শহীদ কাদরীর ঘরে-ফেরা

এক

বছরদেড়েক হলো গতায়ু হয়েছেন কবি শহীদ কাদরী। বাংলাদেশের অধিকাংশ কবি-লেখকের কথা তাঁদের মৃত্যুর পর খুব একটা মনে রাখা হয় না। এর কারণ শুধু এই নয় যে, আমাদের সম্মিলিত স্মৃতি বড় ক্ষণায়ু। বস্তুত, যে ২৪ ঘণ্টার অনবরত নিউজ সাইকেলে আমাদের বাস, তাতে যা কিছু এই মুহূর্তে ঘটে, কেবল তাই আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। একজন কবি, তাও যিনি জীবনের শেষ চার দশক দেশের বাইরে প্রায় অশ্রুত-নিভৃত জীবনযাপন করেছেন, তিনি বিস্মৃত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। শহীদ কাদরীর বেলায় ঘটেছে উলটো। যে মনোযোগ জীবদ্দশায় মেলেনি, এখন মৃত্যুর পর পাচ্ছেন তিনি।

কথাটা মোটেই লঘু অর্থে আমি বলছি না। তাঁর মৃত্যুর পরই দেখা গিয়েছিল শহীদ কাদরীর কবিতার প্রতি নবীন পাঠকদের কি প্রবল আগ্রহ। যে-কবিকে তারা কার্যত দেখেননি, কালেভদ্রে প্রকাশিত দু-চারটি নতুন কবিতা ছাড়া যাঁর রচনার সঙ্গে তাদের পরিচয় কার্যত শূন্য, তাঁর শবদেহ দেখতে শহিদ মিনারে এসে ভিড় জমিয়ে ছিলেন তারাই। কি প্রবল উত্তেজনার সঙ্গে এই কবির কাব্য পাঠের অভিজ্ঞতা ও আবিষ্কারের কথা তারা সেসময় বলেছিলেন সাহিত্য পত্রিকার পাতায়, লিটল ম্যাগাজিনে। প্রতীকী অর্থে হলেও, মৃত্যুর পর নিজ ঘরেই ফিরে এসেছিলেন কবি।

শহীদ কাদরীর প্রতি এই আগ্রহ যে ক্ষণকালীন – আজকের খবরের চক্র শেষ হতে না হতেই দলা পাকিয়ে তা বর্জ্য কাগজের মতো ছুড়ে ফেলে দেওয়া এক ঘটনা – তা মোটেই নয়, সেকথা বোঝা গেল এ বছরের বইমেলায়। কমবেশি একই সময় শহীদ কাদরীর

নাম-সম্বলিত চারটি নতুন বই বেরিয়েছে, এর দুটি তাঁর কবিতা, অন্য দুটি গদ্য। ইতিপূর্বে শহীদ কাদরীর কাছ থেকে পেয়েছিলাম মোট চারটি কাব্যগ্রন্থ, যার একটি প্রবাসকালে রচিত কবিতার সংকলন। এবারে পাওয়া গেল কবির পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ, তাঁর অগ্রন্থিত কবিতার একটি সংকলন, গোধূলির গান (প্রথমা প্রকাশনী)। অন্যটি তাঁর স্বদেশাত্মক কবিতার নির্বাচিত সংকলন, তোমাকে আঙটির মতো পরেছি স্বদেশ (বেঙ্গল পাবলিকেশন্স)। এছাড়া রয়েছে কবির প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী, আদনান সৈয়দের জানা অজানা শহীদ কাদরী (মাওলা ব্রাদার্স) ও নিউইয়র্কে তাঁর জীবনের শেষ দশ বছরের স্মৃতিভিত্তিক একটি ব্যক্তিগত ইউলজি, ফকির ইলিয়াসের শহীদ কাদরীর দরবারের দ্যুতি (অনিন্দ্য প্রকাশ)।

