বর্ণপরিচয়ের গোপাল

শচীন দাশShochin Das

এই একটা জায়গা, ওদের ভারি পছন্দের। দুদিকে দুটো দেয়াল আছে। দেয়ালের ওপরে টিনের চালা। চালাটা পুরনো। পুরনো ও ভাঙা। ওই ভাঙা চালারই নিচে একফালি জায়গা। ভ্যাপসা ও অন্ধকার। গাদাগাদি করে ওই অন্ধকারেই তখন দুই ভাই। গোপাল ও ভূপাল। গপু ও ভেপু। তাদের মা বড়ো আদর করে ডাকত। একদিন কী যে হলো! মা পালাল ওই লোকটার সঙ্গে। তার আগে গোপাল দেখেছিল না একরাতে, মায়ের বুকে উঠে সাইকেল চালাচ্ছে লোকটা? পরনের লুঙি পাছার ওপরে তোলা। আর মুখ থেকে কেমন একটা দাবড়ানো নিশ্বাস।

সেই প্রথম। ঘুমজড়ানো চোখে, তারপরেও আরো দু-দুটোদিন। সাত বছরের গোপালের চোখে তখন বিস্ময়। মা পালাল ওই তখনই। এখন বোঝে গোপাল, টের পায় লোকটা মাকে ভোগ করছিল সেবারে। বিনিময়ে টাকা দিচ্ছিল লুঙির ভাঁজ খুলে। এবং ওই তাতেই তো ফুটপাতে মাটির হাঁড়িতে ফুটন্ত ভাত। ভাতের গন্ধ। ঘুমঘুম চোখে তা-ই মুখে তুলত গোপালরা। কিন্তু কী যে হলো! এক সকালে উঠে দেখে মা নেই। নেই তো নেই-ই। খুঁজে খুঁজেও আর মাকে পায় না তারা। তবু খোঁজে। কিন্তু খুঁজলে কী হয়, এতবড় একটা শহর, এ-শহরে আর কোথায় খুঁজবে ওরা মাকে! পেলে তো?

গোপাল উঠল।

এবারের শীতটা পড়ল বেশ জাঁকিয়ে। রক্ত-মাংস জমিয়ে। এমন যে, ঠান্ডায় নাকদুটোই বুঝি কেটে উড়ে যায় দুই ভাইয়ের। গোপাল তখন আগুন জ্বালায়। কখনোবা ভূপালের গায়ে বস্তা চাপায়। নিজেও তারপর ওই বস্তারই গায়ে গা ঠেকিয়ে। ওই বস্তায় কাগজ আছে। প্লাস্টিক আছে। প্লাস্টিকের পাশাপাশি ছেঁড়াখোঁড়া ন্যাকড়াও। একদিন ভুল করে ভূপাল তাতে রক্তমাখা একটা জালি ন্যাকড়া তুলে ফেলেছিল। তুলোর মতো। দেখে গোপালই তাকে বারণ করে। জানায়, ওই ন্যাকড়া নিষিদ্ধ। ওটা তোলা যায় না। জানতে পারলে দোকানের মালিক খিঁচিয়ে উঠবে। খিস্তিখেউড় করে তখন বাপের নামও ভুলিয়ে ছাড়বে! শুধু তাই কি, মাল নেওয়াও বুঝি বন্ধ তখন। ভূপাল তাই সতর্ক এখন। ওসব দেখলেই হাত সরিয়ে নেয়। সরিয়েই দৌড়োয়। না দৌড়োলে বড়ো দেরি হয়ে যাবে! ঠেলে নেওয়া করপোরেশনের গাড়িতে যে মাল উঠে যাবে নিমেষেই!

এই শহরের রাস্তায় কত কিছুই না পড়ে থাকে রাতদিন। কত আবর্জনা যে ফেলে লোকে। যে যার মতো ছুড়েটুড়ে ফেলে চলে যায়। প্লাস্টিক থেকে ছেঁড়া কাগজ। কাগজের প্যাকেট থেকে ঠোঙায় ভরা আনাজের খোসা। খাবারের প্যাকেট। দুপদাপ কেবল পড়ছেই। তা গাড়িগুলো আসার আগেই যদি তুলে নেওয়া যায় তাহলে কত কিছুই যে উঠে আসে চটের বস্তায়! কাজেই দৌড়োও। দৌড়ে যাও। ভূপাল ও গোপাল, দুই ভাই-ই তখন দৌড়োয় রাস্তায়। ভূপাল যায় একদিকে তো তার দাদা গোপাল আবার অন্যপথে।

