শহীদ কাদরীর কবিতা

মাহবুব সাদিক

বিশ শতকের শেষার্ধব্যাপী আধুনিক বাংলা কবিতাক্ষেত্রে যারা বিপুল দর্পে দাপিয়ে ফিরেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শহীদ কাদরী। বিরলপ্রজ হওয়া সত্ত্বেও তিনি বরাবরই মননশীল পাঠকের হৃদয় কেড়েছেন। জীবনের প্রথমার্ধ স্বদেশে কাটলেও দ্বিতীয়ার্ধ তাঁর কেটে গেল প্রিয় স্বদেশ থেকে বহুদূরে, স্বেচ্ছানির্বাসনে। আবেগোচ্ছল কবিতার রূপরীতি ও উচ্চারণভঙ্গি বদলে ফেলে তিনি কবিতায় নিয়ে এসেছেন এক মননশীল ঋজু প্রকাশকলা। উপমা-রূপক-সমাসোক্তি ও চিত্রকল্পে সমৃদ্ধ তাঁর কবিতায় অনায়াস দক্ষতায় রূপ পেয়েছে আধুনিক বিশ্বজীবনবোধ ও সুগভীর স্বাদেশিকতা।

শহীদ কাদরী আজন্ম নাগরিক। জন্মেছেন কলকাতার নাগরিক প্রতিবেশে শৃঙ্খলিত বিদেশির পতাকার নিচে এবং জন্মেই শুঁকেছেন বারুদের কটু গন্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এবং যুদ্ধোত্তর নাগরিক প্রতিবেশের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন এ-কবি। এর মধ্যেই আবার ঘটেছে দেশবদল। কলকাতা থেকে চলে এসেছেন ঢাকার নাগরিক পরিবেশে। শহীদ কাদরীর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ উত্তরাধিকারের বেশ কিছু কবিতায় রয়েছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর জীবনের চমৎকার শিল্পিত রূপছবি। এ-বইয়ের নামকবিতা শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সমকালে নিজের জন্মপ্রসঙ্গ নিয়ে। তাঁর জন্মই হয়েছে যেন এক দীপহীন ল্যাম্পপোস্টের নিচে, সন্ত্রস্ত শহরে/ যেখানে নিমজ্জিত সবকিছু, রুদ্ধচক্ষু সেই বস্ন্যাক-আউটে আঁধারে। নির্বাচিত কিছু শব্দ ব্যবহার করে শহীদ কাদরী বিশ্বযুদ্ধের কালকে চিহ্নিত করেন। বস্ন্যাক-আউটের মতো শব্দগুলো হচ্ছে : কাঁটাতার, তাঁবু, কুচকাওয়াজ, সারিবদ্ধ সৈনিক, কামান ও  বিউগল। এসব শব্দই আমাদের বলে দেয় সমস্ত নগর বিদেশি সেনা-কবলিত এবং নগরের অধিবাসীরা মূলত বিদেশি সেনা-পরিবৃত, শৃঙ্খলিত :

শৃঙ্খলিত, বিদেশির পতাকার নিচে

আমরা শীতে জড়োসড়

নিঃশব্দে দেখেছি প্রেমিকের দীপ্ত মুখ

থেকে জ্যোতি ঝরে গেছে

মস্নানমুখো ফিরেছে বালক সমকামী

নাবিকের

মরিয়া উলস্নাসধ্বনি আর অশস্নীল গানের কলি

 

নীল পালকের মতো কানে গুঁজে, একা সাঁঝবেলা।

যিশুখৃষ্টের মতন মুখে সৌম্য বুড়ো সয়ে গেছে

ল্যান্টর্নের মস্নান রাত্রে সৈনিকের সিগারেট, রুটি, উপহার

এবং সঙ্গম-পিষ্ট সপ্তদশী অসতর্ক চিৎকার কন্যার।

 

