লিফট-ভূত

বুলবন ওসমান

কুড়ি তলা উঁচু বাড়িটা সকালের রোদকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে পশ্চিমমুখী বলে বিকেলটা বেশ আলোময়। ন-তলায় ভাইবোন রহিস ও রুবি দুটি ফ্ল্যাট কিনেছে। পাশাপাশি। পশ্চিমেরটা রহিমের। বয়স প্রায় চল্লিশ। গরমের ছুটিতে পুরো পরিবার গ্রামের বাড়িতে। রহিম একা। ছোট বোনের একমাত্র মেয়ে রীতা, বছর সাত বয়স। মামাভক্ত। সন্ধ্যার পর দুই সার ফ্ল্যাটের মাঝের করিডোর ধরে তারা হাঁটে। এই সময় কেউ চলাচল না করায় আধঘণ্টাটাক হাঁটাটা হয় বেশ নির্বিঘ্নে।

করিডোরটা প্রায় চল্লিশ ফুট লম্বা। পাশে আট ফুট। দুপাশে তিনটি করে ছটি ফ্ল্যাট। উত্তরের শেষ ফ্ল্যাটটি এখন ফাঁকা। এক ভদ্রলোক ছিলেন… অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর অফিসার। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে বছরখানেক হলো ফ্ল্যাট বন্ধ। পরিবারের সবাই বিদেশে। তাই না হচ্ছে ভাড়া, না অন্য কেউ করছে বসবাস।

করিডোরের দুপাশে তিনটি লিফট। উত্তরে দুটো – ছোট – আটজন বহন করে। দক্ষিণেরটা বেশ প্রশস্ত। ষোলোজন নিতে পারে। আর বড় মালামাল বহনে কাজে লাগে। অন্য সময় প্রায়ই থাকে বন্ধ।

কয়েকদিন থেকে রহিম খেয়াল করে বড় লিফটের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওটা আপনা-আপনি খুলে যায়। অথচ এখানে দাঁড়ানোর জন্যে কেউ কল করেনি। ওরা মামা-ভাগনি পার হয়ে গেল। লিফট কিছুক্ষণ হাঁ করে দাঁড়িয়ে থেকে আবার বন্ধ। এমনি প্রায়ই ঘটে। ওরা যেই কাছে আসে, লিফট আপনা-আপনি হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে। এটা লক্ষ করে একদিন রহিম বলে, বুঝলি রীতা, এই বড় লিফটকে ভূতে ধরেছে।

তাই নাকি মামা! রীতা অবাক চোখে চায়। এমনিতে সে ভূতের নাম শুনলে খুব ভয় পায়। আবার ভূত পাশেই রয়েছে ভেবে তার মুখ কালো হয়ে যায়।

ভাগনির মুখ দেখে মামার খারাপ লাগে। থাক, বেচারাকে এ-বিষয়ে কিছু বলবে না। তাকে সহজ করার জন্যে বলে, আরে ঠাট্টা করে বললাম। তুই আবার সত্যি মনে করলি নাকি?

আচ্ছা মামা, ভূত কেমন হয়?

কী করে বলব। আমি তো জীবনে কোনো ভূতের দেখা পাইনি।

ভূতের নাকি কুলোর মতো কান হয়, মুলোর মতো হয় দাঁত… আগুনের গোলার মতো চোখ… বড় বাঁকানো নাক…

ওটা লোকের ধারণা।

অমন ধারণা কেন করে?

ভূত তো অন্ধকারে থাকে, তাই সবকিছু ঝাপসা দেখায়… লোকে তখন নানা রকম ধারণা করে।

ভূত কি মানুষকে মেরে ফেলে?

যদি রাগি ভূত হয় তাহলে মেরে ফেলে। আর তেমন রাগি না হলে হয়তো তালগাছের ওপর উঠিয়ে দিলো। রাত পোহালে লোকে দেখবে, তালগাছের ওপর বসে আছে লোকটা।

ভূত মানুষকে অত ওপরে ওঠায় কী করে?

