বাঁচামরার জীবন

কানাই কুণ্ডু

রাত্রে পরী হয়ে যায় দেউলি। অন্ধকারে উড়ে বেড়ায়।

চৌরাস্তার মোড়ে চকবাজার। ডাকঘর রেশন দপ্তর পুলিশচৌকি সরকারি দাওয়াখানা জঙ্গলকোঠি। ছড়ানো দোকানপাট। এটাই তার চৌহদ্দি।

অমরকণ্টক থেকে পাকা সড়ক এই মোড়ে এসে চার ভাগ। সকাল-বিকেল খান সাতেক বাসের যাওয়া-আসা। বিলাসপুর রায়পুর শ্যাডোল আর জবলপুর। তবে জবলপুর বাসের রোয়াব আলাদা। এক্সপ্রেস। সওয়ারি না থাকলে থামে না। ঠোঙা কাগজ শালপাতা উড়িয়ে ছুটে যায় ঝড়ের মতো। তার সিটি শুনলে চকের মানুষ কুকুর ছাগল কিনারে সরে যায়।

এখন চারপাশ সুনসান। শুধু অন্ধকার আর দেউলি। দোকানের ঝাঁপ-পালস্না বন্ধ। টহল মেরে সে নির্দিষ্ট দোকানের পালস্না
খট-খটায়। সামান্য ফাঁক হলে মশার মতো গলে যায়। তার আজকের গাহক শেঠ শিউলাল। চকবাজারের বড় কারবারি। রেডিমেড
জামা-প্যান্ট, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি-বস্নাউজের সাজানো দোকান। পেছন দিকে পাকা আস্তানা। বাজারের মানুষ মান্য করে। তবে বুড়ো একটু খিটখিটিয়া। নিজের ছেলেদেরও বিশ্বাস করে না।

ভেতরে আসতেই সে দেউলিকে বুকে জড়ায়। ঢঙের কথা বলে, আয় আমার রাতকি রানি। তোর আশায় বসে আছি। সাবুনে হাত ধুয়ে নে। খানা লাগা।

আমার হাত বিলকুল সাফ, বলে ঢাকা-দেওয়া খাবারের ঢাকনা খুলতে যায় দেউলি। বুড়ো তেড়ে আসে। বলে, তোকে বিশ্বাস! চকের কুত্তাটাও করে না।

অগত্যা খোঁচা হজম করে হাত ধুতে হয়। খাওয়া সারা হলে বিছানায়। জানালায় দাঁড়িয়ে বুড়ো পরপর দুটো সিগ্রেট ধরায়। এভাবেই তৈরি হয় জানোয়ারটা। শেষ সিগ্রেট ছুড়ে বলে, নাঙ্গা হ।

তুমি বাতি নিভিয়ে এসো। আমি সব ঠিক করে নেব।

বুড়োর আবার মেজাজ চড়ে। বলে, ছেলে-ছোকরাদের সঙ্গে ঢলাস কেন। দিমাক বিগড়ে দিস!

তাকে কী বোঝাবে দেউলি। ঠোঁট চেপে হাসে। মুফতে সে শালওয়ারের রশি খোলে না।

হাসি দেখে সে খেঁকিয়ে ওঠে, যে-সালওয়ার চড়িয়ে রানি সেজেছিস, এটা আমার দোকানের মাল। দাম জানিস? তোর সঙ্গে মাসভর শুলেও উসুলি হবে না। আর আমার ছোটে নবাব তোকে ফোকট দিয়ে দিলো!

ফোকট নয় মালিক।

চোপ বেশরম লড়কি!

সারাটা রাত অত্যাচার। মুখ চেপে সহ্য করে দেউলি। ভোরের

আগে শরীর গুছিয়ে বেরোনোর আগে হাত বাড়ায়, রুপিয়া?

