রূপের যে তার নেই কো শেষ : জীবনানন্দের কাব্যে রূপ দর্শন ও চিত্রকল্প

বিশ্ব কবির ‘সোনার বাংলা’,

নজরুলের বাংলাদেশ,

জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’,

রূপের যে তার নেই কো শেষ।

এই গান গেয়ে রণাঙ্গনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা। এখনো সে-দেশের আকাশ-বাতাসে ভাসে এই গানের সুর। রূপ সৃষ্টি, চিত্রকল্প তুলে ধরায় জীবনানন্দ ছিলেন অনবদ্য। রবীন্দ্রনাথ বিশেষভাবে তাঁর চিত্রকল্পের প্রশংসা করেছিলেন। জীবনানন্দের কবিতায় রূপকথা, মিথ, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব সবই মিলত। থরে থরে সাজানো রূপের স্তবকে ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক নামের সাথে মিশেছে রূপক, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। অনেক সময়, প্রাচীন ও বিখ্যাত নগর হয়ে ওঠে সৌন্দর্যের প্রতীক। বোদলেয়ার বলেছেন, ঈশ্বর-প্রেরিত দুঃখ প্রাচীন পালমির নগরের হারানো অলংকারের তুলনায় অধিক মূল্যবান। জীবনানন্দ বনলতা সম্বন্ধে বলেছেন, ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,/ মুখ তার শ্রাবসত্মীর কারুকার্য।’

বস্ত্তত, স্থান-কালের বৈচিত্র্যও জড়িয়ে আছে কবিতায় উলিস্নখিত নামের সাথে। মিশর, ব্যাবিলন থেকে বম্বের জুহু বিচ, কলকাতার অনভিজাত লজ, আহিরীটোলা, বাদুড়বাগান পর্যন্ত পাঠকের যাত্রা। সমালোচক সুমিতা চক্রবর্তীর বয়ানে :

মিশর-ব্যাবিলন তাঁর কবিতায় নিয়ে আসে প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতি সৌরভ আর আবহের বিচিত্র ব্যঞ্জনা। কিন্তু প্রায় কখনই তাঁর কবিতার পদপাঠভূমি হয়নি ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ। মালয় ও সিংহলে একদা বিসত্মৃত হয়েছিল

ভারত-সংস্কৃতি। তৃতীয় পঙক্তির। ‘বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে’ বলার মধ্যেও বৌদ্ধ ধর্মের সমুন্নতি-কালের ইঙ্গিত। দূর অতীতে বিম্বিসারের বুদ্ধ-ভক্তিতে, অশোকের ধর্ম বিস্তারে মৈত্রীর বিস্তার ঘটেছিল। সেই বিশ্বাসী সময়টিকে আধুনিক কালের সংশয়পীড়িত অস্তিত্বের বিপরীতে তিনি একাধিক কবিতায় ব্যবহার করেছেন।

(কবিতার অন্তরঙ্গপাঠ – জীবনানন্দ-অমিয় চক্রবর্তী-বিষ্ণু দে, সুমিতা চক্রবর্তী)

জীবনানন্দ কেবল ভারত ও তার প্রতিবেশীদের পটভূমিকা রূপে বেছে নিয়েছিলেন, এ-কথা হয়তো পুরোপুরি সঠিক নয়। উত্তর আফ্রিকার মরুভূমি থেকে ভূমধ্যসাগরের কাছে দ্রাক্ষাবন সর্বত্র তাঁর পরিযায়ী পদক্ষেপ চোখে পড়ে। তবে বাংলা ও তারপর ভারত, অবশ্যই সর্বাগ্রে। ইতিহাস থেকে প্রাক্-ইতিহাস অবধি তাঁর যাত্রা। আদিম ম্যামথের কাছে মানুষের ঋণ তিনি ভোলেননি। প্রথম প্রাণের রূপও তাঁর সাথে আছে। এককোষী জীব অ্যামিবাদের।

 

পৃথিবীকে ধাত্রীবিদ্যা শিখায়েছে যারা বহুদিন

সেই সব আদি অ্যামিবারা আজ পরিহাসে হয়েছে বিলীন।

(‘মনোসরণি’)

 

প্রেমেন্দ্র মিত্রও এক কবিতায় অ্যামিবাকে করেছেন কেন্দ্রবিন্দু।

অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, ত্রিকাল পাশাপাশি আসে। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান যে-পথে তিববত যাত্রা করেছিলেন আলোকবর্তিকা নিয়ে, এখন তা অন্যরকম। হিন্দুশাস্ত্রে বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধ, দশম ও শেষ অবতার কল্কি। কল্কির আগমন বিশ্বের ধ্বংসপর্ব। সেই যুগই কি এসে গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত রক্তস্নাত পৃথিবীতে? করুণাময় বুদ্ধ ও ভয়াবহ কল্কির মধ্যে ব্যবধান কোথায়?

