মন-কলা

বিশ্বজিৎ চৌধুরী

আজ রাইতে একবার আমার বাড়িতে আসবেন?
শুনে চমকে উঠেছিলেন জুনাব আলী। কথাটার মধ্যে একটা ইঙ্গিত আছে, বলার ভঙ্গিতেও। বুকের রক্ত ছল্কে উঠেছে, এই বয়সেও চনমন করে উঠেছে শরীর।
– রাইতে? ওই পথটাতে তো ভয় করে…।
– কিসের ভয়?
– মানে, ওই যে কবর, বাঁশঝাড়, অন্ধকারের মইদ্যে…।
চোখ নাচিয়ে মুখ টিপে হেসে সায়রা বানু বলল, এইটা কী কন, আপনের মতো এমুন সাহসী মানুষ এইসব রে ভয় পান?
জুনাব আলী জানেন, তিনি সাহসী মানুষ নন; কিন্তু গ্রামের দশজনে জানে, তিনি সাহসী। কারণ আছে। ওই যে বলে না, ঝড়ে বক মরে…। সেটা অনেকদিন আগের কথা। এক অমাবস্যার রাতে ঘুমের মধ্যে পেটে মোচড় দিয়ে উঠেছিল জুনাব আলীর। চোখ-মুখ বন্ধ করে বিছানায় পড়েই ছিলেন অনেকক্ষণ; কিন্তু উপায় নাই, পেটের মোচড়টা এমন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল যে, মানসম্মান রক্ষা করতে হলে বদনা-হাতে পুকুরপাড়ের দিকে যেতেই হয়। গিয়েছিলেন। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে মানসম্মান, মানে পরনের কাপড় বাঁচাতে এমন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিলেন, আশেপাশে তাকানোর সময় ছিল না তখন। পুকুরের পাড় ঘেঁষে সরু রাস্তাটা ধরে এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন তার সামনে উল্টোপথ থেকে এসে দাঁড়িয়েছে এক লোক। অন্ধকারের মধ্যে কালো কুচকুচে লোকটা হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে যেন উঠে এসেছে। এক হাতেরও কম দূরত্বে দাঁড়ানো লোকটার চোখ দুটো এমন জ্বলজ্বল করছিল, এবার সত্যি কাপড় নষ্ট হওয়ার জোগাড় জুনাব আলীর। থরথর করে কাঁপছিলেন ভয়ে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন বলেই বোধহয়, শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে হাতের পানি ভরতি পিতলের বদনাটা ধাঁই করে বসিয়ে দিয়েছিলেন লোকটার মাথায়। অবাক কা-! ঝুপ্ করে একটা শব্দ হয়েছিল মাত্র। দশাসই মানুষটা উপড়ে-পড়া গাছের মতো সটান উবু হয়ে পড়েছিল মাটির ওপর।
তখনো শরীরের কাঁপুনি থামেনি জুনাবের। কিন্তু এসব বিবেচনার আগে প্রকৃতির তীব্র ডাকে সাড়া দিতে হয়েছিল তাঁকে। এটুকু স্বস্তির পর সেই মধ্যরাতে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করেছিলেন। গ্রামের ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সেদিন এসে ভয়ে-বিস্ময়ে দেখেছিল বিরাটকায় একটি মানুষের নিঃসাড় দেহ। লালদিয়ার চর এলাকার রমিজুদ্দি ডাকাত বলে তাকে শনাক্ত করতে পেরেছিল কেউ-কেউ।