কাহেকা রুপিয়া! জরা উসুলি করে নিলাম।

রুপিয়া না দিলে আমি চিলস্নাব। তখন বোলো না দেউলি নচ্ছার হারামি।

পঞ্চাশের একটা নোট ছুড়ে শিউলাল বলেছিল, চুপচাপ চলে যাবি। হলস্না করবি না। তোর তেজ গুঁড়া করার হাতুড়ি আমার হাতের মুঠোয়।

নেহাত রুপিয়ার টান। নয়তো ছোকরা গাহকই পছন্দের। আদর-সোহাগ করে। খানাপিনাও আরামের। টাকা দিতে ঝামেলি করে না। চাইলে বিশ-ত্রিশ বেশিও দেয়। তবে তারা তো রোজ থাকে না। রাত ফাঁকা যায়।

এদিকে শিউলাল মহলস্নায় জোট পাকিয়েছে। নয়তো মালিকদের এমন মেজাজ খাপ্পা কেন? পত্তনমুদিই বা সেদিন তড়পাল কেন? শোয়ার আগেই কৈফিয়ত তলব করে, কত টাকা দিয়েছে তোকে বিশাহু?

দেউলি আকাশ থেকে পড়ে, বিশাহু… টাকা…

হাঁ-হাঁ, আমার বেটা বিশাহু। ক্যাশে দেড়শোর ওপর বেহিসাব। এত মাঙ্গা তোর জোয়ানি!

পালটা গরম দেখিয়েছিল দেউলি, লড়কার শাদি দিয়েছ। ঘরে নয়া চিড়িহা। ফাঁকতালে ইধর-উধর ঠোকর মারে কেন!

মাত্র দুটো রাত ছিলাম না। এই মওকায় বাচ্চাটার ঘাড় মটকে লুটে নিলি!

সমঝে কথা বলো মালিক। আমি চোর-ডাকু নই। জবরদস্তিও নেই। তোমরাই ডাকো। রাতভর রক্ত চুষে টাকা ফিকে দাও। আমার কোন কসুর!

ঠিকই বলে শিউলালজি। তুই চকবাজারের পাপ। বাপ-বেটার ফারাক মানিস না। ভাগ এখান থেকে। যেমন তোর মা ভেগেছিল।

 

দুই

মা তো ভোরের কুয়াশা। ঠিক মনে নেই। চকবাজারে মাত্র চার-পাঁচটা দোকান। কয়েকটা ঘরবাড়ি। চারপাশে ঝাড়-জঙ্গল। মাত্র একটা বাস চলত। কাঁচা রাস্তা। বিজলি ছিল না। আর ছিল এই জঙ্গলকোঠি। মা বাড়িতে দোকানে ঝাড়ু সাফাইয়ের কাজ করত। বর্তন ধুত। আবার রাতেও তাকে ঘুম পাড়িয়ে কাজে বেরোত। সকালে সে দেখত, মায়ের বুকের পাশে শুয়ে আছে।

সেদিন যেন আদর ছিল বেশি। বারবার চুমা দিয়েছিল কপালে। বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল সারারাত। সকালে দেখল, দেউলি একা। মা নেই। বেলা বয়ে গেল। ভুখ লাগল। সাঁঝ নামল। তখনো মা নেই। চকবাজারে তালাশে এলে দোকানিরা হাসে। বলে, জঙ্গলকোঠির চৌকিদারের সঙ্গে তোর মা ভেগেছে। আর আসবে না।

বিশ্বাস করেনি দেউলি। কেঁদে-কেঁদে ঘরে এলো। ঘর তো ছিঁড়া চট ত্রিপলের ঝোপড়ি। না জানালা। না দরজা। চারপাশে
জঙ্গল-পাহাড়। রাতে শেয়াল-খাটাশের ছোটাছুটি। ভয় করছিল তার। চকবাজারেই ফিরে এলো। তখন সব ঝাঁপ-পালস্না বন্ধ। সুরথের চা সামোসা মিঠাই দোকানের সামনে মাটিতে পোঁতা ছিঁচা বাঁশের বেঞ্চি। তারই ওপর শুয়ে ঘুমাত। ওটাই ছিল তার মায়ের কোল। ভোরে চকের কাক-পাখি-কুকুরদের সঙ্গে কথা বলত। আর বাসের দিকে তাকিয়ে থাকত। মা আসবে।