 

এ-রকম কেন হয়ে গেল তবে সব

বুদ্ধের মৃত্যুর পর কল্কি এসে দাঁড়াবার আগে।

(‘ভাবিত’)

 

আধুনিকতা, তার আশা বা বিপর্যয়, সমসাময়িক ঘটনা মিলেছে ঐতিহ্যের সঙ্গে। জাপানের প্রস্তাব বা প্রচার Co-prosperity sphere-এর বিষয়। এশিয়ানরা একজোট হবে পশ্চিমা শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওদিকে যে জাপান সাংহাইকে বিধ্বস্ত করেছে।

 

এশিয়া কি এশিয়াবাসীর

কোপ্রস্পেরিটির

সূর্যদেবীর নিজ প্রতীতীর তরে?

(‘লোকসামান্য’)

 

সূর্য হয়তো দিনের, ভবিষ্যতের চিহ্ন, অথবা উদিত সূর্যের দেশ, সে-সময় আগ্রাসী জাপানের প্রতীক। হিটলার, কুইসলিং এঁরাও দেখা দেয়। নিনেভ, ব্যাবিলনের উত্তরসূরি রূপে। এক ইংরেজ কবি বলেছেন, নিনেভ নগর তৈরি হয়েছিল যুগ যুগ ধরে কবিদের দীর্ঘ নিশ্বাস দিয়ে। তার পাশে বম্বের জুহু বিচ।

কয়েকটি চিত্রকল্প – রবীন্দ্রনাথের প্রশংসিত চিত্রকল্প – জীবনানন্দের বহু মিথ ও প্রকৃতির ইতিহাসের নানা দিক তুলে ধরেছেন। এক ত’ সমুদ্র! জলরাশি নগরীর মালা।

 

জলসিঁড়ি, নীপার, ওডার, রাইন, রেবা, কাবেরীর

(‘দীপ্তি’)

 

সুদৃঢ়, বৃহত্তম কিছু নদীর সাথে মিলিয়েছেন তাঁর নিজস্ব জলসিঁড়ি।  তেমনি সমুদ্রের অতলপুরীর পাশে উঠে আসে গ্রামবাংলার পরিচিত প্রকৃতি।

 

প্রয়াণ তোমার প্রবালদ্বীপে, পলার মালা গলে

বরুণ-রাণী ফিরছে যেথা, – মুক্তা-প্রদীপ জ্বলে!

যেথায় মৌন মীনকুমারীর শঙ্খ ওঠে ফুঁকে।

 

ঘুঘু হরিয়াল-ডাহুক-শালিখ-গাঙচিল-বুনোহাঁস

নিবিড় কাননে তটিনীর কূলে ডেকে যায় ফিরে ফিরে

বহু পুরাতন পরিচিত সেই সঙ্গী আসিল কি রে।

(‘সাগর-বলাকা’)

 

পৃথিবী সমুদ্র থেকে এসেছে। সমুদ্র যখন তীরের ওপর আছড়ে পড়ে, তখন মনে হয় সে যেন নিজের ধন ফিরিয়ে নিতে এসেছে। এ-কথা বলেছেন মার্কিন কবি ফ্রস্ট। জলকন্যা, মৎস্যকন্যা নিয়ে মিথ বা কাহিনি বহু প্রচলিত। আধুনিক লেখকদের মধ্যে অস্কার ওয়াইল্ড ও হ্যান্স অ্যান্ডারসন বিখ্যাত গল্প লিখেছেনও বিস্তর। জলকন্যারা মূর্ত আছে সে ডেনমার্কের সমুদ্রতীরে। জীবনানন্দের জলকন্যার জন্য যা চিরকাল অধরা, রহস্যময়, তারই প্রতীক্ষা।

 

প্রবাল-পালঙ্ক-পাশে মীননারী ঢুলায় চামর!

(‘নাবিক’)

 

মীনকুমারীর মত কোন্ দূর সিন্ধুর অতলে

ঘুরেছে সে মোর লাগি! – উড়েছে সে অসীমের সীমা!

