ভিখিরিও রাজস্থানে যায়

মোসত্মাক আহমাদ দীন
জন্ম ১১ ডিসেম্বর ১৯৭৭, সুনামগঞ্জ
প্রকাশক : বইপত্র

কবিসত্তা যতখানি ভাবুক ততখানি নির্মাণকলায় দক্ষ হলেই নতুন কবিতার জন্ম হয়। সময় ও সভ্যতার গতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানার, বোঝার ও বলার জগৎ পালটে যায়, তাই কবিকেও আয়ত্ত করতে হয় ভিন্ন ভঙ্গি-রীতি ও ভাবুকতা। একুশ শতকে বাংলাদেশের পরিণত তারম্নণ্য নিয়ে কবিরা এ ভঙ্গি ও ভাবুকতায় যে অমত্মর্নিবিষ্ট তার স্বাক্ষর রয়েছে মোসত্মাক আহমাদ দীনের ভিখিরিও রাজস্থানে যায় কাব্যগ্রন্থে। কেন্দ্র-রাজধানী থেকে দূরে বাস করেও তিনি বাংলা কবিতার মর্মস্থলে প্রবিষ্ট। প্রামেত্মর পরিসরকে সেই মর্মস্থলে মনন ও ভাবুকতার মধ্য দিয়ে রূপান্বিত করার ক্ষেত্রেও অমত্মর্নিবিষ্ট। এক নতুন আধুনিকতার মোচড় আছে এ কাব্যগ্রন্থে। বিষয়ে হয়তো ঐতিহ্য, কাল্ট, স্মৃতি-সংস্কার, বহুব্যবহৃত শব্দ-নাম আছে;

ভিখিরিও রাজস্থানে যায়
ভিখিরিও রাজস্থানে যায়

কিন্তু এগুলোকে ছুঁয়ে-ছেনে তিনি ব্যঞ্জনার বিহবলতা রচনা করেন, এমন একটা বিভ্রম গড়েন ও ভাঙেন যে ওইসব স্মৃতি-ঐতিহ্য-কাল্ট হয়ে ওঠে ভাবনা-দ্যুতি, যা আলো ছড়ায়। ইন্দ্রিয়কে মন ও মসিত্মষ্ক করে তোলেন। এক্ষেত্রে তাঁর আয়ুধ হচ্ছে রূপক ও বিপর্যাসমূলক অলংকার। মত পরিসর নিয়ে কবিতাগুলো প্রকৃতির হাওয়া, মেঘ, জল-নদী-হাওর-ঝড় আর বাংলা কবিতার সেই ‘তুমি’ সত্তার অমত্মর্বয়ন ঘটায়। তাঁর কবিতায় উপস্থিতি-অনুপস্থিতির খেলা, রহস্যময়তা আছে আর আছে কথা ও ছবির ছোট ছোট দোলা। রূপক দিয়ে চিত্রকল্প তৈরির প্রয়াসে তিনি বেশি মগ্ন থাকেন। এই মগ্নতা টানা গদ্যপ্রবাহী কবিতাগুলোতে আরো সুখদায়ক আবহ তৈরি করে। ভিখিরিও রাজস্থানে যায় কাব্যে কবির আমি-সত্তা একধরনের চিমত্মান্বিত দর্শন-চেতনার অস্ফুট প্রকাশ ঘটিয়েছে। সে-দর্শনটি হলো কবিমাত্রে আত্মদর্শী, একই সঙ্গে পরিপার্শ্ব অবলোকনকারী আর কবিতালিখনের মিতভাষিতায় শিল্পনিপুণ। কবিতা যে একই সঙ্গে বোধ ও শব্দের মিথস্ক্রিয়া – এই কাব্যগ্রন্থে সেটিই চর্চার প্রয়াস লক্ষ করা যায়।