পটেশ্বরী

শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

 

  দ্বাদশ কিস্তি

 

 

পনেরো

আমার মৃত্যুর খবরে জওহরলালের মনের কী অবস্থা হলো তা তো আমার জানার সুযোগ হলো না। কালে-কালে তোরা জানতে পারবি, ইন্দু। তখন আমার আত্মপ্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে বলিস; দেখব কীরকম লাগে শুনতে সেসব।

হাসছিস? জীবনটা কিন্তু এরকমই, ইন্দু। আমরা সবচেয়ে বেশি জীবনের কথা বলি যখন, তখনই হয়তো মৃত্যু নিয়ে ভাবছি। মৃত্যুর কথা উঠলই যখন তাহলে একটা কথা বলি তোকে…

বাবার একটা দুশ্চিন্তা ছিল আমি ছোট্ট বয়েস থেকে জীবনের সময়, সময়ের দৈর্ঘ্য, দৈর্ঘ্যের হ্রস্বতা নিয়ে এত মাথা ঘামাই কেন। কোনো এক জ্যোতিষী নাকি বহুদিন আগে গুনে বলেছিলেন আমার আয়ু বেশি নয়।

ব্যস, তাতেই বাবা বুঝে গেল যে আমি আমার আয়ু নিয়ে খুব চিমিত্মত তাই মৃত্যু িআঁকি, মৃত্যু নিয়ে ভাবাভাবি করি।

আসলে এসবই বাবার ভাবাভাবি আমার আয়ুষ্কাল নিয়ে। তাই মৃত্যুর খুব কাছাকাছি এসে (মৃত্যুর যে খুব কাছাকাছি এ আমি ছাই জানতাম তখন!) যখন একটা শবযাত্রার দৃশ্য স্কেচ করলাম, বাবার আশঙ্কা হয়েছিল এ-ছবি আমি আমার নিজের শেষযাত্রাকে কল্পনা করে আঁকছি!

তবে মজার এই যে, ছবিটার সঙ্গে আমার নিজের শবমিছিলের দৃশ্যে খুব একটা অমিল ছিল না!

বাবার আশঙ্কার আরেকটা কারণ ছিল আমার টেনিসনের ‘ক্রসিং দ্য বার’ কবিতাটা পছন্দ করা, সময়-সময় আনমনে আবৃত্তি করা। যেমন একদিন এমন গুনগুনোচ্ছিলাম ওর কটা লাইন যখন বাবা শব্দ করে বলতে লাগল –

Sunset and evening star

And one clear call for me.

And may there be no moaning of the bar

When I put out to sea,

Twilight and evening bell,

And after that the dark,

And may there be no sadness of farewell,

When I embark.

অদ্ভুত না? আমার প্রিয় লাইনগুলো বাবা বলল, আর সেভাবেই বিদায়ের কোনো ব্যথা, বেদনা, ঘনঘটা না রেখেই পরপারে পাড়ি দিলাম। আমার চলে যাওয়াটা বাবা দেখতেও পেল না।

আমার জীবনে বাবার এই নিঃশব্দ বিচরণই আমাকে এখন সবচেয়ে বেশি ভাবায়। ছবির রঙের মধ্যে ধ্বনির যেমন নিঃশব্দ বিচরণ। তুমি শুনলে তো শুনলে, না হলে তারা নেই।

বাবার এই নিঃশব্দ আলাপের আরেকটা ঘটনা বলি তোকে… বাবাই একটা চিঠিতে লিখেছিল আমাকে গত বছর। তারিখটা দাঁড়াচ্ছে এরকম – ১৪ অক্টোবর, ১৯৪০। বাবা লিখছে –

‘যা’ হোক, রাজকুমারী অমৃত কউরের ওজর-আপত্তি সত্ত্বেও দেখা করতে পারলাম গাঁধীর সঙ্গে। সামনে পেয়ে মহাত্মার সেক্রেটারি মহাদেব দেশাইকে আচ্ছা ধমক দিলাম। সে আমাকে বলে কিনা গাঁধীবাবার সঙ্গে কথাটথা বলবেন না, নিষেধ আছে। আমি তো তাজ্জব! আমি নিজেই তো কথা দিয়েছি যে মহাত্মার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকার হবে সম্পূর্ণ নির্বাক। না আমি ওকে কিচ্ছু বলব, না ওঁর থেকে কিচ্ছু শুনব। আমি এক কথার মানুষ, গাঁধীজি চাইলেও আমি একটা শব্দও উচ্চারণ করব না ওঁর সামনে…’