একই কবিতায় রয়েছে তাঁর শৈশবে সংঘটিত জাতিগত দাঙ্গায় মানবহত্যার চিত্র। হঠাৎ হত্যায় – রক্তপাতে আর্তনাদে কাদরীর কৈশোরকাল চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। জাতিগত দাঙ্গার চিত্র আঁকতে গিয়ে লিখেছেন : ‘… আমার প্রথম পাঠ কি করে যে ভুলি,/ গোলাপ-বাগান জুড়ে রক্ত-মাংসে পচেছিলো একটি রাঙা বৌ।’ এভাবেই পৃথিবীতে নিঃশব্দে ঘনিয়ে আসে কালবেলা। ব্যক্তির জীবনে নেমে আসে বিপর্যয় – ধূলিকণার মতো তুচ্ছ করে তোলে তার জীবন। শৈশবে অর্জিত শহীদ কাদরীর সব স্মৃতির চিত্র ও চিত্রকল্প রয়েছে ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ কবিতায়। এখানে শিল্পিত পরিচর্যা পেয়েছে একটি চমৎকার চিত্রকল্প : ‘অগ্রজের তীক্ষন ভৎর্সনার বজ্র যেন/ জানালায় যমদূতের মতন ত্রাস নেচে নেচে/ কেবলি দেখিয়ে যায়, গহবর, আর মস্নান/ পা-ুর রোগের রাত স্বপ্নহীন শীতার্ত শয্যায়।’ কিশোরের জন্যে ভীতি-জাগানো এই চিত্রকল্পের বিপরীত দৃশ্যও চিত্রিত করেছেন শহীদ কাদরী। সেখানে রাতের বেলা বাউলের একতারার মতো বেজে ওঠে চাঁদ, অমাবস্যা-রাত্রির ময়দানজুড়ে গোলাপঝাড়ের মতো পুঞ্জ-পুঞ্জ জোনাকি জ্বলে আর নেভে। এসব দেখতে-দেখতেই কবি তাঁর মায়ের যুগল পিদিমের মতো চোখের আশ্বাসের আলোয় তরুণ ঘোড়ার পিঠে চেপে শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে এসেছেন দ্রম্নত।

তিরিশোত্তর কবিদের কারো-কারো রচনায় লক্ষ করা যাবে,   প্রকৃতিবিরোধ। এদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু অন্যতম। শহীদ কাদরীও প্রকৃতির প্রতি বেশ বিমুখ। প্রকৃতি কবিতার অন্যতম উপাদান। কবির চারপাশে জায়মান মানবগোষ্ঠীর মতো তাকে ঘিরে আছে গ্রামীণ বা নাগরিক নিসর্গ। প্রকৃতির প্রবল প্রতিবেশিতার তাপ এমনকি স্বল্প সংবেদনশীলরাও উপলব্ধি করেন। কবির সংবেদনশীলতা তো সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি। প্রকৃতির প্রতি এই সংবেদনশীলতা অবশ্য বুদ্ধদেব ও শহীদ কাদরী – দুজনের মধ্যেই আছে। চারপাশে পরিব্যাপ্ত পৃথিবী ও পারিপার্শ্বিক প্রকৃতি থেকে কোনো মানুষই বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন না – তাঁরাও বিচ্ছিন্ন নন। তবে দুজনেই অন্ধ-আদিম পরিব্যাপ্ত বিশৃঙ্খল প্রাকৃতিক জীবনের বিরুদ্ধে নিজস্ব চৈতন্যের উদ্বোধন ঘটান এবং প্রাকৃতিক বিশৃঙ্খলাকে অতিক্রম করে দুজনই সংহত ও সংযত কাব্যকলা সৃষ্টি করেন। বুদ্ধদেব লিখেছেন : ‘প্রামত্মরে কিছুই নেই;/ জানালায় পর্দা টেনে দে।’ আর শহীদ কাদরী লেখেন :

কেক-পেস্ট্রির মতোন সাজানো থরে থরে নয়নাভিরাম

পুষ্পগুচ্ছের কাছেও গিয়েছি ত’, সস্নান রেসেত্মারাঁর

বিবর্ণ কেবিনে আশ্রয়ের যে আশ্বাস এখনও

টেবিল ও চেয়ারের হিম-শূন্যতায় লেখা আছে

তেমন সাইনবোর্ড কোন জুঁই চামেলী অথবা

চন্দ্রমল্লিকার ঝোপে-ঝাড়ে আমি ত’ খুঁজেও পেলাম না।

…             …           …

ইচ্ছে ছিলো কেবল তোমার নুন খেয়ে আজীবন

গুণ গেয়ে যাবো

অথচ কদ্দিন পরে বারান্দা পেরিয়ে

দাঁড়িয়েছি ঝোপে

ধারালো বটির মতো কোপ মেরে

কেন যে, কেন যে

দ্বিখ–ত করছে না

এখনও সুতীক্ষন বাঁকা

ঐ বঙ্গদেশীয় চাঁদ!