(‘ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল’)

 

শেষোক্ত কবিতায় দেখি কাহিনির মধ্যে কাহিনি, স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন।

 

ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল, –

ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার, রাঙা আপেলের

মতো লাল যার গাল,

চুল যার শাঙনের মেঘ, আর আঁখি গোধূলির মত

গোলাপি রঙিন,

আমি দেখিয়াছি তারে ঘুম পথে, স্বপ্নে – কত দিন!

(‘ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল’)

 

এখানে ‘আমি’ কে? কে কাকে স্বপ্নে দেখছে? মৃত্যুরূপিণী যে-নারী দেখা দেয় কোনো এক স্বপ্নের জালে, ‘সাপিনীর মত আঙুলে ছুটেছে তার কঙ্কালের রূপ’ সে কি ‘মীনকুমারী’র সাথে একাত্ম? সমুদ্র কি মৃত্যুর আর এক রূপ? ‘সুচেতনা’তেও সমুদ্র মিশে যায় নারীর সঙ্গে। তবে এ সেই সাগর যা নাবিকদের ঘরে আজো সমুদ্রের পরতে পরতে মিশে আছে প্রাচীন কিংবদন্তি বা ইতিহাসের খ্যাতনামা নাবিকের দল। যারা সমুদ্রযাত্রা করেছিল। কেউ ফিরেছিল, কেউ বা ফেরেনি।

 

চারি দিকে অলীক সাগর – জ্যাসন ওডিসিয়ুস ফিনিশিয়

সার্থবাহের অধীর আলো, – ধর্মাশোকের নিজের তো নয়,

আপতিতকাল

(‘পটভূমির’)

 

ফিনিশীয়রা ছিল প্রাচীন যুগে সবচেয়ে দক্ষ নাবিক জাতি। জেসন ও অদিসিউস বা ইউলিসিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিক মিথলজির অন্যতম বীরদের মধ্যে দুইজন। দুইজনই নাবিক রূপে বিখ্যাত ও অগ্রগণ্য। ইউলিসিস ছিলেন হোমারের দ্বিতীয় মহাকাব্যের নায়ক। জেসনকে নিয়েও প্রাচীন এবং আধুনিক সাহিত্যে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। সুধীন্দ্রনাথেরও এক দীর্ঘ কবিতার নায়ক জেসন। ইউলিসিস ছিলেন ট্রয় যুদ্ধে গ্রিক সেনাপতিদের একজন। যুদ্ধামেত্ম দেশে ফেরার পথে তিনি প্রায় অর্ধেক বিশ্ব ঘুরেছিলেন। বহুবার বিপন্ন হয়েছিলেন রাজপুত্র জেসন। ‘আর্গো’ নামে জাহাজে সাথিদের নিয়ে বলচিস দেশে যাত্রা করেছিলেন সোনালি ভেড়ার চামড়া আনতে। সেখানে জাদুকরী রাজকন্যা মেদেয়ার সঙ্গে তার প্রণয়বন্ধন ঘটে। মেদেয়ার সাহায্যে জেসন ভেড়ার চামড়া ও নববধূ মেদেয়াকে নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। তারপর জেসন স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন আর মেদেয়া নিল ভয়াবহ প্রতিশোধ। সে আর-এক কাহিনি। মিথের জগতে ইউলিসিস ও জেসন সমুদ্রজয়ের প্রতীক। অশোক নিজে অবশ্য সমুদ্রযাত্রা করেননি। কিন্তু অনেককে পাঠিয়েছিলেন, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য। পশ্চিমা ও ভারতীয় নাম তিনটি মানুষের সাথে সমুদ্রের সম্পর্ক স্পষ্ট করে তুলেছে। ইউলিসিসের কাহিনিতে আছে সাইরেনদের কথা। তাদের মোহময় সংগীত নাবিকদের পথ ভুলিয়ে নিয়ে যায় ধ্বংসের দিকে। ওখানেও হয়তো মৃত্যুরূপিণী অনেক নারীর ইঙ্গিত আছে।

জলকন্যাদের আবার দেখি।

 

সেই জল-মেয়েদের স্তন

ঠাণ্ডা, – শাদা, – বরফের কুচির মতন!

তাহাদের মুখ চোখ ভিজে –

ফেনার শেমিজে

তাহাদের শরীর পিছল!

কাঁচের গুঁড়ির মতো শিশিরের জল

চাঁদের বুকের থেকে ঝরে

উত্তর সাগরে!