সেই রাতে জবরদস্ত বৃষ্টি। থামতেই চায় না। বেঞ্চির নিচে ঘাড় গুঁজে বসে থাকে দেউলি। মাঝরাতে বেঞ্চির পানি মুছে শুয়েছিল। কখন সুবা হয়েছে, সুরথ চুলা জ্বালিয়েছে, ডেগচিতে চায়ের পানি চড়িয়েছে, হোঁশ ছিল না। আচানক পায়ের ওপর ফুটন্ত পানির কামড়। আর সুরথের গালাগাল, বাসের টেইম হয়ে গেল। তবু এই কুত্তির ঘুম ছুটে না। পা ছড়কে শুয়ে আছে!

জ্বলনে চিৎকার করতে-করতে ঝোপড়িতে এসেছিল। চিল্লে কেঁদেছিল সারা সকাল। কেউ দেখতে এলো না। ল্যাংড়া ভিখারি রামালু কোথা থেকে নুন এনে ছড়িয়ে দিয়েছিল। দাগ থেকে গেছে। এখনো সালোয়ার পরার সময় নজর পড়ে।

সে বড় দুঃখের সময় ছিল তার। দোকানি গিরস্থিদের ছুড়ে ফেলা এঁটোকাঁটা, পোড়া রুটি, পচা ডিম, মুরগির হাড়-গলা, সবজি চকের কাক-কুকুরদের থেকে কেড়ে খেত। আর এইসব পচা-গলা খাবার খেতে-খেতে বেড়ে উঠছিল। শরীর চিকনা হলো। চুলে লহর ছড়াল। হাত-পা গোল। বুক-পাছা ফুলে উঠল। হাসলে গালে টোল।

আর খানার অভাব থাকে না। রোল দোকানের ভুনাত্তর ডাকে, রাতে আসবি দেউলি। চিকেন রোল খাওয়াব। গিরধর বলে, চকোলেট ক্রিমের বিস্কুট এনেছি। বন্ধের সময় আসবি। ছগনের চুড়ি ফিতে ক্লিপ ক্রিম পাউডারের দোকান। সে ডাকে, লাল পাউডার এসেছে। ঘস্টিলে উজালা লাগে। লে যানা। পায়ে গরম পানি ছিটানো সুরথও বলে, রাতে বালুসাই মতিচুরের লাড্ডু বানাব। গরম-গরম খেয়ে যাস। পত্তনমুদি, দাওয়াইখানার ধরমদাস, জিলাপি ফুলোরিওলা ছলকুও ডাক দেয়। শিউলাল বলে, ছিঁড়া-ফাটা সলওয়ারে আর কত সিলাই দিবি! রং ফিকা হয়ে গেছে। চুহায়কাটা সলওয়ার কামিজ রেখেছি। থোড়ি সিলাই দিলে সালভর পরতে পারবি। পসন্দ থাকলে রাতে আসবি।

রাতের নিরালায় বন্ধ দোকানের চৌকিতে বসে দেউলি যখন পা দুলিয়ে লোভের খানা চাটে, সুরথ পবন ভুনাত্তর ছগনরা তার কামিজের ভেতরে হাত ঢোকায়। চেপে ধরে। মোচড় দেয়। পিঠ পাছা তলপেটে সুড়সুড়ি দেয়। ব্যথা অস্বস্তিতেও বাধা দিতে পারে না দেউলি।

তবে শিউলাল ছিল ধুরন্ধর। আদর করে কাছে ডাকে। নিজের হাতে কামিজ বেছে পুরনো ছেঁড়া কামিজের বোতাম খোলা শুরু করেছিল।

লজ্জা পেয়েছিল দেউলি। বলল, আমার হাতে দাও। ঘরে গিয়ে পাল্টি করে নেব।

তোর শরীরে মানাচ্ছে কিনা দেখতে হবে তো। থির হয়ে দাঁড়া। দেখতে দে, বলে সলওয়ারের ফাঁস খুলেছিল।