দুই

গোধূলির গান গ্রন্থের কিছু কবিতা পুরনো, কিছু কবিতা নতুন, তবে প্রায় সবগুলোই অধিকাংশ পাঠকের কাছে অপরিচিত। হঠাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো এক মুহূর্তে আমাদের আলোয় ভরিয়ে দেয়, এমন কিছু কবিতা রয়েছে এই গ্রন্থে, যার প্রতিটিই শহীদ কাদরীর পরিচিত কাব্যিক সুষমায় ম-িত। সেই পরিহাসপ্রিয়তা, শব্দের পরিমিত ব্যবহার, সামান্য আটপৌরে প্রতীকে এক গভীরতর অর্থ অন্বেষণের প্রেষণা, দ্ব্যার্থবোধক ইঙ্গিতময়তা। সর্বোপরি, এসব কবিতায় রয়েছে রাজনৈতিক নীতিবোধ, স্বদেশ চেতনা ও কবিতার শক্তিতে অবিচল আস্থা।

শহীদ কাদরী বরাবরই কবিতার শক্তিতে আস্থাবান, কবি তাঁর চোখে সেই ত্রুবাদুর যে সুন্দর আগামীদিনের বার্তা সবার আগে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। যেমন দেখি, গোধূলির গানের তারিখবিহীন একটি কবিতায় তিনি নিঃসংশয়ে উচ্চারণ করেন, কবি, তোমার বর্মগুলো বের করে নাও/ তোমার কবিতাই শ্রেষ্ঠবর্ম আজ (মানুষ নতুন শতকে)। একটি ঘাসের ডগাকে জেনারেলের ট্যাংকের চেয়েও ক্ষমতাসম্পন্ন বর্ণনা করে কি অনায়াসে তিনি উচ্চারণ করেন, অবিনশ্বর রবীন্দ্রনাথের কবিতার পঙ্ক্তির মতো বারবার ফিরে আসে তারা (হন্তারকদের প্রতি)। ‘আমাদের শেষ গানগুলো’ নামের একটি কবিতায় তিনি আগামীদিনের কবি ও কাব্য পাঠককে মনে করিয়ে দেন, এখন এক দুঃসময়ে আমাদের বাস হলেও আমাদের পুনরায় অপার ভালোবাসার গানগুলো গাইতে হবে, কারণ ‘অন্ধকার থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য গানগুলো আমাদের সম্বল।’

প্রবাস থেকে – কবির ভাষায়, যখন তিনি নির্বাসনে – যে কবিতাগুলো শহীদ কাদরী লেখেন তার অধিকাংশই স্বদেশভূমির জন্য এক নিরন্তর ও আহত কাতরতায় আবৃত। তিনি দেশ ছেড়ে ছিলেন বটে, কিন্তু দেশকে কখনোই ছাড়েননি, কবিতায় সে কথার প্রমাণ মিলেছে বারবার। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পালাবদলের পর যে নারকীয় যুগের আগমন, কবি তাকে কখনো মেনে নিতে পারেননি। মৌলবাদের ক্লেদাক্ত নখদন্ত তাঁকে কেবল আহত করেনি, ঘৃণার বিবমিষায় তাদের প্রত্যাখ্যান করেন কবিতাকেই অস্ত্র করে। গুপ্তঘাতকেরা তাঁর শহরে আশ্রয় নিয়েছে, একথা স্বীকার করে ২০১১ সালে লেখা একটি কবিতায় তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘তাদের নিধন করতে কবিতাকে অস্ত্রের মত ব্যবহার করতে চেয়েছি কতবার।’ গোধূলির গান কাব্যগ্রন্থের এই কবিতাগুলো আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিলো বাংলা সাহিত্যে অঙ্গীকারের কবিতা যে-কজন লিখেছেন, শহীদ কাদরী তাঁদের অগ্রগণ্য।

 

