পাখিদের গ্রাম, খোপরা

মানুষের রক্তের ছায়ায় কি ঘুমিয়ে থাকে পাখির উড়াল স্বভাব! অথবা মানুষের কণ্ঠ ও কথার ভেতর (এবং) পাখিরা গৃহ রচে হয়তো, এখনো বা সেই কণ্ঠ বাতাসে ও বৃক্ষির পাতায়  পাতায় ওড়ে। তবে কি যে পাখির কণ্ঠ তো কোনো দীর্ঘ বাক্য ও ব্যাকরণের সংকলন নয়, বা তা একটি ভাষার মতো প্রশংসা পায়। যেহেতু হৃদয় নয়, বরং মৃদু এবং হ্রস্ব, অথবা হ্রস্ব এবং মৃদু একটি বাক্যের একক স্থির করা ছিল, তখন গ্রামের লোকেরা বলে, অথবা এটা অবশ্যই বটবৃক্ষ, বটে! – গ্রামের লোকেরা অনুকরণ নয় এরূপ বলে বিরিক্ষি। নাম বটই ছিল, তন্ময়তা সন্নিবিষ্ট কি! এবং প্রত্যুষে, তা যেন কোনো প্রভাত-সংকলনের দৃশ্যই, লোকেরা বটবৃক্ষ পরিচয় ভুলে সচকিত স্বাভাবিক এই যেন। তাহলে, বৃক্ষপ্রেমিক তারা প্রভাত-সংকলনের শব্দবন্ধ ও বর্ণনার ভাষাছবির সনির্বন্ধ অনুষঙ্গ লক্ষ করলে দেখা যাবে; হয়তোবা তা চন্দ্রালোকে পুষ্পগন্ধের মতো রূপময় স্ত্ততিযোগ্য, তথাপি তা যে নয়, তা স্থির নিশ্চয় থাকে। সম্ভবত।

কিন্তু হয়তোবা কী যে, যে-সংকলনে প্রকাশ্য ও কাহিনির প্রচার আছে এবং তা অপ্রতুল হলে লক্ষ করে যা বটবৃক্ষ, তা গোপন প্রচার মাত্র; কেউ বলে বট নয়, শিরীষ! কেউ বলে শিরীষ নয়, গাব বটে! কেউ বলে সুপারি! এবং আর সকলে এই নতুন সংকলনের শব্দবন্ধ অনুকরণ সংগত করে। অতঃপর, একই বৃক্ষির নাম বিবিধ শব্দবন্ধে তন্ময়তা হলে কল্পনার নতুন স্বরূপ বিস্তর শিল্পকলা হয়, এবং এই শিল্প-আন্দোলন গ্রামের লোকদের মগজে লাবণ্য জ্যোতির্ময় করে। লোকেরা বৃক্ষির নাম ভুলে আকাশ হারিয়ে ফেলে, পুষ্পসুধা হারিয়ে ফেলে, কবিতা হারিয়ে ফেলে। এবং যা কল্পনা-প্রতীয়মান হয় না, বসন্তের সেই প্রাচীন প্রভাত পুনর্বার বৃক্ষের গোপন অভিজ্ঞানে সুপ্ত তা কোথায়? আর বসন্তের গান। আর বসন্তের প্রার্থনা গৃহের ছায়াউদ্ভাসিত। এমন আলোক-সংকলিত পুরনো স্মৃতির ছায়ায় ছায়ায় মনোরম বৃক্ষবিভ্রমের কালো রাতে তলিয়ে গেলে মনে পড়ে পাখিরা তবে কোথায়?

লোকেরা বৃক্ষির পরিচয় হারিয়ে হয়তোবা, নয় তা বিবিধ স্মৃতির ভেতর যা কিছু চিহ্নিত ছিল একদা এরূপ যে, অবর্ণনীয় বৃক্ষির ভেতর তারা নিজেরাই হারিয়ে যায়, অথবা তারা নিজেরাই হারিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল; কেননা যে-প্রভাত রাত্রির আবেগ দ্বারা সীমিত সময়ের নিঃশব্দ কলরবের ভেতর থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে অর্থময় ও তন্ময়তা সূচনা করে, লোকেরা এমন উপলব্ধির যোগ্য সময়ের ভেতর থামে, কিংবা তারা আবিষ্কার করে কী যে প্রভাতে পাখিদের কণ্ঠস্বর ক্রমশ অনেকদিন ধরে নেই। পাখির যে-ভাষাকথা আছে তাদের গৌরবে, এবং সেই সর্বাপেক্ষা শিল্পিত স্বরূপ সকল লোকের অনুভূতির ভেতর ধ্বনিময় ছিল, সকল লোকের ঘুমে চাঁদের অনুকরণ শরীর হয়ে ছিল, সকল লোকের শরীরে এতো জাগরণ ঝঞ্ঝা হয়ে থাকে; তবে তারা দেখে তাদের ঘুমের ভেতর কবে পাখিরা নেই – শরীরের ভেতর পাখিরা উড়ে গেছে। তখন হৃত-সাম্রাজ্যের প্রাচীন বিকেলের দিকে বিলীয়মান ছায়ার ভেতর পাখিশিকারি লোকটিকে তারা খোঁজে, কিন্তু কোথাও তার ছায়া দেখে না; সে যেন অনন্ত দুঃখের কোনো কোনো গোপন পত্রপুষ্পের গন্ধের ভেতর ক্ষীয়মাণ স্মৃতি হয়ে, কেউ বলে এই মাত্র। বলে সে আমাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের মধ্যে সুপ্ত কী যে! নয়!

