আকস্মিকই করুণাময় গোস্বামী চলে গেলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল তিনি সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে আরো কাজ করবেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের গান নানা আধ্যাত্মিক অনুষঙ্গ সত্ত্বেও কীভাবে জীবনে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে দৈনন্দিনতার সুখ ও দুঃখ নিয়ে, সে-প্রসঙ্গে লিখবেন। তাঁর মৃত্যু সেজন্য গভীর পরিতাপের। আমরা বৃহৎ ভাবনার ও জিজ্ঞাসার একটি গ্রন্থ পেলাম না। এমন একটি গ্রন্থের অভাব ছিল আমাদের প্রবন্ধ সাহিত্যে।
করুণাময় গোস্বামীর জীবনধারা, ব্যক্তিত্ব, সৃজন ও সাহিত্যবোধের সঙ্গে সংগীত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে ছিল। আমরা আজ পশ্চাতে ফিরে দেখব, সেই সংগীতেই তাঁর নিমজ্জন হয়েছিল, যে-সংগীত আমাদের রুচিবোধ, সংস্কৃতি বা জীবনকে এক উচ্চতর বোধে অগ্রসর হওয়ার জন্য পথ সৃষ্টি করে। নিজে জীবনের একপর্যায়ে এই সংগীতের চর্চা ও সাধনা করেছেন এবং এর ঐশ্বর্য আরো গভীর প্রত্যয় নিয়ে অনুধাবন করেছেন। তাঁর কণ্ঠে সংগীত শ্রবণের অভিজ্ঞতা যাঁদের হয়েছে তাঁরা জানেন তাঁর কণ্ঠে লাবণ্য ছিল। শাস্ত্রীয় সংগীতে এই উপলব্ধি ও তৃষ্ণা থেকে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে দীর্ঘ শ্রম ও নিষ্ঠায় গবেষণা করেছেন। এই গবেষণার ভেতর দিয়ে, সাধনা ও চর্চার মধ্য দিয়ে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন এবং এই গবেষণার ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি সুবিশাল সংগীতকোষ। এই কোষ গ্রন্থটি বর্তমানে আকর গ্রন্থ হিসেবে সাংগীতিক সমাজে আদৃত। সংগীত শিক্ষার্থীসহ সংগীতে আগ্রহী যে-কোনো পাঠক বা গবেষক এই গ্রন্থ থেকে আনুষঙ্গিক তথ্য লাভ করছেন। সংগীতচর্চা, সাধনায় এ-গ্রন্থ হয়ে উঠেছে শুধু সহায়ক নয়, সংগীতসমাজের সংগীতকোষ গ্রন্থ। এক অর্থে ব্যাপক বিসত্মৃতি নিয়ে এ এক অভিধানও বটে।
বিভিন্ন ঘরানাসহ উপমহাদেশের সাংগীতিক পরিক্রমারও পরিচয়বহ এই গ্রন্থ। করুণাময় গোস্বামীর এই শ্রমলব্ধ কর্মটি আমাদের গবেষণা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় এক মাইলফলক।
এছাড়া বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়েও তিনি গবেষণা এবং নজরুলচর্চা ও সাধনায় নতুন আলোকপাত করেছেন। সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর পর্যবেক্ষণে নজরুলের ব্যাপক ও ফলদায়ী প্রভাব কবির অসাম্প্রদায়িক সৃজন উৎকর্ষ বাংলা সাহিত্যে কতভাবে যে রসসিঞ্চন করেছে এ ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়।
করুণাময় গোস্বামী দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। এই সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনের এক শীর্ষ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে ও প্রেরণায় নবীন প্রগতিশীল এক গোষ্ঠীও গড়ে উঠেছিল। অনেক নবীন লেখকের তিনি উৎসাহদাতা ছিলেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে তিনি কখনো প্রচ্ছন্নে, কখনো প্রকাশ্যে সহায়তা করেছেন। সুধীজন পাঠাগারকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে সে-সময় তিনি বিসত্মৃত ভেবেছেন। তাঁরই প্রণোদনায় সুধীজন পাঠাগার হয়ে