লেখালেখির চার ভাগের তিন ভাগ সময় শুধু অপেক্ষা করতে হয়

২০১৮ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছেন ৫৬ বছর বয়সী আইরিশ লেখক আনা বার্নস (জ ১৯৬২)। নিজের তৃতীয় উপন্যাস মিল্কম্যানের জন্য এ-পুরস্কার পেলেন তিনি। স্বদেশি জেমস জয়েস ও স্যামুয়েল বেকেটের উত্তরসূরি এ-লেখক সম্পর্কে বিচারক প্যানেলের চেয়ারপারসন কোয়ামে অ্যান্থনি অ্যাপিয়াহ বলেন, ‘এর আগে কখনো আমরা এ-ধরনের লেখা পড়িনি। আনা বার্নসের বিস্ময়কর লেখনীতে প্রথাগত ধ্যান-ধারণাকে স্বতন্ত্রভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।’

আনা বার্নসের জন্ম নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে ১৯৬২ সালে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় তিনি ইংল্যান্ডে বাস করেছেন। ১৯৮৭ সালে বেলফাস্ট থেকে লন্ডনের নটিংহিলে আসেন। এরপর পূর্ব সাসেক্সে থিতু হন। ২০০১ সালে প্রথম উপন্যাস নো বোনস প্রকাশিত হয়। উপন্যাসে তিনি বেলফাস্টের অতিসাধারণ মানুষের গল্প-জীবনসংগ্রাম উঠিয়ে আনেন। জেমস জয়েসের ডাবলিনার্সের সঙ্গে উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক তুলনা করেন। জেমস জয়েসের কিশোরের মতো আনা বার্নসের এই উপন্যাসে এক কিশোরীর বোধোদয় ঘটছে চারপাশের জগৎ থেকে। ভাষার বিবেচনায়ও জয়েসের মতো বেলফাস্টে বসবাসরত খুব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষা তুলে এনেছেন। বইটি ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড মিলে বছরের শ্রেষ্ঠ বইয়ের খেতাব অর্জন করে ‘উইনফ্রেড হটবাই মেমোরিয়াল প্রাইজ’ জেতার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাজ্যের সম্মানজনক পুরস্কার ‘অরেঞ্জ প্রাইজে’র জন্য মনোনয়ন পায় উপন্যাসটি। দ্বিতীয় উপন্যাস লিটল কনস্ট্রাকশনস প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। এটিও নারীজীবনের গল্প নিয়ে রচিত। খুন, ধর্ষণ, অজাচার, শিশু-যৌননির্যাতনের মতো বিষয় উঠে এসেছে, তবে বলার স্বরটা হাস্যরসাত্মক। লেখক বেকেটীয় ঢংয়ে উপহাস করছেন সমাজের বীভৎসতা নিয়ে। উপন্যাসে প্রচুর শব্দের খেলা আছে। যেমন একটি জায়গায় বলা হচ্ছে : ‘There are no differences between men and women. No differences. Except one. Men want to know what sort of gun it is. Women just want the gun.’

২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাসিকা মোস্টলি হিয়ারো। লেখালেখির প্রথম দিকে আনা বার্নস আর্থিকভাবে চরম দুর্দশার মধ্যে ছিলেন। ম্যান বুকার পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি নিজের ঋণশোধ করবেন বলেও জানিয়েছেন।

