ফারুক আলমগীর
নারীও বৃষ্টিতে ভিজে জার্মানির নগরে ও গ্রামে
শহর ঢাকার ছাদে যেমন রমণীকুল সদা ভিজে
বৃষ্টি এলে আকাশে বাড়িয়ে মুখ হা-করে!
ডুসেলডর্পের পথে যেতে যেতে দিগন্তে নিসর্গজুড়ে
গ্রামবাংলার মাঠ-প্রান্তর যেন জেগে ওঠে
জলক্রীড়ায় মাতাল হয় দামাল শিশুর দল
মায়েরা উঠোনে ভিজে নির্বিকার, তাদের নিটোল দেহ
শাড়ির আড়ালে থাকা লুকোনো পদ্মকোরক
আচানক দৃশ্যমান হয়ে ওঠে জলছবির মতো।
ডুসেলডর্পের পথে যেতে যেতে সড়কের পাশে
সবুজ প্রান্তরে কে-সেই নারী বৃষ্টিতে একাকী ভিজে?
বড়ো চেনা লাগে, পঞ্চাশের দশকের সাদা-কালো
চলচ্চিত্রের নায়িকা কোনো? নাকি আমারই গ্রামের
শিউলি? যে-কিনা ঢাকার দরদালানের ছাদে
বৃষ্টিতে অঝোর ধারায় ভিজছে একা, তার চোখের জলের
রেলপথ খুঁজে ফেরে ফেলে আসা সবুজ বসতবাড়ি।
জলের কণায় ঝাপসা-কাচের কুয়াশার ধোঁয়া
মুছে ফেলে যত দূরে চোখ যায় দেখি জলভরা
গাভিন মেঘের আনাগোনা, থেমে থেমে আকাশের
গুরু-গুরু ডাক বিদ্যুচ্চমকে, ডুসেলডর্পের বৃষ্টি
বাংলাদেশের মতো প্রান্তরের শস্যক্ষেত
– ছুঁয়ে উপচে পড়ছে।
এই বৃষ্টিতে শকট চালানো মেলা দায় –
সুন্দরী ক্যাবচালক হঠাৎ আমার প্রতি
উৎসুক দৃষ্টি হেনে বিড়বিড় করে হেসে ওঠে
বৃষ্টিতে বিভোর এতক্ষণে যেন সম্বিত পেলাম ফিরে
জার্মান ফ্রাউলিনের কণ্ঠস্বর কলকল
করে ওঠে : ডয়েশ কাইনে প্রবলেমা!
বাইরে প্রবল টরেনশিয়াল রেইনে বেসামাল
ট্যাক্সিচালিকার নরোম স্তনের সুশ্রী ত্বক
বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছে অস্থির স্টিয়ারিংয়ের হুইল
বললাম : আমারও সমস্যা নেই কোনো, এরকম
বৃষ্টি আমার দেশেও হয়; তবে তুমি খুব
অপরূপা মাইনা-ফ্র্যা, এই বৃষ্টিতে আমরা
কিন্তু কবিতা ও রমণীকথা বলতেই ভালোবাসি।
আমাকে অবাক করে স্তন যুগল সজোরে
চেপে ধরে স্টিয়ারিংয়ের হুইলে, সারথি আরো
অবাক-করা জোরালো গলায় আবৃত্তি করে
দশম এলিজি : ‘ওরা বৃষ্টির কথা ভেবেছিল
কিংবা প্রথম বসন্তে যে-বৃষ্টি নামে অঝোর ধারায়
শুষ্ক পাথরের মতো কালো মৃত্তিকার প’রে
বিরামহীন বৃষ্টির টাপুর-টুপুর শব্দ
এবং আমরা যারা সর্বক্ষণ সুখের সোপান ভেবেছি,
তবু অনুভব করব সেই সুখাবেগ যা-কিনা
হঠাৎ চমকে দেবে ভাবালু মনের সকলকে
যখন আসবে নেমে সত্যিকারের সুখ…’
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি প্রবল পাহাড়ি ঢলে
দশম এলিজি আড়াল করেই যেন
ভেসে যাচ্ছে আমার মাটি ও পলল ভাটির দেশ!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.