তবে এই হয় যে, সমাচার প্রীতিপূর্বক গোপন এক কৌতূহল খেলা করে, পাখিপ্রেম এবং শিকারের মধ্যে সম্পর্ক ভেবে হাসিঠাট্টার ব্যাপক রগড় পৌঁছল! তবু পাখির যেহেতু বাক্যপুঞ্জ নেই, কেবল সুর হৃদয় হয়ে ছিল। লোকেরা আকাশের ভেতর খোঁজে ডানার সাহস – কতগুলো পিপিলিকা উড়ছে। তবে রাশি রাশি মৃত্যুর সময় উপস্থিত ভেবে ভয় হয়। নিজেদের হাত-পা, চোখ-মাথা হাতড়ায় – হাত কোথায়? পা কোথায়? চোখ কোথায়? বরফ হয়ে যাওয়া রক্তের শীত অথবা শিশুর কান্না ছুটে আসছে হাতের ভেতর; হাতের ভেতর সমুদ্রের লবণজলে দ্রবীভূত মৃত শিশুর ছবি দেখতে দেখতে হাত হারিয়ে যায়, যেন সমস্ত হস্তশিল্প মৃত্যুর শিল্পকলার ভেতর উচ্চকিত – মৃত্যু, বৃক্ষ, পাখি, বিদ্যালয়, রক্ত, শব্দ, ভাষা এবং ভাষণ নীরব, দৃশ্যহীন, দুর্নিবার নিরাসক্তির ভেতর ভেসে ভেসে বেড়াতে থাকে। এসব হাসির বিষাদময়তা ছুঁয়ে গেলে পাখিশিকারি লোকটির হাতে জেগে ওঠে এখন একটি ছোট্ট পাখির রক্তাক্ত পালক। তবে কি এই হয়তোবা যে, কোথাও যুদ্ধের শীত অথবা শীতযুদ্ধের প্রস্ত্ততি চলছে? তবে এখন পাঠ্যপুস্তক গুটিয়ে রাখার কাল; এবং ওষুধ, চাল, ডাল, লবণ, কেরোসিন, স্যালাইন, কাপড়, শিশুর দুধ, দিয়াশলাই ইত্যাদির নিতান্ত প্রয়োজনীয় একটি হ্রস্ব তালিকা প্রস্ত্তত সম্পন্ন হলে পাখিশিকারি লোকটি নিঃশব্দে কথা বলে শরীরের ভেতর। বৃক্ষ এবং পাখির গন্ধ নিয়ে সে হারিয়ে যাওয়া আকাশ, পুষ্পসুধা এবং কবিতার সান্ধ্যসংগীতের ভেতর থামে। যেন তার শৈশবের দুরন্তপনা কবিতা, কবিতার ভেতর শৈশব। শৈশবের বৃক্ষির ভেতর সে-শরীরে শুকনো পাতা সঞ্চয় করে, ছায়া সঞ্চয় করে – শরীরে শুকনো পাতা সংকলিত হলে সেখানে তখন পাখির গন্ধ বিভূষিত আছে; – কেননা ছায়ার স্বেচ্ছাচারিতা নেই, ছায়ার ক্লেশ নেই, ছায়ার বেদনাবিষাদিত শূন্যতাবোধ নেই, ছায়ার অশ্রু নেই যে, সে পাখিদের মিনতির ভাষা রপ্ত করে। কেননা, শরীরে ছায়া তন্ময় হলে ছায়ার ভেতর পাখির কণ্ঠের শব্দবন্ধ ধ্বনিময় ছিল – হয়তোবা কেন এ যেন আশ্চর্য এখনো ব্যতিক্রম তা সৌন্দর্য, প্রীতিদায়ক, আকাশম-লের নীলাভ্র, নক্ষত্রনিচয়ের সূক্ষ্মতম আলোলিখিত পথকে অঙ্কিত করে; এবং এই আলোবিম্বিত পথের ছায়ার ভেতর প্রাচীন বটবৃক্ষ, যা বট তাই অশ্বত্থ অথবা কেউ বলে পাকুড়, সেখানে এই এখন যে বট অথবা অশ্বত্থ অথবা পাকুড়ের রৌদ্রঝিলমিল পাতায় পাখির শরীর মিশে থাকে, অথবা পাতা হয়তো পাখি নয় কি (!) বলে বিভ্রম হয়, অথবা যত পাখি তত পাতার প্রভাতসংগীতের যোগ্য স্বরূপ হয়ে ওঠে; আর পাতার সমস্ত রং, বৃক্ষির সকল শাখা-প্রশাখার ধূসরিত রেখা, আলোছায়ার পারিপাট্য যেন একটি অখ- পাখি রাষ্ট্রসংঘের চিহ্ন; এ যেন এবং এই অনিবার্য যে তা আমাদের গৃহ, তা আমাদের গ্রাম, আমাদের নক্ষত্রনিচয়, আমাদের নদীমাতৃক, তা শস্যের সকল অনুভূতির এক সুদীর্ঘ সংকলন।

