সুখের ভিন্ন-ব্যাকুলতা নিয়ে

মোহাম্মদ আযাদ

চেপে রাখা নিশ্বাসটা গম্ভীর শব্দে গড়িয়ে পড়ল। রাস্তায় জ্যাম হলে ভাবনাগুলোও হয় জড়সড়, তখন হৃদয়াবেগটা মোচড় দিয়ে ওঠে হয়তোবা আত্মপ্রকাশের অনিবার্য তাগিদ থেকেই। কোনো একটা দুর্বোধ্য ইশারা দৃষ্টিপাতে এমনি চমক ঢেলে দেয় যে, নিতান্ত অদ্ভুত এক ছেলেমানুষের আত্মপ্রতিকৃতি নিয়ে ফের সটান হয়ে দাঁড়াতে হয়। কেউ যদি তখন প্রশ্ন করে, কী নাম আপনার?

উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে বলে দিতে পারবে, সিরাজউদ্দিন! বুকের ভেতর উদ্দাম সাহস থাকলেও কণ্ঠস্বরে কেন যেন তা ম্রিয়মাণ।

এতক্ষণ মেঘের ভেতর জমে থাকা শেষদুপুরের রোদ গড়িয়ে পড়ল সামনে। উজ্জ্বল আলোয় রাস্তাঘাটের অপ্রসন্নতা মুহূর্তেই ধুয়ে যায়। এ যেন এক নতুন দেখা! মনটাকে আলো বানিয়ে শীতগরম রোদটা পড়ে আছে অপূর্ব আভায়। মনের ভেতর স্বপ্নাহত বিচলিত বোধ সহসা মোচড় দিয়ে কীভাবে যে নতুন আত্মবিশ্বাসে জেগে ওঠে, আশ্চর্য!

বাজারে ঢোকার মুখে আজো সে-দৃশ্য। ভ্যানগাড়ির ওপর চা আর সস্তা কেক-বিস্কিট বিক্রি করছে মহিলাটি। হৃষ্টপুষ্ট শরীরের ওপর বেশ মায়া-জাগা গোলগাল মুখ। সিরাজউদ্দিন বলল, চা দাও।

কিছু না বলে চোখ দুটো সরু করে চুলোর গর্তে ঘন-ঘন ফুঁ দিতে থাকে। ঈষৎ বাঁকা পিঠ আরো বেঁকে ক্রমঃনিঃশেষ হয়ে লুটিয়ে পড়ার আগেই মোচড় দিয়ে দাঁড়ায়। দুটো খালি কাপ এনে রাখে একজন কিশোর। পরনে ময়লা গেঞ্জি আর অবিন্যস্ত ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। মহিলা ওর গালে জোরেশোরে চড় বসিয়ে বলল, দেরি করলি ক্যা হারামির বাচ্চা!

শেষ দুপুরের রোদটা ফিকে হয়ে আসছে। কিশোর ছেলেটির ভোঁতা ঠোঁটে নামল প্রকৃতিদগ্ধ ছায়া। সিরাজউদ্দিনের চোখে যা স্থির টলমল, মিলিয়ে যেতে পারছে না।

রাস্তার ডানে-বাঁয়ে তখন ব্রেকহীন গাড়ির মতো মানুষজন ছুটছে। দেহের সঙ্গে দেহ, নয়তো পায়ে পায়ে অযাচিত ঠোক্কর খেতে খেতে সিরাজউদ্দিন দেখল, ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে দীর্ঘ যানজট। পাশের সরুগলিতে ঢুকে পড়ে। এদিকে গ্যাঞ্জাম কম হলেও শেষ দুপুরের গনগনে উষ্ণতায় শরীর কেমন তড়পাচ্ছে। পাশে ভ্যানগাড়ির ওপর চা আর সস্তা কেক-বিস্কিট বিক্রি করছে এক মহিলা। হৃষ্টপুষ্ট শরীরের ওপর বেশ মায়া-জাগা গোলগাল মুখ।