তিন

তোমাকে আঙটির মত পরেছি স্বদেশ কাব্য সংকলনটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবুল হাসনাত, তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমি। সারাজীবনে তাঁর প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা সর্বমোট শদুয়েক। তা থেকে স্বদেশাত্মক কবিতা বাছতে গিয়ে আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ করি স্বল্প দু-চারটি ছাড়া তাঁর প্রায় সব কবিতাই কোনো না কোনোভাবে স্বদেশের ভাবনায় রঞ্জিত। প্রথম কাব্যগ্রন্থ উত্তরাধিকারের প্রথম কবিতা ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’র কথাই ধরা যাক। আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকায় যেমন বলা হয়েছে, এই কবিতায় তিনি স্বদেশকে দেখেছিলেন ক্লেদময়, অপ্রসন্ন ও বিপন্ন এক অভিজ্ঞতা হিসেবে। সে ঊষর অথচ পরিবর্তনের সম্ভাবনায় উন্মুখ। ভবিষ্যতের প্রতি এই আস্থা কবি কখনোই পরিত্যাগ করেননি। ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’ কবিতায় বর্ষণের প্রতীকে বিপ্লবের এক মানচিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এই বিশ্বাসে অবিচল ছিলেন  যে, ‘এই প্লাবনে শহর হবে শুচিস্নিগ্ধ, ‘রাজস্ব আদায় করে যারা, চিরকাল গুনে নিয়ে যায়’, তারা সব পালাবে।

তাহলে একাত্তরই কি ছিল সেই প্লাবন? আমার নিজের কাছে সেকথাই মনে হয়েছে, শহীদ কাদরী যে সে কথা বিশ্বাস করতেন, তাঁর কবিতায় তার সমর্থন পেয়েছি। একাত্তরের খা-বদাহন তিনি দেখেছেন, কিন্তু পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপের ওপর এসে পড়া ভোরের আলোও তিনি দেখেছেন। এই আলোটাই সত্যি, এই অকৃত্রিম বিশ্বাস থেকে কী উষ্ণ আন্তরিকতায় তিনি উচ্চারণ করেন, উদ্ধত তলোয়ারের মত নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে ‘তোমাকে পরেছি স্বদেশ’। স্বদেশভূমে রাজনৈতিক অস্থিরতা তাঁকে উদ্বিগ্ন করে, মৌলবাদের উত্থান তাঁকে আহত করে, এখন দুঃসময় একথাও তিনি জানেন, অথচ ভবিষ্যতের প্রতি তাঁর আস্থা নিরুদ্বেগ ও অবিভক্ত। কারণ, ‘… সমস্ত পৃথিবীর ঝরা-পাতাদের চিৎকারকে ছাপিয়ে

ভূকম্পনে বিধ্বস্ত গ্রামের মন্দিরে

ঘণ্টাধ্বনির মতো,

জলোচ্ছ্বাসের পরের প্রথম ভোরের

আজানের মতো,

কবি তার উত্থানের গানটি গাইবে

অসময় বলো, দুঃসময় বলো,

গান থামবে না।’ (এখন সেই সময়)

 

চার

চেনা অচেনা শহীদ কাদরী গ্রন্থটি কবির প্রথম ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনী। বাংলা ভাষায় হাতেগোনা কয়েকজন প্রধান কবি/লেখক ছাড়া অন্য কারো পূর্ণাঙ্গ জীবনী কার্যত নেই। তাঁদের কবিতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে, কেউ কেউ পিএইচডিও করেছেন, কিন্তু সন-তারিখ মেনে কালক্রমানুসারী জীবনীগ্রন্থ আছে বলে আমি জানি না। এমনকি আমাদের প্রধানতম কবি শামসুর রাহমানকে নিয়েও কোনো পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ নেই। সেদিক দিয়ে চেনা অচেনা শহীদ কাদরী গ্রন্থটি জীবনচরিত সাহিত্য ধারায় একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন।

