মিনার মনসুর
মাত্র পাঁচ ফুট উচ্চতা তোমার। পা দুটো বড্ড নাজুক। আর যার ওপর দাঁড়িয়ে আছো সে-মাটিও তোমার নয়। যে-বাতাসে তুমি বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছো কিংবা যে-জলে তৃষ্ণা মিটাচ্ছো – সেও কি তোমার? অথচ পদাঘাতে বিদীর্ণ করতে চাও নিরহংকার মৃত্তিকার বুক! তুমি ভাবো, তোমার হুকুমে সূর্য উদিত হবে, জ্যোৎস্না ছড়াবে চাঁদ! নার্সিসাস পূর্বসূরিদের মতো তুমিও তা ভাবতেই পারো। ধরিত্রীর কী আসে যায় তাতে!
তোমার অর্বাচীনতা দেখে কেউ কেউ হয়তো হাসে। তবে সুন্দরবনের প্রাচীন এই বৃক্ষরাজি, বঙ্গোপসাগরের এই উত্তাল জলরাশি আর ওই যে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো হিমালয়ের বরফ-আচ্ছাদিত পর্বতশ্রেণি – তাদের অবয়ব দেখে তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না। দুর্গম গুহাবাসী সন্ন্যাসীরা ওদের কাছেই দীক্ষা নেয়। তারাই হলো প্রকৃত জহুরি। সব তাদের নখদর্পণে। অথচ শুধুই ঐশ্বর্যের খোঁজে তুমি পৃথিবীকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলেছো নিরন্তর!
অভিজ্ঞতাই হলো সবচেয়ে দামি রত্ন। তুমি তাকে গ্রাহ্য করো বা না করো তাতে তার ঔজ্জ্বল্য একটুও কমবে না। পাকা কমলার ভারে গাছটি যখন মাটিতে নুয়ে পড়ে সে তখন নিছক বৃক্ষমাত্র নয়। ঘাস যত লোভনীয়ই হোক – উদর পূর্ণ হয়ে গেলে পশুরাও ফিরিয়ে নেয় মুখ। একমাত্র ব্যতিক্রম তুমি।
নীলনদ নিরিবিলি বয়ে যায়। আলেকজান্দ্রিয়ার ঝড়ো বাতাস তাড়িয়ে নিয়ে আসে কত ফ্যারাওয়ের বিধ্বস্ত শিরস্ত্রাণ – করুণ করোটি। তোমার বালখিল্য দেখে তারা হাসে।
২৯ ডিসেম্বর ২০১১
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.