ভূতের গায়ে অনেক জোর। গোটা একটা বাড়ি পর্যন্ত তুলে নিয়ে যেতে পারে।

ভূতেরা কী খায় যে ওদের গায়ে এত জোর?

মানুষের ঘাড় ভেঙে রক্ত খায়। আবার পুকুর থেকে মাছ ধরে খায়…

গরু-ছাগল খায়?

না। ওগুলো ওরা খায় না।

তারপরও এত জোর!

ভূত তো মানুষ নয়। মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে ভূতকে জানা যাবে না।

মানুষ মরেই তো ভূত হয়।

হ্যাঁ, তা হয়। তবে তখন আর মানুষের গুণ থাকে না।

আচ্ছা মামা, গরু-ছাগল মরলে কি ভূত হয়?

না। তা হয় না।

শুধু মানুষ কেন ভূত হয়?

তা বলতে পারব না। লোকে অনেক আগে থেকে এ-রকম একটা ধারণা করে আসছে। তাই অনেক লোক ভূতে বিশ্বাস করে!

সবাই ভূতে বিশ্বাস করে না?

না। অনেকে করে, অনেকে করে না।

কেন অনেকে বিশ্বাস করে না?

কারণ এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। মানে প্রমাণ করা খুব মুশকিল।

মামা, তুমি ভূত বিশ্বাস করো?

রহিম একটু নীরব থাকে। তারপর বলে, না বিশ্বাস করি না… তবে অনেক সময় এমনসব ঘটনা ঘটে… মনে হয় যেন ভূত আছে। তবে যা-ই বলো, ভূতের গল্প আমার সবচেয়ে প্রিয়।

তুমি কখনো ভূতের গল্প লিখেছো?

হ্যাঁ। আমার প্রথম গল্পটা যেটা খবরের কাগজে ছোটদের পাতায় ছাপা হয়, সেই গল্পটার নাম ছিল একেবারে ভৌতিক। তবে মজার ব্যাপার হলো, শেষে কিন্তু ভূত পাওয়া যায়নি, সবই দেখার ভুল।

মামা, ভূতের পা নাকি পেছনের দিকে?

ওটা লোকে বানিয়েছে। যা পুরোপুরি দেখা যায় না, তার সম্বন্ধে এ-রকম আজগুবি সব গল্প তৈরি করাই যায়।

মামা, ভূত যাতে না ধরে তার জন্যে কী কী করতে হয়?

একটা হলো বুকে থুতু দেওয়া।

তাহলে ভূত ধরবে না কেন?

ময়লা লোককে ভূত ধরে না। ভূত ধরে সুন্দরদের। সুন্দরী মহিলা পেলে তো কথাই নেই।

ছোটদেরও ধরে?

হ্যঁা, ছোটদেরও ধরে।

ভয়ে রীতার বুক কাঁপতে থাকে। ভাবে, লিফট-ভূত যদি সত্যি হয় তাহলে তাকেও তো ধরতে পারে!

তাকে চুপ করে থাকতে দেখে মামা বলে, ভূত তাড়ানোর অনেক ব্যবস্থা আছে। যেমন – জোরে জোরে বলতে হবে : ভূত আমার  পুত, পেত্নি আমার ঝি, -/ রাম-লক্ষ্মণ বুকে আছে, ভয়টা আমার কি।

আর যদি আল্লাহ আল্লাহ করি?

