের ওপারে! আর, সীমান্তই কাকে বলে? কোনো রেখা তো দৃষ্টিপথে নাই। আছে! র্যা ডক্লিফ সাহেবের টেবিলে বিছানো বাংলার মানচিত্রের বুকে লাল পেন্সিলের দাগ! যেন রক্তধারা! রক্তের রেখার ওপারে এখন আধকোশা। ওপারের ওই বালি বিস্তীর্ণ পাড় আর আমার নয়। ওপরের ওই ঝাউগাছ আমার নয়। ঝাউগাছের ভেতর দিয়ে বহে যাওয়া বাতাসও আর আমার নয়! বালির
বুকে ওই ঘূর্ণিও আমার নয়। খেয়াঘাটের ওই বিরলে যে শনের ছাপড়া চোখে পড়ে, ওই যে সেই ছাপড়ায় চা বানায় হাশমত, তার চুলার আগুনও আর আমার নয়, তার গেলাশের চা-ও আর আমার নয়, তার ছাপড়ার আড়ে ঝুলানো মালভোগ কলার ছড়ও আমার নয়, ওই পায়ে চলা পথের চিহ্ন আর আমার নয়, ওই সরু পথটির উঠে যাওয়া ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের সড়কে, তাও আর আমার নয়। আর আমার পায়ের তলায় তার ধূলি না লাগিবে হে! অন্য দ্যাশের ধূলি হয়া গেইছে আইজের ফজরে। ওপারের ওই আসমানও বুঝি পর হয়া গেইছে। সব মিছমার হয়া গেইছে গো। বুক ভাঙি নিয়া গেছে ঢলের আগেই এ কোন ঢল কোন পর্বত হতে নামিয়া!
মইনুল হোসেন মোক্তার জীবিতের সকল বিস্ময় ও ধন্দ নিয়ে তাকিয়ে থাকে আধকোশার দিকে। তার বিশ্বাস হয় না নদী সে দেখছে। নদীজল ছলছল করে, রুপার আয়নার মতো ভেঙে-ভেঙে যায় যে-জল, সেই জল আজ স্তম্ভিত হয়ে আছে। জ্বলজ্বল করছে ভীষণ খাঁড়ার মতো। জলেশ্বরীর নারায়ণ নামে ভীষণ দর্শন মানুষটির হাতে দুর্গাপূজায় মহিষ বলির জন্যে উদ্যত খাঁড়ার মতো ঝকঝক করছে, যমদেবতার অট্টহাসি যেন ঠিকরে-ঠিকরে পড়ছে। এই নারায়ণের কাছেই তো শহরের কংগ্রেস নেতা রাজেনবাবু এসেছিলেন – হা রে, নারায়ণ, শুনিছিস তো! কইলকাতায় হিন্দু বিনাশ করিতে মোছলমানেরা ছোরা-তাওরাল নিয়া বির হইছে! কচুকাটা করিচ্ছে!
ছেচল্লিশের কলকাতায় সেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। ইতিহাসের বইয়ে দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং অধ্যায়-নামে যার বিবরণ আমরা এখন পড়তে পাই। এই কিলিং বা হত্যাযজ্ঞের বিবরণ আর এখন জনস্মৃতিতে নাই। ইতিহাস তো এমন ধারাতেই চলে – বিস্মরণের পর বিস্মরণ! নগদ যা ঘটে, ক্রমেই তা পিছিয়ে পড়ে, পড়তে-পড়তে দৃষ্টির অলক্ষে চলে যায়। কিন্তু বর্তমান তো দাঁড়িয়ে থাকে অতীতের ওপরেই। এই অতীত লয়ে সংসার চলে না। সংসার প্রতিদিনের বাস্তবতা নিয়ে। কিন্তু কিছু মানুষ থাকেই যারা এইসব নিয়ে ভাবে ও কাটাছেঁড়া করে। কলকাতার ওই ছেচল্লিশের দাঙ্গা নিয়েও কাটাছেঁড়া আজও কিছু মানুষ করে। কে প্রথম দাঙ্গা শুরু করেছিলো? হিন্দু? না, মুসলমান? একদল বলে মুসলমানেরাই শুরু করে। মীনা পেশোয়ারী নামে এক পাঠান গুন্ডা সর্দারের কথা খুব শোনা যায়। বলা হয়, সোহরাওয়ার্দীর গোপন নির্দেশেই – আর আসল নির্দেশটা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্রই – মীনা পেশোয়ারী হিন্দুদের কতল করতে শুরু করে। কিন্তু এর বিপরীতে বলা হয়, না, হিন্দুরাই শুরু করে হত্যাকান্ড; কিন্তু মীনা পেশোয়ারীর মতো কোনো মাতবর হিন্দু