ওঠে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পাঠাগার। এই পাঠাগারে যে ঈর্ষণীয় গ্রন্থসম্ভার রয়েছে, এর অধিকাংশ তাঁরই প্রেরণায় সংগৃহীত। এই গ্রন্থাগারে বহু বিরল গ্রন্থ রয়েছে। এই সময় তাঁর সাহিত্যচর্চা ও সাধনা এক ধরনের নিভৃতির মধ্যে বহুপ্রসূ হয়ে উঠেছিল। সত্তরের দশক থেকে আমার সঙ্গে লেখালেখির সূত্রে তাঁর সখ্য গড়ে উঠেছিল। এই সময় শুধু সংগীত বা নজরুল গবেষণা নয়, সাহিত্য নিয়েও তাঁর বহু ভাবনার যে-প্রকাশ তা আমাদের প্রবন্ধসাহিত্যকে নবমাত্রায় দীপিত করেছে। একটি সংবাদপত্রের সাময়িকীর সম্পাদনাকালে করুণাময় গোস্বামী সম্পর্কে এ-কথা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি।
করুণাময় গোস্বামীর আরেক শ্রমলব্ধ কাজ ১৪০০ সালের অবসান ও নবীন শতাব্দীর আবাহন উপলক্ষে বাংলা সংস্কৃতির শতবর্ষ পর্যালোচনা করে একটি সুবিশাল গ্রন্থ সম্পাদনা।
১৪০০ সালের অবসান যখন অতি নিকটবর্তী, তখন থেকে বছরতিনেক আগে, সুধীজন পাঠাগার পরিচালনা পরিষদ এই প্রবন্ধ-সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বাংলা চতুর্দশ শতকে অর্থাৎ ১৩০১-১৪০০ কালপর্বে বাঙালির সৃজনশীল কর্মোদ্যোগের কয়েকটি নির্বাচিত ক্ষেত্র সম্পর্কে রচিত প্রবন্ধ নিয়ে এই সংকলন প্রকাশিত হবে। সংকলনের নাম হবে ‘বাংলা সংস্কৃতির শতবর্ষ : ১৩০১-১৪০০’। নির্বাচিত ক্ষেত্রসমূহ হবে শিক্ষা, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, শিশুসাহিত্য, প্রকাশনা, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র ও সংগীত। বিশেষজ্ঞ ও দেশের খ্যাতনামা লেখকদের রচনায় সমৃদ্ধ হয়ে গ্রন্থটি তাঁরই প্রযত্নে ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। উলিস্নখিত শাখায় শতবর্ষের যে-অর্জন তা বিসত্মৃতভাবে বিশেস্নষিত হয়েছে এই সংকলনে। সাতশো পঞ্চাশ পৃষ্ঠার এই সংকলনটিও করুণাময় গোস্বামীর উল্লেখযোগ্য কাজ।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রসংগীত পরিক্রমা, রবীন্দ্রসংগীত স্বরলিপি, রবীন্দ্র নাট্যগীতি, রবীন্দ্রসংগীত কলা, বাংলা গানের বিবর্তন, নজরুলগীতি প্রসঙ্গ ও অতুলপ্রসাদের গান।
এই গ্রন্থসমূহের শিরোনাম ও সৃজন থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি তাঁর সৃজনধর্ম, ব্যক্তিস্বরূপ, সংগীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ কত গভীর ছিল। এই অনুরাগের অন্তর্নিহিত শক্তি ও গ্রন্থের শিরোনাম থেকে তাঁর সাংগীতিক বোধ, চেতনার ও প্রবণতার যে-সাক্ষাৎ পাই আমরা তাতে তাঁর সংগীতপ্রীতি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও অতুলপ্রসাদের অর্জনের সঙ্গে ঐতিহ্যপ্রীতিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তাঁর একটি ক্ষীণকায় গ্রন্থ বাঙালির গান লোকসংগীত নিয়ে রচিত। লোকসংগীতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং এই সংগীতের চেতনা মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে। যুগ-যুগবাহিত এই সকল গান গ্রামীণ মানুষের জীবনকে করে তুলেছে কখনো অধ্যান্ত চেতনায় বলীয়ান, কখনো মানবিক সাধনায় উজ্জ্বল, কখনো ভক্তিরসে আলোড়িত। এই গ্রন্থটি তাঁর মনন উজ্জ্বল কাজ।