(‘নিসর্গের নুন’, উত্তরাধিকার)বুদ্ধদেব বসুর মতোই শহীদ কাদরীও নিসর্গের নুন খান তাকে মানবিক সম্পর্কে জড়িয়ে নিয়েই। তিনি প্রকৃতির কোনো আলাদা দৃশ্যকল্প রচনা করেন না, যদি না তাঁর সঙ্গে কোনো মানবিক ভাব বা ভাবনার অনুষঙ্গ তাঁকে উদ্বেল করে তোলে। প্রকৃতির ব্যবহার এভাবে হওয়াই যুক্তিসংগত। উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। কবি যখন লেখেন : ‘বাতাস আমাকে লম্বা হাত বাড়িয়ে/ চুলের ঝুঁটি ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে আজ সারাদিন,/ কিংবা, লাল পাগড়ি-পরা পুলিশের মতো কৃষ্ণচূড়া/ হেঁকে বলল :/ তুমি বন্দী!’ তখন প্রকৃতির উপাদানগুলো শুধু যে চমৎকার সমাসোক্তি অলংকার হয়েছে বলেই কবিতায় মূল্যবান হয়ে উঠেছে তা নয়, প্রকৃতির উপাদানগুলো কবি নামক মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বলেই সমাসোক্তিগুলোও চমৎকারিত্ব অর্জন করেছে। প্রকৃতির অন্য একটি বিষয়ও কাদরী নিপুণচোখেই লক্ষ করেন। জীবন ও প্রকৃতিতে সব রক্তপাত ও হত্যাকা- নিঃশব্দেই সংঘটিত হয়ে যায় – এর জন্যে কেউ কোথাও কাঁদতে বসে না। চিকন বঁটিতে একটি মাছ কাটা হয়ে যায় – রাতের উঠোনে হেলায়-ফেলায় জোছনার মতো পড়ে থাকে তার চিকন আঁশ, ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে হিরের কৌটোর মতো টলটলে শিশির এবং পাখির প্রস্রাব জমে থাকে। এজন্য মানবসমাজে কোনো বেদনা বা কান্না তৈরি হয় না। প্রকৃতিতে নিঃশব্দেই সংঘটিত হয় নানা নিষ্ঠুর হত্যাকা-। সেগুলো আমাদের চেতনার অগোচরেই ঘটে – ঘটে যায়।

শহীদ কাদরীর কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রেম। তাঁর প্রেমের কবিতার মধ্যেও নানা উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে – তবে সমস্ত উপাদান মিলেমিশেই নির্মিত হয়ে ওঠে কবিতার সামগ্রিকতা। কাদরীর কাছে প্রেম প্রায় সর্বত্রই ক্ষণিকের মিলন মাধুরী এবং তা তীব্রভাবে শরীরী। এ-ক্ষেত্রে বোদলেয়রীয় ভাবনাও তাঁকে আকর্ষণ করেছে। তবে প্রেমের সঙ্গে যুক্ত বায়বীয় বোধের আধার হৃদয়কেও তিনি অস্বীকার করেননি। কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই কাব্যের ‘প্রেম’ শীর্ষক কবিতায় কাদরীর প্রেম-সম্পর্কিত ধারণার পরিচয় বিধৃত। কবিতার শীর্ষে কবি অডেনের একটি পঙ্ক্তির উদ্ধৃতি দিয়েছেন : we must love one another or die. কাদরী লিখেছেন, প্রেম কোনো ছিপছিপে নৌকো নয়, সাগরে ভাসা জাহাজের পাটাতন নয়, দারুচিনি দ্বীপ নয় অর্থাৎ কোনো আশ্রয় নয় প্রেম। অসুস্থতায় সে কোনো শুশ্রূষাও নয়। মাথার ভেতরে গূঢ় বেদনার চোরাস্রোত যখন বইতে থাকে – শরীরী প্রেম তখন (বড়ো তাৎপর্যহীন হয়ে ওঠে আমাদের ঊরুর উত্থান, উদ্যত শিশ্নের লাফ, স্তনের গঠন) অর্থহীন হয়ে পড়ে। কাদরীর কাছে প্রেম তাই হৃদয়ের সঙ্গেই গভীরভাবে যুক্ত :