পাখিশিকারি লোকটি তখন যত পাতা, তত পাখি হলে আনন্দ সুতরাং গাছে গাছে ঝোপজঙ্গলে তার অবাধ বিচরণ; তার শরীরে সংগীত, তার শরীরের ঘামের ভেতর সংগীত; ঘাম আর ছায়ার ভেতর শরীরের সকল ছায়া, ছায়ার ভেতর তার কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়লে পাখিশিকারি লোকটি একটি রক্তাক্ত পালক উড়িয়ে দেয় আকাশে। অথবা সে পালকটি উড়িয়ে দেয় গ্রামে। কত কত দিন সে পাখির উড়ালে মগ্ন, দূর দূর মাঠে সে যায় পাখির উড়ালে, দূর দূর আকাশে সে যায় পাখির ডানায়। তার হাতে পাতার বাঁশি, বাঁশিতে পাখি সুর ছড়ালে তবে তার আনন্দ কী যে; যেন পাখিরা কথা বলে বৃষ্টির ছন্দে, যেন পাখিরা বেজে ওঠে তার বাঁশির রঙে। পাখিশিকারে সে খুলে নেয় সকল পালক, পালক তার মাথায় টুপি সংকলিত হলে সে পৌরাণিক রাজা। পাখিরা তবে এই যে রাজাকে ভয়ে উড়ালে যায় দূর দূর নিরুদ্দেশে; তারা দূরে দূরে গেলে বৃক্ষ পাখিশূন্য, তারা দূরে দূরে গেলে ফুল শুকিয়ে যায়। তখন তবে কী হয় যে, পাখিশিকারির বিদ্যালয়পড়ুয়া একমাত্র কিশোরী মেয়েটি ফুল সংগ্রহ করতে পারে না, ফুল শুকিয়ে বৃক্ষরা ফুলশূন্য হলে সে তার বাবাকে বকাবাদ্য করে, সে বলে পাখির কিচিরমিচির না থাকলে তার বইপড়া সমাপ্ত হয় কীভাবে; সে তার পাঠ্যবইয়ের ভেতর জমিয়ে রাখে এসব পাখির কিচিরমিচির, সে তার বিদ্যালয়ের নীল পোশাকের ভেতর জমিয়ে রাখে পাখির কিচিরমিচির। তখন তার বুকে ফুল ফোটে, তখন তার হৃদয়ে পুষ্পসুধা বাগ্মী পাখিদের অবারিত উড়ালে আকাশ চিত্রিত; ফুল শুকিয়ে গেলে কিশোরী মেয়েটির মন খারাপ। সে খায় না, বই পড়ে না; যেন তার বই শুকিয়ে মৃত, যেন তার খাবার শুকিয়ে মৃত। তখন পাখিশিকারি লোকটির বউ কাঁদে, তার অশ্রু অস্ফুট ফুল হয়ে ভেসে যায় নদীর তরঙ্গে, অশ্রুফুল তার হৃদয়ে কান্নার গভীর গভীরতর গন্ধের ভেতর সকল বর্ণমালা স্তব্ধ, মলিন; সকল শব্দসংকলন রক্তের প্রতিধ্বনি, ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। তখন ভাষার মাসে কিশোরী মেয়েটি শহিদমিনারে তবে কী নিয়ে যাবে ফুলশূন্য হাতে; ফুলশূন্যতার বিষাদ তাকে আচ্ছন্ন করলে, কিশোরী মেয়েটি, একদিন বৃক্ষপ্রান্তরের দিকে হেঁটে হেঁটে বিলীয়মান একখ- বিন্দুর ভেতর মিশে যাচ্ছে, অথবা কিশোরী মেয়েটি পাখির ছিন্ন পালকের চূড়ায় ভেসে ভেসে উড়ে যাচ্ছে বৃক্ষির অজস্র পাতার ঝিলমিলের ভেতর; গ্রামের লোকেরা তাদের বৃক্ষ ফুলশূন্য হলে পাখিশিকারি লোকটির খোঁজ করে, তারা দেখে তাদের প্রভাতে পাখির কিচিরমিচির নেই ক্রমশ অনেকদিন ধরে; আর মেঘের ছায়ার ভেতর, পাতার ধ্বনি-প্রতিধ্বনির ভেতর, মাঠের শস্যের ভেতর পাখির কিচিরমিচির না পেলে পাখিশিকারি লোকটির কিশোরী মেয়ে একদিন মেঘের বিন্দু বিন্দু জলকণার ভেতর পাখি হয়ে উড়ে যাচ্ছে গোধূলিদিগন্তের দিকে।