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক-প্রটেস্ট্যান্ট সহিংসতাকে উপজীব্য করে লেখা মিল্কম্যান (২০১৮) উপন্যাসটি। উপন্যাসের কথক বেলফাস্টের এক কিশোরী। যদিও উপন্যাসে শহরটির কোনো নাম দেওয়া হয়নি; কিন্তু উপন্যাসটি পাঠ করলে বোঝা যায় শহরটি লেখকের জন্মশহর বেলফাস্ট। উপন্যাসে কথকের সঙ্গে এক মিল্কম্যানের সাক্ষাৎ ঘটে। বিবাহিত মাঝবয়স্ক মিল্কম্যান প্যারামিলিটারি সংস্থার সদস্য। এই লোকটির কারণে কথক কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। উপন্যাসে একের পর এক বোমা হামলায় দূষিত হয়ে পড়েছে প্রকৃতি, সৌন্দর্য হারিয়েছে ভূদৃশ্য। পড়তে পড়তে পাঠকের মনে স্টালিনের রাশিয়া, আফগানিস্তানের তালেবান, মধ্যযুগের উইচহান্ট থেকে অতিসাম্প্রতিক #মিটু আন্দোলনের কথা মনে পড়ে যাবে। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আমার কানাডীয় ইকো-ফেমিনিস্ট কবি-ঔপন্যাসিক মার্গারেট অ্যাটউডের দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেল উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেছে। এটি বিংশ শতকের উলেস্নখযোগ্য নারীবাদী ডিসটোপিয়ান উপন্যাস। ডিসটোপিয়ান হলো ইউটোপিয়ান বা আদর্শ সমাজব্যবস্থার ঠিক উলটো অবস্থা। উপন্যাসটির মূল বিষয়বস্ত্ত হলো হতাশা, নৈরাজ্য, শোষণ, অভাব-অনটন ও কট্টর ধর্মীয় অনুশাসন। সেই অর্থে উপন্যাসটিকে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বা এলিগরিক্যাল উপন্যাসও বলা চলে। উপন্যাসে কল্পরাজ্য রিপাবলিক অব গিলেডে যুদ্ধ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। দূষণে সেখানকার অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ সমত্মান জন্মদানে অসমর্থ হয়ে পড়ে। দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেল উপন্যাসে একটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দেখানো হয়েছে, যেখানে নির্মমতার চূড়ান্ত বলি হয় নারী ও শিশুরা। নারীদের এখানে কোনো নাম দেওয়া হয়নি। গণনামে ডাকা হয়। আনার মিল্কম্যান উপন্যাসেও দেখা যাচ্ছে কথকের কোনো নাম নেই। তাকে ‘মিডল সিস্টার’ নামে ডাকা হচ্ছে। যে-শহরে ঘটনাটি ঘটছে সে-শহরেরও কোনো নাম উলেস্নখ করা হয়নি। মিল্কম্যানের নামটিও ছদ্মনাম। কেননা সে আসলে দুধ-বিক্রেতা বা পরিবেশক নয়। আনা বার্নস কট্টর শাসনব্যবস্থার ভেতর দিয়ে স্যাটায়ার করেছেন শ্রেণিভিত্তিক শাসনব্যবস্থার। উপন্যাসটি একদিকে যেমন নারীবাদী ও মানবতাবাদী, অন্যদিকে তেমনি পরিবেশবাদীও।

উলেস্নখ্য, ১৯৬৯ সাল থেকে ব্রিটিশ, আইরিশ ও কমনওয়েলভুক্ত দেশের লেখকদের এ-পুরস্কার দেওয়া হতে থাকে। তবে ২০১৪ সালে পুরস্কারটি বিশ্বের ইংরেজিভাষী সব লেখকের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উত্তর আইরিশ লেখক হিসেবে আনা বার্নস প্রথম এই বিরল সম্মানে ভূষিত হলেন।

এই লেখায় আনা বার্নসের কয়েকটি সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাবানুবাদ করা হলো। আলাপের বিষয়ভিত্তিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রশ্ন এদিক-সেদিক করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলোর মূল উৎসগুলো শেষে সংযুক্তি হিসেবে দেওয়া হলো।

 

প্রশ্ন : গত এক বছরে প্রকাশিত বইগুলোর ভেতর আপনার ভালো লেগেছে কোনটি?

আনা বার্নস : প্রকাশিত হওয়া মাত্র কোনো বই আমার পড়া হয়ে ওঠে না। কারণ আমার হাতে আগের বছরের বইগুলোই থেকে যায়। এরপর হয়তো সেগুলো পড়ি, ততদিনে নতুন বই চলে আসে। তবে ইয়োইন ম্যাকনেমির নতুন উপন্যাস দ্য ভোগের প্রম্নফ আমার দেখা হয়েছে। আমি ওর ভক্তপাঠক। বিশেষ করে এই উপন্যাসটি খুব আকর্ষণীয়, প্রেক্ষাপট নিজেই যেন চরিত্র হয়ে উঠেছে। এটি চিরবর্ধমান। মনে হয় যেন কোনো সত্য উন্মোচন করতে চায়।

প্রশ্ন : কোন বিষয় নিয়ে লেখাটা আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়েছে?

আনা বার্নস : কোনো বিষয় কখনো অতিরিক্ত বেদনাদায়ক মনে হলে তখন সেই বিষয় নিয়ে লেখাটা প্রায় অসম্ভব বলে আমার মনে হয়।

প্রশ্ন : কোন লেখক (জীবিত বা মৃত) সবচেয়ে অমূল্যায়িত হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?

আনা বার্নস : ফিলিপ রথ।

প্রশ্ন : আর কোন লেখক অতিমূল্যায়িত হয়েছেন?