গ্রন্থটি রচিত হয়েছে কবির মৃত্যুর অতি অব্যবহিত পরেই। লিখেছেন এমন একজন যিনি কবিকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে, তাঁর জীবনের শেষ দশ-বারো বছর নিত্যদিনের বৈঠকি আড্ডার ভেতর দিয়ে। কবি ঢাকায় তাঁর বন্ধুদের কাছে পরিচিত তুখোড় আড্ডাবাজ হিসেবে। প্রবাসে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের পর, সেই সুযোগ থেকে তিনি বঞ্চিত হন প্রথম পঁচিশটি বছর। বস্টন থেকে ২০০৪ সালে স্থায়ীভাবে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করলে কবি ফিরে যান তাঁর যৌবনের দিনযাপনের অভ্যাসে। তখন থেকেই তিনি দুরারোগ্য বৃক্ক রোগে আক্রান্ত, চলাচলের সুযোগ সীমিত। ফলে নিজ গৃহের আরামসোফায় বসেই চলত আড্ডা। আদনান – এবং শহীদ কাদরীর দরবারের দ্যুতি গ্রন্থের লেখক ফকির ইলিয়াস ছিলেন সেই আড্ডার নিয়মিত সদস্য। বয়সের ব্যবধান তো ছিল, তদুপরি ছিল সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধার কৃত্রিম ব্যবধান। শহীদ কাদরী সে ব্যবধান কখনোই মানেননি, ফলে সেই ব্যবধান অতিক্রম করা অসম্ভব হয়নি আড্ডার সদস্যদের। আদনানও পেরেছিল। এই গ্রন্থ কবির প্রতি তরুণ এক লেখকের আনত শ্রদ্ধা, তার আভাসটি প্রচ্ছন্ন, তবে কবির জীবনের কম আলোকিত দিক সমূহ – এমনকি বিতর্কিত অধ্যায় সমূহ – উদ্ধারেও তিনি বিরত হননি, তা থেকে জীবনীগ্রন্থের গবেষক হিসেবে তাঁর নিষ্ঠার প্রমাণ দুর্লক্ষ্য নয়।

শহীদ কাদরীর জন্ম কলকাতায় ১৯৪২ সালে। শৈশবের মাত্র দশ বছর শহরটিতে তিনি কাটান, অথচ সেই শহরের স্মৃতি তিনি আজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন। একথা বলা সম্ভবত ভুল হবে না যে কলকাতার জন্যই এক ধরনের খ-িত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তিনি লালন করেছেন। অভিজাত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম, ভালোভাবে বাংলা শেখার আগে তিনি শিখেছেন উর্দু ও ইংরেজি। আদ্যোপান্ত নাগরিক, শহুরে জীবনের আলো ও অন্ধকার দুটোই তাঁর দেখা। তাঁর কবিতায় কখনো যে নেতিবোধ নজরে আসে, অথবা আরো স্পষ্ট করে বললে, পাপচেতনার যে প্রকাশ দেখি, তা সম্ভবত কলকাতার কারণেই। এর কিছুটা যাপিত, কিছুটা স্মরিত, তবে অধিকাংশই কল্পিত। এই সিদ্ধান্ত অবশ্য আমার, আদনানের নয়।

কলকাতা, বিশেষত যে গৃহে তাঁর শৈশব কেটেছে, তার প্রতি শহীদ কাদরী কতটা কাতর, জীবনসায়াহ্নে এসেও তার প্রমাণ মেলে গ্রন্থভুক্ত একটি উদ্ধৃতি থেকে। ১৯৫২ সালে যেদিন কলকাতা ছেড়ে চলে আসেন কবি, সেকথা স্মরণ করে তিনি আদনানকে বলেছেন :

‘সবাই ট্যাক্সিতে উঠতে যাবে ঠিক তখন আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন হাহাকার করে উঠল। আমার এই প্রিয় বাড়িটি ছেড়ে চলে যেতে হবে? আর কখনো এই বাড়িতে আসব না? এসব ভাবতে ভাবতেই এক দৌড়ে চলে গেলাম বাড়ির প্রিয় আঙ্গিনাটার সামনে। তারপর বাড়িটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে আবার এক দৌড়ে বড় বড় সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উঠে গেলাম দোতালায় চিরচেনা ছোট্ট চিলেকোঠায় যেখানে আমি থাকতাম। সেই ঘরের প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে চক দিয়ে বড় বড় করে নিজের নাম লিখলাম শহীদ কাদরী, শহীদ কাদরী।’

আদনানের গ্রন্থটির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো এই রকম অসংখ্য ছোটখাটো ব্যক্তিগত স্মৃতির রোমন্থন। অধিকাংশই কবির নিজ মুখে শোনা, কোনো কোনোটা বা তাঁর নিকট কোনো বন্ধুর বয়ানিতে। কেমন বৈপরীত্যে ভরা তাঁর জীবন, এই অন্তরঙ্গ গল্প-কথায় তাঁর একটি কৌতূহলোদ্দীপক চিত্র প্রকাশিত হয় এই গ্রন্থে। মানুষ শহীদ কাদরীকে বুঝতে এই টুকরো গল্পগুলো আমাদের সাহায্য করে। যেমন, ঢাকায় তাঁর শৈশবের এই গল্পটি। একদিন শহীদ কাদরী আবিষ্কার করলেন তাঁদের বাসার গৃহভৃত্যটি বাজারের পয়সা থেকে কিছু আধুলি-সিকি মেরে দিচ্ছে।