পরদিন সকালে ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসেছিল। লাশের সঙ্গে থানা-ফাঁড়িতে যেতে হয়েছে জুনাব আলীকেও। কিন্তু রমিজুদ্দি পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এবং আত্মরক্ষার জন্য জুনাব আলীকে এই কাজ করতে হয়েছে বলে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে তাঁকে রেহাই দিয়েছিল পুলিশ।
সেই থেকে গ্রামের লোকজনের কাছে বিশেষ মর্যাদা পেতে শুরু করেছেন। গল্পটা ডালপালা ছড়িয়ে বিসত্মৃত হয়েছিল অনেকদূর। রমিজুদ্দি ডাকাত ধারালো ছুরি নিয়ে আক্রমণ করেছিল তাঁকে, সেই আক্রমণ থেকে নিজেকে কৌশলে রক্ষা করে পাল্টা আক্রমণে কীভাবে তাকে কাবু করেছেন জুনাব, সেই গল্প। সেই থেকে তকমাটা লেগে গেল গায়ে, সাহসী।
তবে সবাই যতই সসম্ভ্রমে তাকিয়ে থাকুক তাঁর দিকে, গল্পটা একেবারেই বিশ্বাস করেনি সফুরা, জুনাব আলীর স্ত্রী, রাজু-সাজুর মা। মুখের ওপর বলেছিল, মিনসে ভয়ের চোটে আতকা বদনাটা মাইরা দিছে লোকটার মাথায়… আর অহন বাদশা আকবরের সেনাপতি অইয়া পড়ছে। গ্রামের মানুষ সব বেকুবের বেকুব।
– হ, তুমিই তো একমাত্র আকালমন্দ মানুষ এই গ্রামে। তোমার থেকে বেশি বুঝব আর কে। কুচুটে মহিলা কোহানকার…।
– অ্যাই, কুচুটি ডাকবা না কইলাম… তোমারে চিনি না আমি, রাইতে শেয়াল ডাকলে ভয় পাও, তুমি অইয়া পড়ছ এহন বিরাট একটা বীরপুরুষ, হি-হি-হি।
চিরটাকাল জুনাবকে এভাবে টিটকিরি মেরে গেল মুখরা মেয়েমানুষটা। তার চরিত্র নিয়ে সর্বক্ষণ সন্দেহ-অবিশ্বাস। সফুরার তীক্ষন নজরদারি এড়িয়ে বিয়ের পর আর কোনো নারীর দিকে তাকানোর সামান্য সুযোগ হয়নি কখনো।
একবার এক মামাতো শালি বেড়াতে এসেছিল কয়েকদিনের জন্য। একটু ছেনালি টাইপের। সেই শালির সঙ্গে ঠাট্টা-রসিকতার ছলে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন একদিন। তেমন কিছু না, আড়ালে একটু হাতাহাতি ছোঁয়াছুঁয়ি আর কি। দেখতে পেয়ে বোনের সামনেই ছাতার বাঁট দিয়ে স্বামীর পিঠে এক ঘা লাগিয়ে দিয়েছিল সফুরা। কী সাংঘাতিক মহিলা!
আর একবার তো বলতে গেলে নাকানি-চুবানি খাইয়েছিল সফুরা। খুব ভোরে নামাজ পড়ে আবার একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস জুনাব আলীর। শীতের কুয়াশায় ঝাপসা ভোরে পুকুরঘাটে হাত-মুখ ধুতে গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য তাঁকে বিমোহিত করেছিল। পুকুরের অন্য পাড়ের ঘাটে বসে আছে আসমান থেকে নেমে আসা এক পরী। আসলে আকাশ থেকে কি আর পরী নামে, সেটা দৃষ্টির বিভ্রম। গোসল করতে এসেছিল মির্জাবাড়ির ছোট ছেলের সদ্য বিয়ে করা বউটি। নির্জন ভোরবেলা বলেই হয়তো একটু খোলামেলা হয়েই নেমেছিল পানিতে। একবার ভাসে-ডোবে-সাঁতরায়, আবার ঘাটে ফিরে গিয়ে সাবান মাখে গায়ে। দেখে নেশা ধরে গিয়েছিল মনে। পরের দিন একই সময়ে আবার