সিরাজউদ্দিন বলল, চা দাও।

ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। কিছু না বলে, ভ্রু-কুঁচকে উনুনের ধোঁয়া বের হয়। চোখদুটো সরু করে চুলোর গর্তে ঘন-ঘন ফুঁ দিতে থাকে। ঈষৎ বাঁকা পিঠ আরো বেঁকে ক্রমঃনিঃশেষ হয়ে লুটিয়ে পড়ার আগেই মোচড় দিয়ে দাঁড়ায়। তখনই দুটো খালি কাপ এনে রাখে একজন কিশোর। পরনে ময়লা গেঞ্জি আর অবিন্যস্ত ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। মহিলা ওর বাঁ-গালে জোরেশোরে চড় বসিয়ে বলে – দেরি করলি ক্যা হারামির বাচ্চা। যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে পুরু ঠোঁটজোড়া আলতো নাচিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি।

চা চাওয়ার সময় যে-দৃশ্য, অকস্মাৎ তা দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরের চমক নিয়ে সেঁটে থাকে সিরাজউদ্দিনের চোখে, শেষ দুপুরের রোদটা ফিকে হয়ে আসছে। অবোধ কিশোরের পুরু ঠোঁটে নামল প্রকৃতিদগ্ধ ছায়া। অল্প অল্প কথা বলছে, কাজ করছে, আগের মতোই গা-সওয়া, যদিও সেঁটে-থাকা ছায়াটি স্বাগতিক ঘটনাপ্রবাহের মাঝে তখনো স্থির টলমল, মিলিয়ে যেতে পারছে না। চায়ের কথা বেমালুম ভুলে সোজা হাঁটা দেয় সিরাজউদ্দিন। এরকম তুচ্ছ ঘটনাকে নিকেশ করে দিন কিংবা দিনান্তে ব্যস্ত জনপথগুলো প্রতিনিয়ত আরো সরব হচ্ছে। ওরা হয়তো জানে, একজন বিদগ্ধ মহিলার কঠিন চপেটাঘাত আর যাই হোক নির্জন অন্ধকারে কিংবা দিনের আলোয় কাউকে পিটিয়ে নয়তো কুপিয়ে মেরে ফেলার মতো ভয়ানক কিছু নয়। তাছাড়া ভয়ানক হলেই-বা, প্রকৃতির ধূলিঝড় কিংবা ধ্যানমগ্ন চোখের জল তো টপ্টপ্ করে গড়াতে থাকবে আপন নিয়মেই।

বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার পর সিরাজউদ্দিনের মনে হলো, কিছু একটা বুঝি কেনা হয়নি। মনে করতে পারে না। হাত থেকে কখন খসে পড়েছে বাজারের লিস্ট, কপালের ভাঁজটা ইতস্তত ঢেউয়ের মতো মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল মায়ের কণ্ঠে – কী ভাবছিস?

নাহ্, দেখ তো সব ঠিক আছে কিনা –

চা খাবি?

দাও।

সিরাজউদ্দিন ওর ঘরে যায়। পা দুটো কেন জানি অনাবশ্যক জড়িয়ে আসছে, বুকটাও দুলে উঠল কয়েকবার, এরপর যা কিছু ঘটবে সবটাই হয়তো ওর ইচ্ছাশক্তির প্রতিকূলে, কিন্তু কেন? কিছুক্ষণ পর টেবিলে বসে দু-কলম লেখার পরই ছন্দপতন। চায়ের পাত্র খসে ডায়েরির পাতায় রক্তরেখার মতো ছড়িয়ে পড়া কালশিটে দাগ, ও হয়তো-বা ডায়েরিতে কিছু লিখতে গিয়ে, জীবনমথিত কোনো ঘটনার নির্যাসে নিজেই বাঁধা পড়ে গেছে। আড়াল থেকে আড়ালে খলখলে হাসির একটা শব্দ উন্মাদ আক্রোশে একটু-একটু মিলিয়ে যাওয়ার পর আশ্চর্য শূন্যতার ভেতর মুখ তুলে তাকায়। গা শিউরে দিয়ে কেউ একজন বুঝি ঘুরঘুর করছে কাছেই।

কে?