বৃক্ষ ফুলশূন্য হলে গ্রামের লোকেরা সকল ঋতু হারিয়ে ফেলে, এবং প্রত্যুষে তাদের মনে হয় কেবল শীত তাদের শরীরে, শীত তাদের শরীরের সকল মাঠে, শীতের অনুভূতি তাদের পেশি ও পায়ে ছড়িয়ে – তাহলে এতো বিরামচিহ্নহীন শীতের বিরুদ্ধে তারা কীভাবে যুদ্ধ করবে। এই অন্তহীন শীতযুদ্ধের ভেতর তারা দেখে পাখির ছোট্ট রক্তাক্ত একটি পালক শরীরের অনুভূতির ভেতর পায়ের অনুভূতির ভেতর উড়ে আসছে, পালকের শরীরে লেগে আছে শুকনো ফুলের তীব্র গন্ধ। তবে কোথায় হত্যা হয়েছিল এই পুষ্পগন্ধশোভিত মৃদু পাখি – তারা পাখি হত্যা দেখেনি তাদের গ্রামে, তাদের পাখি রাষ্ট্রসংঘে; পাখির মৃত্যু দেখেনি তাদের পাখি রাষ্ট্রসংঘে। এবং এই প্রথম পাখির হত্যা বিষাদজর্জরিত করলে তারা নীরব ও নির্বাক। কত কতকাল তারা পাখির হত্যায় নির্বাক, কত কত রাষ্ট্রসংঘের ভেতর তারা বাক্য ভুলে; তারা পাখি হত্যার এই উড়ে আসার রক্তাক্ত পালক তাদের পাঠ্যবইয়ের ভেতর জমা রাখে, এবং প্রত্যুষে তাদের মনে হয় তারা কত কতকাল পরে কথা বলছে পাখির কণ্ঠে। গ্রামের সকল লোক পাখির কণ্ঠে বুলি আওড়ালে তারা দেখে তাদের পাঠ্যবইয়ের সকল পৃষ্ঠা সাদা – বর্ণ নেই, বাক্য নেই, গণিত নেই, ব্যাকরণ নেই, সারমর্ম নেই, বিজ্ঞান নেই, কবিতা নেই, ছন্দ নেই, শব্দার্থ নেই, সমাজবিজ্ঞান নেই, শিল্পকলা নেই। কবিতা হারালে, ধ্বনিবিজ্ঞান হারালে, ভাষা হারালে গ্রামের লোকেরা তবে এখন এমন যে কীভাবে কথা বলবে নিজস্ব ভাব প্রকাশে, গণিত হারালে তারা বিভ্রান্ত কী যে কীভাবে গণনা করবে বৃক্ষভ্রমিত পাখি ও পাতা। তখন তারা দেখে, তাদের পাঠ্যবইয়ের সাদা পৃষ্ঠায় উৎকীর্ণ আছে পাখি হত্যার রক্তাক্ত পালক।

গ্রামের লোকেরা তখন ভাবে যে হয়তো কি এই কিশোরী মেয়েটির বিদ্যালয়ের নীল পোশাকে আবৃত শরীরে ফুল শুকিয়ে গেলে সে পাখি হয়ে উড়ে যায়, অথবা এই কী যে তার পাঠ্যবইয়ের বর্ণমালার গন্ধে পাখির কিচিরমিচির খুঁজে না পেলে সে পাখিতে রূপান্তরিত, গ্রামের লোকেরা অথবা এই অবশ্যই ভাবে যে, কিশোরী মেয়েটি হয়তো তার বাবার শিকার করা পাখির মাংস খেতে খেতে, হয়তো তা নয়, হয়তো হত্যা হওয়া পাখিদের বিলাপ ও অশ্রুবিষাদে সে পাখি হয়ে আকাশে যায়, অথবা যায় গোধূলি মেঘশোভিত বৃক্ষপত্রপুঞ্জের নিঃশব্দ ছায়ায়। গ্রামের লোকেরা তবে এই ভাবে যে, কিশোরী মেয়েটি ফুল শুকিয়ে গেলে সে পাঠ্যবইয়ের সকল ভাষা নিয়ে গেছে তার ঠোঁটের উড়ালে, তারা এরূপ বিবিধ কারণের গোলকধাঁধায় বিভ্রান্ত এবং তাদের পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা সাদা হয়ে যাওয়ার দিনে একটি পাখির রক্তাক্ত পালক তাদের গ্রামে উড়ে আসে। গ্রামের লোকেরা তাদের শরীরের ভেতর এই রক্তাক্ত পালক পরম মমতায় আশ্রয় দিয়ে রাখে, যেন তারা গোপনে রাখছে বিদ্যালয়ের নীল পোশাক, এই মাত্র যে! কেননা তখন শরীরে বিরামচিহ্নহীন শীতের ভেতর কত কতকাল তারা নির্বাক নিঃশব্দ ভেঙে কথা বলে ওঠে। তাদের গ্রামের একমাত্র বৃক্ষ, এবং তা বটবৃক্ষ বটে!-তারা বলে-