চিঠিটা পড়ে লিখেছিলাম, আমার জানার খুব ইচ্ছে, তোমার সত্যি কী মনে হলো মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে? তা নিয়ে একটাও তো শব্দ বললে না। এও কি তোমার সেই নির্বাক, নিঃশব্দ দেওয়া-নেওয়া?

বাবার এইসব উদাসীন বিলগ্নতা থেকেই বুঝতে পেরেছি ক্রমে-ক্রমে যে, যা শুধু এঁকেই বোঝানো যায় তা নিয়ে কেন কথা বা লেখার মধ্যে যাব না। লাল রংটা কী, এটা কি শব্দ দিয়ে বোঝানো যায়? বলে বা লিখে? বাবা নির্বাক থেকে গাঁধীজিকে কী প্রশ্ন করেছিলেন তা হয়তো গভীর অনুভূতির ব্যাপার। কিংবা গাঁধীকে দেখে কী মনে হয়েছিল সেও এক অনুভূতির ব্যাপার, যা বাক্যে আনা অনুভূতির অপচয়। বাবা সেটা চাননি।

এদেশের সুখ-দুঃখ, আলো-অন্ধকার, জীবনমরণ, প্রেমপরিণয়, নরনারী, জীবজগৎ িআঁকতে তেমনই এক বাক্যহীনতায় আমাকে ভর

করেছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, রঙের পর রং। ভারতবর্ষ তো আমায় বিস্মিত করেইছে, আর আমি চেয়েছি ক্রমাগত নিজেকে বিস্মিত করতে। যাতে কিছু বলার অবস্থায় না থাকি, বাক্যহারা হই।

তোর হয়তো মনে থাকতে পারে, ইন্দু, গত বছর তোকে কী লিখেছিলাম একটা চিঠিতে। বলেছিলাম, আমি সারায়াতে চরম সুখে আছি।

কথাটা বাড়িয়ে বলিনি, মিথ্যে তো নয়ই।

মা তো ভিক্টরকে দুচক্ষে দেখতে পারত না, তাই ধারণা করেছিল ও আর আমি যত রকমের অস্বাভাবিক যৌন ক্রীড়ায় মেতে থাকি বলে এই ঊষর, পা-ববর্জিত গ্রামে পড়ে থাকি অবোধ আনন্দে।

মাকে বোঝানোর কোনো উপায় ছিল না কেন এই কঠিন, সাধারণ জীবনে আমরা সুখী থাকতে পারছি। একদিনের একটা ঘটনা বলি তাহলে…

একদিন সন্ধেবেলায় হাতে একটা খোলা বই নিয়ে বসেছিলাম। বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছিল, কিন্তু আমি ঘরের আলোটা জ্বালিনি। কারণ ওই অন্ধকারে আমি চোখ মেলে ভাবছিলাম আর স্বপ্ন দেখছিলাম।

ভিক্টর সে-সময় ওর সার্জারির ঘরে গিয়েছিল একটা চিকিৎসা-সংক্রামত্ম বই ঘাঁটতে। সার্জারির ঘরটাই ছিল ওর পড়ার ঘর। আমি বাইরের গোধূলি ও ঘরের নীরবতাটাই উপভোগ করছিলাম, যখন মা দুদ্দাড় করে ঢুকে এসে চেলস্নামিলিস্ন শুরু করে দিল।

ঝাড়া পঁয়তালিস্নশ মিনিট ধরে এ-ই চলল। ভিক্টর সার্জারির ঘরে ছিল বলে জানতেও পারল ওকে আর আমাকে নিয়ে কী গেল অতক্ষণ। মা-র একটাই কথা চেঁচামেচি জুড়ে – তোরা যদি এতই সুখে আছিস তো যখন ঘরে এলাম, কেন তোর ওই মনমরা, কষ্টের মুখ দেখতে হলো আমায়? কেন তুই একলা পড়ে আছিস অন্ধকারে? আর ভিক্টরই বা কী রাজকাজ সারছে সার্জারিতে? এটাকে বিয়ে বলবি?

