ভিন্নতাবাহী দৃষ্টিকোণ গভীরতর বিশেলষণ

মুহিত হাসান

 

আপনি তুমি রইলে দূরে

রফিক কায়সার

 

বেঙ্গল পাবলিকেশন্স

ঢাকা, ২০১৫

 

২০০ টাকা

 

রফিক কায়সারের নবতম প্রবন্ধগ্রন্থ আপনি তুমি রইলে দূরেতে গ্রন্থিত হয়েছে মোট সাতটি প্রবন্ধ। কোনোটি আকারে দীর্ঘ, কোনোটি ক্ষুদ্র এবং সব লেখাতেই ভিন্নতাবাহী দৃষ্টিকোণে আলোচিত হয়েছে অতীত ও বর্তমানের কয়েকজন বাঙালি-মনীষার রচনাকর্ম-জীবনচর্যা আর একাধিক গ্রন্থ। প্রথম তথা নামপ্রবন্ধ ‘আপনি তুমি রইলে দূরে’র পটভূমিতে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ-পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূলত রথীন্দ্রনাথের লেখা চিঠির একটি সংকলনকে অবলম্বন করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন ও তাঁকে ঘিরে সৃষ্ট নানামুখী বিতর্ককে এখানে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন লেখক। তাঁর মতে, পারিবারিক বাস্তবতা রথীন্দ্রনাথকে আপন সত্তার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করেনি, বরং কবিপুত্রের পরিচয়ই তাঁকে আমূল গ্রাস করেছিল। ব্যক্তিগত মতের চাইতে জীবনে পিতার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বেশি, নিজের মতামত জানানোর সুযোগ সেভাবে পাননি। নিজের লেখালেখির তাই সূচনা কবির মৃত্যুর পর। আবার পিতারই নির্দেশে তাঁর পছন্দের পাত্রীর পাণিগ্রহণ করতে হয়েছে। ফলে কবি-প্রয়াণের পর দম্পতির পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল শৈত্যপ্রবাহ তথা এক অমোচনীয় দূরত্ব। সেই দূরত্ব পূরণ করেছিলেন বিশ্বভারতীর শিক্ষক নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীরা চট্টোপাধ্যায়। আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্কটি নিয়ে প্রথমদিকে তেমন কিছু কেউ ভাবেননি; কিন্তু পরে রথীন্দ্রনাথের নিকটাত্মীয়রা মনে করলেন,  এ-সম্পর্ক আদতে ‘নির্মল দম্পতির বৈষয়িক কোনো উদ্দেশ্য পূরণ’ করবে, তেমনি শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের কাছে তা হয়ে দাঁড়াল এক বহুচর্চিত ‘কেচ্ছা’। পরে তাঁর ঘাড়ে উটকো ঝামেলা হিসেবে এসে পড়ল (সরকারের শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে) ‘তহবিল তছরুপে’র অভিযোগ ও ‘প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা’র দায়। এসব ঘটনা ও পূর্বতন সম্পর্কের সূত্র ধরে রথীন্দ্রনাথের স্বেচ্ছায় প্রস্থান ঘটল শান্তিনিকেতন থেকে, মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে থেকে গেলেন দেরাদুনে। রফিক কায়সার মনে করেন, অব্যবস্থাপনার দায় রথীন্দ্রনাথের একার ছিল না। রবীন্দ্রনাথের আমল থেকেই তা প্রায় শান্তিনিকেতনের ‘ঐতিহ্যে’ পরিণত। রথীন্দ্রনাথ সেই অচলায়তন ভাঙতে পারতেন, কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ তিনি করেননি। তবে সরকারি কর্মকর্তারা ও শান্তিনিকেতনের গুরুবাদী মানসিকতাসর্বস্ব অনেক কর্মীও তাঁর সঙ্গে নম্র-যৌক্তিক আচরণ করেননি। অপরদিকে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে সম্মান করার বদলে তা নিয়ে কুৎসা রটনাই যেন কারো-কারো নৈমিত্তিক কাজ হয়ে পড়েছিল। ফলে সামাজিক গ্লানি ও লোকলজ্জাকে সঙ্গী করেই বাকি জীবনটুকু রথীন্দ্রনাথকে কাটাতে হয়েছিল।