আনা বার্নস : আমি বলতে চাই না।

প্রশ্ন : আপনি আপনার জীবনে সবচেয়ে ভালো উপদেশ কী পেয়েছেন?

আনা বার্নস : জীবনে – দয়ালু হও। লেখালেখিতে – তখন আমি লিখতে শুরু

করেছি, সৃজনশীল লেখালেখিবিষয়ক কোর্সের এক ইন্সট্রাক্টর তাঁর শ্রোতাদের বললেন যে, এমন লেখক আছেন যাঁরা গল্পের সমসত্মটা ভেবে নিয়ে তারপর লিখতে বসেন; আবার এমন লেখক আছেন যাঁরা একটি বাক্যের পরের বাক্যে কী আসবে আগে থেকে জানেন না। যদি তুমি প্রথম দলের হও, তবে প্লটের সঙ্গে মানিয়ে গল্প পরিবর্তন করতে শেখো। আর যদি দ্বিতীয় দলে হও, (যে-দলে আমি নিজেও আছি) তবে প্রায়ই দেখো তুমি কী লিখলে, তোমার লেখা কী বলছে বা বলতে চাচ্ছে, কোথায় তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওর বলার পর আমার কাছে এটি যথার্থ বলে মনে হলো।

প্রশ্ন : আপনার কাছে লেখালেখি কতটা রাজনৈতিক বিষয় বলে মনে হয়?

আনা বার্নস : সত্যি কথা বলব? আমি এ-ধরনের প্রশ্নের কী উত্তর দিতে হয় জানি না। আমার মাথা সেভাবে কাজ করে না। আমি ‘রাজনৈতিক’ শব্দটি অভিধানে দেখে নিয়ে বলতে পারি : ১. দেশের সরকার বা জনগণ সম্পৃক্ত বিষয় (ঠিক আছে, এভাবে হলে বোঝা যায়); ২. নৈতিকতার চেয়ে একটা সাংগঠনিক শক্তির কিংবা আগ্রহের জায়গা থেকে কাজ করা (ঠিক বললাম কি?)। এটি হলে আমি আমার লেখার সঙ্গে তাকে কীভাবে সংযুক্ত করি, আমি পারবও না। অন্ততপক্ষে ওই ভাষায় নয়। আমি ভীষণভাবে লেখালেখি নিয়ে চিমত্মা করি। এই কাজটি ঠিকমতো করতে চাই, যতটা নিখুঁতভাবে পারি, অর্থাৎ আমার কাজ হলো আমার নির্মিত জগতের প্রতি
যতটা সম্ভব সৎ থাকা। যদি আপনি ‘রাজনৈতিক’ বলতে লেখালেখিকে সাংগঠনিক কাঠামো এবং শক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বিবেচনা করেন, তাহলে সে-শক্তিটা কীভাবে অর্জিত এবং অনুশীলিত হবে আর কীভাবে তা জনগণের ভেতর প্রভাব ফেলবে, সে-বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হলে আমি নিশ্চয়ই রাজনৈতিক লেখক। আমি মনে করি, আমি যা লিখি সেটা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিক এবং সামাজিক বোধের জায়গা থেকে শক্তি কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলে।

প্রশ্ন : আপনার লেখালেখির বিশেষ কোনো কৌশল আছে কি?

আনা বার্নস : না। একদম নেই। আমি খুব স্বাভাবিক, সাধারণ।

প্রশ্ন : আপনার প্রথম লেখার কথা মনে পড়ে?

আনা বার্নস : অল্পবয়সে আমি এনিড ব­vইটন, আগাথা ক্রিস্টি, রুশ রূপকথার গল্প, কিছু গোগলের লেখা এসব নিয়ে থেকেছি। পড়তাম, খেলতে যেতাম বাইরে, খেলা শেষ করে বাসায় ফিরে ফের পড়তে বসতাম। এটাই ছিল রোজকার রুটিন। একদিন মনে হলো, থামি, নিজেও একটি বই লিখি। এরপর আমি লিখতে শুরু করি। তখন যে-বয়সই হোক আমি বললাম যে, আমি কাল্পনিক স্কুলের প্রেক্ষাপট থেকে একধরনের স্কুল বই লিখেছি। মধ্যরাতে খাবার টেবিলে একটি খুনের ঘটনা ঘটবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার আয়া বয়স্ক ও খাটো এক মহিলা হবে গোয়েন্দা। পয়রট এবং হাস্টিংসের মতো আরো দুটো চরিত্র বৃদ্ধার সঙ্গে চা খেতে যাবে। তাদের ভেতর অনেক কথা হবে। রুশ দৃষ্টিভঙ্গি এখানে কতটা খাটবে সে-ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম না; কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, গল্পের কোথাও গিয়ে এটা আপনাআপনি যৌক্তিক হয়ে উঠবে। আমি দোতলায় লাল কালি দিয়ে টানা লিখে গেছি। এরপর মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সব ছেড়েছুড়ে খেলায় ফিরে গেছি। এরপর আর সেটা শেষ করা হয়নি। পরে ৩৬ বছর বয়সে এসে আমার প্রথম বইটি বের হলো।