কয়েক বছর ধরে তিনি উপন্যাস রচনায় ব্যাপৃত ছিলেন। উপন্যাসটির প্রথম খ- প্রকাশের অব্যবহিত পরেই দেশের সারস্বত সমাজ তাঁকে অভিনন্দিত করেছিল। দাঙ্গা, দেশভাগ নিয়ে বৃহৎ পটভূমি ও পরিসরের এই উপন্যাস মহাকাব্যিক মননধর্মী ও ট্র্যাজেডির বেদনাময় অনুষঙ্গ সত্ত্বেও মানবিক।
গুণাবলিসমৃদ্ধ বহু চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে উপন্যাসে; বহু ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা আছে। সর্বোপরি দেশবিভাগ যে ট্র্যাজেডি বা বেদনাবহ পরিণাম বয়ে এনেছে, লক্ষ মানুষের প্রাণহানি, দেশান্তর, নারীর অবমাননা, সাম্প্রদায়িক পীড়ন যে-কোনো পাঠকের হৃদয় আর্দ্র না করে পারে না। বোধ ও উপলব্ধি দিয়ে দেশভাগের বেদনাকে ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে উপলব্ধি করেছেন তিনি। এই উপন্যাস রচনাও তাঁর বৃহৎ সাহিত্যকর্ম।
ঢাকার সাহিত্য প্রকাশ থেকে করুণাময় গোস্বামী-লিখিত ভারতভাগের অশ্রম্নকণা শীর্ষক এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। করুণাময় গোস্বামী সংগীতে বিশেষজ্ঞ; এতদিন প্রবন্ধ রচনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। বিশেষত নজরুল ইসলামের গান নিয়ে তাঁর গবেষণা এবং কয়েকটি গ্রন্থ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে সে-কথা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। ভারতভাগের অশ্রম্নকণা লেখকের প্রথম উপন্যাস। বইটি ভিন্নধর্মী; ব্যাপক ক্যানভাসভিত্তিক, শুধু বাংলা এবং পাঞ্জাবের দুঃসহ যন্ত্রণাভিত্তিক নয়। এটি ব্যাপক পরিসরের, বিসত্মৃত পটভূমিতে বেঁচে থাকার আর্তির এক হৃদয়বিদারক চিত্রণ। আমরা দেশভাগ নিয়ে চলিস্নশ ও পঞ্চাশের দশকের সময়চিত্রিত যেসব উপন্যাস পাঠ করেছি ভারতভাগের অশ্রম্নকণার চরিত্র চিত্রণে করুণাময় গোস্বামী তারই গভীর এক বোধকে তুলে ধরেছেন। দেশভাগ নিয়ে কথা উঠলেই আমরা বাংলা এবং পাঞ্জাবের কয়েক কোটি মানুষের বাস্ত্তভিটা ত্যাগ, দাঙ্গা-সংঘাত ঘটনাবলি এবং বিপর্যয়ের কথাই সাধারণত উপলব্ধি করি।
করুণাময় গোস্বামী এই উপন্যাসে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দেখালেন যে, আসলে দেশভাগের ট্র্যাজেডি শুধু কয়েকটি প্রদেশে বা অঞ্চলে অভিঘাত সৃষ্টি করেনি, ব্যক্তিগত হৃদয়-যন্ত্রণার সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছিল ভারতীয় মানসে, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং জীবন-সংগ্রামে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশভাগ শুধু মানুষের অসিন্তত্বকে বিপন্ন করেনি, ভারতবর্ষকেও কতভাবে অমানবিক ও বিষাদগ্রস্ত করে তুলেছিল, বিপর্যস্ত হয়েছিল মূল্যবোধ, তা বিশ্বস্ততার সঙ্গে চিত্রিত করেছেন ঔপন্যাসিক।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এমনই যে, রাজনৈতিক কারণে উপন্যাসের কুশীলবের স্থান বদল হতে থাকে এবং বিপন্নতায় বিপন্নতায় কোনোভাবে তারা থিতু হতে পারে না। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এক স্থান থেকে আরেক স্থানে জীবনযাপনের তাড়নায় সে ছুটে বেড়ায় এবং ছিটকে যেতে থাকে। একবুক কষ্ট নিয়ে, হাহাকার নিয়ে একসময় উন্মূল হয়েছিল সে। এই শেকড়হীনতা যেন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ছুটে বেড়ায় সে; কিন্তু শিক্ষা-দীক্ষা থেকে পরিগ্রহণ সত্ত্বেও, উন্নত সংস্কৃতিতে অবগাহনও তাকে নিস্তার দেয় না। নিয়তি বিড়ম্বিত জীবন ও রাজনৈতিক কারণ তার জীবনকে করে তোলে তিক্ত এবং অবশেষে বইটি নানা কারণে খুবই হৃদয়গ্রাহী। একটি পরিবারকে ঘিরে ঘটনাপ্রবাহ বিবর্তিত হলেও দেশভাগ এই উপমহাদেশের মানবিক সম্পর্কের দীর্ঘদিনের মূল্যবোধে যে-ধস নামিয়েছিল তা বর্ণিত হয়েছে এ-উপন্যাসে।