এক সকালে দৌড়োচ্ছে, এই সময়েই কে এসে দাঁড়াল সামনে। হাতে জুট, জুটের ন্যাকড়া ও বড় একটা লোহার যন্ত্র। গায়ে জামা একটা আছে বটে তবে বুকখোলা ও তাতে কালিঝুলির ছোপ। ভূপাল তাকাতেই চোখে পড়ল সেই লোকটা। কেলোদা। সামনের গ্যারেজে কাজ করে। কাগজ কুড়োতে কুড়োতেই আলাপ একদিন। ওই তারপর থেকেই কথা। কথা হয়। মাঝে মাঝে নিজেই ডেকে কথা বলে। আজো ডাকল।

অদূরে ডাস্টবিনের কাছে দাঁড়ানো একটা গাড়ির নিচে ঢুকতে যাচ্ছিল, ভূপালকে দেখেই উঠে এলো।

কী রে, দৌড়োচ্ছিস কোথায়, কাজ করবি –

কাজ?

হ্যাঁ। আমাদের গ্যারেজে। করবি তো বলি। মালিক একটা হেল্পার খুঁজছিল। হপ্তা পাবি। টাকা মন্দ না… তোর ওই কুড়োনো কাগজের চেয়েও বেশি –

দেখি।

দেখি না, করলে কালই চলে আয়। আমি কথা বলে রাখছি –

কিন্তু –

কিন্তুর কী, চলে আয় –

অতএব ভূপাল জানায় গোপালকে। গোপাল শুধোয় ভূপালকে। তারপরেই একদিন ওই গ্যারেজে ভূপাল। কেলোদার সঙ্গে। তখন শীত কমে গিয়ে আবার বর্ষা। টিপটিপ করে বৃষ্টিটা পড়ে। পড়েই চলে সারাটা দিন। ফুটো হওয়া আকাশের ছেদা যেন আর বন্ধই হয় না। কোত্থেকে যে এত মেঘ উড়ে আসে! এখানে-ওখানে তাই কালো কালো পাকানো মেঘ। গুড়গুড় করে বুঝি ডেকেও ওঠে মাঝেমাঝে। ভয় দেখায়।

শীত যেমন, বর্ষাও তেমনি জাঁকিয়ে এলো একদিন এ-শহরে। পথঘাট জলে ডোবা। ছপছপ করছে। তখন আর কাগজ নেই। নোংরা ফেলার বিনগুলোকেও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। জলে ডোবা।

থইথই জলে পা ডুবিয়ে ভূপাল বেরোয়। গ্যারেজে। গোপাল বসে থাকে। চুপচাপ বসে বসেই আকাশ দেখে। এই বুঝি থামল বৃষ্টি! থামল না? চোখ তুলে আকাশটা পরীক্ষা করে গোপাল। বৃষ্টি থামলেই তো তাকে বেরোতে হবে এবার বস্তাটা নিয়ে!

তা বেরোল একসময় গোপাল। তখন বৃষ্টিটা আর নেই তবে মেঘ আছে আকাশে। এবং আকাশের আলোও যেন বেশ কম। কমে আসছে অল্প অল্প করে।

বেলা পড়ে এসেছিল। কুড়োনো মাল যা পেল তাই নিয়ে মালিকের দোকানে ফেলতেই লোকটার ঠোঁটে চওড়া হাসি। যাক তবু এসেছিস… আমি তো ভাবলাম গেঁড়েটার মতো তুইও বুঝি গ্যারেজে সেঁধিয়ে গিছিস! তা ফেল দেখি… কী আছে –

বস্তা উলটেই দাঁড়িয়ে ছিল। ঝুরঝুর করে পড়তেই গোপালের চোখ সরল ভেতরে। দোকানের মেঝেতে একটা বই। ওপরের মলাটটা ছেঁড়া। কিন্তু ভেতরের ছাপা দেখা যাচ্ছে। অ আ ই ঈ। গোপাল চমকে উঠল। তার মা যেন শিখিয়েছিল না ওকে ওই ছাপাগুলো! ছাপা নয়, অক্ষর! গোপাল বইটা টেনে নেয়।

আরে আরে, ওটা কী? কী নিলি আবার?

কী আবার, বই একটা। ওকেনে পড়ে ছ্যালো –

কী বই দেকি? লোকটার চোখে সন্দেহ। সন্দেহ নিয়ে চোখ সরু করে।

গোপাল দেখায়, এই তো রে বাবা… ছেঁড়া একটা বই।

অ। বইটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে লোকটা বলে, তা ওটা নিয়ে তোর কী হবে শুনি! হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছিল, একটু পরে সেটা ফিরিয়ে দেয় লোকটা, বিদ্দেসাগর হবি!