প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে একটি বইয়ের সফলতা আমরা কীভাবে নির্ণয় করতে পারি?

আনা বার্নস : লেখক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়, লেখাটি হবে অর্থময়তায় ভরপুর। একটি বক্তব্য থাকবে। আমি সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে যাবো গল্পে। ভেতরে উত্তেজনা কাজ করবে।

প্রশ্ন : ছুটির দিনগুলোতে আপনি কী ধরনের বই পড়েন?

আনা বার্নস : গত ছুটির দিনে আমি ফিলিপ রথের দ্য প্লট অ্যাগেইনস্ট আমেরিকা, ন্যান্সি মিটফোর্ডের মাদাম দি পম্পাদর, আলি স্মিথের গার্ল মিটস বয় এবং উইলিয়াম ফকনারের লাইট ইন আগস্ট পড়েছি। পরের ছুটির দিনে সুলায়মান আদোনিয়ার কোনো বই পড়ার ইচ্ছা আছে। আমি ওঁর বলার স্বরটা পছন্দ করি। জেমস জয়েসের মেয়েকে নিয়ে লেখা এলেক্স ফেবির নতুন বই লুসিয়া পড়ার কথাও ভাবছি।

প্রশ্ন : বুকারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাই?

আনা বার্নস : আমি মনে করি মানুষ এখনো বিস্মিত। আমি নিজেই এই আচ্ছন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। বুকার জেতায় আমি অভ্যসত্ম নই। আমার জন্য এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে এটা নিশ্চয়ই আনন্দের বিষয়। আমার জন্য বড় ধরনের উপহারই বটে।

প্রশ্ন : মিল্কম্যান নিয়ে কিছু বলুন?

আনা বার্নস : এটা এমন এক সমাজ নিয়ে যে-সমাজ দীর্ঘসময় ধরে চলা সংঘাতের শিকার। এক কিশোরীর বয়ানে গল্পটি বলা। মেয়েটি মধ্যবয়সী এক সেনাসদস্যের দ্বারা যৌননির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি মিল্কম্যান লিখেছি যাতে যে-কোনো অবরুদ্ধ সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপট থেকে পাঠ করা যায়। ব্রেক্সিট, #মিটু মুভমেন্ট এবং ট্রাম্পেরও আগে আমার মাথায় সীমারেখা এবং অবরুদ্ধ পরিস্থিতির ধারণাটা আসে। এবং এই ধরনের যৌনপ্রতারণার বিষয়টি উন্মোচন করার প্রয়োজন ছিল।

প্রশ্ন : পাঠকের প্রত্যাশা নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আনা বার্নস : লোকজন চান আমি যেন ব্রেক্সিট এবং #মিটুর মুখপাত্র হই। আমি কেবল একজন লেখক, যে তার ঘরের ভেতর বসে লিখতে পছন্দ করে। আমি মুখপাত্র হতে পারি না।

প্রশ্ন : মিল্কম্যান লেখার ভাবনাটা মাথায় কীভাবে এলো?

আনা বার্নস : আমি কিশোরী বয়সে হেঁটে হেঁটে কিছু না কিছু পড়তাম। বেলফাস্টের যেখানেই যেতাম অচেনা মানুষজন আমাকে দেখে বলত, ‘তুমিই সেই পড়ুয়া মেয়েটি।’ তখনই আমার মনে হয়েছিল, আমাকে দেখে মানুষজনের যে-অভিব্যক্তি সেটি নিয়েই একদিন উপন্যাস লিখব। এর-তার বদলে এই মেয়েটি (মিল্কম্যানের কথক) আমার মাথায় চলে এলো এবং আমাকে মিল্কম্যানের গল্পটি শোনালো।

প্রশ্ন : সম্ভবত বাসত্মবের ঘটনা পরিস্রুত হয়ে সাহিত্যে ব্যবহার উপযোগী হতে সময় লাগে?

