ইকবাল আজিজ
এই দ্যাখো সাঁঝ নামে বঙ্গদেশে শহরে বন্দরে গাঁয়ে –
তুমি লিখে রাখো আমার এ-স্বীকারোক্তি, আমি চিরকালের বাঙালি
জন্মেছি এ-বঙ্গে – পদ্মা মেঘনা যমুনা আমার ঠিকানা।
নদীপথ বলে দেয় – নদী দিন যাপনের গান শেখায় আশ্চর্য
কলকল স্বরে;
রক্তিম স্বপ্নের ইতিহাস ঘণ্টাধ্বনি মনে পড়ে।
অঙ্গ বঙ্গ পুন্ড্র সমতট রাঢ় হরিকেল যে-নামে যেখান থেকে
ছিঁড়ে নাও মাটি – আমাকেই খুঁজে পাবে বারবার;
বটবৃক্ষ হিজল তমাল আম জাম কাঁঠালের ঘ্রাণ
শাপলা শালুক পদ্মফোটা গাঙের পবিত্র জলে
আমাকেই খুঁজে পাবে প্রতি পলে।
লিখে রাখো আমার এ-স্বীকারোক্তি; আমি চিরকালের বাঙালি –
হাজার বছর গেছে আত্ম-অন্বেষণে;
নদীর শরীর থেকে পলি জ’মে
জীবনের আশ্চর্য আহবানে আলোকিত মনে
ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে বদ্বীপ বঙ্গ।
বনভূমি কেটে গড়ে-ওঠা তাঁতপল্লি
সারাদিন সারারাত গভীর শ্রমের মন্ত্রধ্বনি প্রতিভার খনি
সোনালি অতীত যেন বারবার রূপকথা হয়ে ডাকে –
মনীষী অতীশ দীপঙ্কর অহিংসার ধর্মকথা বয়ে নিয়ে যান
রহস্যঘেরা তিববতে;
এশিয়ার দরিয়ায় দরিয়ায় ভাসে সোনার বঙ্গের পণ্যবাহী জাহাজের সারি –
মসলিন শাঁখশিল্প চাল ধান হীরা মুক্তা মসলার গন্ধভরা
অভিযাত্রা পুবে ও পশ্চিমে
উত্তরে দক্ষিণে সেই স্বপ্নময় বিজয়ের ক্ষণে।
লিখে রাখো আমার এ-স্বীকারোক্তি, আমি চিরকালের বাঙালি
অনেক অনেক ইতিহাস বুকে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি;
আমার শরীরে বিদ্রোহীর অগ্নিবর্ণ সাজ –
কণ্ঠে চিরায়ত চিৎকার স্বাধীনতার রক্তিম আওয়াজ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.