‘উত্তম পুরুষ’ প্রবন্ধে প্রয়াত কথাশিল্পী রশীদ করিমের প্রথম উপন্যাস উত্তম পুরুষের অনুপুঙ্খ আলোচনালভ্য। রশীদ করিম তাঁর প্রথম উপন্যাসেই পাঠক ও লেখকের মধ্যে চরিত্র নিয়ে ভাবনার ঐক্য স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন। তবে উঁচু পর্দায় পাঠকের আবেগকে নাড়া দিতে গিয়ে কোনো-কোনো চরিত্রের ভারসাম্যকে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন – এমনটা লেখকের ধারণা। পাঠকের মনে উৎকণ্ঠা ও সংশয় সৃষ্টি করতে গিয়ে কাহিনিগত শৃঙ্খলাও হ্রাস পেয়েছে কিনা, এ-শঙ্কার উল্লেখও তিনি করেন। তবে রশীদ করিমের গদ্যের ইতিবাচকতার মধ্যে দিয়ে তাঁর উপন্যাসের নির্মাণকৌশলের প্রতি পাঠকের আস্থাশীলতা জন্মায় – এমনটাও রফিক কায়সার মনে করেন। কিন্তু গদ্যের অতিরিক্ত মাজাঘষার প্রবণতার ফলে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর দানা বাঁধা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। অবশ্য রশীদ করিমের নির্মিত কাহিনির ভেতর দিয়ে অতীতের অনেক বিস্তারিত প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বর্ণনা ও সেই সময়ের জীবনচিত্র যেভাবে ফুটে ওঠে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয় বলে লেখক মনে করেন, তবু শেষে একটা ‘তবে’ তিনি রেখেই দেন : ‘উত্তম পুরুষের কাহিনি ও চরিত্রে গত শতাব্দীর নগরবাসী বাঙালি মুসলমান সমাজের যাপিত জীবনের দলিল পাওয়া যাবে। তবে সম্পূর্ণ দলিল নয়, আংশিক বা খন্ডিত দলিল।’

জীবিত অবস্থাতেই যিনি বাংলাদেশের সাহিত্যমন্ডলে এক ‘ফেনোমেননে’ পরিণত হয়েছিলেন, সেই  হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য ও জীবনকে লেখক ভিন্নভাবে বিচার করেছেন ‘ফরায়েজ-এ-হুমায়ূন’ শীর্ষক দীর্ঘায়তনের প্রবন্ধটিতে। লেখক হুমায়ূনের সফলতা ও জনপ্রিয়তার নেপথ্যের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাঁর বহুমাত্রিক পরিপ্রেক্ষিত রচনার ক্ষমতাকে, ‘উক্ত পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছিল মধ্যবিত্ত জীবনের হাসি-কান্না,                  প্রেম-ভালোবাসা, বিচ্ছেদ ও বিরহ, জ্যোৎস্না ও বৃষ্টি-মাখানো ঐকতানে। যে ঐকতানে ছিল বাঙালির প্রকৃতি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার ধর্মীয় সত্তা, তার প্রাত্যহিক জীবন এবং তাদের নারী-পুরুষের সম্পর্কের টানাপড়েনের এক বিশবস্ত বয়ান।’ গল্প বলার জাদুকরী ক্ষমতা, সাবলীল গদ্য আর লেখকের সাদাসিধে বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনের ভঙ্গি পাঠককে আচ্ছন্ন করতে থাকে। হুমায়ূনের মধ্যে স্বাভাবিক প্রতিভার ঘাটতি ছিল না মোটেও, কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর লেখকসত্তার মধ্যে একরকমের আগ্রাসী প্রবণতাও দেখতে পাওয়া যায়, বাস্তবতাকে সেই আগ্রাসী হুমায়ূন এমনভাবে কব্জা করে ফেলেন যে, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত জনচিত্তে লেখক বলতে শুধু একজনের নামই পাকাপোক্তভাবে সিলমোহর করা থাকে – হুমায়ূন আহমেদ। ফলে লেখক থেকে তিনি ক্রমে রূপান্তরিত হন জনপ্রিয় সংস্কৃতির অন্যতম প্রবক্তায়। প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধকে তিনি ভাঙেন না, ফলে জনমানসে তাঁর প্রতি আস্থা বাড়ে। আবার উপন্যাসের চরিত্রের মাধ্যমে তিনি ছড়িয়ে দেন হিউমার ও আলস্যের জয়গানও, তাই তারুণ্যের আয়েশের সঙ্গী হিসেবেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যান। রফিক কায়সার দেখান, পরে বাজারের চাপের কাছে তাঁকেও নতি স্বীকার করতে হয়, বাংলাদেশের বইয়ের বাজারের বাণিজ্যিক দিকটা হুমায়ূনকে একাই সামলাতে হয়েছে যেনবা, ‘সৃষ্ট চাপের ফলে নুয়ে পড়েছে তাঁর সৃজনশীলতার ধার ও ভার।’ স্বপ্ন তিনি দেখাতেন তাঁর লেখায়, তবে ছিলেন না নিজে স্বপ্নবাজ, বরং অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বৈষয়িক বুদ্ধি দিয়ে  বাস্তবতাকে মোকাবিলা করেছেন। সেই লড়াইয়ের ফলে আর্থিক সাফল্য এসেছে। রাজনৈতিক অবস্থানে ছিলেন না স্বচ্ছ, তাই মিলেমিশে চলার নীতি নিয়ে জীবিতকালেই মধ্যবিত্ত-বলয়ের সবার কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করে যেতে পেরেছিলেন।

‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ : ঔপন্যাসিকের দায়ভার’ প্রবন্ধে লেখক দেখিয়েছেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর উপন্যাসে ব্যক্তিমানসের স্বরূপ অন্বেষায় ব্যাপৃত হয়েছেন আত্মবিশ্লেষণের রীতিতে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রদের মধ্যে সাবলীলভাবে সঞ্চারিত হয় এক অনিকেতবোধ। উপন্যাসের নায়কদের মধ্যেকার ‘প্রশ্নশীলতা ও আত্মজিজ্ঞাসার প্রতিক্রিয়ায় পাঠকের মধ্যেও গড়ে উঠতে থাকে প্রতিবর্তী ভাবনা।’ ওয়ালীউল্লাহর সৃষ্ট চরিত্রদের প্রশ্নশীলতা ও অনিকেতবোধ প্রসঙ্গে রফিক কায়সার স্মরণে আনেন গত দুই শতকের ইউরোপীয় লেখকদের কথা : ‘স্মরণে আসে দস্তয়ভস্কি, কাফকা ও ক্যামুর কোনো কোনো উপন্যাসের প্রসঙ্গ। বিশেষ করে দস্তয়ভস্কির, ‘কারামাজভ ভ্রাতৃবৃন্দের’ নায়কের মধ্যে যেমন আমরা লক্ষ করি পিতৃহত্যার দায় বহন করার তাগিদ, মুহাম্মদ মুস্তফা কি বহন করেনি খোদেজার অপমৃত্যুর জন্য স্বআরোপিত দায় অথবা যুবক শিক্ষকের মধ্যে আমরা কি লক্ষ করি না কাফকার ‘ট্রায়াল’ উপন্যাসের নায়কের মতো দন্ডপ্রাপ্তির জন্য আকাঙ্ক্ষা।’

‘যুদ্ধের খোঁজে’ লেখাটিতে জাহানারা ইমামের ক্ল্যাসিকসম গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি ব্যতিক্রমী ও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। বইটির গ্রহণযোগ্যতা ও পাঠকপ্রিয়তার উৎস সন্ধান করতে গিয়ে লেখক বলেছেন, প্রথমত রোজনামচার অনুষঙ্গে গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকের কাছে একে আদরণীয় করে তুলেছে। এরপর নিজের  শহীদ-পুত্র রুমীর যুদ্ধে যাওয়ার আখ্যান বলতে গিয়ে জাহানারা ইমাম যেভাবে এক পারিবারিক আবহ তৈরি করেন, তাও পাঠকদের এক আটপৌরে আবহে বসিয়ে দেয়। আর আস্তে আস্তে রুমীর যুদ্ধে যাবার আখ্যান হয়ে উঠতে থাকে এক সংগ্রামী জননীর নিজের যুদ্ধকে খুঁজে পাওয়ার বয়ানও। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে ও তাঁদের যথাসম্ভব সাহায্য করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। পুত্র শহীদ হওয়ার পর তাঁর সহযোদ্ধাদের মধ্যেই যেন খুঁজে পেতে চেয়েছেন হারানো রুমীকে। রুমী তাই ক্রমে পাঠকদের কাছে হয়ে ওঠেন লড়াকু তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীক, আর একাত্তরের দিনগুলি হয়ে ওঠে আমাদের ইতিহাসের অংশ।