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র শেকড়হীনতাকে বুকে ধারণ করে পথ চলে, জীবনযাপন করে। কিন্তু এ-পথ চলা হয়ে পড়ে কণ্টকিত ও বিষাদগ্রস্ত, তবু আশায় বুক বেঁধে উপন্যাসে বর্ণিত মানুষের পথচলা ছিল বিরতিহীন।
ভারতভাগের অশ্রম্নকণা কিন্তু ইতিহাসের পটভূমিকায় লেখা উপন্যাস নয়, বরং উপন্যাসের মাধ্যমে ভারতবিভাগের ইতিহাসের অনুষঙ্গ চিত্রই চিত্রিত হয়েছে এই বইয়ের ব্যাপক ক্যানভাসে। উপন্যাস এখানে গৌণ, সেই কাল বা সময়খ-কে সময়ের নিরিখে বিশেস্নষণই হচ্ছে এর মূল প্রতিপাদ্য।
উপন্যাসের ঘটনার পরিসর নির্মাণে লেখক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। চরিত্রগুলো সব প্রতীক। বাস্তব ও অবাস্তবের আলোছায়ায় তাদের পদচারণা। অলৌকিক ঘটনাও আছে। তবে বাস্তবের সঙ্গে তাদের বাস্তবসম্মত সম্পর্কও রয়েছে। কাহিনির গতিপথে প্রতীকী ঘটনাবলি হৃদয়কে আর্দ্র করে। কাহিনির গতিপথকে রুদ্ধ করে না, কিন্তু চলার পথে বেদনা দুঃসহ এক ভার নিয়ে বুকে চেপে থাকে। বইয়ের স্থান ও কালের ব্যাপ্তি বৃহৎ।
দিলিস্নর গুরগাঁ, লাহোর, ঢাকা ও পাঞ্জাব উলিস্নখিত হয়েছে উপন্যাসে। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাচ্ছে পাত্রপাত্রী। কিন্তু কোনোভাবে থিতু হতে পারছে না। কাহিনিতে বিস্তর মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের দেশ, গোত্র, জাতি, ধর্ম ইত্যাদি সবই ভিন্ন। কিন্তু মানবিকতার চিরন্তন অভিব্যক্তি তাদের সকলকে একই আকাশের নিচে দাঁড় করালেও রাজনীতি তাদের নিয়ে যায় অতল গহবরে।
প্রধান প্রতীক চরিত্র সেলিম বেগ লেখকের মানসপুত্র। তাঁর মা দেশের প্রতীক। সেলিম বেগের ভাষায়, ‘তাঁর মা মানুষের অনন্তকালের সাধনা রূপমূর্তি’। সেলিম অন্যদিকে রবীন্দ্রমানসের আদর্শের শক্তিতে বলীয়ান, মুক্তচিন্তার অধিকারী। আরব সাগরে ডুবে-যাওয়া শেখ মুহাম্মদের আকাশের দিকে দুই হাত তুলে আকুল আবেদন ভোলা যায় না।
সেলিম বেগ তার অভিজ্ঞতার সম্পদ উত্তরকালের মানুষকে দিয়ে যেতে চান। এটাই ছিল তার জীবনের শেষ দাবি। ঘটনাচক্রে এক কুয়াশামলিন শীতের সকালে এক সদ্যপরিচিত মানুষের হাতে তাঁর দেওয়ার পালা শুরু হয়। গল্পের শেষে তিনি বিস্ময়করভাবে জানতে পারেন তার উত্তরসূরিটি তার অতি আপনজন, রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তার আত্মার আত্মীয়, একই সম্পদ হারানোর বেদনায় তারা দুজনেই ছোট বৃত্ত থেকে বড় বৃত্তে পা ফেলার সাধনা করছেন।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, দেশভাগ নিয়ে রচিত এই সুবিশাল উপন্যাসটিও তাঁর-রচিত সংগীতবিষয়ক গ্রন্থের মতো নবীন প্রজন্ম এবং ভাবীকালকে আলোড়িত করবে।
করুণাময় গোস্বামীর হৃদয়বত্তা ও মানসে বাঙালির চিরায়ত বৈশিষ্ট্যের ছাপ ছিল প্রবল। সজ্জন এই মানুষটি এই অঞ্চলের বাঙালির সকল বিপন্নতায় আলোড়িত হয়েছেন। সকল বিজয়ে উদ্দীপ্ত হয়েছেন। তাঁকে হারানো সাংস্কৃতিক জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। r