বিরিক্ষি, নাম বট।

না এটা শিরীষ গাছ

হ্যাঁ

না এটা গাব গাছ

হ্যাঁ হ্যাঁ

না এটা সুপারি গাছ

হ্যাঁ হ্যাঁ

না এটা তমাল

হ্যাঁ

কবিতা লিখিস

হ্যাঁ

লিখবি না

হ্যাঁ

স্বপ্ন দেখিস

হ্যাঁ

দেখবি না

হ্যাঁ

বই পড়িস

হ্যাঁ

পড়বি না

হ্যাঁ

গণিত জানিস

হ্যাঁ

জানবি না

হ্যাঁ

বিজ্ঞান বুঝিস

হ্যাঁ

বুঝবি না

হ্যাঁ

গাছ লাগাস

হ্যাঁ

লাগাবি না

হ্যাঁ

তোরা কি ক্ষুধার্ত

হ্যাঁ

ক্ষুধা জয় কর (ক্ষুধা জয় করা মহত্ত্বের লক্ষণ)

হ্যাঁ

তোরা কি মেরুদ-হীন

হ্যাঁ

মেরুদ- অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয়

হ্যাঁ

কথা বলতে পারিস

হ্যাঁ

বলবি না

হ্যাঁ

চল বাঘ মেরে আসি

হ্যাঁ

আমরাই ইতিহাস, ইতিহাসের নতুন রচয়িতা

হ্যাঁ

ক্ষুধার ইতিহাস, রক্তের ইতিহাস, হত্যার ইতিহাস

হ্যাঁ

শিল্পকলা! শিল্পকলার ইতিহাস!