ভিক্টর ওই সময় ঘরে পা রেখেছিল। ব্যাপার-স্যাপার দেখেশুনে বাথরুমে ঢুকে বসে ছিল সিকি ঘণ্টা। ভাবতে পারিস?

না, মা এটা ভেবেই উঠতে পারছিল না, আমার সুখটা কোথায়? শামিত্মই বা কেন।

আমাদের এই সারায় গ্রাম নিয়ে ভাষার ছড়াছড়ি সম্ভব নয়। বর্ণনা করলে কিছুই দাঁড়ায় না। মাইলের পর মাইলজোড়া ল্যান্ডস্কেপ, গাছগাছালি ছাওয়া, আর থেকে-থেকে ছোট্ট ছোট্ট জনবসতি।

মাটির বাড়ি গ্রামবাসীদের, যেখানে পরিচ্ছন্ন নালা-নর্দমা নেই, বিজলিবাতি তো কোন ছাই। দিনমান জুড়ে গরুগাড়ির ক্যাঁচর-ম্যাচর আর ধুলো-ওড়ানো। অদূরে চিনিকলের ভোঁ জানান দেয়, বেলা কত হলো। তাতেই হঠাৎ-হঠাৎ ঝিমুনি-ধরা গ্রামটা জেগে ওঠে।

আর এই আমার ভারত।

আমার প্রাচীন ভারত। আমার নব্য ভারত।

এখানেই এঁকে ফেললাম আমার ‘গল্প বলা বুড়ো’। ছবিটার মধ্যে চেষ্টা করেছি আমার এই গ্রামের নিথর শামিত্ম বুনে দিতে। রাজপুত মিনিয়েচারের স্টাইলে বাঁধা ছবিতে আমার গ্রামের সরলতা ঢেলে দেওয়া। ছবির ওই অমত্মরঙ্গ সুরটাই আমি তুলে নিচ্ছিলাম আমার গ্রাম থেকে। আমার বাতি-নেভানো ঘরের গোধূলি-অন্ধকারও আমি ছুঁইয়ে দিয়েছি ছবিতে। বল ইন্দু, এসব আমি কী করে বোঝাতাম মাকে?

কী করে বোঝাতাম যে, জগৎটাকে খুঁটিয়ে, ডিটেলে-ডিটেলে দেখতে একটা ছড়ানো-বিছানো নির্জনতা আর এক সংকীর্ণতম একাকিত্বেরও প্রয়োজন ছিল। সারায়ার কঠিন জমিতে পা রেখে আমি বলতে পারছিলাম, এইখানে আমি। এই আমার জমি। ঘুড়ি, ছবি।

আয় ইন্দু, আমার ছবি দ্যাখ। গোটা গ্যালারি জুড়ে এই আমি অমৃতা।

তুই ‘গল্প বলা বুড়ো’ দেখছিস? দ্যাখ, ছবিটার জন্য একজন দাম দিয়েছিল দেড়শো টাকা! ভাবতে পারিস? আমি এক কথায় না করে দিয়েছিলাম।

এবার দ্যাখ ‘হাতিদের বেড়ানো’। আহা, কী সুখ হয়েছিল ছবিটা শেষ করে! যেন ভারতের মাটির সুর উঠছে আমার রং-তুলিতে। তারও কত দাম পেলাম জানিস? ওই দেড়শো টাকা!

বললাম, না থাক আপনার টাকা। তেমন হলে কাউকে এমনি-এমনি দিয়ে দেব ছবিটা। যাঁর অফার তিনি কী বুঝলেন জানি না। আমার বয়েই গেছে।

তারপর দেখ ‘স্নানরতা নারী’ ছবিটা। মেয়েটির শরীরটাকে একটা কলসির আদল দিয়েছি। আমার বিলিতি শিক্ষা আর দিশি দীক্ষা কী সুন্দর মিশেছে বল? এতসব বলতে হচ্ছে কারণ এই সময়টা আমরা পাশাপাশি থাকিনি, শুধু তোর চোখের বাইরে নয়, হয়তো মনের বাইরেও!