খ্যাকখ্যাক করে হেসে উঠতেই গোপাল তাকায় লোকটার দিকে।

কী আছে, ছেঁড়া একটা বই! না হয় নিইয়েই গেলাম –

তা না হয় নিলি, কিন্তু করবিটা কী শুনি –

গোপাল উত্তর করে না। বইটাকে যত্নে নিজের পকেটের ভেতরে সেঁধিয়ে দেয়।

সন্ধেয় বৃষ্টিটা ধরেছে। রাস্তার আলোয় গিয়ে ছেঁড়া বইটা মেলে ধরতেই গোপাল দেখল ওর মা। চুল আলুথালু। হাঁটুর ওপরে শাড়িটা তোলা। পা ছড়িয়ে বসে হাত একটা মাথার ওপরে নিয়ে গিয়ে চুলের ভেতরে আঙুল চালাচ্ছে। চালিয়ে চালিয়ে উকুনও বুঝি তুলে আনল দুই-একটা। তারপর দুই নখের মাথায় নিয়ে পুটুস করে মেরেই ওর হাতটা টেনে ধরে। মায়ের ময়লা জমা নখের আঙুলটা তখন আবার বইয়েরই ওপরে। ধরে ধরে অক্ষরগুলোর ওপরেই রাখছে কখন।

হাই দ্যা, এইটা হলো অ আর এইটা আ। এগুলিরে বলে অক্ষর –

তা তুমি অক্ষর চিনলে কী কইরে!

ও মা, চিনবুনি। গেরামের স্কুলে কেলাস ফোর পর্যন্ত পড়িনি বুঝি! ওই তারপরেই তো পড়া বন্ধ হোইয়ে গেল –

গেল কেন?

ও মা ঝাবেনি। মায়ের সঙ্গি সোমসারের কাজে লাগতি হলো ঝে! না লাগলি খাওয়া জুটবে! বাপটা তো গেল মদু আনতি গিয়ি বাঘের পেটি –

তা খাওয়া হয়তো জুটল কিন্তু সোমসারে আর থাকতে পারল না অষ্টমী। চোখ ঘুরছে যে তখন চারপাশে তার। একদিন বুকটা ভার ভার মনে হওয়ায় পুকুর দাপিয়ে দাওয়ায় এসে উঠতেই দেখে, ও মা… বুক যে বেড়েসেড়ে কেমন গাব ফলের মতো। পুষ্ট হোইয়ে উঠেছে! কী লজ্জা, কী লজ্জা! এখন এ-বুককে রাখবে কোথায় অষ্টমী! লজ্জায় পড়ে গেল সে।

লজ্জা যেমন, আবার ভালোও লাগল ওর। কী যে তখন ভালো লাগা। কেউ যদি তাকায় তো ভালো লাগছে, আবার লজ্জায় যেন মুখ লুকোতে গিয়েও ফের ভালোলাগা। এমনি একদিন-দুদিন! তারপর কয়েকটা দিন! এরপর বছরও ঘুরে আসে। তারপর আরো কটা বছর।

একদিন জ্বালানির খোঁজে বেরিয়েছে নদীখাতের দিকে, এই সময়েই ওই হারান। তাদের পাশের গেরামেরই ছেলে। সকালে উঠে অষ্টমীদের বাড়ির পাশ দিয়েই যায়। সাতটা পাঁচের লোকাল ধরে। ধরে কলকাতা যায়। কলকাতায় কী একটা লেদ-মেশিনের কারখানায় নাকি কাজ করে হারান।

ঘুরঘুর করছিল। আবার থমকেও দাঁড়াচ্ছিল এক-একদিন কাজে যেতে যেতে। অষ্টমীকে দেখেই বলে ফেলল একদিন। সে তাকে ভালোবাসে। খু-উ-ব পছন্দ করে। পেলে এমন মেইয়েরেই বুঝি বে করবে সে। অষ্টমী কি বিয়ে করবে ওকে? লজ্জায় ও ভয়ে যেন নদীখাতেই মিলিয়ে যাবে অষ্টমী! কিন্তু মিলিয়ে যেতে দিলো না ওকে হারান। তার আগেই ধরে নিয়ে এলো এই শহরে। পরে মন্দিরে নিয়ে গিইয়ে বে। গোপাল ও ভূপাল তো এলো পেটে এর পরেপরেই। কিন্তু তারপরেই যে কোথায় হাওয়া হলো মানুষটা! কোথায় যে উধাও হয়ে গেল! ভয়ে ও উৎকণ্ঠায় তখন কেঁদেই ফেলে বুঝি অষ্টমী! কিন্তু কাঁদলে কিছু হবে? খোঁজখবর তো করতে হবে! কিন্তু কার কাছে যে তখন কীভাবে খোঁজ করে? বলল তবু অষ্টমী! বস্তির একে-ওকে জানাল। রাস্তায় নেমে এসে খোঁজখবরও করল। কিন্তু করলেও কি আর খুঁজে পায়! তবে খবর একটা পেল একদিন, মাগি আরেকটা নিয়ে কোথাও যেন আরেকটা সোমসার বেঁধেছে হারান। তখন আর কান্না নয়, অষ্টমীর মাথায় যেন আগুন জ্বলে। চোখ দুটো ছুরির মতো ধারাল। ছেলেদুটোকে নিয়ে অষ্টমী রাস্তায় রাস্তায় খোঁজে। পেলে সে-মাগিকে সে… কিন্তু পেলে তো! অষ্টমী তবু সন্ধানে থাকে।