গুন্ডার নাম এ পর্যন্ত কেউ উদ্ধার করতে পারে না, পুলিশ রেকর্ডেও পাওয়া যায় না। বরং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, ব্রিটিশ বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দাঙ্গার দিনগুলো লালবাজারের থানায় বিনিদ্র দিনরাত বসে থেকেছেন দাঙ্গা থামানোর জন্যে। আমরা আরো জানতে পাবো, একদিন যে এই পূর্ববাংলা – র্যা ডক্লিফের লাল পেন্সিলের দাগে গড়ে ওঠা পূর্ব পাকিস্তান – যে বাঙালির স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হয়ে ওঠে, তার কারক ও জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই ছেচল্লিশ সালে ছিলেন কলকাতায়, কলেজপড়ুয়া ছাত্র তিনি তখন, কিন্তু রাজনীতিতেও পাঠ নিচ্ছেন, অংশ নিচ্ছেন; সেই তিনি সেই দূরকালে নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষ সকলকে গুন্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করতে নেমে পড়েছিলেন। সম্ভবত সেই প্রথম তিনি প্রত্যক্ষ অনুভবে হিন্দু নয়, মুসলমান নয়, মানুষকে মানুষ হিসেবে ধারণ করে উঠেছিলেন, যার ভিত্তিতেই ছিলো তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের কল্পনা।
ছেচল্লিশের সেই জলেশ্বরীতে রেডিও নাই। আজ এটা ভাবাও যায় না, ঘরে-ঘরে রেডিও তখনো আসে নাই বাংলায়। কলকাতা থেকে দাঙ্গার খবর তাই তৎক্ষণাৎ জলেশ্বরীতে পৌঁছায় নাই। একটা রেডিও ছিলো টাউন ক্লাবে, চলতো মোটরগাড়ির ব্যাটারিতে, সে-ব্যাটারিও কিছুদিন থেকে ডাউন ছিলো, ব্যাটারি আর কেনা হয়ে ওঠে নাই, কারণ ফান্ড নাই। আর, জলেশ্বরীতে মোটরগাড়িই বা কোথায় যে দোকানে ব্যাটারি কিনতে পাওয়া যাবে। জলেশ্বরীতে খবরের কাগজও আসে কলকাতায় বের হবার একদিন পরে, ভোরের ট্রেনে। আগস্ট মাসের ১৭ তারিখে জলেশ্বরীতে ভোরের ট্রেন আসে, কিন্তু লাগেজ ভ্যান থেকে খবর কাগজের বান্ডিল নামাতে গিয়ে বশির হকার দেখে বান্ডিল আসে নাই। এমন কান্ড সচরাচর হয় না। প্রতি ভোরেই ট্রেন আসার আগেই হিন্দু-মুসলমান কয়েক যুবক ইস্টিশানে নিয়মিত আসে বশিরের হাত থেকে টাটকা পত্রিকা নেবার জন্যে। বশিরকে ট্রেনের লাগেজ ভ্যান থেকে খালি হাতে নামতে দেখে তারা কলরব করে ওঠে। – তুই ভাল্ করি দেখিছিস তো রে বছির? – হয়, হয়, নাই। – ফির দ্যাখ যায়া। গার্ডকে পুছ কর্। – করিচ্ছো। গার্ডেও কইলে পার্বতীপুর হতে পত্রিকার বান্ডিল ওঠে নাই। – রংপুরে? – অমপুরের খবর পাঁও নাই। অমপুরে হয়তো বা গেইছে। বিরস হয়ে যুবকেরা যে যার বাড়িতে বা কাজে ফিরে যায় পত্রিকা বিনা খালি হাতে। দুপুরের দিকে পোস্টাফিসের হরেন মাস্টার, যার হাতে টেলিগ্রাফের টরেটক্কা, বার্তা প্রেরণের হ্রস্ব-দীর্ঘ টক-টক মারফত এক সংবাদ পায় – তার মর্ম সে উদ্ধার করতে পারে না। বার্তাটি এসেছে জলেশ্বরীর হাকিমের নামে। ঊর্ধ্বশ্বাসে টেলিগ্রাফ মাস্টার বার্তাটি রওনা করে দেয় হাকিমের দফতরে। সংকেতে, যাকে আমরা সাইফার বার্তা অর্থাৎ সাধারণ মানুষ না বুঝতে পারে কিন্তু সংকেত বুঝে পাঠ উদ্ধার করা যায় এমন বার্তা বলে