শিক্ষানবিশ

অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

 

ঘড়িতে দম দিতেই শিখিনি,

কবুল করি এটা করতে গিয়ে

চিরটাকাল আমার মধ্যে ছিল

গড়িমসির প্রভূত বিকিকিনি।

 

পিন্টু সেবার জামশেদপুর থেকে

তালিম দিয়েছিল আমায় ঠিকই,

কিন্তু লিখে দিয়ে যায়নি হায়

অঙ্গুলি ঘোরানোর স্বরলিপি

 

অনেকটাই রুদ্রাক্ষের মতো

বিবর্তমান স্রোতের সেই লহরী,

আমিও তাই তীর্ণ অভিমানে

অচল করে দিয়েছি সব ঘড়ি।

 

কিন্তু পিন্টু, আমার মেজো ভাই,

নাছোড়বান্দা, ঘড়ি সারাতে গিয়ে

সেই যে হলো দুর্ঘটনার শামিল

আমার কাছে আর ফিরে এলো না;

 

যাবার সময় আমায় দিয়ে যায়

অশেষদাকে, আমায় যেন তিনি

বিষ্ণুপুরী ঘরানায় আনেন,

সেই যে অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

বলেন কিনা : ‘একসাথে দু-দুটো

কাজের ধারা শিখতে হবে তোকে,

যেমন কিনা ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে

এস্রাজ বাজাবি বন্ধ চোখে’ –

 

বলেই তাঁর মাঞ্জা-দেওয়া সুতোয়

উড্ডীয়মান করে দিলেন ঘুড়ি,

আমার শুধু নির্মম নিষ্ঠায়

লাটাই ধরে-থাকার বাহাদুরি।

 

 

অশেষদাও চলে গেলেন, আমি

ভুবনডাঙার শালবীথিসঙ্গমে

ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় দেখি

মৃত্যুর্ধাবতি পঞ্চমে;

 

ফিফ্থ অ্যাভিনিউয়ের পাঁচতলায়

অশেষদা যেই হৃদয় করেন চুরি

ইমনকল্যাণে, পিন্টু দেখি

উড়িয়ে চলে ধ্বজাংকুশ ঘুড়ি।

 

 

এবারে যেই বিশ্বকর্মা পুজোয়

ঘুড়ি ওড়ানোর ডাক এসেছে আজ,

একটি হাতে লাটাই আমার, আর

অন্য হাতে অর্ধেক এস্রাজ।