লজ্জায় চোখ ঢেকেছিল সে। শিউলাল তাকে তুলে শুইয়ে দিলো নরম বিছানায়। আদর করে। কামড় দেয়। চুষতে থাকে। তলপেটে হাত দেয়। হঠাৎ ওপরে চড়ে বসে।

তখন সে সবে তেরো-চোদ্দো। কতটুকু ক্ষমতা! ধাক্কা দিয়েও শিউলালকে হঠাতে পারেনি। শিউলাল তখন জংলি শুয়োর। বুকের ওপর ঘোঁত-ঘোঁত করে। তিরিতিরি কাঁপছিল দেউলি। ভেতরে একটা গরম ছোঁয়ায় শরীর ঝুমতা লাগে। নেতিয়ে পড়েছিল।

সালোয়ারের প্যাকেট, পঁচিশ রুপিয়া আর একটা চিরকুট হাতে দিয়ে শিউলাল বলেছিল, দাওয়াই খরিদ করে খেয়ে নিবি।

দেউলি এখনো ভাবে, আবার কেন গিয়েছিল ওই শুয়োরের কাছে। কামিজের লোভ, রুপিয়া, নাকি দুশর কুছ! সেবার ত্রিশ টাকা দিয়েছিল শিউলাল। বলেছিল, দুশর আদমি ডাকলে যাবি না। আমি আরো রুপিয়া দেব।

সেই দিনই নিজের শরীর বুঝেছিল দেউলি। তার জোয়ানি ফোকটের নয়। মামুলি রোল মিঠাই ক্রিম পাউডার নয়, নগদ রুপিয়া ফিকে খরিদ করতে হয়। এবং এর পরই সে নিজের কিমত জারি করেছিল। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ… পঞ্চাশ থেকে একশ… একশ থেকে…

 

তিন

ডাকঘরের মাস্টারজির নোকরি শেষ। বড় ভালো ছিল মানুষটা। রোজ ভোরে স্নান। লোটা ভরে বুড়ো আশুদের গোড়ায় পানি ঢালা। মন্ত্র পড়া। রাতে তুলসীজির রামায়ণ। কত বুড়োবুড়ি শুনতে যেত। দেউলিকে ডাকত, দুলিবাই। আর বলত, সুখ-দুঃখ হলো রথের চাকা।  কভি উপর। কভি নিচে। রুপিয়া বরবাদ করিস না। ডাকঘরে খাতা খোল।

তার কথায় একদিন ডাকঘরে এসেছিল দেউলি। মাস্টারজি রসিদ লিখে আঙুলের ছাপা নিয়ে রুপিয়া জমা করেছিল। হাতে ডাকঘরের মোহর লাগানো কিতাব। দেখতে-দেখতে আট বছরে তার জমা চার হাজার আটশো ষাট। সব ওই দয়াল মানুষটার কিরপা। এক হপ্তা হলো সে চলে গেছে আপন দেশে।

এখন এক নয়া ছোকরা। সে নাকি জবলপুর শহরের কলেজ পাশ। বাসে যায়-আসে। তার কারণ এক্সপ্রেস বাস চকবাজারে থামে। বোলচালে তুখোড়। ঝটতি কাজ কাম। জামা প্যান্ট জুতো কালা চশমায় বিলকুল শাহরুখ। বিকেলে ডাকঘর বন্ধ করে সুরথের দোকানে বসে। চা খায়। বাসের অপেক্ষা করে।

বাঁকা হাসির মিঠাস তিরছি নজর ছড়িয়ে তাকে ঘায়েল করতে চায় দেউলি। সে দেখেও দেখে না। হাসে না। মুখ ফিরিয়ে নেয়। একদিন বেঞ্চিতে পাশে বসে যায় দেউলি। সুরথকে চা সামোসা দিতে বলে। শাহরুখ উঠে দাঁড়ায়। উলটো মুখে চিরঞ্জিগাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকে। দেউলি ভাবে, শহুরা হলে কী হবে। নতুন কাউয়া। শরম ভাঙেনি। মুখ ফিরিয়ে কদিন!

