রোহিঙ্গা শরণার্থী  

বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে যেসব শিল্পীর আবির্ভাব বাংলাদেশের চিত্রকলার ধারাকে সমৃদ্ধ করেছিল, সৈয়দ জাহাঙ্গীর তাঁদের অন্যতম। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরপরই লক্ষ করা যায় তাঁর কাজে সমকালীন মার্কিন চিত্রকলার প্রভাব – আমাদের শিল্পক্ষেত্রে তা তৃপ্তিকর বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করে। তিনি বহু মাধ্যমে কাজ করেছেন, তবে তেলরঙের প্রতি যেন তাঁর পক্ষপাত। দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রকাশ করা সত্ত্বেও তাঁর ঝোঁক বিমূর্তরীতির ছবির দিকে। রং ও আকারে, জমিন ও আলোর নানারকম ঘাত-প্রতিঘাত-অবস্থান নিয়ে জাহাঙ্গীর নির্মাণ করেন তাঁর ছবি। তাতে যদি বক্তব্য থাকে শিল্পীর, তবে তা বুঝে নিতে হয় যত্ন করে। বক্তব্যকে তিনি প্রাধান্য দেননি, প্রাধান্য দিয়েছেন সৃষ্টির আনন্দকে।

সৈয়দ জাহাঙ্গীর পৃথিবীর বহু দেশে একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার। অনেককাল শিল্পকলা একাডেমীর চিত্রকলা বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ২০১৫ সালে তাঁর রচিত বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ত্মপ্রতিকৃতি : স্মৃতির মানচিত্র স্মৃতিকথাটিতে তিনি পারিবারিক প্রসঙ্গ ও দেশের চিত্রকলা-আন্দোলন সম্পর্কে সবিস্তারে লিখেছেন। প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটি ২০১৭ সালে অ্যাক্রিলিকে অঙ্কিত। এই ছবিটিতে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এদেশে আগমন ও আশ্রয় গ্রহণের যে প্রতিভাস সৃষ্টি করেছেন তা অনন্য।শিল্পীর জন্ম খুলনায়, ১৯৩৫ সালে। মৃত্যু ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ঢাকায়। ছবিটির সংগ্রাহক আবুল খায়ের।