জানি, এটি আসে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং থেকে। সাইফার বার্তাটি মহকুমা হাকিম সংকেত ভেঙে পাঠ করে চমকে ওঠেন। কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হয়েছে। হিন্দু মুসলমান একে অপরকে আক্রমণ করছে। তোমার এলাকায় শান্তি যাতে বজায় থাকে তার ব্যবস্থা অবিলম্বে গ্রহণ করো। অবিলম্বে শহরের হিন্দু ও মুসলিম নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসো।
হাকিম সাহেব নজির মিয়া আর রাজেনবাবুকে জরুরি তলব পাঠান। থানার বড় দারোগা মন্মথ মজুমদারকেও খবর পাঠানো হয়। মিটিং বসে। মন্মথ দারোগা ঘোড়ায় চড়ে চলাচল করে। মিটিং শেষে লাফ দিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বেরিয়ে যায় শান্তি রক্ষার ব্যবস্থা করতে। মুসলিম লীগের নজির মিয়া হেসে ওঠে। – নজির সাহেব, এটা হাসিঠাট্টার সময় নয়! – জানি, জানি, স্যার। কিন্তু কথা হামার এই, জলেশ্বরীতে হিন্দু-মুসলমান বরাবর শান্তিতেই বাস করে। হেথা কোনো বিবাদ-ঝগড়া নাই। রাজেনবাবু কিছুক্ষণ থম ধরে থেকে নজির মিয়ার দিকে ঠান্ডা চোখ মেলে বলে, বিবাদ নাই সত্য, বিবাদ বাধিতে কতক্ষণ! তারপর হাকিমের দিকে ফিরে, তবে সরকার বাহাদুর নিশ্চিন্ত থাকেন, হামরা থাকিতে এই টাউনে কি ইয়ার আশেপাশে খুনাখুনি হবার নয়। হাকিম তাদের দুজনকেই নির্দেশ দেন, কলকাতার দাঙ্গার বিষয়টা নিয়ে টাউনে যেন গুজব ছড়ানো না হয়। তাঁর কথা, একদম মুখ খুলবেন না। কথাটা নিজেদের ভেতরেই রাখবেন। কাল ভোরের ট্রেনে পত্রিকা এলে তো খবরটা সবাই জানবে, তখন আপনাদের কাজ হবে উত্তেজনা বন্ধ করা। রাজেনবাবু বলে, বাজারে বিপিনের চায়ের দোকানে আর মজিবরের স্টেশনারি দোকানে পত্রিকা নিয়া রোজে জটলা হয়, আলোচনা হয়, তার কী? হাকিম বলেন, সে আমি জানি, মন্মথ দারোগাকে বলে দিয়েছি ওই দোকান দুটিতে পত্রিকা রাখা যেন বন্ধ করা হয়, রাজনৈতিক আলোচনাও যেন নিষেধ করা হয় জরুরিভাবে। হাকিমের এই নিষেধ ও নির্দেশ সত্ত্বেও রাজেনবাবু সক্রিয় হয়ে ওঠে, মিটিং থেকে বেরিয়েই সোজা নারায়ণের কাছে যায়। নারায়ণ তখন নদীতে ডুবস্নানের প্রস্ত্ততি হিসেবে গায়ে চটাচট সরষের তেল মাখছিলো, রাজেনবাবুকে অসময়ে অজায়গায় হাজির দেখে একটু অবাক হয়, কিন্তু এটাও বুঝে যায় যে গুরুতর কিছু ঘটেছে, নইলে এ-কর্তা মানুষটা এতটা পথ ভেঙে নদীর পাড়ে তার কুটিরে দেখা দেবে কেন? – কন বাবু, আসিলেন যে! ছানে যামো, হামার ভোকও নাগিছে। – হারে, নারান, দেবী বুঝি অক্ত চায়! অক্ত মানে রক্ত! নারায়ণের রক্ত ছলকে ওঠে ধমনীতে। এককালে তার পূর্বপুরুষ এ-অঞ্চলে ডাকাতি করতো, এমনকি তার পিতার আমল পর্যন্ত এই ইতিহাস। রাজেনবাবু যখন সবিস্তারে কলকাতার দাঙ্গার কথা নারায়ণকে বলে ওঠে, তাকে উত্তেজিত করতে চায় যে, দরকার হলে দু-চারটে মুন্ডু ধড়ছাড়া করতে হতে পারে, তখন ওই নারায়ণই একটা কথা বলে, বাবু! দেবী নয় মানুষে চায় অক্ত! অক্ত যদি তোমরা না চান, অক্ত হেথায় ঝরিবে না। বলতে বলতে নারায়ণ প্রায় বেয়াদবি করেই ঝটাং উঠে পড়ে রাজেনবাবুর সমুখ থেকে, ঝপাং করে ঝাঁপিয়ে পড়ে আধকোশার জলে। তলিয়ে যায় নিমেষে। অনেকক্ষণ পর্যন্ত ওঠে না। রাজেনবাবু তখনো তাকিয়ে আছে নদীর দিকে। তারপর দম ফুরোলে নারায়ণ যখন ওঠে, উঠেই পাড়ের দিকে তাকায়, রাজেনবাবু আর নাই, চলে গেছে।