ডাকঘরে টাকা জমা দিতে আসে। রঙে, পোশাকে ঝলমল করে। জানালার ফোকরে হাত গলিয়ে দেয় তার বুকের কাছে। বলে, রসিদ লিখে আঙুলের ছাপা লিয়ে লাও বাবুজি।

শাহরুখ পেছনে হেলে যায়। বলে, হাত বাহার।

রসিদ লিখে পেনসিলে টিকা দিয়ে কালির ডিববা ফোকরের বাইরে ঠেলে। বলে, ইধর ছাপা লাগাও।

থমকে যায় দেউলি। ইতনি খমন্ড। ছুঁয়া লেগে যাবে! আরে, চকবাজারের বড়-বড় শেঠ মালিক, ছোকরা কারবারি তার ছুঁয়া পেতে শকসকায়। রুপিয়া ফেকে। আর এই মামুলি ডাকমাস্টার পিছু হটে যায়। এমন তার ফিলমি সুরত, নখুনে লাল পালিশের বাহার, নরমিলি হাত। ধরে দেখার ইচ্ছা হয় না। এ কেমন জোয়ান। আদমি না ঔরত!

বারবার ঠোকর খায় দেউলি। জেদ চড়ে। তবু দেখা হলেই মুখ ফেরানো। হাসি গায়েব। নাক কপাল কোঁচকানো। তবে কি তাকে ঘিন্না করে শাহরুখ। সে বাজারি ঔরত! মনে রাগ হিংসা জ্বালার তোলপাড়। নিজের ঘরে শুয়ে থাকে। আকাশ-পাতাল হাতড়ে চলে।

আর ছেঁড়া চট ত্রিপলের খুপচি ঝোপড়ি নয়, পাহাড়ি পাথরে কাদার গাঁথনি। দরজা-জানালা। ওপরে খাপরার চালা। বিলকুল গেরস্ত বাড়ি। এক কামরা হলেও সাজানো-গোছানো। কুলুঙ্গিতে অমরকণ্টকের মেলা থেকে কেনা পাথরের মহাদেব। স্নানের পর রোজ ধূপ জ্বালিয়ে প্রণাম করে দেউলি। পত্তনমুদির দোকান থেকে চুরি করে আনা কাঠের টবে বানানো বাক্স। ভেতরে তার কিরিম পাউডার বিন্দিয়া, খুশবুর শিশি, কিলিপ। আর ওই বড় মোটা কাগজের বাক্সটা দিয়েছে গিরধর। এর জন্যে এক রাত শুতে হয়েছিল তাকে, মুফত। ওই বাক্সে তার ঘাগরা, জরির চুমকি বসানো চোলি, সালোয়ার-কামিজ, মায়ের রেখে যাওয়া লাল শাড়ি। কতবার ভেবেছে, চকের হামিদুল দরজিকে বলে একটা বস্নাউজ বানিয়ে পরবে, হয়ে ওঠেনি। দেয়ালে ঝোলানো গুলাবি ঘেরের আয়নাটা জবলপুর থেকে এনে দিয়েছে মুনাল, শিউলালের ছোটে নবাব। পুরো মুখ দেখা যায়। কতবার যে সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে দেউলি। হাসে। গালের টোল স্পষ্ট হয়…

বড় ঘিন্না লাগে আজ। চারপাশে সাজানো সব শখের জিনিস, এই সুরত, এই বাহার… এই গালের টোলে কত লোভী কুত্তার
লালা-জড়ানো… ঘিন্না ঘিন্না… অসহ্য! ইচ্ছা করে, একদিন নিজেই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে সব… নিজেকেও…

তবু জীবন। তবু বেঁচে থাকতে হয়। বিকেলের বাওরা বাতাসে গলায় গান আসে। আবার পরী সাজতে বসে দেউলি।