পুকুরঘাটে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন জুনাব। এরপর থেকে কটা দিন এটাই রুটিনে দাঁড়িয়ে গেল। সফুরা এই সময়টাতে কাদা হয়ে ঘুমায়। সুতরাং সময়টা নিরাপদ। এখানে প্রতিদিন একই সময়ে আসা নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ জাগবে কিনা, এমনকি মেয়েটাও তাকে দেখে ফেলবে কিনা এসব ভেবে শেষে চমৎকার একটি উপায় উদ্ভাবন করেছিলেন জুনাব। বড়শি নিয়ে বসতেন পুকুরঘাটের ঝোপঝাড়ের আড়ালে। বড়শির ছিপ
ভাসছে পানিতে, আর জুনাবের চোখের সামনে অপূর্ব জলকেলির দৃশ্য পরম্পরা। শুধু চোখের দেখাই তো, কিন্তু সেই দৃষ্টিসুখও সইল না কপালে! এক ভোরে বড়শির ছিপ ফেলে উবু হয়ে বসেছে, সতৃষ্ণ দৃষ্টি পুকুরের ওপাড়ে, হঠাৎ ভূমিকম্প হয়ে গেল যেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ধাক্কায় গড়িয়ে পড়ে গেল পুকুরে। সম্বিত ফিরে পেয়ে এক কোমর পানিতে উঠে দাঁড়াল যখন, তখন দেখে হিন্দুদের কালীদেবীর মতো পুকুরঘাটে রণমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে সফুরা বেগম।
– কী মিয়া চণ্ডীদাস অইছো? পুকুরঘাটে বড়শির ছিপ ফালায়া ধোপার মাইয়ার রূপ দ্যাখো?
কত্ত বড় বেইজ্জতি! কতকাল আগের ঘটনা, কিন্তু এখনো সে-কথা মনে পড়লে নিজেকে একটা ছিঁচকা চোরের মতো মনে হয় জুনাব আলীর।
অথচ দশ বছর আগে মাত্র দুদিনের জ্বরে সফুরা যখন হঠাৎ মরে গেল, তখন আম-ছালা দুটোই হারালেন জুনাব। মরলই যখন কয়েকটা বছর আগে গেলেই হতো। এখন শ্বাসটান উঠলে বুকে-পিঠে একটু মালিশ করে দেওয়ার লোকটাও নেই। একটা সময় চেহারা-ছবিটা যেমন ভালো ছিল তেমনি আচার-আচরণেও মায়া-মহববত টের পাওয়া যেত। কিন্তু সংসারের ঘানি টেনে-টেনে বোধহয় অল্প বয়সে চেহারার লাবণ্যটা গেল আর মুখের কথার মধুটা করল্লার তিতা হয়ে উঠেছিল। সফুরার মৃত্যুতে একা হয়ে গেলেন জুনাব। কিন্তু এক জীবনের শত্রুতা যেন মৃত্যুর পরও টেনে নিয়ে গেল সফুরা।
মনে-মনে আরেকটা শাদি করার খুব খায়েশ ছিল। তার বন্ধু আবু তাহের কথাটা তুলেও ছিল ছেলেদের সামনে, বাবারা তোমরা তো
বউ-বাচ্চা নিয়ে শহরে থাহ, এই মানুষটা অহন কেমনে থাকব একা, টাকা-পয়সা-সম্পত্তির তো অভাব নাই মাশাল্লাহ, একটা গরিবের মেয়েরে শাদি করলে…।
শুনে খেঁকিয়ে উঠেছিল ছোট ছেলে সাজু, সম্রাট শাহজাহান, কী কন চাচা, ষাইটের ওপর বয়স অইছে, অহন তো তসবিহ্ গোনার সময়, বিয়ার কথা কইলেন কেমনে আপনে?
আবু তাহের চুপ মেরে গেছে, জুনাব আলীও যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। পুরুষ মানুষের বয়স বাড়লেও, মন বুড়ো হয় না – একথা কে বোঝাবে এই বয়সের ছেলেদের। শরীরের অসুখ-বিসুখের ওষুধ আছে, মনের রঙিন খোয়াব ঠেকাবে কোন ওষুধ!