সেই নদী! সেই আধকোশা! আধকোশার পাড়ে আজ পাকিস্তানের আজাদির দিনে মইনুল হোসেন মোক্তার। জীবিতের সকল বিপন্ন বিস্ময় ও জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে আছে রৌদ্রঝলসিত নদীর দিকে, যে-নদী নারায়ণের হাতে বলিদানের মুহূর্তে খরশান খাঁড়ার মতো ঝকঝক করছে। এখনি বুঝি নেমে আসবে আর চোখের পলকে বিচ্যুত হয়ে যাবে দেহ থেকে ধড়। বুঝি মইনুল হোসেনেরই ধড়। এ-কাহিনি কিংবা ঘন অরণ্যতুল্য ঘটনা গহিন অন্ধকারের ভেতর দিয়ে আমরা যারা চলেই চলেছি, আমরা যারা একটু-একটু করে অগ্রসর হচ্ছি, কখনো সমুখে, কখনো পেছন ফিরে পেছন-পায়ে খানিক চলে, এবং আবার এগিয়ে, এবং কতকিছুই না ভুলে গিয়ে ও কতটাই না মনে রেখে, এবং মনের মধ্যে একটা ছবি ধরার চেষ্টা করছি যে ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই রক্তাক্ত খন্ডন – জমি খন্ডন, আকাশ খন্ডন, মানুষের সংসার খন্ডন – এ সকল খন্ডনের এই বিকটকালে – ইতিহাসের নায়ক, রাজনীতির নায়ক, ঘটনার নায়কদের বিচার বিশ্লেষণ নয় – তা করতে থাকুন ইতিহাসবিদেরা – সাধারণ মানুষেরা কী দেখেছিলো, কী তাদের মনে হয়েছিলো, কীসের ভেতর দিয়েই বা তারা গিয়েছিলো, আমরাও এখন মইনুল হোসেন মোক্তারের মতো স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আধকোশা নদীর পাড়ে।
আমরা যারা গাঁয়ে আছি, কিংবা শহরেই, অথবা দূর বিদেশেই – বাঙালি তো এখন বিশ্বময় – আমরা গাঁয়ের ছবি একটা কল্পনা করি না কেন, মাঠের ভেতর-পথে আমরাও কখনো না কখনো হেঁটেছি, হয়তো বা ভরা জ্যোৎস্নায়, যদি একটি ছবি তুলে ধরি তবে আমরাই জেনে যাবো মইনুল হোসেনের এই বিপন্নবোধজাত বিস্ময় এবং বিস্ময়ের ভেতরে এক বিকট আতঙ্কের রূপটি কেমন। কল্পনা করা যাক, জ্যোৎস্নায় ফুটফুট করছে চারদিক, পূর্ণচাঁদের আলোটি যেন পরিদলের খিলখিল হাসি হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভুবনে। দিনের খর নির্মল সূর্য ছায়া অাঁকে বৃক্ষের, পথের পরে পড়ে থাকে, কি আমাদেরই ছায়া যাত্রাসঙ্গে হেঁটে চলে। কিন্তু এও তো দেখি, পূর্ণচাঁদের আলোটিও তার প্রতিযোগী হয় গাঁও বিরানে প্রান্তরের বুকে। চাঁদের আলোতেও ছায়া পড়ে শেলেটের বুকে অাঁকা খড়িরেখার মতো, অস্পষ্ট, ধুন্দুলা। এমন রাতে আমরা কি ফিরি নাই বাড়ির দিকে, হাট থেকে কি শহর থেকে অধিক রাতে নদী পেরিয়ে? আমরা কি দেখি নাই পরিষ্কার পথের ওপরে হঠাৎ গোক্ষুর! ফণা ধরে আছে। এক মুহূর্ত আগেও দেখি নাই, ছিলো না, হঠাৎ দেখেছি। তখন কি মনে হয় নাই, না, না, এ সত্য নয়, এ বাস্তব নয়, কল্পনা! আমাদেরই কল্পনায় এই ফণা ধরা সাপ! নদীর পাড়ে দাঁড়ানো মইনুল হোসেনের চোখেও আজ যেন নদী নয় সাপ! সাপের মতোই ফণা ধরে স্তম্ভিত উদ্যত হয়ে আছে একটা জলঘূর্ণি। র্যা ডক্লিফ সাহেবের বাংলাভাগের রক্ত রেখায় আধকোশা এখন ছোবল দেবার জন্যে উদ্যত।