এবং ওই খোঁজে থাকতে গিয়েই কখন যে ঘর যায়, সোমসার যায়, ইজ্জতও বুঝি তখন টলমল, পথের ধুলোয় গড়িয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। সুযোগ পেয়ে রোজই আসছে নানা ধরনের লোক। নানান পুরুষ। আর প্রস্তাবও দিচ্ছে যে তারা কত! ছেলেদুটোকে বগলে চেপে রাস্তায়ই তাই বেরিয়ে পড়ল অষ্টমী। আর কখন যে এরপর ফুটপাতেও এসে উঠল, নিজেরও তা খেয়াল থাকে না। খেয়াল হয় যখন, তখন সে বারো পুরুষের দখলে। চেষ্টা করেও আর আটকাতে পারে না। পারল কি? না পেরে তখন সে লুকিয়ে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে ওর কষ্ট হয়। দুঃখ বাড়ে। আবার বাড়তে বাড়তেই  কখনো-কখনো তার মায়ের কথা মনে হয়। মনে হয় ফিরে যায় গেরামে। কিন্তু ফিরবে কী করে? ফেরার রাস্তাটাই তো আর খুঁজে পায় না। গোপাল দেখছে তখন এক-একদিন, মায়ের চোখে জল। গোপনে কাঁদছে মা। কিন্তু কেন! কেন মায়ের চোখে জল। বুঝেও যেন বুঝতে পারেনি গোপাল। কী করেই বা পারবে! গোপালের কি বুঝে ওঠার বয়স তখন?

গোপাল পড়ে। অ আ ই ঈ। গোপাল পড়তে থাকে অ আ ই ঈ। পড়তে পড়তে যেন কী এক ঘোরে পেয়ে বসে তাকে। দিনে পড়ে, রাতে পড়ে। পড়তে পড়তে গোপাল অক্ষর চেনে। শব্দ চেনে। এবং শব্দ চিনতে চিনতেই সে শব্দের মজায় আটকে যায়।

 

কখন মিছা কথা কহিও না।

কাহারও সহিত ঝগড়া করিও না।

কাহাকেও গালি দিও না।

ঘরে গিয়া উৎপাত করিও না।

এক রাতে বইটা খুলে সে রাস্তার আলোয়, ঠিক তখুনি ভূপাল। সামনে এসে ওকে বলে, কী করছিস রে দাদা –

এই তো! ফিরলি?

হ্যাঁ।

চল ভাত বসাই –

এখনো বসাসনি? খিদেয় যে নাড়িভুঁড়ি সব চনমন কইরে উঠতিছে –

এই তো, চল না… বসালিই হোইয়ে ঝাবে!

ভাইয়ের পিঠে হাত রেখে সে পরম স্নেহে তাকে নিয়ে গিয়ে ভাত বসায়।

ভূপাল বসে বসে দেখে। দেখতে দেখতে গ্যারেজের গল্প শোনায়। গোপাল শোনে। এবং শুনতে গিয়েই অবাক। আরেক সন্ধেয় সেই বইটাই হাতে যখন গোপাল, এই সময়েই কখন ভূপাল রেগেমেগে এসে গোপালের সামনে দাঁড়াল।

কী, করতিছিস কী। এখনো ভাত বসালিনি? রোজ রোজ কী পড়িস বল তো ওসব?

ক্ষোভে ও ক্রোধে বইটাই ছিনিয়ে নেয় ভূপাল। তারপর ছুড়ে ফেলে ফুটপাতের জঞ্জালে। গোপাল দৌড়ে যায়। চটপট বইটা তুলে নিয়ে এসে সযত্নে তাতে হাত বোলায়। এরপর পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। ঢুকিয়েই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই ভাই যেন তার অচেনা। হঠাৎই কেমন অপরিচিত হয়ে উঠেছে! মুখচোখও যেন পালটে গেছে। গোপাল মুখ নামিয়ে চলে যায়। ভাত বসায়। তবে কিছু বলে না। কিন্তু বলে বুঝি ভূপাল। গোপালের দিকে চোখ রেখেই এবারে একটু নরম হয়।