তাহলেও ভূত পালাবে। আরো ব্যাপার আছে। কারো হাতে যদি লোহার কিছু থাকে, তাকে ভূত ধরতে পারবে না। এমনকি কেউ যদি আগুনের কাছে থাকে, তাহলেও ভূত তার কাছে ঘেঁষবে না।

এবার রীতাকে একটু সাহসী মনে হলো। তাকে দেখা গেল… সে বিড়বিড় করছে। মনে মনে কী যেন বলছে। মনে হয় ভূত তাড়ানোর মন্ত্র আওড়াচ্ছে, ভাবে মামা।

আরো কয়েকদিন এমনি হাঁটছে মামা-ভাগনি আর রহিম খেয়াল করেছে বড় লিফটটা ঠিক খুলে যাচ্ছে তারা যখন পাশ দিয়ে হাঁটে।

রহিম বলে, লিফট-ভূতবাবা, যতই হাঁ করে থাকো, আমরা তোমার ফাঁদে পা দিচ্ছি না। তুমি অকারণে আমাদের ধোঁকা দিচ্ছো!

এমনি একদিন দু-তিন রাউন্ড দেওয়ার পর রহিম লিফট ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে গেছে। রীতা সামান্য পেছনে। রহিম শেষ মাথায় গিয়ে ফিরে দেখে রীতা নেই।

সে অবাক! এই তো ছিল মেয়েটা! গেল কোথায়।

সে জোরে ডাক দেয়, রীতা…

কোনো উত্তর নেই।

রহিম তাড়াতাড়ি বোনের ঘরের কলিংবেল টেপে। বোন নাজমা দরজা খুলে বলে, কী হলো দাদা?

রীতা কি ঘরে এসেছে?

না তো! ও তো আপনার সঙ্গে গেল।

হ্যাঁ। আমার পেছন পেছনে হাঁটছিল। হঠাৎ পিছু ফিরে দেখি উধাও।

এ্যাঁ! নাজমা চমকে ওঠে। দুজন করিডোরে বেরিয়ে আসে। না, রীতার দেখা নেই।

রহিম নাজমার ঘরে ঢুকে রিসেপশনে ইন্টারকমে জানতে চায় বড় লিফট চলছে কিনা। উত্তর, চলছে না।

রহিম ছোট লিফট ধরে নিচে নেমে দেখে বড় লিফট বন্ধ। সে লিফট অন করতে বলে।

লিফট অন করে দেখা যায়। লিফট গ্রাউন্ডে নেই। উপরে উঠে গেছে।

এই সময় প্রচন্ড শব্দ করে বড় লিফটা বাড়ির ছাদ ভেঙে আকাশে উঠে যেতে থাকে। সেই ঝাঁকুনিতে গোটা ভবন থরথর কাঁপতে শুরু করে। যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। সবাই ভয় পেয়ে যায়। লিফটের ফোকর দিয়ে সবাই উঁকি দিয়ে দেখে পুরো রাতের আকাশ দেখা যাচ্ছে, তারার মেলা। পরিষ্কার আকাশ।

রহিম ভেবে পায় না ওপরে নাজমাকে গিয়ে কী বলবে। গলা তার শুকিয়ে কাঠ। বড় বেশি জলতেষ্টা লাগছে।

এদিকে রীতা মামার পিছু পিছু এসে বড় লিফট খুলতেই টুক করে উঠে পড়ে। আর লিফট যখন মহাকাশে ছুটে চলেছে। রীতার খুব মজা লাগে। লিফটের স্টিলের দেয়াল নেই। মনে হচ্ছে একটা প্লাস্টিকের বাক্স। গোটা শহর সে দেখতে পাচ্ছে। কী মজা! স্বাধীনতা দিবসের আলোকসজ্জা তাকে আরো আনন্দ দেয়। মৎস্য ভবনটা কী চমৎকার সেজেছে। ঠিক একটা ফানুসের মতো। রীতা উড়ে চলেছে ওপরে…  আরো ওপরে… হঠাৎ পিঠে দুটো টোকা অনুভব করে রীতা। পেছন ফিরে দেখে এক বছর আগে মরে যাওয়া পাশের বাড়ির ব্রিগেডিয়ার অ্যাঙ্কল।

আঙ্কল আপনি তো এক বছর আগে মরে গেছেন; কিন্তু আপনি তো ঠিক আগের মতোই আছেন!