…সর্বদা, সর্বত্র

পরাস্ত সে; মৃত প্রেমিকের ঠাণ্ডা হাত ধ’রে

সে বড়ো বিহবল, হাঁটু ভেঙে-পড়া কাতর মানুষ।

…           …           …

মাঝে মাঝে মনে হয় শীতরাতে শুধু কম্বলের জন্যে,

দুটো চাপাতি এবং সামান্য শব্জীর জন্যে

কিংবা একটু শাস্তির আকাঙক্ষায়, কেবল স্বসিত্মর জন্যে

বেদনার অবসান চেয়ে তোমাকে হয়তো কিছু বর্বরের কাছে

অনায়াসে বিক্রি ক’রে দিতে পারি – অবশ্যই পারি।

কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে, এই স্বীকারোক্তির পর মনে হলো :

হয়তো বা আমি তা পারি না – হয়তো আমি তা পারবো না।

 

শহীদ কাদরীর কাছে কখনো মনে হয়েছে ঝড়ো রাতে দুর্যোগের মুখোমুখি বিপর্যস্ত প্রেমিককে তার প্রেমিকা দরোজা খুলে আশ্রয় দেবে না; কিন্তু তিনি নিজে তাঁর প্রেমিকাকে বর্বরের কাছে বিক্রি করে দিতে পারবেন না। হৃদয়হীনতার সঙ্গে তাই প্রেমের সম্পর্ক নেই। কাদরীর শরীরী প্রেমও হৃদয়ের সঙ্গেই সম্পর্কিত। তা সত্ত্বেও তীব্রভাবে নগ্ন প্রেমই কবির কাম্য। আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও কাব্যের একটি কবিতায় (‘শূন্যতা’) হতাশাদীর্ণ কালো কৃশ রাতের প্রতিপক্ষে কবি আহবান করেন প্রেমকেই। প্রেম সম্পর্কে প্রজ্ঞা কবিতায় লিখেছেন :

শুনুন সাহেব! মার্কস অথবা হেগেল নয়ৎ

মেধা বা মনীষা নয়

সুপ্রতিষ্ঠিত এবং আনন্দঘন

জীবনের মূল

স্বনির্বাচিত মহিলার

স্তন, ঊরু, যোনি এবং উদ্দাম ঘন কালো চুল।

 