দিন নেই, আত নেই সারাদিন শুদু ওই বই পড়তিছিস। কী পড়তিছিস কী! কামশাস্তর নাকি? আমাদের কেলোদাটা খুব পড়ে। পড়লে নাকি শীত চলে যায়। শরীরটা গরম হয়ে ওঠে। আমাকেও একদিন পড়াবে বলেছে –

ভূপাল নরম তখন। নরমে নরমে দাদার দিকে তাকায়। কিন্তু তার দাদাটা কথা বলে না তখন। চুপচাপ হাঁড়ি নামিয়ে তখন ফেন গালে।

শীত যায় গ্রীষ্ম আসে। গ্রীষ্ম গিয়ে বর্ষা। বর্ষার পরে আবারো শীত। এবারের শীতে গোপাল কাহিল হলেও ভূপালকে তেমন জব্দ করতে পারল না। গোপাল আগুন জ্বালালেও সে-আগুনের ধারেকাছেও আসে না ভূপাল। গোপাল অবাক হয়। আরো অবাক, একদিন গ্যারেজে গিয়ে আর ফিরল না ভূপাল। গোপাল বসে থাকে। ভাত বসায়। ভাত বেড়ে অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করতে করতে একসময় কখন ভোর। ভোরে উঠে সে গ্যারেজে যায়। ও গিয়ে শোনে, কাল থেকে আর আসছে না ভূপাল। আসবেও না বলেছে।

আসবে না! গোপাল বিস্মিত হয়।

হ্যাঁ।

কেন?

কেনর আমি কী জানি। ওই কেলোকে জিজ্ঞেস কর… ও হয়তো বলতে পারে! ও-ই তো নিয়ে এসেছিল ছেলেটাকে –

গ্যারেজের মালিকের মুখে বিরক্তি। কিন্তু কেলোদাকে জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর পায় না গোপাল। শুধু এটুকুই যা জানল, কোথাও আরো ভালো কাজ একটা নিয়ে নাকি গেছে ভূপাল। কিন্তু কোথায়?

গোপাল ফিরে আসে। গেল কোথায় ছেলেটা? নতুন কাজ পেল কিন্তু কই, তাকে তো বলল না একবারও। গোপাল বড়ো ভেঙে পড়ে। সে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে। সারাদিনই কাগজ কুড়োতে গিয়ে কোথায় কোথায় চলে যায়। কাগজ কুড়োলেও চোখ থাকে তার আশপাশে। ওই বুঝি কোথাও দেখল সে ভূপালকে! এই বুঝি এলো ভূপাল! কিন্তু ভূপাল আসে না। গোপাল তখন আড়তে গিয়ে মাল ঠেকিয়ে আবারো সেই আস্তানায়। ভূপালের আশায় আশায় দিন গোনে। এবং দিন গুনতে গুনতেই আবার কখন যে ভুলেও যায়! তখন তার মন সেই বইয়ের দিকে।

রাতে শহরটা যখন নির্জন হয়েছে, শেষ ট্রামটাও চলে গেছে, ওই তখনই ফুটপাতের আলোর নিচে চলে আসে গোপাল। হাতে তার সে-বইটা। গোপাল বইটা খোলে। পড়তে থাকে। পড়তে পড়তে ওর কী যে আনন্দ।

নবীন কালি তুমি বাড়ি যাইবার সময়ে পথে ভুবনকে গালি দিয়াছিলে। তুমি ছেলে মানুষ জানো না।

কাহাকেও গালি দেওয়া ভালো নয়। আর যদি তুমি কাহাকেও গালি দেও, আমি সকলকে বলিয়া দিব, কেহ তোমার সহিত কথা কহিবে না।

গোপাল পড়ে। পড়তে পড়তে একসময় বুঝি ভোরও হয়ে যায়। ভোরের দিকে সে আবার বেরিয়ে পড়ে। কাগজ কুড়োতে কুড়োতেই তার ভাইকে খোঁজে। কিন্তু ভাই আর ফিরে আসে না। গোপাল তবু তার খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করে। আর চেষ্টা করতে করতেই গোপালের বয়স বাড়ে। চুল পাকে, দাড়িতে সাদা রেখা জাগে। তাবাদে কথায়ও যেন খুব শান্ত। পারলে যেন বলতেই চায় না।

মালিক শুধোয়, কী রে গোপাল! কথা নেই যেন তোর মুখে?