দেখ রীতা মাসি,  যখন বেঁচেছিল ব্রিগেডিয়ার তাকে এভাবেই সম্বোধন করত – তোমাকে একটা কথা বলি, মানুষ মরে গেলে তার দেহটা নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু যারা তাকে দেখেছে তাদের কাছে তার চেহারা ঠিক থেকে যায়।

কিন্তু লোকে যে বলে, মানুষ মরে গেলে ভূত হয়ে যায়?

হ্যাঁ, কথাটা এক অর্থে সত্যি। যেমন ধরো গতকাল তুমি স্কুলে গিয়েছিলে, সেই গতকালকে তো আর আজকে পাবে না, তা ভূত হয়ে গেছে – মানে গত হয়ে গেছে, চলে গেছে – যাকে আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না।

সেই অর্থে মানুষ মরে গেলে ভূত হয়। কিন্তু ভূত সম্বন্ধে যেসব বর্ণনা দেওয়া হয় সেগুলো মানুষের বানানো। ভূত মানে কদাকার কিছু নয়। বরং বলতে পারো, জ্যান্ত মানুষ অনেক ভয়ংকর। রক্তপিপাসু। দেখো না সব দেশে যারা রাজনীতি করে তাদের  নেতা-নেত্রীরা কী চায়? আন্দোলনের নামে অনেক মানুষ মরুক, আর তারা যেন ক্ষমতায় যেতে পারে। তাদের কি তুমি রক্তপিপাসু বলবে না? রীতা মাসি, তুমি অনেক ছোট মানুষ, অনেক কথা এখন বুঝবে না, তবু তোমাকে বলি… দেখো না গার্মেন্টস কারখানায় কত লোক কাজ করে, হঠাৎ আগুন লাগল আর শয়ে শয়ে লোক মরে গেল, তাদের জন্যে কেন বেরিয়ে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রাখা হয় না, কেন মাঝে মাঝে মহড়া দেওয়া হয় না, আগুন লাগলে কী করতে হবে… এভাবে যারা কারখানা চালায় তারা কি মানুষের রক্ত-মাংস পুড়িয়ে খাচ্ছে না? তারা ভূত, না আমরা ভূত? আসলে জ্যান্ত মানুষ অনেক ভয়ংকর জীব। ভূতরা অতি নিরীহ। ভূত লোককে মারে না। মানুষ মিথ্যে মরে ভূতের ভয়ে। আমাকে কি তোমার ভয়ংকর মনে হচ্ছে?

না আঙ্কল আপনি খুব ভালো। আপনি মরে যাওয়ার পর আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। আপনার বডি যখন নিয়ে চলে গেল আমার খুব কান্না পেয়েছিল। আমি ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছিলাম।

রীতা মাসি, আমি জানি তুমি খুব ভালো মেয়ে। শীতকালে আমার পুবদিকের বারান্দায় যখন রোদের মধ্যে খেলতে, আমার খুব ভালো লাগত।

আচ্ছা আঙ্কল, লিফট যে প্রায়ই খুলত সেটা কি আপনি করতেন?

হ্যাঁ, আমার বড়ভাইয়ের এক মেয়ে ছিল, ঠিক তোমার বয়সী, আমাকে খুব ভালোবাসত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তাকে, তার মা-বাবা আর আমার মা-বাবাকেও পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করে মেরে ফেলে। তোমাকে দেখলেই আমার সেই ভাতিজির কথা মনে পড়ত, আর মনটা খারাপ হয়ে যেত।

তাদের কেন মারল?

আমি যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, তাই।

আপনার ভাতিজির নাম কী ছিল?

ওর নাম ছিল মিমি।

আঙ্কল আপনি কোন জায়গায় যুদ্ধ করেছিলেন?