মোরশেদ শফিউল হাসানের বই স্বাধীনতার পটভূমিতে ষাটের দশক নিয়ে আলোচনা রয়েছে ‘ফৌজি জামানা’ শিরোনামের বৃহৎ আকৃতির রচনায়। গত শতাব্দীর ষাটের দশক বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, সেই সময়কে নিয়ে রচিত বইটির আলোচনা করতে গিয়ে লেখক বেশকিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য ও নিজস্ব ব্যাখ্যা হাজির করেছেন, যা বইটির মূল্যায়নের উপাদান হিসেবে যেমন, তেমনি এর পাশাপাশি স্বতন্ত্র সামাজিক-রাজনৈতিক আলোচনা হিসেবেও মূল্যবান। মোরশেদ শফিউল হাসানের বইটিকে লেখক তথ্যনিষ্ঠ ও নৈর্ব্যক্তিক বলে বিবেচনা করেছেন। তথ্যসূত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁর বহুমাত্রিকতার প্রশংসাও তিনি করেছেন। তবে একটি তথ্যসূত্রের বেলায় লেখকের সংশয় রয়েছে, তা নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনাও করেছেন। আর পরিশেষে সামান্য খেদ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, বইটিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উপসংহার নেই।

গ্রন্থের সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘মায়া রহিয়া গেল’ বাংলাদেশের সাহিত্যজগতে কমলকুমার মজুমদারের রচনাসম্ভারের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া কীরকমভাবে পড়েছে, তার একটা খতিয়ান তুলে ধরেছে। লেখক জানান, কমল-পরিকর বেলাল চৌধুরীর কারণেই কমলকুমার ক্রমে ক্রমে ঢাকার সাহিত্য-আড্ডায় এক পৌরাণিক চরিত্র হয়ে উঠতে থাকেন। তবে তারও আগে ত্রৈমাসিক চতুরঙ্গ ও সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের কল্যাণে কিছুসংখ্যক পাঠকের কাছে কমলকুমারের নাম পৌঁছে গিয়েছিল। পরে কমলকুমারের মৃত্যুর (১৯৭৯) পরপরই তাঁকে নিয়ে কয়েকটি সমালোচনামূলক প্রবন্ধ দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী, সাপ্তাহিক রোববার ও ছোটকাগজ উত্তরকালে প্রকাশিত হয়। এরপর এদেশের অ্যাকাডেমিক জগতেও কমলকুমার কদর পেতে শুরু করেন। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে তাঁর রচনা জায়গা করে নেয়। তাঁকে নিয়ে সম্পন্ন হয় পিএইচডি গবেষণাও। রফিক কায়সার এ-প্রবন্ধের শেষাংশে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও শামসুর রাহমানের চিঠি এবং আনিসুজ্জামান ও হাসান আজিজুল হকের সাক্ষাৎকারে উঠে আসা কমলকুমার-প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি হাসান আজিজুল হকের কমলকুমার-বিষয়ক প্রবন্ধ ‘নিম অন্নপূর্ণা : ছোটগল্প যতদূর যায়’ (লোকযাত্রা আধুনিকতা সাহিত্য) আলোচনায় আনেননি। তোলেননি সনৎকুমার সাহার ব্যতিক্রমী আলোচনা ‘ভাষার কালোয়াতি ও কমলকুমার মজুমদারে’র (কথায় ও কথার পিঠে) প্রসঙ্গও।

রফিক কায়সারের পূর্ব-প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থগুলোর মতো আপনি তুমি রইলে দূরেতেও আমরা পাই এক গভীরতর বিশ্লেষণের নিদর্শন। প্রচলিত ধারণার পথে না হেঁটে তিনি আপন প্রজ্ঞায় নির্মাণ করেন নিজস্ব এক সাহিত্যভাবনার আধার। এই বইয়ের প্রবন্ধসমূহকে নির্মোহ-সোজাসাপটা সাহিত্য-আলোচনার উৎকৃষ্ট ও অনবদ্য নমুনা বললে অত্যুক্তি হবে না। লেখকের বলার ভঙ্গির মধ্যে নেই জানার বড়াই, বরং রয়েছে এক অনুপম বৌদ্ধিক নিরাসক্তি, যা কিনা পাঠককে তাঁর প্রতিটি লেখার প্রতি মনোযোগ দিতে বাধ্য করে। পরিশেষে শুধু একটাই অনুযোগ, এরকম একটি জরুরি বইয়ের ফ্ল্যাপে বা ব্লার্বে কোনো গ্রন্থ-পরিচিতি নেই। থাকলে ভালো হতো।