গোপাল হাসে। হেসেই তার জবাবটা দেয়। বলে না আর কিছু।

তা ভাইয়ের খোঁজ পেলি! সে তো শুনছি এখন বড়ো নেতা হয়ে উঠেছে। যুবনেতা। এবার তোকে এসে একদিন নিয়ে যাবে নে। তো এবার তোর দুঃখ ঘুচল –

গোপাল হোঁচট খায়। চমকেও ওঠে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। কেননা, এ-খবর তো ওর কাছে নতুন কিছু নয়। কেননা, ইতোমধ্যেই তো এসব ওর কানে এসেছে। আসেনি যে তা তো নয়। শুধু কানে আসা কেন, নিজের চোখেও তো বুঝি দেখেছে গোপাল। গোপাল কিছু বলে না। যথারীতি হাসে সে। হেসেই একসময় উঠে পড়ে। কিন্তু উঠে আর নিজের ডেরায় যায় না। আজ বহুদিন পরে এই প্রথমই সে ওই আস্তানাটা ছেড়ে দেয়। সেই কবে এসেছিল তাদের মা তখন চলে গেছে। ঘুরতে ঘুরতে ওই ভূপালই প্রথম তাকে দেখিয়েছিল জায়গাটা। গোপালেরও তখন ভালো লেগে যায়। তারপর কত বছর যে কেটে গেছে, আজ ওই জায়গাটা ছেড়ে চলে যাচ্ছে সে।

এক জায়গা ছেড়ে অন্য একটা জায়গায় আশ্রয় নেয় গোপাল। চলে যায় অন্য এক পাড়ায়। অন্য একটা রাস্তায়। সঙ্গী বলতে তখন আবার একজন। একটা লেড়ে কুকুর কোত্থেকে কখন জুটে যায়। কী জানি কখন সে গোপালকে লক্ষ করেছিল। করেই সে চলে এসেছে ওর পেছনে পেছনে। গোপালের খারাপ লাগে না। কথা না বলতে পারুক, তবু তো একজন সঙ্গী!

খুঁজে খুঁজে জায়গা আবার একটা পেয়ে যায় গোপাল। নির্জন ফুটপাতেরই একটা কোণ। পেছনে একটা কৃষ্ণচূড়া আছে। আছে একটা প্রস্রাবখানা। রয়েছে আবার নোংরা জমাবার বড়ো ভ্যাট একটা। ওই ভ্যাট থেকেই গাড়ি এসে নোংরা তুলে নিয়ে যায়। তারই পাশে পার্ক আবার। ছেলেমেয়েরা খেলে। দোলনা চড়ে। গোপালের বড়ো ভালো লেগে যায়। ওখানেই তখন আস্তানা গাড়ে গোপাল। হোক ছোট্ট একটু জায়গা, তবু তো নির্জন। তাছাড়া একটাই তো মানুষ সে! তার জন্য কি আর বড়ো জায়গা লাগে! সাড়ে তিন হাত একটা ভূমি পেলেই না হোইয়ে যায়? তার মা বলত না বুঝি তাকে! দু-একদিন থেকে এ-পাড়াটার নাম জেনে যায় একদিন গোপাল। বাদুড়বাগান। গোপাল বড়ো চমকে ওঠে। সে যেন কোথায় এই নামটা পড়েছে না? আড়তে গিয়ে কোনো একটা বিক্কিরির বইয়ে। খুঁজে খুঁজে সে ততদিনে যে কত বই পড়ার চেষ্টা করেছে বানান করে করে। কিন্তু বেশিদূর আর এগোতে পারেনি। পেরেছে শুধু নিজের কাছে থাকা ওই ছেঁড়া বইটা শেষ করতে। ওই ছেঁড়া বইটা থেকে কত কথাই না জেনেছে গোপাল!

একদিন এক পাড়ায় কাগজ তুলছে, এই সময়েই চমকে ওঠে গোপাল। অদূরে ভূপাল। পরনে সাদা পাজামা, গায়ে পাঞ্জাবি ও গলায় একটা ঝকঝকে চেইন। হাতে লোহার একটা রড নিয়ে দলবলসহ হইহই করে ঢুকছে সামনের একটা কলেজে। মুখে অশ্রাব্য গালাগাল। গোপাল সরে যায়। তার বড়ো ভয় করে।

সেই রাতে ঘুমিয়েছে, এমনই সময় টের পায়, কেউ যেন তার মাথার নিচের বোঁচকাটা ধরে টানছে। চমকে উঠে টের পায় গোপাল বোচকা নয়, কে তার ওই বইটা খুঁজছে। আর খুঁজতে খুঁজতে যেন পেয়েও গেল। এবং এরপরেই তাতে যেন আগুন ধরাচ্ছে কেউ। গোপাল চেঁচিয়ে উঠল।

না-না। না। গোপাল হাহাকার করে ওঠে। ওটা নিয়ো না। ওতে আগুন ধরিও না –

কিন্তু কে শোনে কার কথা! তখন গোপাল ঝাঁপিয়ে পড়ে। ও পড়েই লোকটাকে ধরে ফেলে। ওর হাতেই তো রয়েছে বইটা। এক হাতে বই ও অন্য হাতে গ্যাস-লাইটার। বইটা গোপাল ছিনিয়ে নিতে যায়। নিতে গিয়েই দেখে, লোক নয়, ভূপাল!