হ্যাঁ, তাও

একটা শব্দ বাড়তি… বাড়তি শব্দ উচ্চারণ শাস্তিযোগ্য

হ্যাঁ

এইসব কথোপকথন অথবা নির্দেশাবলির উৎকীর্ণ শব্দবন্ধ নতুন স্ত্ততিসংকলন প্রস্ত্তত করলে কেউ কেউ উড়ে আসা রক্তাক্ত পালক ভ্রমিত চাঁদে ডুবিয়ে গোপন শৈশবের কবিতা চর্চা করছে, তাদের কেউ কেউ নতুন শব্দবন্ধ সৃষ্টির জন্য প্রবল আত্মপীড়ন করে চলেছে, তাদের কেউ কেউ হয়তো এমন যে, বটবৃক্ষির বিবিধ নাম-পরিচয় পাখিকণ্ঠে বিবৃত হলে এ এক বিস্তর নতুন কল্পনার শিল্প-আন্দোলন ভেবে রগড় করে, অথবা কোনো অ্যালিগোরি রচনার কথা ভাবে; তবে এতো অ্যালিগোরি তারা কোথায় লিখবে, এমন শব্দবন্ধের স্রোত মাথার ভেতর অবিরাম ভেঙে পড়লে তারা আবিষ্কার করে সাদা হয়ে যাওয়া পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা। এবং বিস্ময় যে, তারা সাদা হয়ে যাওয়া পাঠ্যবইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা উলটালেই খুঁজে পায় শুকিয়ে যাওয়া স্বচ্ছ ফুল। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় পাথরে খোদিত চিকিৎসাশাস্ত্র – সেখানে লিপিবদ্ধ জটিল রোগের ওষুধ আর বিপুল দুর্ভিক্ষ থামিয়ে দেওয়ার কৌশল। তৃতীয় পৃষ্ঠায় বিকেলের লুব্ধ মেঘ ঘুমিয়ে গেলে বিষণ্ণ নদীর বুকে বালির রুপালি। চতুর্থ পৃষ্ঠায় শুকনো লাল ধুলোর রক্তগন্ধ। পঞ্চম পৃষ্ঠায় ডেমোক্রেসির মিনিয়েচার। ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় ন্যুব্জ অধ্যাপক – যিনি কুকুরের ভাষা বিশেষজ্ঞ, বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের প্রতিবাদে তিনি বিপ্লবী মেটামরফোসিস। সপ্তম পৃষ্ঠায় একটি চৌচির আয়না। অষ্টম পৃষ্ঠায় বিবাহ এবং হত্যাবিষয়ক আইনের খসড়া। নবম পৃষ্ঠায় অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিষের ব্যবহার প্রণালি ও প্রতিষেধক দ্রব্যের তালিকা। দশম পৃষ্ঠায় প্রাচীন পুথি ও ব্যাকরণের ধ্বংসাবশেষ, প্রাসাদ ও দুর্গের ভেতর স্তব্ধ খুন হওয়া কবিদের অতৃপ্ত আত্মার চেহারা। একাদশ পৃষ্ঠায় প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক মানচিত্র (বর্তমানের সঙ্গে যার কোনোই সাদৃশ্য নেই, এবং আশ্চর্যরকম ক্ষীয়মাণ)। দ্বাদশ পৃষ্ঠায় অ্যানথ্রোপলজি ত্বকের নিচে ঘাই দিয়ে উঠছে হারানো ভাষাসমূহ। ত্রয়োদশ পৃষ্ঠায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাঁটাতারে হত্যার গন্ধ। চতুর্দশ পৃষ্ঠায় গোপন প্রেমের চুক্তিপত্র ও নদীর বালিসাম্রাজ্য, এতো দীর্ঘ যে, পৃথিবীর ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন মানচিত্র বলে ভুল হয়। পঞ্চদশ পৃষ্ঠায় কয়লার উড়ন্ত ছাইয়ের আঁধার কালো রং ফর্সাকারী ক্রিমের প্রস্ত্ততপ্রণালি। ষোড়শ পৃষ্ঠায় হারানো পাখিদের স্মরণে রচিত
কবিতা-উৎসর্গপত্র। সপ্তদশ পৃষ্ঠার এপ্রিলে লাশের গন্তব্যে লাশ এবং তারা খুঁজে পায় নীল পোশাকের ভেতর সঞ্চিত পাখির কিচিরমিচির, শুকনো স্বচ্ছ ফুলের ভেতর দিয়ে তারা আকাশ দেখে, ফুলের শুকনো ধুলোরক্ত দেখে, রক্তের ইতিহাস দেখে, কান্নার গভীরতর গন্ধের ভেতর স্তব্ধ বর্ণমালা দেখে; আর উড়ে আসা রক্তাক্ত পালক তাদের হ্যাঁ হ্যাঁ করা সংয়ের বুলি-আওড়ানো ধ্বনি ভুলে বিপুল শব্দবন্ধের আকাশ চিত্রিত করলে, বৃক্ষ চিত্রিত করলে, নদী চিত্রিত করলে তারা অ্যালিগোরি লেখে – হয়তো কী যে হয় এইসব অ্যালিগোরি পাখির কণ্ঠবিভূষিত, পাতা ও ফুলের দুর্বিনয় পুরস্কার ছিল – যা গার্হস্থ্য ক্ষুধায় লিখিত, তা এই মাত্র যে পাখিশিকারি লোকটি বউ এবং কিশোরী মেয়ের অশ্রু অস্বীকার করে গিয়েছিল, – পাঠ্যবইয়ের পুষ্পসুধা সে দেখেনি। পাখিশিকারি লোকটির মাংসের ভেতর হৃদয় কোথায় – নীল পোশাকের ছায়ায় পাখিদের চন্দ্রকণ্ঠ অক্ষর সে জানে না। সে বন্দুক হাতে যায় বৃক্ষির ছায়ার নিচে। সে বন্দুক হাতে যায় গোধূলি দিগন্তের দিকে। যত পাতা তত পাখি হলে তার আনন্দ। আনন্দে আত্মহারা পাখিশিকারি লোকটি পাতার ছায়ায় মুখ লুকিয়ে থাকা পাখির মৃদু হৃদয়ে গুলি ছুড়লে বৃক্ষির পাতায় পাতায় শাখা-প্রশাখায় রক্তের করুণ শিল্পকলা। আর গুলিবিদ্ধ মৃদু পাখিটি তার হাতে ঢলে পড়লে দেখে বিদ্যালয়ের নীল পোশাক আবৃত মৃদু পাখিটিকে সে হত্যা করেছে – পাখির হৃদয়ে কবিতার ছন্দগন্ধ পাঠ্যবইয়ের ভেতর শিশুকণ্ঠে চিত্রিত ছিল।

