জরিনা আখতার
অকস্মাৎ দেয়ালের ফাটলটি প্রথম দেখে
আমি অাঁতকে উঠেছিলাম –
কেননা, নিয়ম অনুযায়ী ফাটলটি আরো বৃদ্ধি পাবে,
একসময় খসে পড়তে থাকবে দু-একটি করে ইট,
তারপর দেয়ালের বৃহৎ অংশ ধসে পড়বে সশব্দে –
তাহলে তো উন্মুক্ত হয়ে যাবে, আমার সবকিছু,
আমার দীর্ণ জীবন, জীর্ণশীর্ণ সংসার, হতদরিদ্র ঘর-গৃহস্থালি
সবার চোখে ধরা পড়ে যাবে,
আমার সমূহ দুর্বলতার গল্প ছড়িয়ে পড়বে সবার মুখে মুখে;
এতদিন তবু তো আড়ালে ছিলাম –
নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল,
ধরাছোঁয়ার লুকোচুরি খেলায়
বেশ নিরাপদেই থাকা যায়,
একধরনের নিরুপদ্রব জীবনের অভ্যস্ততায় কেটে যায় দিন –
হয়তো সেখানে স্বপ্ন ছিল না,
একঘেয়েমির বাস্তবতায় অনেক কিছু থেকেই দূরে থাকা যায়,
তারপর একসময় অর্থহীন জীবনের সমাপ্তি শেষে
নিভে যায় সব আলো।
কিন্তু এই যে ফাটল দিয়ে দেখা বিস্ময়কর দৃশ্যরা
আমার দৃষ্টি খুলে দিয়েছে –
দিগন্ত-প্রসারিত আমার দুচোখ কিছুতেই তৃপ্ত হয় না,
পৃথিবীজোড়া অফুরন্ত ঐশ্বর্য
আকাশ ও মাটির সুচারু মিলন
গভীর অরণ্যে অপার সবুজের অপরূপ কারুকাজ
মাঠভরা মাথা উঁচু করা রাশি রাশি শুভ্র কাশফুল
একটি অনন্ত পথ
একাকী পথিক
যা আমি কখনো দেখিনি!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.