‘প্রথমে ভাবলাম ভাইয়াকে (কবির বড় ভাই শাহেদ কাদরী) বলি। হঠাৎ মাথায় দুষ্ট একটা বুদ্ধি খেলে গেল। ঘটনাটা বলে দিলে তো সব শেষ, সে বাজারের পয়সা চুরি করে জমালে সেটাতো আমারই লাভ! আমি সাথে সাথে পুরো বিষয়টা চেপে গেলাম। কাউকে কিছু বললাম না। সে চুরি করে জমায় আর আমি যখন তখন লুকিয়ে সেখান থেকে তার চুরির ধনে হাত দিতে শুরু করি। একদিন বিষয়টা ভাইয়া কীভাবে জানি জেনে গেল। আমিতো ধরা পড়লামই, চাকরটাও ধরা পড়লো।’

শহীদ কাদরী ধীমান ও শিক্ষিত কবি হিসেবে তাঁর সমসাময়িক বন্ধুদের কাছে পরিচিত ছিলেন। এজন্য তাঁকে প্রস্তুত হতে হয়েছিল। নিয়মমাফিক স্কুলে পাঠ গ্রহণ তাঁর বেশিদূর এগোয়নি, কিন্তু অনতি-কিশোর বয়স থেকেই বইকে তিনি নিত্যসঙ্গী করেছিলেন। এ কাজে তাঁকে বলতে গেলে হাত ধরে পথ শিখিয়েছেন শাহেদ কাদরী। কবির নিজের জবানিতে সে স্বীকৃতি এই গ্রন্থে রয়েছে।

ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘প্রিকশাস’ – সোজা বাংলায় ডেপো – শহীদ কাদরী ছিলেন সেরকম একজন। মাত্র তেরো বছর বয়সে স্পন্দন পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর প্রথম কবিতা। চৌদ্দ বছর বয়সে বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর কবিতা ‘এই শীতে’।  তাতে এ-রকম একটি আকস্মিক বাক্য ‘বসন্তের শিথিল স্তন নিঃশেষে পান করে নিঃস্বার্থ মাটি’, আমাদের ইঙ্গিত দেয় চেনাপথ ধরে হাঁটার মানুষ যে তিনি নন, কাব্যচর্চার ঊষালগ্ন থেকেই তাঁর প্রমাণ রয়েছে। বস্তুত, তাঁর কবিতার আধুনিকতা ঠিক প্রথাগত বাংলা কবিতার হাত ধরে আগমন ঘটেনি, ঘটেছে মুখ্যত পশ্চিম ইউরোপীয় কবিতাকে আশ্রয় করে। এই গ্রন্থে জানতে পারি ফরাসি কবি ত্রিস্তঁজারার একটি কবিতা পড়ে কবিতার আরেক চেহারা আবিষ্কার করেন শহীদ কাদরী। ‘তখন থেকেই ভাবতে শুরু করি যে কবিতা শুধু সুন্দরের বন্দনা হতে পারে না। কবিতার ক্ষেত্র আরো ব্যাপক।’ (আদনান  জানিয়েছেন, জারার যে কবিতাটি কবিকে প্রভাবিত করে তার নাম ‘মিরর অব ফ্রেঞ্চপোয়েট্রি’, কিন্তু এই নামে জারার কোনো কবিতা আমি খুঁজে পাইনি। সম্ভবত কবি এই নামের কোনো গ্রন্থের কথা বলে থাকবেন)।