শহীদ কাদরী তীব্রভাবে অসিত্মত্বচেতন। তাঁর এই অসিত্মত্বচেতনা ছড়িয়ে রয়েছে নানা কবিতায়। আমি শুধু এ-বিষয়ের একটি কবিতা সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই। কবিতার নাম ‘একটা মরা শালিক’। অসিত্মত্ববিষয়ে এটি সেরা কবিতার একটি। জীবনের সব পরাজয়, জৈবনিক ক্ষতি, ক্ষমতাহীনতা, ব্যর্থতা এবং স্বজনবিয়োগ সত্ত্বেও মানুষ চায় তার নিজের অসিত্মত্মত্ব টিকিয়ে রাখতে – চায় বেঁচে থাকতে। প্রিয় মানুষকে কবরে শুইয়ে এসে কবরখানার বাইরে পানের দোকানে দাঁড়িয়ে মানুষ আরো একটু জর্দা চায় তার রসনাকে পরিতৃপ্ত করতে। সে চায় রাজাধিরাজের মতো স্থবির, নিঃস্পন্দ স্বায়ত্তশাসিত হৃদয় নিয়ে অসিত্মত্ববান হতে। সব শোক, প্রেম, হতাশার পরপারে দাঁড়িয়ে কবিও পথের পাশের পানের দোকানির দিকে হাত বাড়িয়ে বলেছেন : ‘আর একটু জর্দা দাও’। কিন্তু এটাই এ-কবিতার শেষ কথা নয়, অসিত্মত্বকামী এই কবি একই সঙ্গে মানবিকতারও পরিপোষক। একটা মরা শালিক সারাদিন তাঁর সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছে – কবি একেবারেই ভুলতে পারছেন না তাকে। উড়ে বেড়াবার কথা যে-পাখির সে যদি উঠোনে হলুদ কঠিন ঠ্যাং নিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে থাকে তবে কবি বেদনার্ত হন। অসিত্মত্বকামী এই কবিসত্তা একইসঙ্গে মানবতাবাদী। শহীদ কাদরীর অসিত্মত্বচেতনা বেশ প্রখর এবং নানা কবিতায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর অসিত্মত্ববোধ। আর সর্বত্রই তা শিল্পসম্মতভাবে রূপায়িত। কবিতায় পার্থিব জীবন ও জগৎ নিয়ে শহীদ কাদরী নানাভাবে তাঁর ভাবনা প্রকাশ করেছেন। এ-কালের হননমত্ত পৃথিবী বিপর্যস্ত করেছে তাঁর চেতনাকে। এ-কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মানুষই তার প্রিয় আবাসভূমিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমত্মর্জাতিক বিশ্বের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি ও সমরপ্রিয় নেতৃবৃন্দ ধ্বংস করে দিচ্ছে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ। ‘এক চমৎকার রাত্রে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন : ‘আর সেই হাওয়া, – ধরা যাক – অনেক গোলাপ বাগান এবং/ সজল পুকুর পার হয়ে এসে/ এই গ্রহের উপর থেকে আশীর্বাদের মতন প্রবাহিত হতে চেয়ে/ আমাদের মুখের আঘাতে/ থমকে, আহত হয়ে, অন্যরকম মাংসল গন্ধ নিয়ে/ এলোমেলো, উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে।’  মানুষের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসে মানুষেরই রক্তমাংসের স্পর্শে আবিল হয়ে গেছে এ-গ্রহের বাতাস। এ কবিতায় মঈনের হাতের তাপে খুব দ্রম্নত শুকিয়ে গেছে গোলাপ, কবির অবহেলায় মরে গেছে সবুজ টিয়ে। মানুষের মারণাস্ত্রের তাপে পৃথিবীতে অসংখ্য গোলাপকুঞ্জ ঝলসে গেছে। কোথাও লীন হয়ে নেই কোনো গোলাপ-সৌগন্ধ। অতীত আত্তিলাদের ব্যবহৃত অস্ত্র রয়ে গেছে ভূগর্ভে, শীলার স্তরে, ধ্বংসসত্মূপের তলায়। কাদরী লিখেছেন, পৃথিবীর সাধারণ মানুষ বা কবিরা মরে গেলেও পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না – কিন্তু যুদ্ধবাজ রাজনৈতিক নেতা এবং বিধ্বংসী অস্ত্রের জোগানদাতারা না থাকলেই বরং উপকার হবে পৃথিবীর।

এ প্রসঙ্গে অনিবার্যভাবে মনে পড়বে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা কাব্যের ‘রাষ্ট্র মানেই লেফ্ট্ রাইট লেফ্ট্’ এবং ‘স্কিৎসোফ্রেনিয়া’ কবিতা। প্রথমটিতে শহীদ কাদরী একালের রাষ্ট্রব্যবস্থার কাজকর্মের একটি সরল তালিকা তৈরি করেছেন। তাঁর কাছে রাষ্ট্র মানেই সাঁজোয়া বাহিনী, ধাবমান পুলিশ, কাঠগড়া ও জেলের গরাদ। ব্যক্তি যেখানে তুচ্ছ – নামপরিচয়হীন ধূলিকণার মতো। এ-কালের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যক্তির স্থান নেই। রাষ্ট্র মানেই মন্ত্রী, রাজবন্দি, গুম ও হত্যা। বিরুদ্ধ মত ও পথের মানুষকে প্রতিনিয়ত পিষ্ট করে রাষ্ট্রযন্ত্র। পরের কবিতাটি আরো বেশি শিল্পোজ্জ্বল। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাই যেন স্কিৎসোফ্রেনিক। অসংগতি আর বিভক্ত ব্যক্তিত্ব ও মানসিক রোগাক্রামত্ম যুদ্ধবাজ সমরনায়কদের পৃথিবী এটি। এখানে ব্যক্তি অসহায় – যার :

পেটের ভেতর যেন গর্জে উঠছে গ্রেনেড

কার্বাইনের নলের মতো হলুদ গন্ধক-ঠাসা শিরা,

গুনাগার হৃদয়ের মধ্যে ছদ্মবেশী গেরিলারা

খনন করছে গর্ত, ফাঁদ, দীর্ঘ কাঁটা বেড়া।

জানু বেয়ে উঠছে একরোখা ট্যাঙ্কের কাতার,

রক্তের ভেতর সাঁকো বেঁধে পাড় হলো

বিধ্বস্ত গোলন্দাজেরা,

প্রতারক কটা রঙহীন সাবমেরিনের সারি

মগজের মধ্যে ডুবে আছে,

সংবাদপত্রের শেষপৃষ্ঠা থেকে বেরিয়ে এসেছে

এক দীর্ঘ সাঁজোয়া-বাহিনী

এবং হেডলাইনগুলো অনবরত বাজিয়ে চলেছে সাইরেন।

 