আমি!

ঘরের শূন্যতায় মোচড় দিয়ে নামল রসাপ্লুত ঢেউ। অতঃপর ঢেউ থেকে ঢেউয়ের উত্থান, ঈষৎ তর্জন-গর্জন থাকলেও নিরাবরণ ছন্দটাই কানে বাজে বেশি। তখন হয়তোবা, মানুষ না থাকলেও মানুষের অস্তিত্ব বোঝা যায়। যদিও-বা এরকম ব্যথিত নারীকণ্ঠের শব্দ, সবকিছুর ছন্দপতন ঘটিয়ে নিরবচ্ছিন্ন ঘর কিংবা ঘরের শূন্যতাকেই প্রকট করে ঢের বেশি। সিরাজউদ্দিন কিছু বলার আগেই শুনতে পেল, তুমি বাজারে গিয়ে আমায় কিনে নাওনি কেন?

লিস্টে তোমার নাম পাইনি।

তুমি কি লিস্টের বাইরে কিছু করো না?

করি, কখনো-বা।

কাল কিন্তু আমায় কিনে আনবে।

আনব।

কার সঙ্গে কথা বলছে সিরাজউদ্দিন? মুখ ঘুরিয়ে রাখে। কেমন যেন চেনা কণ্ঠ, আবার অচেনা। রীতিমতো গোলকধাঁধা। তবু ব্যথিত নারীকণ্ঠের আত্মবিশ্বাস এতটাই প্রবল যে, এটিকে নিছক বিভ্রম ভাবতেও কষ্ট হয়। মানুষের জানার ভেতর কত যে অজানা রহস্য, সর্বনাশা পচন কিংবা স্খলনের অর্বাচীন মুহূর্তগুলো নিকেশ করে আমূল বোধ জল-জোছনার মতো কেঁপে ওঠে কখনো-বা –

সিরাজউদ্দিন বলল, তুমি কে…

সাড়া নেই…

ঘুরে তাকায় সিরাজউদ্দিন। কেউ ছিল না। ভারাক্রান্ত কণ্ঠস্বর যেটুকু ছিল, সেটিও মিলিয়ে গেছে অবোধ শিশুর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকার মতো। একটা দাগ, নয়তো উপহাসের ব্যঙ্গাত্মক রেখার মতো কিছু কি রেখে গেল? বুঝতে পারে না সিরাজউদ্দিন। শরীরে গলিত লাভার মতো সঞ্চরণশীল উত্তাপে-উত্তাপে ঘেমে উঠল, ঘন-ঘন নিশ্বাস পড়ছে, হাঁপাচ্ছে।

চলমান ঘটনার বিপরীতে, কোনো একটা রোমাঞ্চকর ভাবনায় নিজেকে ঠেলে দেয়। এতে হয়তো ‘রেটিক্যুলার অ্যাকটিভেটিং সিস্টেমে’ কোনো সমস্যা হলে কেটে যেতে পারে। পাশের পুরনো ইংরেজি ম্যাগাজিনটা উলটেপালটে অকস্মাৎ একটি ছবির দিকে দৃষ্টি পড়ে। ল্যাপটপে স্মিত হাসি দিয়ে তাকিয়ে একজন তরুণী। পরনে গাঢ় নীল স্কার্ট। নিচের শিরোনাম – Find a role model. এরপর, Finding out why she loves her career as much as she does might help you crystallize what’s missing from yours… .