(‘পরস্পর’)

 

উত্তর সাগর আক্ষরিক ও ভৌগোলিক অর্থে উত্তর সাগর হতে পারে। ইউরোপের গ্রিসের সাগর জলকন্যাদের কাহিনির জন্য বিখ্যাত।

অথবা প্রতীকী অর্থে উত্তর। জলকন্যারা চাঁদ, সাগরজল আর শিশির দিয়ে তৈরি। তার সঙ্গে ‘শেমিজ’-এর মতো সাদামাটা বস্ত্তর নাম যেন বেমানান। তবু যেন সঠিক। রাজা-যুবরাজ-জেতা-যোদ্ধাদের হাড় মৃত্যুর এমনকি জাদু মৃত্যুর অনুষঙ্গ। মনে পড়ে কি কিটসের ‘La Belle Dame sans Merci’-র কথা। যেখানে নির্দয়া রূপসীর  চতুর্দিকে আছে রাজা, রাজপুত্র, যোদ্ধাদের প্রেত। কবিতার নায়িকা রূপকথার ঝষববঢ়রহম ইবধঁঃু, একই সঙ্গে রক্ত-মাংসের মানবী।

 

ঘুমন্ত কন্যার কথা শুনেছি অনেক আমি, দেখিলাম তবু চেয়ে

চেয়ে

এ ঘুমানো মেয়ে

পৃথিবীর, – মানুষের দেশের মতন;

(‘পরস্পর’)

 

জীবনানন্দের কল্পনা অনেক সংস্কৃতিকে, ঐতিহাসিক পর্বকে আত্মস্থ করেছিল। তার মধ্যে একটি, মধ্যযুগের দক্ষিণ ফ্রান্সের প্রভ্যাঁস। যেখানে ইতিহাস আর মিথ, কল্পনা ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাকে রূপকথার রাজ্য বলা যেত। একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতক অবধি  প্রভ্যাঁস ছিল কাব্য ও সংগীতের কেন্দ্র। প্রেমকে রূপান্তরিত করা হয়েছিল প্রায় ‘কাল্টের’ পর্যায়ে। ‘প্রেমের কোর্ট’ তৈরি হয়েছিল নিজস্ব নিয়ম-নীতি নিয়ে। অবশ্য বেশিরভাগ পরকীয় প্রেম। তারপর বর্বর বিদেশি আক্রমণ প্রভ্যাঁসকে, তার সংস্কৃতিকে শেষ করে দিলো। কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেল গানে, কবিতায়। আর অলীক বনের ছায়ায়। তার রেশ প্রতিফলিত হয়েছে জীবনানন্দের একাধিক কবিতায়। বাস্তব কি এমনই ছিল? খুব সম্ভব তা নয়। বাস্তব ও কল্পনার আলোছায়ার খেলার ধারাবাহিকতা চোখে পড়ে মধ্যযুগের দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে বিংশ শতাব্দীর বাংলার। সে-যুগে ‘ক্রবেদুর’রা ছিল ভ্রাম্যমাণ গায়ক ও লোকবিশ্বাসে প্রেমিক। কবি তারই আত্মিক বংশধর বা বহন করছেন জন্মান্তরের স্মৃতি।

 

আমি ছিনু ‘ক্রবেদুর’ কোন্ দূর ‘প্রভেন্স্’ – প্রান্তরে!

– দেউলিয়া পায়দল্-অগোচর মনচোর-মানিনীর তরে

সারেঙ্গের সুর মোর এমনি উদাস রাত্রে উঠিত ঝঙ্কারি!

আঙুরলতায় ঘেরা ঘুমঘোর ঘরখানা ছাড়ি

ঘুঘুর পাখনা মেলি মোর পানে আসিল পিয়ারা!

মেঘের ময়ূরপাখে জেগেছিল এলোমেলো তারা!

– ‘অলিভ’ পাতার ফাঁকে চুন চোখে চেয়েছিল চাঁদ,

মিলননিশার শেষে  – বৃশ্চিক, গোক্ষুর ফণা – বিষের

বিস্বাদ!

(‘অস্তচাঁদে’)

 

‘চুন চোখে’ কথাটা বেমানান যেমন অন্যত্র ‘শেমিজ’-এর মতোই বেমানান। তা মনে দাগ কাটে। চাঁদের মস্নান আলো আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারপর –

অলিভকুঞ্জে হা-হা ক’রে হাওয়া কেঁদেছে কাতর যামিনী ভরি!

ঘাসের শাটিনে আলোর ঝালরে ‘মার্টিল’ পাতা পড়েছে ঝরি!