এ এক সামগ্রিক যুদ্ধচিত্র – এ-কালে যা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হয়ে চলেছে বাইরে এবং ব্যক্তির মনোভূমে। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে পৃথিবীতে – এশিয়ায়, ইয়োরোপে, আফ্রিকায় – প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সবখানে। কবিতাশেষের প্রাত্যহিক ভোজনোৎসব হচ্ছে যুদ্ধবাজ সভ্যতার হত্যা আর রক্তপাতের ভোজনোৎসব। যেখানে যুদ্ধবাজ নেতার প্রতীক বাচাল বাবুর্চির তত্ত্বাবধানে প্রতিনিয়ত রান্না হচ্ছে নানা ধরনের মানবমাংস – নাইজেরিয়ার, আমেরিকার, সায়গলের, বাংলার/ কালো, সাদা এবং ব্রাউন মাংস।

বিশ্বব্যাপী  সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন এবং হত্যা ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে শহীদ কাদরীর বিখ্যাত প্রতীকী কবিতা ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’। প্রিয়তমার প্রতি সংরাগ নিবেদন করতে গিয়ে কাদরী তাঁর যুদ্ধবিরোধী মনোভঙ্গির শিল্পীত প্রকাশ ঘটিয়েছেন এ-কবিতায়। প্রেমিকার প্রতি হার্দিক সংরাগের আড়ালে, ভালোবাসার প্রতিপক্ষে তিনি বিশ্বব্যাপী সামরিক আগ্রাসনের চিত্রই এঁকেছেন। পৃথিবীর সর্বত্রই স্নায়ুক্ষয়ী যুদ্ধসাজ। দেশে-দেশে সামরিক বাহিনীকে প্রস্ত্তত করা হচ্ছে যুদ্ধসাজে। কবিতা পড়তে-পড়তে মনে হতে পারে, কবি জানেন তাঁর প্রিয়তমার কাছে সংরাগ নিবেদনের জন্যে সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম নেই। অথবা তাঁর প্রিয়তমা এমন এক রাজ-রাজেশ্বরী যে, সেনাবাহিনীই তাকে স্যালুট করবে – জানাবে অভিবাদন। কিন্তু কেন সেনাবাহিনীকেই আনতে হলো কবির? সেনাবাহিনী যে-কাজ কখনো করবে না, তাদের দিয়ে কবি সেই অসম্ভব কাজটিই করিয়ে নিয়েছেন। (আর প্রিয়তমার জন্যেই কবির এ-ব্যবস্থা। ‘আমি এমন ব্যবস্থা করবো’ – এই আশ্বাস কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে বারো বার।) যুদ্ধ ও আগ্রাসনবিরোধী বক্তব্য প্রকাশের জন্যেই এই ফ্যান্টাসিটুকুর আয়োজন। কে না জানি আমরা যে, যুদ্ধসাজে সজ্জিত সেনাবাহিনী যে-কোনো বেসামরিক নাগরিকের জন্যেই এক ভয়ংকর হুমকি – আর মহিলার ক্ষেত্রে তো তা আরো বেশি ভয়ের। কবি তাই প্রথম পঙ্ক্তিতেই তাঁর প্রিয়তমাকে বরাভয় জানাচ্ছেন। কবিতার প্রতিটি স্তবকের শুরুই হয়েছে ‘ভয় নেই’ – এই দুটি শব্দ সহযোগে। ভয় নেই শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়েছে মোট তেরোবার এবং কোনো-কোনো স্তবকে পরপর তিনবার। এ থেকেই অনুভূত হবে, সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ব্যক্তির জন্যে কতটা ভয়ংকর। আর আমরা যারা আমাদের নিজস্ব জীবনেই পেরিয়ে এসেছি উনিশশো একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, তারা প্রত্যক্ষভাবে জানি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ব্যক্তির জন্যে কী ভয়াবহ। কবি কাদরীও তা জানেন বলেই এতবার তাঁকে বরাভয় উচ্চারণ করতে হয়েছে :

ভয় নেই

আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী

গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে

মার্চপাস্ট ক’রে চ’লে যাবে

এবং স্যালুট করবে

কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।

 