ভূপাল তুই –

তুই মানে! তুই আমাকে চিনিস?

চিনি মানে… গোপাল আমতা আমতা করে। আমি তোর দাদা। বলতে গিয়ে ভয়ও যেন পায় সে। ভূপালের চোখটা যেন খোলা একখানা ছুরির মতোই ধারালো। ফুঁসছে রাগে গোপালের দিকে তাকিয়ে। এখানে তোদের কে বোচকা রাখতে বলেছে – অ্যাঁ!

মানে… আমি তো…

গোপাল আমতা আমতা করে। তখন ওই ভূপালই আবার জানায়, এই ফুটপাথে আর থাকবি না আজ থেকে। জায়গাটা বড়ো নোংরা হয়ে যাচ্ছে তোদের জন্য। এখানে একজনের মূর্তি বসবে –

মূর্তি! কার মূর্তি –

কার জেনে তোর লাভ কী? তুই কি জানিস তাকে। প্রাতঃস্মরণীয় লোক একটা। সমাজ সংস্কারক। বিধবাদের অনেক উপকার করেছেন।… নে নে, জায়গাটা ছেড়ে দে দেখি –

ঠিক আছে আজই চলে যাচ্ছি… কিন্তু আমার বইটা –

বই! কিসের বই? ভিখারির আবার বই কিসের –

গোপাল কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওই যে, ওই বইটা… ওই বইটা…দিন আমায়… দিয়ে দিন… ওতে আগুন ধরাবেন না… আমি এখুনি চলে যাচ্ছি… ও বই না হলে আর বাঁচব না আমি –

হাত বাড়িয়ে বইটা কেড়ে নিতে যায় গোপাল আর তখনই ওর ঘুমটা ভেঙে যায়।

ঘুম ভেঙে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে টের পায়, ভোর হয়েছে। আর তার মাথার নিচের বোঁচকাটা মাথার নিচেই রয়েছে। এবং তাতে সে-বইটা।

এদিকে-ওদিকে তাকিয়ে গোপাল টের পায়, এতক্ষণ তাহলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নই দেখছিল সে। গোপাল উঠে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ওই কুকুরটা।

গোপাল কুকুরটার দিকে তাকায়। কুকুরটার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে। কখনো কখনো কথাও বুঝি বলে ওর সঙ্গে। বিড়বিড় করে কী যে বলে।

দুপুরে নিজের খাওয়ার সময় ওকেও দেয় যখন যা পায় সে। কখনো ওই দুখানা লেড়ে বিস্কুট, কখনোবা রুটি একটা। রাতে ভাতের সময় জুটলে ভাত একটু। কুকুরটা তাতেই খুশি।

তবে ভাত আজকাল আর রোজ জোটে না গোপালের। জুটবে কী, আয় থাকলে তো! ফুটপাতে আর বর্জ্য জিনিস ঠিকঠাক পায় না সবসময় গোপাল। দোকানে গেলে মালিকের ছেলে জানায়, পাবে কী করে… সব যে এখন এজেন্সির হাতে চলে যাচ্ছে। নানা ধরনের এজেন্সি। তারাই তো মেশিন লাগিয়ে সব তুলে নেয় ঝটপট। টের পাও। দুনিয়া বড়ো বদলে যাচ্ছে বুঝলে –

তাহলি –

তাহলে আর কী, কলাটা খাও। মরবে তোমরাই। পারলে এখনো অন্য রাস্তা ধরো, না হলে পড়ে পড়ে মার খাবে। এ-ব্যবসা কি ভাবছ চিরকাল চালাতে পারব আমরা? আমি তো বাবা এসবে নেই। এত্তসব নোংরা কারবার –

মালিকের ছেলে পড়াশোনা করে। কলেজে পড়ে। পরনে জিন্স। গায়ে গেঞ্জি। কানে দুল। চুলে লাল রং। জানে অনেক। শুনতে শুনতে গোপাল স্থির। একসময় উঠেও আসে। উঠলেও পা যেন আর চলে না। দেহ ভেঙে আসে। টাকা কয়েকটা আগাম চেয়েছিল সে আড়তদারের ছেলের কাছ থেকে। কিন্তু দেয়নি। দিতে পারেনি। জানিয়েছে, ওসব বাবার ব্যাপার, বাবাই যা করার করবে! সে যেন বাবার কাছে যায়। কিন্তু যাবে কোথায়, বাবা বসলে তো! গোপাল ফিরে আসে।