লেখাটা বেশ কয়েকবার পড়তে পড়তে, একটু আগের ব্যথিত বাজারকন্যার আচম্বিত কণ্ঠস্বর নিঃশেষে মিলিয়ে যাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে সিরাজউদ্দিন।

অনেক বেলা করে ঘুম ভাঙে। কর্মহীন জীবনের এক-বুক অসাড়তা নিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার মতো উবু হয়ে পড়ে থাকে। বাইরে বাবা বিড়বিড় করে কীসব বলছে বোঝা যায় না। মাস শেষে বাবার হাতে উঠে আসে ভাড়াটিয়াদের ৪০-৫০ হাজার টাকা। নিজের উচ্চশিক্ষার প্রতিকূলে নানারকম জীবনমথিত ঘটনার সবাক চিত্র ওকে উদ্দেশ্যহীন যুবক বানালেও, জীবন সামনে এগোচ্ছে পুরো নির্দ্বিধায়। মা কেবল সময়মতো বাজারের একটা লিস্ট ধরিয়ে দেয়।

শরীর উলটে সিরাজউদ্দিন রাতের ডায়েরিটাকে দেখল। পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে গাঢ় বাদামি রঙের চটচটে দাগ। টেবিলের প্রান্তে না-পড়া ফোঁটাটা শুকিয়ে আছে কপালের টিপের মতো।

সন্ধ্যায় বেরোনোর সময় মা ম্লান মুখে তাকিয়ে আছে।

কিছু বলবে?

না।

বাজারের লিস্ট নেই?

না।

কাল কিছু একটা হয়তো ভুল করে আনিনি।

কই, না তো –

সিরাজউদ্দিন বেরিয়ে পড়ে। আপাতত গন্তব্য জানা নেই, তবে হাঁটার ভেতর একটা ছন্দ আসে। অন্যান্য দিনের মতো নয়। হাঁটার ছন্দে ছন্দে পুরো অনুভবে হতাশামুক্ত রৌদ্র-ছায়ার রোমান্টিক খেলা। কত নির্ভার! এরকম সরস রূপটি দেখে, ইংরেজি ম্যাগাজিনের শিরোনামের মতো কেউ একজন গদগদ কণ্ঠ ভেঙে বলেও বসতে পারে,  ‘Find a absolute (not roll) model’ শিরোনামের পরে অপরাপর যা কিছু, পুরোটাই বিনম্র, আপেক্ষিক বিচার আসে অনাবশ্যক গতি, একান্তই জাগতিক, অথচ মূর্তমান সত্যের বিপরীতে পদচিহ্নহীন ধোঁয়াশাটুকু আড়ালেই থেকে যায়।

সেই ভ্যানগাড়ির চা-দোকানিকে গিয়ে বলল, চা দাও, বলার কিছুক্ষণ পরই চা জুটে গেল। পরপর কয়েক চুমুক গলা দিয়ে নামার পর ঝিমুনি এলো। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে, শরীরকে আংশিক বাঁকিয়ে, ধীরে ধীরে দৃষ্টি-বোজা পলক চটকে চারপাশে তাকায়। যা কিছু দেখছে, তাৎক্ষণিক অন্যমনস্কতায় সবটাই এলোমেলো, মানুষের মুখ আর অঙ্গভঙ্গির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে কেবল  ঝড়ের প্রাবল্য, অজস্র ধূলিকণা উড়ছে। অদম্য ঝিমুনির কাছে মাথা নুইয়ে মহিলার ছোট্ট টুলটিতে বসে পড়ে। মহিলা মুখ ঘুরিয়ে দেখল, কিছু বলল না।