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

বন-বাদার ডিঙিয়ে

কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হ’য়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে

আমর্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে

ভায়োলিন বোঝাই ক’রে

কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।

 

প্রিয়তমার প্রতি সংরাগ নিবেদন করতে গিয়ে কবি আসলে সামরিক বাহিনীবিহীন, হত্যা ও রক্তপাতহীন এক মানবিক বিশ্বের চিত্রই আঁকতে চান। ‘প্রত্যহের কালো রণাঙ্গনে’ শীর্ষক কবিতায় শহীদ কাদরী লিখেছেন একটি গোলাপের কথা, যেটি বহুদূর থেকে অনেক রক্ত আর আগুন পার হয়ে তার হাতে এসেছে। বলা বাহুল্য, গোলাপ শব্দটি শুধু যে সৌন্দর্যে মূল্যবান কিছুর প্রতীক তা নয় – এখানে এটি প্রায় মানবপ্রাণেরই প্রতীক। আগুনের আঁচে ঝলসে গেছে গোলাপের ডানা, বার্বড-ওয়ারের কাঁটায় ছিঁড়েছে তার পাপড়ি – তাকে মাড়িয়ে গেছে সাঁজোয়া বাহিনী, ক্যাপ্টেন-কর্নেলদের বুটের পাশেই সে ছিল রক্তলাল রঙের ছদ্মবেশে। এই গোলাপ অথবা মানব হমত্মারকের হাত এড়িয়ে অনেক মৃত বালকের কলরোল সঙ্গে নিয়ে এসেছে। কবি একে কোথায় লুকোবেন? তিনি লিখেছেন :

মাথার ওপরে ক্রমাগত গর্জমান এ্যারোপেস্নন,

জেটিতে নড়ছে ক্রেন, চতুর্দিকে ভাসছে রণতরী

স্মৃতির ভেতরে ফের খুলে যাচ্ছে কোষবদ্ধ এক

নিপুণ তরবারি, চতুর্দিক থেকে যদি ট্রেন

সমরাস্ত্র নিয়ে আবার দাঁড়ায় এ-শহরে, যদি ফের

কুচকাওয়াজের শব্দে ভরে যায় আমার দিন আর রাত

চেনাজানা সকল ফুটপাত, তখন লুকাবো তাকে

কোন গঞ্জে? কোন নদীর বাঁকে? কোন অজ-পাড়াগাঁয়,

কাদের গোপন ছাউনিতে?

 

কবিতার এই অংশ পড়তে-পড়তে আমার মনে পড়ছে একাত্তরের হানাদার পাকিস্তত্মান বাহিনীকবলিত কোনো শহরের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি রণাঙ্গনে ছিলাম বলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য এরকম কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি; কিন্তু আমি নিশ্চিত, কাদরী একাত্তরের শত্রম্নকবলিত ঢাকা শহরে বসবাসের কথাই লিখেছেন – যেখানে সারাক্ষণ যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান ছিল। প্রাত্যহিক জীবনও এরকম – যুদ্ধে-যুদ্ধেই কেটে যায়।

উপর্যুক্ত কয়েকটি কবিতায় আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার ভয়ানক চিত্র রচনা করে যুদ্ধ ও রক্তপাতবিরোধী কবি শহীদ কাদরী অনেকটা নম্র উচ্চারণে লিখেছেন ‘রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন?’ শীর্ষক কবিতা। শিল্পের লাবণ্য দিয়ে তিনি ধুয়ে দিতে চেয়েছেন রাষ্ট্রের ক্লেদ। কাদরী চান উগ্র ও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি, মাইক্রোফোনের বদলে বকুলের ঘ্রাণ। রাষ্ট্রপ্রধান কি জেনারেলদের রবীন্দ্রচর্চার হুকুম দেবেন, আইন করবেন – গীতবিতান ছাড়া অন্যকিছু রফতানি করা যাবে না, আমদানি হবে না হেরিবেলাফোমেত্মর রেকর্ড ছাড়া অন্যকিছু, প্রতিটি পুলিশের জন্যে অবশ্যপাঠ্য হবে আয়োনেস্কোর নাটক, সেনাবাহিনী পড়বে শিল্পকলার দীর্ঘ ইতিহাস? রাষ্ট্রপ্রধান কি এসব মেনে নিতে পারবেন? এসব প্রসত্মাব মানলেই কেবল পৃথিবীসমূহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কবি জানেন, কোনো রাষ্ট্রপ্রধানই এসব মানবেন না। এ প্রসঙ্গেই মনে পড়বে ‘তুমি গান গাইলে’ শীর্ষক কবিতা। কাদরী এখানে চিত্রিত করেছেন শিল্পকলার ব্যর্থতাকে। শিল্প বদলে দিতে পারে না প্রায় কোনোকিছু – না প্রকৃতিকে, না যুদ্ধবাজ সেনাবাহিনীকে। ‘তুমি গান গাইলে’ কবিতায় কাদরী লিখেছেন :