উড়ে আসা রক্তাক্ত পালক ভ্রমিত চাঁদে ডুবিয়ে পাঠ্যবইয়ের সাদা হয়ে যাওয়া পৃষ্ঠায় অ্যালিগোরি লিখতে মাঠে গেলে সবুজ খড়, বাদামের চিরল চিরল পাতা। নদীতে গেলে ঝিরঝির ধুয়ে যাচ্ছে সাদা বালি, মাছের হৃদয়ে চাঁদ। তারা চাঁদের উপমা লেখে পালকে, চাঁদ পাঠ্যবইয়ের সাদা পাতায় জ্যোৎস্না ছড়ালে তাদের সকল অসুখ দূরে যায় পালকের স্পর্শে, তাদের সকল ক্ষুধা মরে যায় পালকের গন্ধে, তাদের সকল গৃহ ছায়া হয় পালকের কণ্ঠে। গৃহে ছায়া ছড়িয়ে তবে কী যে তাদের আশ্রয়, গৃহে চাঁদ উঠলে তবে কী যে তাদের পাঠ্যবইয়ের বর্ণমালা ফিরে আসে – সকল বর্ণকে চাঁদ মনে হয়, আর পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ফুল – রং আর গন্ধে যার জন্ম; এখন তবে অ্যালিগোরিতে যুক্ত হয় নতুন পুষ্পশব্দবন্ধ, নতুন চাঁদবর্ণমালা। এখন যখন তাদের গ্রামের আয়নার ভেতর উড়ে আসে রক্তাক্ত পালকের গন্ধ, পালকের স্পর্শে তাদের গৃহের ছায়ায় ভাত রান্না হয়; তারা রক্তাক্ত পালক প্রেমে মেলে ধরে জ্যোৎস্নায়, তারা পালক শুকায় সূর্যে – এভাবে তারা আকাশ আনে হৃদয়ে, হৃদয়কে নক্ষত্রের আয়না। এভাবে তারা দূরকে আনে বর্ণমালায়, নিকটকে জয় করে উৎফুলস্ন দূরের স্পন্দনে। কিন্তু দূরেরও গণিত ছিল, আগুন ছিল। কিন্তু নিকটেরও হয়তো যে কী ধুলো ছিল, রক্ত ছিল। তারা দূরকে নিকট করতে, নিকটকে আকাশ মুদ্রিত করতে রক্তাক্ত পালক তাদের করতল ছেড়ে উড়ে যায়, পড়ে যায়, উড়ে যায়, ভেসে যায়। হয়তো পালকটি উড়ে উড়ে ঝরে যায় সূর্যে। তখন পালকটি উড়ালে; পাখিশিকারি লোকটি তার পাখি হয়ে উড়ে যাওয়া কিশোরী-মেয়ের জন্য কাঁদে, তার হাতের ছায়ায় পাতার বাঁশিতে বিষাদ বাজে। সে তার অশ্রুমতি বউকে বকাবাদ্য করে, মেয়েটি পাখি হয়ে উড়ে গেলে বউ কেন খাঁচায় ডাকেনি, চোখ যদি ফাঁদ না হয় অশ্রু তবে আকাশ জয় করতে পারেনি। পাখিশিকারি লোকটির বউ কিশোরী মেয়ের পাঠ্যবই খুলে দেখায় সকল অক্ষর উড়ে গেছে – ফুল শুকিয়ে ধুলো ধুলো। কত কত ইতিহাসের ধুলোর ভেতর ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে খাঁচায়! – পাখিশিকারি লোকটির বউ খাঁচার বাইরে তার নিষেধের শব্দবন্ধ, তাহলে সে কত কতকাল দেখেনি গ্রামের পথ, গ্রামের নদী। সে দেখে গৃহের অন্ধকারে আয়না – তার জগৎ। সে দেখে আয়না নয় একটুকরো আকাশে তার মুখ চাঁদ হয়ে ফোটে; চাঁদের আকাশে তার মেয়ের জন্ম হলে শিশু যেন চাঁদের সন্তান। মেয়ে বড় হলে আয়নার বাইরে যায়, চাঁদের বাইরে যায় – তার কোনো নিষেধের খাঁচা নেই। তার জগতে সে মাকে ডাকে আয়নার বাইরে, চাঁদের বাইরে – তবে মা তখন এমন যে কীভাবে যাবে খাঁচার বাইরে – নদীতে, বৃক্ষি অথবা বাদামক্ষেতে। যখন এখন আগুনে গৃহ পুড়ে চৌচির – মা দেখে তার খাঁচা ভেঙে খানখান, তার চাঁদ ভেঙে খানখান, তার সকল ফুল ভেঙে খানখান; তবে ভাষার মাসে কিশোরী মেয়ে কী নিয়ে যাবে ফুলশূন্য হাতে, গ্রামের লোকেরা দেখে শহিদমিনারের বেদি ফুলশূন্য বিষাদ ছড়িয়ে, বিষাদের আগুন থেকে রক্তাক্ত পালকটি বাঁচাতে গ্রামের লোকেরা ছুটে গেলে তাদের উত্তেজনা ও আতঙ্কে ছোটাছুটি, তাদের চোখের ফাঁদ অশ্রুময় আর ঝাপসা, তখন এমন যে তাদের চোখশূন্য পায়ের ধাক্কায় চুলার খড়ি তিড়িংবিড়িং উলটালে আগুনের ফুলকি উড়ে গ্রামের দুপুর পোড়ায়, গ্রামের সকল গৃহ পোড়ায়। আগুন নেভাতে গ্রামের লোকেরা নদীর ঝিরঝির পানি আনে – তখন নদী শুকিয়ে চর চরাচর সাদা বালি, পড়ে থাকে নদীর হাড়।