সম্ভবত মধ্যরাত। কৃষ্ণপক্ষের অনুজ্জ্বল চাঁদটাকে ভেঙে ভেঙে পাতলা মেঘের দল ছুটছে। বাজারের পাশে জনমানবশূন্য রাস্তাটির ওপর চাঁদের লোহিত আলোটা কাঁপছে সম্ভবত মেঘের কারণেই। যখন চারপাশে কেউ থাকে না, তখন নিজেকেই চোখে পড়ে বেশি। উপলব্ধির জগৎটাকেও রেখাঙ্কিত করা যায় নিরুপদ্রবভাবে। আর চোখ দিয়ে যদি ফোকাসের মতো গলে পড়ে অব্যক্ত দহন, সিরাজউদ্দিন বেশ বুঝতে পারে, এই নিমজ্জমান আলো-অাঁধারির রাস্তায় এটি আরো আলোকিত হতে থাকবে ততক্ষণ, যতক্ষণ শত শত শব্দপুঞ্জ আর অস্থিরতায় সরব না হবে প্রকৃতি।

বাজারের শেষ প্রান্তে উঁচু জায়গায় কুপি বাতির আলো নিভু-নিভু করছে। হালকা আলোয় স্পষ্টত কিছু মানুষের কম্পমান ছায়া অনুসরণ করে এগিয়ে যায় সিরাজউদ্দিন। গুনগুন করে কথা বলছে দুজন বৃদ্ধ। পাশে পেছন ফিরে বসে আসে একজন মহিলা। সিরাজউদ্দিনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঝট করে তাকায় বৃদ্ধ – খারে চান?

সিরাজউদ্দিন পালটা প্রশ্ন করে, কী করছেন এখানে?

বই রইছি, ঘুম আয় ন।

বাসা কই?

বাসা ছ্যালো, অন নই। পাহাড়ের মাটি পইরে ছাওয়াল পাওয়াল-বউ বেবাখতরে ঘুমোর মধ্ধো চাপাদি শ্যাষ খরি দ্যাছে।

একেবারে বোধশক্তিহীন সরল বর্ণনা। যেন এমনটি হবেই, না চাইলেও হবে, হতে থাকবে -। অনুশোচনা কিংবা কষ্টের সরল বোধ অবান্তর। শত-শত পদচিহ্নের ক্ষতরূপ নিয়ে যেমন নিঃসাড়ে পড়ে আছে বাজার, তার মধ্যরাতের কোলেই হয়তো জুটে যায় উত্তাপহীন নিরাশ্রয় মানুষ।

সিরাজউদ্দিন মহিলার দিকে মাথা তুলে বলল, সে কে?

বৃদ্ধ লোকটি কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে। মহিলা ধীরে ধীরে সামনে ঘুরতেই সিরাজউদ্দিন রীতিমতো বাকরুদ্ধ পাথর, কী দেখছে ও, মহিলার চোখ দুটি অগ্নিগোলক, ঠিকরে ঠিকরে উত্তাপ ঝরছে, অথচ ঠোঁটজোড়ায় স্মিত হাসি, ম্যাগাজিনের সেই মডেলকন্যার মতোই হাসি, পার্থক্য কেবল সাজসজ্জা-পরিবেশ। হাসিটা প্রসারিত করে বলল, কেমন আছো?

ওহ্ তুমি! তোমাকে কিনে নিতে বলেছিলে –

হি-হি-হি –

হাসির সঙ্গে চোখের অগ্নিঝরা উত্তাপ আছড়ে পড়ে সিরাজউদ্দিনের মুখে। তবু অস্বস্তির ভেতর মোচড় দিয়ে, আগুনের স্ফুলিঙ্গে মানুষ যেমন জড়োসড়ো বাঁকা, তেমনি একটা হীনকর পরিস্থিতির ভেতরও আশ্রয় নয়তো আশ্রয়ের ধ্রুবজ্যোতি সমূলে আঁকড়ে মহিলার একটি হাত চেপে বলল, যাবে না?

ওই ব্যাটা, কই যামু তর লগে, হাত ছাড়! চমকে উঠে সিরাজউদ্দিন, চা-চিক্রেতা মহিলাটি তীর্যকভাবে তাকিয়ে দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নেয়। পাশে চড়-খাওয়া ছেলেটি পুরু ঠোঁট প্রসারিত করে খিলখিল করে হাসছে।