শহীদ কাদরী সেই কৈশোরেই শামসুর রাহমানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন এবং বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁরা দ্রুত বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। এই দুই কবির বন্ধুত্বের এই পর্বটি গভীর অভিনিবেশ নিয়ে পুনঃনির্মাণ করেছেন আদনান। শহীদ কাদরীর নিজস্ব বয়ান তো রয়েছেই আরো অনেক সমসাময়িক কবি ও বন্ধুদের বিবরণে এই দুই অসম বয়সী কবির বন্ধুত্ব ও অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য ভাষ্য উন্মোচিত হয় এই গ্রন্থে। শুধু শামসুর রাহমান নয়, সেই সময়ের অন্যান্য প্রধান কবি ও লেখক, যেমন আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দিন, বেলাল চৌধুরী ও মাহমুদুল হক – তাঁদের সঙ্গেও নিকট-বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কবির। এই পর্বটি নির্মাণে আদনান এখন জীবিত এমন অনেক কবি বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের ভাষ্যে সর্বদা কবির প্রতি যে শুধু প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে তা নয়, কবিরপ্রতি কটু – এমনকি ঈর্ষাসূচক মন্তব্য আমাদের শুনতে হয়। আদনানের গ্রন্থটি যে শহীদ কাদরীর প্রতি একটি নিঃশর্ত প্রশস্তিগাথা নয়, এই বহুকৌণিক অবলোকন থেকে সেকথা ধরা পড়ে।

গ্রন্থটির অন্য বৈশিষ্ট্য, আদনান শহীদ কাদরীর কাব্যজীবন উদ্ধারের বদলে তাঁর মানবজীবন উদ্ধারেই অধিক আগ্রহী মনে হয়েছে। এটি গ্রন্থটির দুর্বলতা, সেটি তার শক্তিও বটে। অতিউৎসাহী কোনো নবীন কাব্যানুরাগীর হাতে পড়লে এই গ্রন্থ সম্ভবত শহীদ কাদরীর কবিতার একটি সন্দর্ভ হয়ে উঠত। আদনান সে পথ অনুসরণ করেননি, আমার বিবেচনায়, তাতে পাঠকের লাভ হয়েছে বেশি। কবির কাব্যপ্রতিভা উদ্ধারের জন্য প্রধান আশ্রয় তাঁর কবিতা। তাঁর লিখিত সব কবিতাই এখন হাতের কাছে রয়েছে। কিন্তু এই কবির জীবন, যার ভিত্তিভূমে রচিত হয়েছে এসব কবিতা, আমাদের কাছে তা যত পরিজ্ঞাত হবে, ততই উন্মুক্ত হবে তাদের অন্তর্গত বার্তা।

এই গ্রন্থের বৃহত্তর অংশে রচিত হয়েছে কবির প্রবাস জীবন – প্রথমে জার্মানি, পরে ইংল্যান্ড ও সবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতদিন এই পর্বের অনেক কিছুই

আলো-আঁধারিতে ঢাকা ছিল, বাস্তবের চেয়ে মিথ হয়ে উঠেছিল অধিক জনশ্রুত। প্রায় চার দশকের এই নির্বাসিত জীবন উদ্ধারে আদনান দ্বারস্থ হয়েছেন কবির স্ত্রী, পুত্র, নিকট-দূর বন্ধু-বান্ধবের। তাঁদের বয়ানিতে যে জীবনের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই, তা শুধু বিচিত্র ও বর্ণিল নয়, বেদনা ও আক্ষেপের এক নীরব মানচিত্রও বটে। বৃক্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর, শেষ জীবনে নীরা কাদরীর সঙ্গে প্রণয় ও বিবাহ কবিকে দ্বিতীয় জন্ম দিয়েছিল। এ কেবল ব্যক্তিগত জীবনযাপন অর্থে নয়, শহীদ কাদরীর কাব্যিক সাফল্যের নিক্তিতেও। কবির চতুর্থ গ্রন্থ আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও, প্রকাশ সম্ভব হয়েছিল নীরা কাদরীর নিরন্তর সাহচর্য ও সমর্থনের কারণেই। এই সময়ে কবি ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ নামে একটি ত্রৈ-মাসিক কাব্য সন্ধ্যার পৌরোহিত্য শুরু করেন। তাঁর এই দ্বিতীয় জন্মের প্রতিটি অধ্যায় বিপুল পরিশ্রমে উদ্ধার করে এনেছেন আদনান। শুধু পারিবারিক ও কর্মজীবন নয়, তাঁর কাব্যভাবনা ও সমকালীন কবিদের প্রতি তাঁর খোলামেলা মূল্যায়নও এতে রয়েছে। একটি সংক্ষিপ্ত জীবনাক্রম ও অসংখ্য দুর্লভ ছবি বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে।