‘উইলো’র বন উঠেছে ফুঁপায়ে – ‘ইউ’ তরু শাখা গিয়েছে

ভেঙে,

তরুণীর দুধ-ধবধবে বুকে সাপিনীর দাঁত উঠেছে রেঙে।

কোন গ্রীস – কোন কার্থেজ, রোড ‘ক্রবেদু’র যুগ কোন, –

চাঁদের আলোয় স্মৃতির কবর-শফরে বেড়ায় মন!

(‘চাঁদিনীতে’)

 

আবার সেই ক্রবাদুর গায়ক-প্রেমিক। আবার অলিভ মার্টিল, ভূমধ্য সাগরের দেশের প্রকৃতি। ভিক্টোরিয়ান কবি সুইনবার্ন ও বিংশ শতাব্দীর মার্কিন কবি এজরা পাউন্ড প্রভ্যাঁসের কাব্য, সংস্কৃতিকে কিছু পরিমাণে পুনর্জীবিত করতে চেয়েছিলেন বা অন্তত অনুসরণ করতে। এলিজাবেথান যুগের দু-একজন কবিও করেছিলেন অনুরূপ প্রচেষ্টা! জীবনানন্দ হয়তো সেই পথেরই কবি। তরুণীর বুকে সাপের চুম্বন মিশর-মহিষী ক্লিওপেট্রার কথা মনে করিয়ে দেয়। আর ‘স্মৃতির কবর’ কার? মানুষের মিলিত স্মৃতি ইতিহাসের এক উজ্জ্বল পর্ব সম্বন্ধে!

সমুদ্রের মতো মরুভূমিও স্থান পেয়েছে জীবনানন্দর কবিতায়। কবিতার ত্রয়ী, ‘মিশর’, ‘পিরামিড’, ‘মরুবালু’ তারই প্রতিফলন। এখানে মিশরের বা মরুপ্রধান উত্তর আফ্রিকা এক স্বপ্ন ও স্মৃতির জগৎ। প্রাচীন মিশর যেন ঘুমিয়ে-পড়া নারী। রুপার কাঠি তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। কোনো সোনার কাঠি কি তাকে জাগাবে? প্রাচীন মিশরের নানা সুপরিচিত নিদর্শন সেখানে আছে। মমি, পিরামিড, স্ফিংসের মূর্তি। আছে কবির যা রীতি, মিথ ও ইতিহাসের মিশ্রণ।  স্ফিংক্স এক মিথিক্যাল জীব। যার সিংহের দেহ, নারীর মুখ, পাখির মতো ডানা যা রহস্যের খনি। কঠিন ধাঁধায় ফেলে মানুষকে করে বিভ্রান্ত, বিপন্ন। ইসিস, প্রাচীন মিশরের মাতৃদেবী। প্রখ্যাত ফারাও, রামেসিস। তবে প্রাচীনের সাথে নবীন বা চিরন্তনও এসেছে।

কলসী কোলে নীলনদেতে যেতেছে ঐ নারী

ঐ পথেতে চলতে আছে নিগ্রো সারি সারি।

ইয়াঙ্কী ঐ, – ঐ য়ুরোপী-চীনে-তাতার মুর

তোমার বুকের পাঁজর দ’লে টলতেছে হুড়মুড় –

ফেনিয়ে তুলে খুন্খারাবি – খেলাপ – খবরদারি!

দিনের আলো ঝিমিয়ে গেল, – আকাশে ঐ চাঁদ!

– চপল হাওয়ায় কাঁকন কাঁদায় নীল নদেরই বাঁট!

মিশর ছুঁড়ি গাইছে মিঠা শুড়িখানার সুরে

বালুর খাতে, প্রিয়ের সাথে, – খেজুরবনে দূরে!

আফ্রিকা এই, – এই যে মিশর, – জাদুর এ যে ফাঁদ!

(‘মিশর’)

 

এখানে একদিকে আছে মিশরের ওপর, আফ্রিকার ওপর বারবার বিভিন্ন বিদেশি আক্রমণের ঢেউ। সোনালি বালুরাশি রক্তে রাঙা হয়ে যাওয়া। তার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবন যা কবির পরিচিত জীবন থেকে খুব ভিন্ন কিছু নয়। মিশর কুমারী কলসি কোলে, হাতের কাঁকনে ঝঙ্কার তুলে নীল নদ থেকে জল তোলে, যেমন বরিশালের বঙ্গবধূ তোলে হয়তো ধানসিঁড়ি নদী থেকে। ‘মিশর ছুঁড়ি গাইছে মিঠা শুড়িখানার সুরে’ মনে করিয়ে দেয় কবিরই অপর ক’টি পঙ্ক্তির কথা :

 

সে কোন ছুঁড়ির চুড়ি আকাশ-শুঁড়িখানায় বাজে!