না হয় সাপ না-ই হলো, নদীকে আমরা এর আগে সাপের সঙ্গে তুলনা করেছিলাম, যুবতীর সঙ্গেও – জীনে ধরা যুবতীই যেন! মইনুল হোসেনের মনে আতঙ্ক না হয় আমরা মুছেই দিয়েই এখন ভাবছি, বিভ্রান্তিবোধও কি তার এখন নয়? স্মরণ করে উঠি একাত্তরের কিংবদন্তি মান্দারবাড়ির মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের সেই একটি রাতের কথা। সে-রাতেও পূর্ণচাঁদ ছিলো। একটা অপারেশন শেষে আকবর ফিরছিলো ডেরায়। ফুটফুটে জ্যোৎস্না – তার ভেতরে পথঘাট হঠাৎ অচেনা হয়ে যায় তার। কোথায় মান্দারবাড়ির পথ? এই ছিলো, এই নেই। কানাহোলায় ধরেছে নাকি তাকে। কানাহোলা? পুরুষ প্রজাতির বাঘ-প্রজাতির সেই মার্জার, যার নখরে-নখরে ফালা ফালা হয় দেহ, অতর্কিতে সে-ই নাকি ঝাঁপিয়ে পড়ে পথ ভুলিয়ে নিয়ে চলেছে আকবরকে তার গ্রাসের দিকে! কিন্তু না, আকবরের এই বিভ্রম, তার হঠাৎ ওই পথ হারিয়ে ফেলা স্থায়ী হয় নাই। পথ সে অচিরেই ফিরে পেয়েছিলো, ডেরায় পৌঁছে গিয়েছিলো। কিন্তু ইতিহাস যে কখনো-কখনো কানাহোলার শরীর ধরে ওঠে! নিশ্চিত পথ থেকে আমাদের ভুলিয়ে নিয়ে যায়! নিয়ে যায় তার নখরের দিকে! মইনুল হোসেন মোক্তারের কি তেমনই বোধহয় আজ এই পাকিস্তানের আজাদি মুহূর্তে আধকোশার পাড়ে দাঁড়িয়ে – যে-আধকোশা এখন সীমান্তের ওপারে বলে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে?
আমরাও মইনুল হোসেন মোক্তারের সঙ্গে স্তম্ভিত দাঁড়িয়ে আছি আজ আধকোশার পাড়ে। এবং আরো একজনের সঙ্গে। মইনুল হোসেন যেখানে দাঁড়িয়ে – তার নজরে পড়ে নাই – অনেকটা দূরে – আরো একজন ওই দাঁড়িয়ে। তার কথাটিও আমরা ভুলে যাই নাই। সে মুকুলের মা। আমরা যদি একটু ফিরে কাছারির মাঠে বক্তৃতারত হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ সাহেবের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সড়কের ওপাশে তাকাই, যদি দেখে উঠি আরেকবার জলেশ্বরীর সেই হিন্দুসকলকে যারা আজাদির উৎসবে যোগ দেয় নাই, দাঁড়িয়ে আছে দূরে, জটলা করে, স্মরণ করলেই আমরা ফিরে পাবো মুকুলের মায়ের কথা। মুকুলের মাকে তিনি দেখেছিলেন একা হেঁটে যেতে – নদীর দিকে, দ্রুত পায়ে, উদ্ভ্রান্তই যেনবা, মাথায় ঘোমটা নাই, পায়ে চটি নাই, অাঁচল নাই স্বস্থানে। আমরাও তাকে দেখেছি। আমরাও তার কথা এখানে বলে নিই আরেকবার।
মুকুলের মায়ের কথাটা তুলেছিলেন জলেশ্বরীর হাই ইংলিশ ইশকুলের হেডমাস্টার শ্রী যতীন্দ্রমোহন গাঙ্গুলি; শিক্ষক বলেই তার মনে করুণার ধারা বয় – তিনি মুকুলের মাকে ভুলতে পারেন না; বিধবা, তরুণীই বলা যায় এখনো, একা একা নদীর দিকে সে কেন যায়? তাঁর ও আমাদের মনে পড়ে, মুকুলদেরই বাড়িতে কংগ্রেসের যুবক কয়েকজন ফরোয়ার্ড ব্লকের অফিস খুলেছিলো। জলেশ্বরী শহরের কোথাও যখন কংগ্রেসের বিদ্রোহীরা সুভাষ বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকের জন্যে বাড়ি খুঁজে পায় নাই, ভাড়া কেউ দেয় নাই, মুকুলের মা তার