 

পাঁচ

ফকির ইলিয়াসের শহীদ কাদরীর দরবারের দ্যুতি গ্রন্থটি নানা অর্থে আদনানের কবি জীবনীর একটি সম্প্রসারণ। ইলিয়াসের লক্ষ্য কবির সমগ্রজীবন নয়, শুধু তাঁর নিউইয়র্কের জীবন। ইলিয়াস ছিলেন,  ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’র নিয়মিত সদস্য। শহীদ কাদরী এই কাব্য সন্ধ্যায় একাধারে পাঠক, শ্রোতা ও শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে গেছেন। কবি হিসেবে ইলিয়াস সুপরিচিত, শহীদ কাদরী তাঁর কবিতা ভালোবাসতেন, অনেক কাব্য সন্ধ্যায় ইলিয়াসকে তিনি ভিন্ন গুরুত্ব দিয়ে কবিতা পাঠে আমন্ত্রণ জানাতেন। কবির মৃত্যুর অব্যবহিত পরে রচিত এই গ্রন্থে জ্যেষ্ঠ কবির প্রতি নিজের অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার বিবরণ দিয়েছেন ইলিয়াস।

‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ সত্যি একটি অভাবিত ঘটনা। ২০১১-১৬ সালে কবির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটানা পাঁচ বছরেরও বেশি প্রতি তিন মাস অন্তর এই আসর বসেছে। বাংলা ভাষার সেরা কবিতা থেকে পাঠ ছাড়াও থাকত প্রবাসের প্রতিশ্রুতিশীল কবিদের কবিতা পাঠ। যারা যৌবনের শহীদ কাদরীকে চেনেন – অসহিষ্ণু, উদ্ধত ও পরিহাসপ্রিয় – তাদের কাছে এই শহীদ কাদরী সম্পূর্ণ এক ভিন্ন মানুষ। প্রতিটি আসরের পরিকল্পনা স্ত্রী নীরাকে নিয়ে তিনি করতেন গভীর আগ্রহে, মনে হতো একটি বড় ঘটনার অপেক্ষায় তিনি ক্ষণ গুনছেন। নিজে কবিতা বাছতেন, সে কবিতার পাঠকদের নির্বাচিত করতেন, এমনকি কোনো কোনো পাঠককে ডেকে এনে উচ্চারণ ও পাঠ শুদ্ধ করে দিতেন। প্রতিটি আসরে থাকত উপচেপড়া দর্শক, তাদের সবাই যে কবি অথবা কবিতাপ্রেমী, তাও নয়। শহীদ কাদরীর সান্নিধ্য লাভ ছিল একটি উদ্দেশ্য, কিন্তু এই আসরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারাই ক্রমশ হয়ে উঠতেন কবিতার নিয়মিত পাঠক। আমার জানা নেই, বাংলা সাহিত্যের আর কোনো প্রধান কবি এমন যতেœ, এমন পরিচর্যায় কবিতার পাঠক সৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ করেছেন।

অন্য আরেক কারণে ‘কবিতা সন্ধ্যা’ উল্লে­খযোগ্য। শহীদ কাদরী পরিকল্পিতভাবে এই ত্রৈমাসিক কাব্য আসরে বাংলাদেশের

চেনা-অচেনা কবিদের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করতেন। আমরা জানি উত্তর-তিরিশের দুই প্রধান কবি – বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে – তাঁর কাছে একটি ভিন্ন আসন পেয়েছিল। এঁদের নির্বাচিত কবিতার পাঠ তিনি এই কাব্য সন্ধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন, মুখ্যত সেসব কবিতার কারিগরি কৌশল নবীন পাঠকের কাছ অবমুক্ত করতে। যেন কবিতার ক্লাস নিচ্ছেন, এভাবে সেসব কবিতার গূঢ়ার্থ নির্ণয় করে দিতেন। কিন্তু প্রবাসী পাঠক ও কবিকে তিনি উৎসাহিত করতেন বাংলাদেশের কবিতার সঙ্গে পরিচিত হতে। এই কাব্য আসরের অধিকাংশ কবিতাই ছিল সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশের কবিতা।