তুমি গান গাইলে,

ব্যারাকে-ব্যারাকে বিউগল্ বেজে উঠলো,

সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ থামলো না

…    …    …

তুমি গান গাইলে,

জাতিসংঘের প্রসত্মাব লঙ্ঘন করে সারি সারি ট্যাঙ্ক

জলপাই পলস্নবের ফাঁকে ফাঁকে

খুব ভয়াবহভাবে যুদ্ধবিরতির সীমারেখা পার হ’লো

…    …    …

তুমি গান গাইলে,

সুদূর চিলিতে তিনজন বিপস্নবী তরুণ

শূন্যচোখে এক বুড়ো জেনারেলের নির্দেশে

খুব শব্দহীনভাবে ইলেকট্রিক চেয়ারে ব’সে পড়লো

শহীদ কাদরীর কবিতায় বিষয়বৈচিত্র্য ব্যাপক। এই ছোট্ট নিবন্ধে সেই বৈচিত্র্য দ্রম্নত তুলে আনা অসম্ভব। তিনি ভালোবাসেন তাঁর স্বদেশভূমি বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমায় লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি চমৎকার কবিতা। প্রবাসজীবনকে তিনি বারবার ধিক্কার জানিয়েছেন। মানুষের জীবনকে যারা শ্বাপদসংকুল করে তুলেছে ধিক্কার জানিয়েছেন সেই ধর্মের ধ্বজাধারীদের। তাঁর ধিক্কার সেসব প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতি, দেশকে যারা ঠেলে দিচ্ছে আর্তনাদ আর রক্তপাতে-ভরা অন্ধকারপ্রিয় মধ্যযুগের দিকে। দেশকে ভালোবাসেন তিনি। তাই কোনো নির্বাসনই কাম্য ছিল না তাঁর – এশিয়ার আকাশের ময়ূরনীল থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন পাশ্চাত্যে, প্রাচ্য থেকে প্রতীচ্যে, অন্য এক উলস্নাস-মত্ত সংস্কৃতির নিচে নতজানু নির্বাসন সত্যি তাঁর কাম্য ছিল না। এসবই তিনি লিখেছেন তাঁর কবিতায়। পরবাসেও তাঁর দৃষ্টি ছিল স্বদেশের দিকে – নিরুদ্দেশ যাত্রাও ছিল ঘরের দিকেই।

শহীদ কাদরীর কবিতার বিষয়বৈচিত্র্য অন্বেষণের চেয়ে বেশি জরুরি তাঁর কবিতার নির্মাণকলার বিশেস্নষণ। তিনি কবিতা লিখেছেন তাঁর ব্যক্তিবৈশিষ্ট্যম–ত বাংলাভাষায় – এক স্বতন্ত্র উচ্চারণরীতিতে। তাঁর ব্যবহৃত ভাষা তাঁরই চারিত্র্যবৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। অভিনব চিত্রকল্প নির্মাণে তিনি পারঙ্গম – চারটি কাব্যেই তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন স্মরণীয় বেশকিছু চিত্রকল্প। ভাষার যে-দুটি উপাদান রচনায় শিল্পের বিভা জ্বেলে দেয়, তার একটি চিত্রকল্প এবং অন্যটি রূপক অলংকার। এ দুই উপাদান ব্যবহারে শহীদ কাদরী ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অধিকন্তু তিনি ভাষায় ব্যবহার করেছেন সমাসোক্তি অলংকার। যাঁরা ছন্দ জানেন তাঁরা একমুহূর্তেই বুঝতে পারবেন, তিনি তিন রকমের ছন্দেই পারঙ্গম। শহীদ কাদরীর নির্মাণকলা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি মনে করি, বাংলা কবিতায় তাঁর অবদান দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।