বাড়ির সমুখের বাংলাঘরটিকে তাদের অফিস করবার জন্যে দিয়েছিলেন। সারি-সারি সুপারি গাছ ঘেরা টিনের আটচালা বাংলাঘর, সুপারির একটা গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো টিনের সাইনবোর্ড – ফরোয়ার্ড ব্লক, জলেশ্বরী। বিধবা হয়তো রোজগার বৃদ্ধির আশায় ঘরটা ভাড়া দিয়েছিলো; অকালে মুকুলের বাবা বসন্ত রোগে মারা যাবার পর দিন তার চলতো হরিষালের বিঘা পনেরো জমির ধানে আর শহরের বাড়ির সুপারি বিক্রি করে। এত যে রূপসী মুকুলের মা, হিন্দুধর্মে বিধবা বিবাহ নাই – রামমোহন রায়ের পরেও বিধবা বিবাহ চালু হয় নাই, তাঁর আর-সকল গুণকীর্তি যতই আমরা করি বিধবা বিবাহ চালু না হওয়াটা সে-মহামানুষটির পরাজয়ের একমাত্র উদাহরণ হয়ে আছে। কিন্তু বিধবা বিবাহ চালু নাই এক কথা আর লোকের কাছে নারীর সৌন্দর্য জ্বলজ্বল করা আরেক কথা। কিন্তু শহরের কেউ বলতে পারবে না মুকুলের মায়ের কুচাল বেচাল দেখেছে। বরং তারা প্রশংসাই এযাবত করে এসেছে তার কঠোর বৈধব্য পালন আর সন্তানকে মানুষ করে তোলার যত্ন দেখে।
সেই মুকুলের মায়ের কাল হলো ফরোয়ার্ড ব্লকের জন্যে বাংলাঘর ভাড়া দিয়ে। সারাদিন যুবকদের আনাগোনা সে অফিসে। গভীর রাত পর্যন্তও তারা কোনো কোনোদিন অফিস করে। বাড়ির ভেতরে মাঝে মাঝে যায় কুয়ো থেকে খাবার জল আনতে। রাত বেশি হলে মাঝে মাঝে তারা মুকুলের মায়ের কাছে চা-পাতা দুধ চিনি পাঠিয়ে চা করে দিতেও বলে; মুকুলের মা চা বানিয়ে কাঁসার থালার ওপরে গেলাশ সাজিয়ে পাঠায়। জলেশ্বরীর কংগ্রেস নেতা শ্রী রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তী ফরোয়ার্ড ব্লকের তরুণদের শায়েস্তা করতে একদিন বলে ওঠে, এই যে দিনমানে তারা হেথায় অফিস করে, রাইতের দু’পহর পর্যন্ত আড্ডা মারে, খালি কি সুভাষ বসুর কারণে? – না সুন্দরী বিধবার আকর্ষণে, কথাটা ভাবিয়া দেখিও। মুখে-মুখে দাবানলের মতো অপবাদটা ছড়িয়ে পড়ে জলেশ্বরীর হিন্দু সমাজে। রাজেনবাবুর ইশারাতেই মুকুলের মায়ের পথ কালীবাড়িতে রোধ করে দাঁড়ায় পুরোহিত বামুন। – হেথায় দুশ্চরিত্রা নারী পূজা না দিবার পারিবে! মুকুলের মা পূজার অর্ঘ্য নিয়ে শুদ্ধবস্ত্রে মন্দিরে গিয়েছিলো, আমাদের মনে পড়বে, নিশ্চয় এখন যতীনবাবুর মনে পড়েছে, পুরোহিতের কথাটা শোনামাত্র মুকুলের মা মন্দিরের চত্বরে মূর্ছিত হয়ে পড়ে যায়, হাতের সাজানো থালা পড়ে যায়, ঝনঝন করে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে জবাফুল, কিন্তু প্রদীপ মাটিতে পড়েও ছড়ানো তেলের মধ্যেই সলতেটি তখনো জ্বলতে থাকে। সেই মুকুলের মা আজও পাকিস্তানের এই আজাদির দিনে ঘরে কেন নাই? যেন সেই মন্দির প্রাঙ্গণে মূর্ছা থেকে জেগে উঠে ভূতগ্রস্তের মতো হেঁটে চলেছে আধকোশার দিকে, এখন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে – কেন? কেন? আমরা তার চোখদুটি দেখে লই। সে চোখে জগতের ছবি নাই! তারও কি মনের মধ্যে এখন ওই আতঙ্ক ও বিস্ময় যে এই নদী, আর তার নয়, তাদের নয়! তাদের? আমাদেরই কথা তো! আমাদের আর নয় তবে নয়!
