মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
খুঁটির গায়ে পা বাঁধা রয়, নাচতে গিয়ে শেষে
হেরেই গেলো, হারলো সেধে-সেধে
ভাঁড়ের হাসির পোশাক রাখলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে।
বিদঘুটে বাজপাখির ডানায় সমব্যথার ধূলি
সঙ্গে তাদের ওই উড়ে যায় কাতর আর্তিগুলি।
যেন একটা চলচ্চিত্র : অশ্বারোহীর দল,
ছোটো বন্দুক ছুড়ছে গুলি, একের পর এক, তীব্র, প্রবল,
তাগ নির্ভুল, ঠিক লাগে সব চাঁদমারিতে
কেউ জানে না সে কতদিন দাঁড়িয়েছিলো, সামনাসামনি,
ওই সারিতে।
তারা একটা টিনের তৈরি সস্তা কুঠার বাগিয়ে ধরে,
হালকা-পলকা তীরধনুকও এনেছিলো সঙ্গে ক’রে
ঠিক যেন কেউ তুললো ভুরু কপালটাতে, তেমনি তারা হত্যা করে,
গাছের পাতা আর ছায়াদের শক্ত হাতে পাকড়ে ধ’রে
এবং শুধু ঢাক বেজে যায় ধুম-চাক-ধুক গুরু-গুরু
প্রাচীন অহমিকার এবং ক্ষিপ্ত রোষের প্রলয় শুরু!
তারা সবাই ইতিহাসকে ছুড়েই ফ্যালে আঁস্তাকুড়ে
যুগগুলো তো নিছক বালি, ঢাকছে সবই বিষম গুড়ে,
এবং ঢোকে খেল দেখাবার মামলাটা ওই আলসেমিতে
ঘুণ ধ’রে যায় অতঃপর তো রাজভবনের সকল ভিতে,
শুয়েই থাকে তারা সবাই কাচের তৈরি কবরটাতে
বিশ্বাসী সব শিলায় তৈরি। কারিগরের খেল বাঁহাতে!
সেই যারা সব হেরেই গেছে – তারা সবাই ফেরিওলা
রাজ্যপালের বাড়ির পাশে নিত্য তারা ফাটায় গলা।
একতলা এক দীর্ঘ বাড়ি, রৌদ্রেপোড়া আর ফ্যাকাশে,
হলদেটে এক কিম্ভুত রং দহনঘন তার ও-পাশে
কাঠের যত রং-বেরঙের কড়িকাঠতো বেরিয়ে আসা
বরগাগুলো ঝোঝুল্যমান তীক্ষ্ণ ছায়ার মতোই খাসা!
তারা সবাই বিক্রি করে কবচ তাবিজ এবং পুঁতি
এবং ছড়ায় বরুণদেবের অগ্নিবর্ণ ভীষণ দ্যুতি
দেউলশোভায় ক্ষুদ্র যত কোণগুলোতে জ্বালায় বাতি –
অমাবস্যা আসে আসুক, তবু আলোয় ফুটবে রাতি
এবং একটা মইয়ের দুটো খড়ের কুটো দেয় দেখিয়ে
ফসল এলে সে-কোনখানে হেঁটেই যাবে ওই এগিয়ে –
প্রতিধ্বনিই খেয়াল রাখে কখন শান্তি, যুদ্ধ কখন,
এবং বলে কত কিছুই নীরবেই তো, গলাও ফাটায় যখন তখন
লোকের দিকে বাড়িয়ে দেয় হাতের তালু, যার ওপরে
সেই কবেকার প্রস্তরযুগ আজো রুদ্র নৃত্য করে!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.