আমি ছিলাম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে, ওখান থেকে আমরা সব বাঙালি সোলজার চলে যাই আগরতলায়। তারপর আমরা সীমান্ত পেরিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করতাম।

আচ্ছা, আঙ্কল, ওই যে দূরে সব তারা দেখা যাচ্ছে, আমরা কি ওখানে যেতে পারব?

আমি পারলেও তুমি পারবে না। ওখানে অনেক গরম। কোনো মানুষ ওখানে যেতে পারে না। চলো মাসি, তোমাকে তোমার মামার কাছে দিয়ে আসি। তারা নিশ্চয় তোমার জন্যে খুব চিন্তা করছে। এতক্ষণ সবকিছু ভুলে ছিল রীতা। ঘরের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মন খারাপ হয়ে যায়।

আঙ্কল, আমার ভয় করছে।

কেন, আমি  তো আছি। ভয় কিসের।

লিফট তখন নামতে শুরু করেছে। রীতা অবাক হয়ে দেখে আবার সব দালানকোঠা বড় হতে শুরু করেছে। এতক্ষণ কিছু দেখাই যাচ্ছিল না। শিল্পকলা একাডেমী সে ঠিক চিনতে পারে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কী চমৎকার আলোকমালায় সেজেছে।

রীতাদের ফ্ল্যাটের সামনে তখন বেশ ভিড়। সারা ভবনে খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, বড় লিফটটা ভূতে নিয়ে গেছে। আর সঙ্গে নিয়ে গেছে বাচ্চা মেয়ে রীতাকে। সবাই ভাবে, এতক্ষণ ভূত নিশ্চয় রীতার ঘাড় মটকে রক্ত পান করে ফেলেছে।

ভূতের সঙ্গে তো আর যুদ্ধ করা যায় না! কার কাছ থেকে সাহায্য নেবে কেউ ভেবে পায় না। রীতার মা এর মধ্যে দু-দুবার মূর্ছা গেছে, সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত। রহিম তার যুক্তিবাদী মন দিয়ে কিছুতেই মানতে পারছে না, এমন ঘটনা কেমন করে হয়।

এই সময় বাড়ির ওপর ঘটাং করে প্রবল একটা আওয়াজ হলো। গোটা বিল্ডিং থরথর করে কাঁপতে থাকে। একটু আগে যেমনটা হয়েছিল তার চেয়ে অবশ্য অনেকটা কম।

সবাই ভয়ে কাঁপতে থাকে। অনেকে দোয়া-দরুদ পড়তে শুরু করে। এগারোতলায় কেয়াদের বাড়িতে শঙ্খধ্বনি বেজে ওঠে। একসময় ভবনের কাঁপুনি থেমে গেল। সবাই অবাক। বড় লিফটের বাতি জ্বলছে। আর লিফট নামছে নিচে। উনিশ, আঠারো, সতেরো… এমনি করে নয়-এ এসে থেমে গেল। ঘণ্টাও বাজল টিং করে। খুলে গেল লিফটের দরজা। সবাই দেখে লিফটের ভেতর রীতা একা। হাতে তার খুব সুন্দর একটা বার্বি পুতুল।

রীতা লিফট থেকে নেমে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলল না। ধীরপায়ে সোজা এগিয়ে গেল পুবদিকে। মামা রহিম রীতার পিছু  নেয়। রীতা সোজা ব্রিগেডিয়ার সাহেবের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর দরজার দুই পাল্লার মাঝে মুখ লাগিয়ে বলে, আঙ্কল, ঘরে আছেন?

ভেতর থেকে চাপা স্বর ভেসে আসে, আছি, রীতা মাসি।

তাহলে আপনার ঘরে বাতি জ্বলছে না কেন?

আমি তো অন্ধকারে থাকি। আলোয় তুমি আমাকে দেখতে পাবে না।

গুড নাইট, আঙ্কল।

গুড নাইট, রীতা মাসি।