এখন এই বাহাত্তর বছর বয়সের মানুষটা যে একা পড়ে আছে গ্রামের বাড়িটা আগলে, কোন শালা দেখতে আসছে তাকে। দুইটা
মর্দ-জোয়ান ছেলে শহরে বউ-বাচ্চা নিয়ে মহাসুখে আছে, ঈদে-চাঁদেও একবার বাপের কথা মনে পড়ে না তাদের। বাবারে, বয়স একদিন তোমাদেরও হবে, বউও মরবে, সেদিন বুঝবা – মনে-মনে আওড়ান জুনাব।
সায়রা বানু এসে দিনের বেলা রান্না করে, কাপড়-চোপড় ধুয়ে ঘরটা ঝাড় দিয়ে যায়। সারা দিনে এই সময়টাতেই একটু মনের আরাম পায় জুনাব আলী। ছোট্ট ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে আসে। ছেলেটা দাদা দাদা ডেকে তার আশেপাশে ঘুরঘুর করে। জুনাব আলীরও মায়া পড়ে যায়। নিজের নাতি-নাতনিকে কতদিন দেখেন না, সায়রা বানুর ছেলেটাকে নিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান। সায়রা যখন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিসুখও হয়। রংটা কালো হলে কী হবে, ধারালো তরবারির মতো শরীর। দুবেলা কিইবা এমন খেতে পায় গরিবের মেয়ে, তবু বর্ষার ভরা-খালের মতো খলবল করছে সারা অঙ্গ। তার কোমরের বাঁক আর ভারী বুক চোখে ভেসে উঠলে ঘুমের মধ্যে পর্যমত্ম বুক শুকিয়ে যায় জুনাব আলীর।
এহেন সায়রা বানুর পেটে বাচচা দিয়ে সেই যে আরব দেশে পাড়ি জমিয়েছিল তার দিলীপ কুমার (নামটা কী যেন, রহিম বা করিম হবে কিছু একটা), আর দেশে ফেরার নাম-গন্ধ নেই। টাকা-পয়সাও পাঠায় না ঠিকমতো।
কাজকর্ম শেষ হলে মাঝেমধ্যে পা-টা একটু টিপে দিতে বলেন জুনাব। বাড়তি কয়েকটা টাকা ধরিয়ে দেয় বলে বিশেষ আপত্তি করে না বানু। তাতে পায়ের ব্যথাটা কমে না, বরং সারা শরীরে যেন অন্য একটা ব্যথা চাগিয়ে ওঠে। তো, মেয়েটা যখন রাতে বাড়িতে যেতে বলল, বেদেনির ইশারায় দুলে-ওঠা সাপের মতো জুনাব যে তার কথায় সায় দেবেন তা-ই তো স্বাভাবিক। কবর আর বাঁশঝাড় পেরিয়ে সায়রা বানুর বাড়িতে যাওয়ার অন্ধকার পথ পাড়ি দেওয়াটা একটু ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল মনে। কিন্তু জুনাব আলী ‘সাহসী মানুষ’ হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যাওয়ায় এই আপত্তিটাও বিশেষ টেকে না।
পাঞ্জাবিতে আতর লাগিয়ে একটু বেশি রাতে পুকুরপাড়ের সরু পথ ধরে সায়রা বানুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়েছিল। ঘুটঘুটে রাত, টিপটিপ বৃষ্টিও পড়ছিল। কিন্তু এক ধরনের রোমাঞ্চ তখন মন জুড়ে। সেই উত্তেজনায় সবকিছু উপেক্ষা করে হনহন করে হাঁটছিল। কিন্তু কবরের পাশের বাঁশঝাড়টা পেরোতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। পাঞ্জাবির খুঁটে টান পড়ল হঠাৎ। কে? চমকে উঠে পেছন ফিরতেই সারা শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল জুনাব আলীর। সফুরা! হাতে একটা ছাতা উঁচিয়ে ধরে রেখেছে লাঠির মতো করে।
– কই যাও?
ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ! কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বিস্ফারিত চোখে সফুরার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই যেন প্রশ্ন করেন, কই যাই?
– জামায় সুগন্ধ লাগায়া সায়রা বানুর বাড়ি যাও, না? দাঁড়াও রঙ্গ আমি আইজ ছুটাইতেছি। তোমারে কবরে নিয়া ঢুকামু আইজ।
উল্টোপথে একটা দৌড় লাগাবেন ভেবেছিলেন জুনাব, কিন্তু দু-পা কে যেন আটকে রেখেছে মাটির সঙ্গে, ভয়ে নড়তে পারেন না, দুহাত জোড় করে শুধু বলতে পারলেন, আমারে মাপ কইরা দাও সফুরা… এইবারের মতো আমারে মাপ কইরা দাও…।

তারপর কী হয়েছিল আর মনে নেই জুনাব আলীর। পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন দেখল, স্ত্রীর কবরের পাশে কাদা পানির মধ্যে পড়ে আছে জুনাব আলী। হুঁশ আছে কি নেই। মাঝে-মাঝে একবার চোখ খোলেন, আর বিড়বিড় করে বলেন, আমারে মাপ কইরা দাও সফুরা…।
লোকজন ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে আসে জুনাবকে। ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন বলল, আহা রে, বউরে বড় ভালোবাসত চাচা মিয়া, এই বয়সেও কী ভালোবাসা… রাইতে চাচির কবরের কাছে গিয়া… আহা রে…।
এই ‘আহা রে’ শব্দটার আবেগ বোধহয় সঞ্চারিত হয় উপস্থিত বাকি লোকজনের মধ্যে, তারাও প্রায় সমস্বরে বলে ওঠে, আহা রে…।
লোকজন চলে যাওয়ার পর একটু বেলা বাড়লে সায়রা বানু এল। খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, এত রাইতে ওই ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে গেছিলেন কী মনে কইরা?
কী মনে কইরা মানে, তুমি না যাইতে কইছিলা তোমার বাড়িতে?
আমি কইছি! বিস্ময়ে দু ভুরু এক জায়গায় স্থির হয়ে যায় সায়রা বানুর, রাইতে আপনেরে আমার বাড়িত যাইতে কমু ক্যান?
তুমি না চোখ টিপ দিয়া রাইতে তোমার বাড়িতে যাইতে কইলা? জিহবায় কামড় দিয়ে বানু বলল, আপনি এসব কী কন চাচা, আপনি আমার বাপের থেইক্যা বয়সে বড়, আপনেরে আমি চোখ টিপ দিয়া… ?
কেমন যেন সংশয়ে পড়ে যায় জুনাব আলী, মিনমিন করে বললেন, তুমি না কইলা রাইতে আইসেন… আমি ভাবলাম একা থাহ, স্বামীটা কাছে নাই…।
ফোঁস করে উঠল বানু, আপনে আমারে এই রকম মাইয়া মানুষ ভাবছেন? একা থাহি… স্বামী কাছে নাই, হের লাইগা আপনেরে… ! আপনি মনে-মনে মন-কলা খাইছেন চাচা। আমার যদি এত একা থাহনের অসুবিদা, তাইলে রাইতে আপনেরে ডাকুম ক্যান, চাইরপাশে জোয়ান মানুষের অভাব অইছে? ছি-ছি…।
কথা তো ঠিক। মহাবিভ্রমের মধ্যে পড়ে গেলেন জুনাব আলী, সত্যি তিনি ‘মন-কলা’ খেয়েছেন? তাহলে আগের দিন চোখ নাচিয়ে মুখ টিপে হেসে তাকে রাতে বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাল কে?
এটাও কি তাহলে সফুরা বেগমের কারসাজি? কবরে গিয়েও শান্তি নাই, তার পিছনে এখনো লেগে আছে ওই দজ্জাল মহিলা!