দুপুরের সূর্য জুড়ে গৃহের মৃত্যু হলে গ্রামের লোকেরা গৃহের ভেতর বহিরাগত; তারা ধূসর দিগন্তের দিকে যায়, সাদা বালির প্রান্তরে যায় – রাতের নক্ষত্রে প্রান্তরে বালির আয়না, বালির চাঁদ। বালির আয়নার ভেতর তাদের শরীরে অশ্রুর টলমল, বালির চাঁদের ভেতর তাদের ক্ষুধার গন্ধ। এই যে প্রথম তারা গৃহ হারাল, এই যে প্রথম হয়তো বা তারা শরীরে অশ্রুর প্লাবন নিয়ে মৃত নদীর জন্য বিষাদ; শরীরে এতো অশ্রু যে তাদের শরীরকে মনে হয় নদী – শরীরে নদী নিয়ে এমন তবে এই যে তারা শুকনো বালির চর চরাচর, তখন শরীরে বালির চন্দ্রালোকে তারা দেখে অজস্র কাশফুল দুলছে – তবে এখন হেমন্তকাল, শরৎকাল। এখন অথবা হয়তো বর্ষাকাল, বসন্তকাল। তখন তারা সবকালের ভেতর দেখে কাশফুল নয় নলখাগড়ার মাথায় দুলছে পাখির পালক। তবে কী যে আগুনে গৃহের মৃত্যু হলে পাখির রক্তাক্ত পালক আশ্রয় নিয়েছে নতুন গৃহে! গ্রামের লোকেরা পালকের দেখা পেলে গৃহের মৃত্যুশোক ভুলে যায়। তারা চরের সাদা বালির গভীর থেকে তুলে আনে কালো মাটি, তখন ছোট-বড় গর্ত ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। আর শরীরে নদীর অনুভূতি খুলে খড়।

কিন্তু খড় কেটে আনলে তাহলে পালকের গৃহ কোথায়, কোন গৃহে? তখন তাদের মনে হয় তারা পাখির মৃত্যু দেখেনি – মানুষ যেমন ক্রমশ মৃত্যুর ধুলোর ভেতরে যায় লোকালয়ে। শরীরে অশ্রুর পস্নাবন নিয়ে পাখিরা কি তবে মৃত্যুর ভেতরে যায় লোকালয় ছেড়ে দূরে দূরে, যায় অরণ্যের গভীর নির্জনে; অথবা পাখিদের মৃত্যু কি মিশে যায় শূন্যে, চাঁদের আলোয়? – এই কথা মনে হলে নলখাগড়ার মাথায় মাথায় দেখে পালকের শরীরে অশ্রু, চাঁদের অশ্রু, বালির অশ্রু ঝিলমিল। অথবা বিন্দু বিন্দু অশ্রুর ভেতর তারা অসংখ্য চাঁদ দেখে, অথবা বিন্দু বিন্দু অশ্রুর ভেতর তারা দেখে পাঠ্যবইয়ের হারিয়ে যাওয়া অক্ষরপুঞ্জ আয়না হয়ে আছে। এতো অশ্রুর চাঁদ, অশ্রুর অক্ষরমালা, অশ্রুর আয়না নিয়ে তারা রাত পাহারা দেয়, রাতের গৃহ হারাতে না চাইলে তারা গ্রামের একমাত্র বটবৃক্ষির চারপাশে পরিভ্রমণ করে, দেখে গ্রামে ছড়িয়ে পড়া ছোট-বড় গর্তের ভেতর বটপাতার ঝিলমিল জ্যোৎস্নায় উড়ে যাচ্ছে অজস্র পালক। জ্যোৎস্নণামথিত উড়ে আসা এসব পালকে কী যে বিস্ময়; বিস্ময়ে প্রথম পাখি হত্যার সময়ের ভেতর গ্রামের লোকদের নির্বাক কণ্ঠ ছিঁড়ে সকাল বেরিয়ে আসে, কেননা, প্রভাতই তাদের কণ্ঠধ্বনি সংকলনের শব্দবন্ধ ও বর্ণনার যোগ্য দৃশ্য। তখন গ্রামের লোকেরা প্রত্যুষে সূর্যালোকে রাতের গৃহ পরিত্যাগ করে উড়ালে যায়, তাদের রূপান্তরিত পাখিজীবন নিয়ে তারা উড়ে উড়ে আসে গ্রামে ছড়িয়ে পড়া ছোট-বড় গর্তের খোপরায়। পালক ও পুচ্ছ নাচিয়ে নতুন পাখিরা তখন খোপরা থেকে খোপরার ভেতর ওড়ে ফুড়ুত ফুড়ুত। r