আমার ভাবতে খারাপ লাগে যে, যখন আমি পরিপূর্ণ ভারতীয় হয়ে উঠছি, তখন তোরা কেউ আমার পাশে নোস। অথচ আমি নিঃষঙ্গ নই।

এখানকার স্থানীয় মহিলাদের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিলাম। কী কঠিন জীবন এদের! কত কিছুই তো করার ছিল, কিছুই করে উঠতে পারেনি। এই না পারাটাই যেন ওদের জীবনের ছবি। যেটা বার করে আনতে চেয়েছি আমার ওই প্রিয় ছবিটায়। দ্যাখ, ইন্দু, দ্যাখ। ‘চারপাইয়ে শোওয়া নারী’। মেয়েটার দুই আকাঙক্ষা দৃশ্য জুড়ে – প্রেমিকের ফিরে আসার, আর নিজের গ– ছেড়ে মুক্তির। কামনার সেই রংই আমি লালে ধরেছি।

তুই হয়তো বলবি, এ তো তত্ত্বকথা। আমিও তাই বলব। কার্ল খান্ডেলওয়ালা ছাড়া কেউ আমার ছবি নিয়ে কিছু বললে মনে হয় বাজে বকছে। আজকেই তো কতজনা রাশি-রাশি মমত্মব্য করল আমার ছবি নিয়ে, তার কিছুই কি মনে করতে পারছি?

যেহেতু তুই ‘চারপাইয়ে শোওয়া নারী’র সামনে দাঁড়িয়ে, তাই শোন ওই কাজটা শেষ করে কী লিখেছিলাম কার্লকে…

‘আমার মুঘল মিনিয়েচারে ডুবে যাওয়াটা তাহলে নজর করেছ তুমি? …আমি সবে শেষ করলাম লাল ফুলছাপ পোশাকের একটা মেয়ের ছবি – চারপাইয়ে শোওয়া। খাটিয়ার পায়াগুলো জ্বলমত্ম লাল গোলাপের তার চারপাশে লেলিহান।… ছবিটায় একটা যৌনতার তাড়না আছে, তবে তা বোম্বাইয়ের চারুকলাকারদের গড়ে তোলা নিষ্প্রাণ যৌনতার মতো বিকর্ষক নয়।’

শোন ইন্দু, এভাবে আমার জীবন বলাটা আমার কাজ নায়। সেটা আমার ছবি বলবে। আমার ছবির ব্যাখ্যা, বিবরণ করা আর কোনো কাজ না আমার। সেটা কেউ করলে করবে, না করলেও কোনো খেদ নেই। এই তো সামান্য কটা বছর, কী হইহই করে বাঁচলাম বল দিকিনি। র্যাঁবো তো উনিশ বয়েসেই কবিতা লেখা ছেড়ে দিলো! কিটস পঁচিশে মরেই গেল! শেলি সাতাশে! বায়রন তিরিশে! আমি তো তিরিশ হব-হব করছিলাম। আর কটা দিন গেলে এই রেট্রোস্পেকটিভেই তোদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি দেখতাম।

মধ্যিখানে এসে গেল মোৎজার্টের মৃত্যুর তারিখটা। যেটা আমারও মৃত্যুদিন হলো। ওই মরণযন্ত্রণায় তোর মুখটাও ভেসে উঠছিল থেকে-থেকে। যদি একটু পিয়ানো বাজিয়ে শিল্পীর ‘রিকুইয়ম’টা শোনাতিস!

শোনাতিসই বা কী করে? ঘরে কি আর পিয়ানো ছিল!

তবে বেশ হয়েছে তোরা কেউ থাকিসনি। আমি একা-একা নিজের বিষে মরেছি। আমার ‘শেষ অশেষ ছবি’টাই মনে-মনে দেখতে-দেখতে, মনে-মনে িআঁকতে-িআঁকতে, লালের মধ্যে লালের মধ্যে লালে ডুবতে-ডুবতে…

আমার শরীর থেকে সমসত্ম রক্ত তখন বয়ে যাচ্ছে… আমার শরীরের রক্তের লালের সঙ্গে মিলছে ছবির কল্পনার রক্তের লাল…