আমরা ওয়াহেদ ডাক্তারের কথাও ভুলি নাই বা ভুলবো না। কাছারির মাঠে পাকিস্তানের নিশান তুলে হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ যে বলেছিলেন এই আজাদির দিনে পাকিস্তানের জন্যে আজ মন্দির-মসজিদে প্রার্থনা হবে পূজা হবে, শুকরিয়ার নফল নামাজ পড়া হবে, মোনাজাত হবে – আমাদের মনে পড়বে সে কথা শুনে হা-হা করে হেসে উঠেছিলো ওয়াহেদ ডাক্তার, হরিষালের সেই ওয়াহেদ – হোমিওপ্যাথি করে, তাগা-তাবিজও দেয় – কলকাতা থেকে কোন কামেল পীরের কাছে চেলাগিরি করে একদিন যে হরিষালে এসে প্র্যাকটিস শুরু করেছিলো, যার ওষুধ কি তাগা-তাবিজেই বা, আর হরিষালের মাজারে লালসুতা বাঁধার বরকতেই না হয়, বন্ধ্যা নারী গর্ভে ধরে ওঠে সন্তান, সুনাম যার দশ-বিশ-পঞ্চাশ মাইল বৃত্ত জুড়ে, এমনকি দূরের রংপুর থেকেও নাকি রমণীরা আসে তার কাছে সন্তান কামনায়, সেই ওয়াহেদ ডাক্তার নেয়ামতউল্লাহ্র কথা শুনে বলে ওঠে, আমাদের মনে পড়বে – পাকিস্তানে হিন্দুর মন্দিরে পূজাপাঠ হইবে পাকিস্তানের তরক্কি কামনা করি! বোঝেন তবে লীলাখান!
পাগলা মোখলেছ কাছারির মাঠে জামগাছতলায় বসেছিলো। ওয়াহেদ ডাক্তার তার পাশে বসে এক কথার উত্থাপন করে। – এই যে বিটিশ দ্যাশ হতে চলি গেইলো, এই যে হাকিম সায়েবে কইলো আজ ছে আপলোগ আজাদ হ্যয় – কথাটা কী বুঝিলো তুঁই? কিছুক্ষণ থম্ ধরে থেকে মোখলেছ বলে, যা বোঝার তা বুঝিছোঁ। – না, তুই বুঝিস নাই। বুঝিবি দুইদিন বাদে। আমি হরিষাল ফিরি যাই। সেথা হতে আজাদির নয়া ঘোষণা মুঁই দেমো। আমরা আতান্তরে পড়ে যাবো ওয়াহেদ ডাক্তারের এ কথা শুনে। পাগল কি মোখলেছ না ওয়াহেদ ডাক্তার – আমরা অচিরেই দেখে উঠবো। ওই তাকে এখন আমরা দেখি খেয়ার নৌকায় উঠতে। ওপারে সে যাবে। খেয়ার মাঝিকে সে তাড়া দেয়, চলেক্। মাঝি বলে, সবুর করি যাই, আরো যাত্রী আসিবে! – যাত্রীর গুষ্টি মারো মুঁই। নদীর এপারে আইজ হতে পাকিস্তান, ওপারে হিন্দুস্থান, খবর রাখিস? পার হতে কাঁই আসিবে!
আতান্তরে পড়ে যায় মাঝি। – কন কি তোমরা? পাকিস্তান এপারে হিন্দুস্থান ওপারে? – হয়, হয়। পাকিস্তানেরও গুষ্টি মারো মুঁই। জিন্নাহ্র পুটকিতে আছোলা বাঁশ। গান্ধীর পুটকিতেও। আর ইংরাজের ঝাঁই রাজা, তার মায়েকে চোদং মুঁই। চল্ হামাকে নিয়া আইজ একায় মুঁই প্যাসেঞ্জার। দ্যাখ আজাদি কাকে কয়! আজাদি তো মোর হাতে। মাঝি বিমূঢ় হয়ে যায় ওয়াহেদ ডাক্তারের কথা শুনে। এক বর্ণ তার বোধগম্য হয় না। আমাদেরও আপাতত সেই দশা। আমরাও তার থুথু ছেটানো কথার মানেমুন্ডু বুঝি না। আমাদের আরো কয়েক পাতা অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত আমরা আধকোশার বুকে নিঃসঙ্গ যাত্রী ওয়াহেদকে নিয়ে খেয়ানৌকাটিতে ওপারে যেতে দেখি।
নদী! নদীর শরীর তো এমন সমুদয় তার এক নজরে দেখা হয়ে ওঠে না। একমাত্র বিধাতাই পারেন ওই ঊর্ধ্ব-স্বর্গ থেকে নদীটিকে তার উৎস থেকে সাগরে প্রবেশ পর্যন্ত এক লপ্তে দেখে নিতে পারেন। আর হয়তো পারেন যাঁরা মানচিত্র অাঁকেন। আমরা নদীটির দিকদিশা পাই না। আমরা নদীর বুকে র্যানডক্লিফের লাল পেন্সিলের দাগ খুঁজে চলি। হঠাৎ আমাদের কানে পশে ডাক। পাখির ডাক!