চিনিমাখা ছায়ায় ঢাকা চুনীর ঠোঁটের মাঝে

(‘বনের চাতক-মনের চাতক’)

 

যুদ্ধের ইমেজ ভেসে ওঠে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। ‘শিশু মানব’ অর্থাৎ আদি মানব যখন লড়াই করত ভয়াবহ জীবদের সাথে। তারপর অসংখ্য মরু যুদ্ধ মানুষে মানুষে।

 

তোদের সাথে ‘ডাইনোসুরে’র লড়াই হল কত, –

আলুথালু লুটিয়ে বালুর ডাইনী ছায়ার তলে

…                             …                         …

দানোয়-পাওয়া আগুনদানা, – দারুণ পথের মুখে!

ঘায়েল করি মেঘের বুরুজ বলস্নমেরি ঘর,

উড়িয়া হাজার ‘ক্যারাভেন’ ও তাম্বুশিবির বুকে,

উজিয়ে মরীচিকার শিখা – কালফণা জর্জর,

– টলতে আছিস, – দলতে আছিস, – জ্বলতে আঝিস

ধূ ধূ!

সঙ্গে স্যাঙাত – মরুর ডাকাত, – তাতার যাযাবর!

…                              …                        …

এইখানেতে নেইকো দরদ, – নেইকো ভালবাসা

বর্শা লাফায়, – উটের গলার ঘুণ্টি শুধু বাজে!

ফুরিয়ে গেছে আশা যাদের – জুড়িয়ে গেছে জ্বালা,

আয় রে বালুর ‘কারবালা’তে, অন্ধকারের সাঁঝে!

(‘মরুবালু’)

 

‘যুদ্ধধ্বস্ত মরু, দস্যু, সেনানী’ যেসব মিথ ও ইতিহাস মরুভূমির সাথে যুক্ত, তার অনেকটাই এখানে দেখি। সর্বোপরি শেষ পঙ্ক্তির ‘কারবালা’। কারবালা বিশ্ব-ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধের একটি। জারিগান, সারিগান, মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালি পাঠকের সুপরিচিত। কারবালায় হজরত মুহম্মদদের দৌহিত্র ইমাম হোসেইন সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন, এজিদের বাহিনীর হাতে। ওটা ছিল পুরোপুরি মরুযুদ্ধ। প্রধান অস্ত্র

তৃষ্ণা। বিপক্ষের জলের উৎস বন্ধ করে দেওয়া।

কারবালার উল্লেখ মনে করিয়ে দেয় জীবনানন্দের মিথের আর এক দিকের কথায়। যে আরবি, ফার্সি, উর্দু ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলারও অংশ, বাংলার সগর্ব স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও যাকে হয়তো সংক্ষেপে ইসলামিক সংস্কৃতির বেশ। বলা যেতে পারে, তার ইঙ্গিত এক্ষেত্রেও মেলে সুমিতা চক্রবর্তীর ভাষায় :

বনলতা সেন-এর শরীরে মিশেছে মধ্যপ্রাচ্যের সেই বিশেষ ধরনের  বিলাসী-রোমান্টিক আবেশ। এই শেষের আবিষ্টতাটি এক সময়ে সত্যেন্দ্রনাথ, মোহিত লাল, নজরুলের কলম ধরে কিছুটা জমাট বেঁধেছিল বাংলা কবিতায়।

(কবিতার অন্তরঙ্গপাঠ – জীবনানন্দ-অমিয় চক্রবর্তী,

বিষ্ণু দে, সুমিতা চক্রবর্তী)

কারবালা অবশ্য মিশরে নয়। এখন যে-রাষ্ট্রকে ইরাক বলা হয়, তার অংশ। তবু কবিতাত্রয়ীতে মিশরের যে-ইতিহাসের ধারা চিত্রিত হয়েছে, তার পূর্ণতা এভাবে হয়তো এসেছে। প্রাগৈতিহাসিক, ডাইনোসরের যুগ, পিরামিডের যুগ, যে-পিরামিড প্রাচীন অথচ চিরন্তন। তারপর ইসলামিক যুগ। মধ্যপ্রাচ্যের কবিতার কয়েকটি পরিচিত অনুষঙ্গের সঙ্গে জড়িত। মদের পেয়ালা, (আক্ষরিক বা আলংকারিক অর্থে। সুফি দর্শনে মদ ঈশ্বর-প্রেমের প্রতীক।) গুলবাগিচা, বুলবুল, ক্যারাভান ইত্যাদি। ভারতের বেলায় ভেসে ওঠে মুঘল যুগের কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির ঘটনা বা সৌধ। জীবনানন্দ তাঁর কোনো কবিতার মধ্যে কথা প্রসঙ্গে এমন বিষয় এনেছেন। যেমন :