আজ দুদিন ধরে ঠান্ডাটা পড়েছে খুব। উত্তর ভারতে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ চলছে। তারই ঢেউ এসে যেন এখানেও আছড়ে পড়ল। ফুটপাতে মানুষ মরার খবর আসে রোজই। গোপাল আগুন জ্বালায়। জ্বালিয়ে কুকুরটাকে নিয়ে সে শুয়ে থাকে। কিন্তু শুলেও ঘুম আসে না। একসময় জ্বালানির অভাবে আগুনও নিভে যায়। গোপাল এদিকে-ওদিকে খোঁজে। কিন্তু সুনসান রাস্তা। কোথাও কোনো জ্বালানি পড়ে নেই। গোপাল উঠে বসে থাকে। বসে বসে খুকখুক করে কাশে। কাশতে কাশতেই আশায় থাকে কখন ভোরটা হয়। ভোর হলে তবু রোদটা পাওয়া যাবে।

রোদ পায় গোপাল এবং রোদে বসেই কখনো কখনো সে সবার অলক্ষেই ওই বইটা খোলে। পড়ে সে নিজের মনেই। পড়তে পড়তে একসময় আবার ওঠে। উঠে কাজে চলে যায়।

দিনটা তবু এভাবেই যায়; কিন্তু রাত পড়লেই যত কষ্ট। দেহের চামড়া যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে তখন। একটা উলের সোয়েটার পেয়েছিল সে কাগজ কুড়োতে গিয়ে। সেই কবে। এতদিন সেটা দিয়েই চালিয়েছে। কিন্তু এ-বছরের গোড়ায় একদিন সেটা বের করতে গিয়েই দেখে, জায়গায় জায়গায় ফাটা। সুতোগুলো সব ঝুরঝুর করে বেরিয়ে এসেছে। অগত্যা সে বস্তাটাকেই বুকে চেপে বসে থাকে।

এই সময়ে এক বিকেলে ঠান্ডাটা পড়ল আরো জমিয়ে। হাওয়া দিলো। সেইসঙ্গে কনকনে ঠান্ডা। সন্ধের পরেই রাস্তাঘাট ফাঁকা। সব সুনসান। ঠান্ডার ভয়ে সবাই ঘরে ঢুকে পড়েছে। বিকেলেই শুনে এসেছে গোপাল – খবরে বলেছে, আজ নাকি ঠান্ডা পারদের অনেক নিচে নেমে যাবে! পারদ কি!

ছেঁড়া টায়ারের টুকরো একটা জোগাড় করে এনেছিল কোত্থেকে গোপাল। তা দিয়েই জ্বালাল আগুন। কিন্তু সে আর কতক্ষণ। একসময় নিভে যেতেই শরীর কাঁপল। দাঁতে দাঁত লাগল। ঠকঠক করে গোটা দেহটাই বুঝি কাঁপছে তখন।

আগুনটা নিভে এসেছিল। কিছু আর না পেয়ে গোপাল তার           বস্তাটাকেই শেষে গুঁজে দিলো সে-আগুনে। আর জ্বালানি পেয়ে আগুনও উঠল দাউ করে। কিন্তু তাও তো বেশি সময় নয়। বস্তা পুড়তেই আগুন শেষ। আগুন ফের নিভে আসতেই গোপালও গেল খেপে। চারদিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎই তার চোখে পড়ে গেল বইটা। কী হলো, গোপাল বইটাকে ছুড়ে দিলো আগুনের ওপরে। তার চোখ তখন জ্বলছে। মাথায় খেপাটে আগুন। নে জ্বল… জ্বলে যা… জ্বলতি থাক… গোপাল চেঁচিয়ে উঠল বুঝি চাপা উল্লাসে। কিন্তু চেঁচালে কী হবে, বইটা পুড়লে তো আগুনে!

কুকুরটা টের পেয়েছিল, ঝাঁপিয়ে পড়েই বইটা মুখে করে সে তুলে আনল। এবং এনেই আবার গোপালের হাতে। সম্বিত ফিরল বুঝি এতক্ষণে গোপালের। গোপাল হাউহাউ করে কেঁদে উঠল। কিন্তু শব্দ নেই। বইটা হাতে নিয়ে কুকুরটাকে চেপে ধরে সে ততক্ষণে কাঁদছে। আর কাঁদতে গিয়েই টের পেয়েছে, এ-বই তার হাতেও আর নিরাপদ নয়। কখন কী মাথায় হয়ে যায়! কিন্তু বইটাকে না বাঁচালে…

কিন্তু বাঁচাবে কী করে সে? কাকে দিয়ে যাবে সে এ-বইটা? কার হাতেই বা তুলে দেবে! ছেঁড়া বই ভেবে সে যদি এটা ফেলে দেয়!

ভাবতে গিয়ে কান্না থামিয়ে বইটাকে বুকে নিয়েই গোপাল বড়ো অসহায় হয়ে পড়ে।