আমাদের মনে পড়ে যাবে নদীর পাড়ে দাঁড়ানো মইনুল হোসেন মোক্তারের ছেলে, বাংলাদেশের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেনের কথা, যে-মকবুল তার বাবার ইতিহাস জানতে একদিন এই জলেশ্বরীতে আসবে, অতিথি হবে সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টরের, উঠবে তারই নদীর পাড়ে বাংলাবাড়িতে।
একদিন সেই বাংলাবাড়িতে থাকাকালে ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে স্বর্গীয় একটি সুর, অমৃতের সূচিমুখ একটি রেখা, প্রবাহিত হয়ে যাবে। যেন উজ্জ্বল সোনালি রঙের চিকন একটি রেখা, জীবন্ত, চঞ্চল, ভোরের ধূসরতার বুক চিরে এগিয়ে চলেছে।… ইউটি টিট্ টিট্… হু হু পিইট্… পিট্ পিট্ সিউটি… গিইএ… পিট্!… তারপর ছোট্ট একটা শিস্, আবার প্রথম থেকে… ইউটি টিট্ টিট্। বাংলাবাড়িতে উপস্থিত সাইদুর রহমানের কেয়ারটেকার সোলেমান বলে উঠবে, আরে! আরে! কতদিন বাদে! হিমালয়ের জঙ্গল থেকি! সেথাকার জঙ্গলে থাকে। মকবুল হোসেনে সে আরো বলবে, দ্যাখেন তার কেমন ধারা! মানুষে না পারে পাসপোট ছাড়া বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার বডার পার হইতে। বডারে গেইলেই চক্ষু রাঙা করি বন্দুক তুলি ধরি কয় বোলে তফাৎ! নিজ নিজ জাগায় থাকেন! আর এই পাখি দ্যাখেন পাখায় উড়িয়া বডার পার হয়া হামার মুলুকে! হঠাৎ ব্যাকুল হয়ে সোলেমান চারদিকে তাকাবে। আরে গেইলো কোথায়! কই? কই? কোন্ঠে? তখন মকবুল হোসেন বলবে, আমি বোধহয় দেখেছি, একটু আগেই দেখছিলাম, এখন আর দেখছি না, এই তো ঝোপের ওই গাছটাতে বসে ছিলো এতক্ষণ। বলতে-বলতে মকবুল চারদিকে চোখ পাঠাবে। জাহাজের সন্ধানী আলোর মতো তার চোখ অদেখাকে ছিন্ন করে চলবে। তারপর সে দেখতে পাবে। আরে! ওই তো! ওই! ওই! ওই যে! পাখিটিকে সে কামরাঙা গাছের ডালে দেখতে পাবে। লাল সেই পাখিটি। দেখতে পাবে সোলেমানও। – দ্যাখেন, দ্যাখেন! ইন্ডিয়ার পাখি উড়ি আসি হামার দ্যাশে হামার মুলুকে হামার নিজবাড়ির কামরাঙা গাছে! জানেন তো, সব পাখি না কামরাঙা গাছে বইসে। সেই পাখি বইসে যে হামাকে সাগাই বলিয়া জানে। সাগাই মানে বোঝেন তো? সাগাই মানে আত্মীয় হয়। – আহ্লাদ করে সে মকবুলকে বলতে থাকবে, কতদিন বাদে দেখা গেইলো গো! বড় বিরল পাখি এই মুলুকে। কতদিন বাদে! ছার, ইয়াকে কয় সাতসয়ালি পাখি। সাত সাতখান সওয়াল আছে তার!
এই পাখি উড়ে আসার ভেতরে নিয়তির কোনো বার্তা কি নেই? পাখিটি কি এসেছে তাকে প্রশ্নের সমুখে দাঁড় করাতে। সাতটি প্রশ্ন। সাত সওয়াল। সাতটি সওয়াল করে বলেই সে সাতসওয়ালি। তার… ইউটি টিট্ টিট্… হু হু পিইট্… পিট্ পিট্ সিউটি… গিইএ… পিট্ কি পাখির ভাষায় করা সাতটি প্রশ্ন আসলে? সাত সওয়াল। সাতটি প্রশ্ন। জীবন এত প্রশ্নময় কেন? প্রশ্নের ধার কি সবচেয়ে ধারালো ছুরির ধারের চেয়েও তীক্ষ্ণ? জীবন কি দু’ধারী ছুরি? জীবনটাই বা কী? পাওয়া-না-পাওয়ার যোগবিয়োগের ওপর জীবন কতটা নির্ভরশীল? অথবা মৃত্যু? মকবুল হোসেন ভেবে চলবে আধকোশা নদীতে নিমজ্জিত হয়ে তার বাবার মৃত্যুটা কি ছিলো একটি হত্যা? অথবা আত্মহত্যা? ইতিহাসও আমাদের হত্যা করে থাকে কখনো কখনো – এ কী আমাদের নতুন করে বলে দিতে হবে? (চলবে)

Published :


Comments

Leave a Reply