 

নয় সে বান্দা রংমহলের, মোতিমহলের বাঁদী,

(‘বেদিয়া’)

 

ভ্রাম্যমাণ বেদিয়া দলের চলার পথে যা পড়ে থাকে তার সাথে জড়িত মুঘল হারেমের কল্পনা বা স্মৃতি। এমনকি দুই সম্প্রদায়ের ঐক্যের ডাক দিয়েও কবি তাতে মিলিয়েছেন বহু শতাব্দীর মিথ ও ইতিহাস, রোমান্টিক স্বপ্ন। স্বপ্ন-স্মৃতি যেন বাস্তবের ভিত্তি।

 

সেলিম-সাজাহাঁ-চোখের জলেতে এক্শা করিয়া তারা

গড়েছে মীনার মহলা স্তম্ভ কবর ও শাহদারা!

– ছড়ায়ে রয়েছে মোঘল ভারত; – কোটি সমাধির সত্মূপ

তাকায়ে রয়েছে তন্দ্রাবিহীন – অপলক, অপরূপ!

যেন মায়াবীর তুড়ি

 

স্বপনের ঘোরে স্তব্ধ করিয়া রেখেছে কনকপুরী!

মোতিমহলের অযুত রাত্রি, লক্ষ দীপের ভাতি

আজিও বুকের মেহেরাবে যেন জ্বালায়ে যেতেছে বাতি!

আজিও অযুত বেগম-বাঁদীর শষ্পশয্যা ঘিরে

অতীত রাতের চঞ্চল চোখ চকিতে যেতেছে ফিরে!

দিকে দিকে আসে বেজে ওঠে কোন্ গজল-ইলাহী গান!

পথ-হারা কোন্ ফকিরের তানে কেঁদে ওঠে সারা প্রাণ

– নিখিল ভারতময়

(‘হিন্দু-মুসলমান’)

 

আরব্য রজনীসুলভ পরিম-ল তৈরি করে একটি বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উপস্থাপন করা হয়েছে।

মিথ-মিশ্রিত মণি-মুক্তার সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার ‘রূপসী বাংলা’। এখানে যেন কবি জানিয়েছেন বাস্তব পৃথিবী, জনগোষ্ঠী শেষ হয়ে গেলেও বেঁচে থাকে স্মৃতি। মানব জাতির মিলিত স্মৃতি, সহস্মৃতি।

 

পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল, –

এশিরিয়া ধুলো আজ – বেবিলন ছাই হয়ে আছে।

(‘রূপসী বাংলা’)

 

রূপসী বাংলার বিস্তারিত বর্ণনা বাহুল্য মাত্র। বাংলার বিশেষত গ্রামীণ পূর্ববঙ্গের অতীত, বর্তমান, কল্পনা বাস্তব ছবি সবই এখানে চোখে পড়ে। কবি অনেকবার ব্যাবিলন, নিনেভ, মিশর ইত্যাদি তাঁর কাব্যে এনেছেন। কিন্তু তা অনেকটা মৃত অতীতের অংশ বা প্রতীক রূপে। কিন্তু রূপসী বাংলায় বাংলার অতীত, বর্তমান, মধ্যযুগের বাংলা, কবি কঙ্কণের চ-ীমঙ্গলের বাংলা, রামপ্রসাদ ও তার শ্যামা সংগীতের বাংলা, মঙ্গলকাব্যের শেষ রচয়িতা, রায়গুণাকর, ভারতচন্দ্রের বাংলা। বৈষ্ণব পদাবলীর বাংলা কবিদের পাশাপাশি যোদ্ধা বা রাজপুরুষদের চিহ্নও রয়েছে। নীরব রাতে শোনা যায় কোনো এক রায়রায়ানের  ঘোড়ার পদশব্দ। (মুঘল ও নবাবি আমলে উচ্চপদস্থ রাজপুরুষ বা জমিদারের ওটাই ছিল উপাধি।) সেন বংশ রাজত্ব করেছিল মুসলমান রাজ্যের সূচনা পর্যন্ত। বল্লাল সেন বিখ্যাত কুলীন প্রথা প্রচলনের জন্য।  উল্লেখ আছে সেই বল্লাল সেনের। রূপকথার রাজকন্যারা আছে দল বেঁধে। শঙ্খমালা, চন্দ্রমালা, মানিকমালা, কাঞ্চনমালা, কঙ্কাবতী। যে-কঙ্কাবতী জলে ডুবে মাছের রানি হয়েছিল। যে-শঙ্খমালা উলিস্নখিত হয় জলকন্যাদের তালিকায়, কবির অন্যান্য কবিতায়। রাজপুত্র, মন্ত্রীপুত্র, কোটালপুত্র ইত্যাদি নেমে আসে পরিচিত রূপকথার ছকে থেকে। এসবের সঙ্গে আছে আটপৌরে গ্রামের মেয়ে, তাদের কল্কা পাড় শাড়ি ‘চাঁদ ধোয়া হাত’, সন্ধ্যায় পোষা হাঁসদের ডেকে আনা।