আনা বার্নস : প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ এবং এলোমেলো। আমি যখন লিখি, লেখালেখির চার ভাগের তিন ভাগ সময় শুধু অপেক্ষা করতে হয়। বসে থাকতে হয়। আপাতভাবে মনে হবে আমি কিছুই করছি না। কিন্তু আমাকে এই অপেক্ষাকালীন সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এরপর শব্দগুলো দ্রুত আসতে শুরু করে। আমাকে জোরাজুরি করতে হয় না। কিংবা নিয়ন্ত্রণ নিতে হয় না। কারণ সেটা করে আমি কখনো লিখতে পারিনি।

প্রশ্ন : আপনার উপন্যাসের কথক তার প্রতি মিল্কম্যানের যৌনপীড়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ঘটনার ২০ বছর পর। বিষয়টি #মিটু আন্দোলনের সঙ্গে ভীষণভাবে যায়। আপনি কি ব্রেট কাভানাকে অনুসরণ করেছেন?

আনা বার্নস : কিছুটা করেছি। আমি মিল্কম্যান শেষ করি ২০১৪ সালে, #মিটু, ব্রেক্সিট এবং ট্রাম্পের আগে। এখন দেখছি উপন্যাসটি প্রকাশিত হলো খুব প্রাসঙ্গিক সময়ে। সাহিত্যে এই উন্মোচনের বিষয়টি খুব চমকপ্রদ, এটা করতে ভয় পেতে হয় না। কিন্তু যখন আমি আমার উপন্যাস থেকে বের হয় আসি, ভয়ে শিউরে উঠি। কাভানা এবং ওয়েনস্টেইনের কথা শোনা খুব কষ্টকর, কারণ ওটা বাসত্মব।

প্রশ্ন : বুকারের বিচারক প্যানেলের চেয়ারপারসন কোয়ামে অ্যান্থনি অ্যাপিয়াহ বলেছেন যে, উপন্যাসটি বিস্ময়কর গদ্য দিয়ে প্রথাগত চিমত্মা এবং কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আপনার কী মনে হয়?

আনা বার্নস : কিছু নাম উলেস্ন­খ করা হয়নি আর বড় বড় প্যারা এড়িয়ে চলা হয়েছে, এটা ঠিক। এছাড়া আমার কাছে উপন্যাসটি ততটা নিরীক্ষাধর্মী মনে হয়নি। কিছু অবান্তর বিষয় আছে। ভাষা একই সঙ্গে গোপন করে আবার প্রকাশ করে। সেটা তো হয়েছে চরিত্র এভাবে ভাবে বলে। একটা স্বতন্ত্র স্বর আমার কাছে এসেছে, কোথা থেকে এসেছে আমি বলতে পারব না। আমি তাকে জানার চেষ্টাও করিনি। আমি শুধু লিখে গেছি।

প্রশ্ন : ৫০ হাজার ডলার একজন লেখকের জীবন পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো সম্মানী, বিশেষ করে যিনি জীবনযাপনের জন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর থেকেছেন।

আনা বার্নস : আমি আমার আগের জীবনে ফিরে যাবো না। আমি ঋণ পরিশোধ করব। সচ্ছল হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : আপনাকে বর্ণনা করা হয় একই সঙ্গে আইরিশ লেখক, উত্তর-আইরিশ লেখক ও ব্রিটিশ লেখক হিসেবে। আপনার নিজের বক্তব্য কী?

আনা বার্নস : উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য এটি একটি জটিল হিসাব। আমি যখনই কোনো আবেদন ফরম পূরণ করি, আমার মনে হয়, আজ আবার আমি কী লিখব? আমি নিজেকে আইরিশ বলে মনে করি। সবসময় মনে করে এসেছি। যুক্তরাজ্যে আছি তিন দশক হলো। সবাই আমাকে ধরে নেয় আইরিশ বলে; কিন্তু বুকার পুরস্কারপ্রাপ্তির দিন একজন সাংবাদিক আমাকে ব্রিটিশ বলে ডেকে উঠলেন। আমার কিছু মনে হয়নি। আমার কাছে দুটি দেশেরই পাসপোর্ট আছে।

 

উৎস :

https://www.the-tls.co.uk/articles/public/twenty-questions-anna-burns/

https://inews.co.uk/culture/books/anna-burns-milkman-booker-prize-2018-interview/

https://www.newstatesman.com/culture/books/2018/10/i-ve-been-homeless-myself-you-start-thinking-i-m-not-entitled-novelist-anna