ইন্দু, একবারটি ‘শেষ অশেষ ছবি’র সামনে গিয়ে দাঁড়া, শেষ মুহূর্তের অমৃতাকে দ্যাখ। দেখবি কী জীবন! কী জীবন! কী জীবন! আমি মরিনি…

ষোলো

ইন্দুর কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। অমৃতার কথা ভেবে-ভেবে ওর জীবন লিখতে গিয়ে কী এক ঘোরে পড়েছে। দুজনের সংলাপ হিসেবে যে-বইয়ের কথা ভাবা হয়েছিল তা ক্রমে অমৃতারই জবানবন্দি হয়ে উঠছিল। যা হওয়াই স্বাভাবিক।

সেই আত্মকথাও এসে আটকে পড়ল অমরির িআঁকা ছবিতে।

অমরি বলে, এটা ওর বাবার কাছ থেকে পাওয়া। যা নিঃশব্দে বলা যায় তার জন্য শব্দ খরচ করো না। যা এঁকে দেখানো সম্ভব তা বলে বোঝানো দায়। তাই বরাবরের মতো অমরি এসে দাঁড়াল নিজের িআঁকা ছবিতে।

ওর বলার এই হলাম আমি। এই আমি অমৃতা। এই আমার আত্মজীবনী। আমার জীবন নিয়ে উপন্যাস।

ইন্দু বুঝে উঠতে পারে না, এরপর অমৃতাকে নিয়ে উপন্যাস আর কীভাবে গড়াবে। সব বলা যখন এসে থমকে পড়ছে ছবিতে।

অমৃতা উপন্যাসের শব্দে ইতি টেনে দিলো ওকে পঞ্জার লিটেরারি লিগের গ্যালারিতে নিয়ে দাঁড় করিয়ে। একে-একে চেনাল ওর ছবি, তারপর নিজের আত্মপ্রতিকৃতিতে গিয়ে স্থির হয়ে গেল।

ইন্দুর একে-একে মনে পড়ল গ্যালারির সব ছবি। উদ্বোধনের রাতে বাড়ি ফিরতে-ফিরতে কী মনে করে রবি নদীর পাড়ে চলে গিয়েছিল। ঠিক যেখানে কিছুদিন আগে দাহ করা হলো অমরিকে। তারপর বসে ছিল ভোর হওয়া অবধি। দিগমত্ম রঞ্জিত করে যতক্ষণ না সূর্যোদয় হলো।

আর আজ মধ্যরাত। অমৃতার জীবন নিয়ে উপন্যাস কোথায় এসে ফের ওর প্রিয় লাল রঙে থমকে গেল। শরীরের রক্তের লালে।

কলম নামিয়ে রেখে ইন্দিরা সুন্দরম মনে-মনে বলল, অমরি, আমায় ক্ষমা করিস; এই জীবন, এই উপন্যাস, আমাকে দিয়ে হবার নয়। তুই যা চিরকাল ভেবিছিস সেটাই সত্য, সেটাই ধ্রম্নব। তোর ছবিই তোর জীবনোপন্যাস, প্রিয় অমরি, প্রিয় পটেশ্বরী!

ইন্দু অমৃতার স্টুডিয়োর জানালায় গিয়ে বসে বাবার দুরবিনে চোখ রাখল। অন্ধকার আকাশ গ্রহ তারা নিয়ে নেমে এলো দৃষ্টিপথে। তারার জগতে হারিয়ে যাবার এক প্রবল টান হলো ভেতরে।

ঠিক তখন মার ঘর থেকে ভেসে এলো মা-র সেই গুমরানো কান্না। প্রথমে বোঝা গেল না ওটা কান্না, না মা-র নতুন করে গেয়ে ওঠার চেষ্টা।

একটু কান পাততে শব্দটা হারিয়ে গেল।

পরদিন সকালে কল্যাণের সঙ্গে দিলিস্ন রওনা হবে, ইন্দু মা-র সঙ্গে দেখা করতে গেল। মা মনেই করতে পারল না, ইন্দুরা এ কদিন এখানেই আছে।

জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে বলল, অমরিকে বলে দিস অনেক দিন চিঠি দেয়নি আমাকে। এই অসভ্যতা আমার পছন্দ না।  r (চলবে)