প্রকৃতির কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল, যদিও রূপসী বাংলায় যত প্রকৃতির বৈচিত্র্য আছে, তা কম কাব্যগ্রন্থেই দেখা যায়। রোমান্টিক ফল-ফুল হিসেবে সাদামাটা তার তরকারি, যা নিত্যব্যবহার্য। নদী জীবনানন্দের অনেক কবিতাতেই এসেছে প্রতীক বা পটভূমিরূপে। সবচেয়ে বেশি হয়তো রূপসী বাংলায়। মঙ্গলকাব্যের সাথেও তা যুক্ত। নদীতে ভাসে চাঁদ বেনের সপ্তডিঙা মধুকর। হয়তো বাণিজ্য সফর মধ্যযুগের বাংলাকে মনে করিয়ে দেয়। চাঁদের পুত্রবধূ বেহুলা যখন দেবসভায় নৃত্য করেছিল, মৃত পতির জীবন ফিরে পেতে, তখন বাংলার জল-মাটি সব ছিল তার পায়ে নূপুরের মতো।

সবশেষে প্রশ্ন থেকে যায়। রূপসী বাংলা কি কেবল হারানো অতীতের সব স্বপ্নবিলাস, না তার সঙ্গে ভবিষ্যতের আলোর আশাও আছে। এ-কথা অনস্বীকার্য, তার মধ্যে বিষাদের সুর স্পষ্ট।

যে-রাজকন্যারা চলে গেছে, যে-নারীরা আর জল তুলতে বা গাত্র ধুতে আসবে না। সপ্তাডিঙা ডুবে গেছে বহু দিন। যে-চিতায় এক মৃতা শায়িতা, তার আগুনে কি বাংলাই পুড়ে গেছে! বলা কঠিন।

আশা-নিরাশা দোদুল্যমান।

জীবনানন্দ রূপসী বাংলা উৎসর্গ করেছেন ‘আবহমান বাংলা, বাঙালিকে।’ প্রশ্ন করেছেন, হে চিল, সোনালি চিল, রাঙা রাজকন্যা আর পাবে না কি এমন? হয়তো ইয়েটসের কার্লিউ পাখির প্রতি অভিযোগের ছায়া এখানে লক্ষণীয়। আবার কবি নিজ যুগকে হিজল বনের আড়ালে হারিয়ে হওয়া অতীতের পাশে রেখেছেন। বল্লাল সেন বা চাঁদ বণিকের পাশে উপস্থাপিত করেছেন সমসাময়িক বাংলার অন্যতম নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে, যাঁর সম্বন্ধে জীবনানন্দ অন্যত্রও কবিতা লিখেছেন :

 

মধুকূপী ঘাস-ছাওয়া ধলেশ্বরীটির পাড়ে গৌরী বাংলার,

এবার বল্লাল সেন আসিবে না জানি আমি – রায়গুণাকর

আসিবে না – দেশবন্ধু আসিয়াছে খরধার পদ্মায় এবার,

কালীগহে ক্লান্ত গাঙশালিখের ভিড়ে যেন আসিয়াছে ঝড়,

(‘রূপসী বাংলা’)

 

আজকের বাংলাদেশের এক অগ্রগণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধু মুজিবকে তুলে ধরেছেন রূপসী বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে।

 

তিনি বাংলার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন জীবনানন্দবৎ।

তাই তাঁর চোখে ধরা পড়েছিল রূপসী বাংলার স্নিগ্ধ মুখশ্রী।

(‘পুনশ্চ মুজিবকথা’)

 

জীবনানন্দ ও তাঁর রূপসী বাংলার মিথ-মেশানো বাস্তব অতীতের সুগন্ধযুক্ত বর্তমান আবহমান বাংলা বাঙালির সম্পদ।