ইলিয়াস তাঁর গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশে ‘কবিতা সন্ধ্যা’র জন্ম থেকে তাঁর বিবর্তনের নানা চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি এই আসরের কেবল নিয়মিত পাঠকই ছিলেন না, এর একজন সংগঠকও। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি, শহীদ কাদরীর সুপ্ত ইচ্ছা ছিল তিনটি – বাংলা কবিতার একটি সংকলন সম্পাদনা, একটি ভালো সাহিত্য মাসিক সম্পাদনা এবং নিয়মিত একটি কাব্য সন্ধ্যার আয়োজন। এই তিন ইচ্ছার কেবল শেষেরটাই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল পূর্ণ করার।

ইলিয়াস উপস্থিত ছিলেন এমন বেশ কয়েকটি আসরের বিবরণ তুলে ধরেছেন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভাষায়। এই বিবরণের প্রামাণিক মূল্য অস্বীকার করা যাবে না। কবিতাকে নবীন পাঠকের কাছে কীভাবে অর্থবহ ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা করা যায়, ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ ছিল তার একটি সফল ক্লিনিক। ভবিষ্যতে অন্য কেউ যদি একই উদ্দেশ্যে ভিন্ন কোনো কবিতা সন্ধ্যার আয়োজনে আগ্রহী হন, ইলিয়াসের বিবরণ তাঁদের কাছে একটি মূল্যবান দলিল হবে।

শহীদ কাদরী কথা বলতে ভালোবাসতেন, সেসব কথার অধিকাংশই কবিতা ও সাহিত্য নিয়ে। ইলিয়াস কবির নিজস্ব বয়ানিতে তাঁর কাব্য ভাবনার অপ্রকাশিত

অথবা স্বল্পালোকিত নানাদিক পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন। যেমন – আধুনিকতা নিয়ে কবির বক্তব্য, ‘তুমি তোমার সময়কে তোমার নিজের মাঝে ধারণ করবে – সেটাই আধুনিকতার সফল চিত্রায়ণ।’ অথবা কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে তাঁর এই মন্তব্যটি, ‘তাঁর কবিতা বাংলা কবিতার শত শত বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করেছে। তাঁর কবিতার গীতল ধারা আমাদের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।’

গ্রন্থের প্রথম অংশটি শহীদ কাদরীকে মূল্যায়নের একটি চেষ্টা। ইলিয়াসের লক্ষ্য, একদিকে মানুষ শহীদ কাদরী – অন্যদিকে কবি শহীদ কাদরী, এক মানুষের এই অবিভক্ত দুই সত্তা উদ্ধার। গ্রন্থভুক্ত রচনাগুলো পত্রিকার কলাম ঢঙে লেখা, সরল ও একরৈখিক। ছোট-বড় নানা স্মৃতি তাঁর কবিকে নিয়ে – কোনোটা অতি ব্যক্তিগত, কোনোটা কবিতা নিয়ে বাহাস। শহীদ কাদরী তাঁকে হাতের পাঁচ আঙুল দেখিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘পাঞ্জাতন বোঝ?’ তিনি চেয়েছিলেন হাতের পাঁচ আঙুলের মতো মোট পাঁচটি গ্রন্থ রচনার কথা বোঝাতে। তিনটি গ্রন্থ দেশে থাকতেই প্রকাশিত, চতুর্থটি, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও জীবনের প্রান্তসীমায় নিউইয়র্ক থেকে সংকলিত। এই শেষ বইটি নিয়ে একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ইলিয়াস। কবি-পতœী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে একটি কবিতার খোঁজ চেয়েছিলেন, কবিতার শিরোনাম ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’। কবিতাটি হারিয়ে ফেলেছেন কবি, তাঁর কাছে পা-ুলিপিও নেই। অবাক ব্যাপার, কবিতাটি ইলিয়াসের কাছে আছে, কবি নিজে তাঁর বিয়ে উপলক্ষে স্মারক হিসেবে লিখে দিয়েছিলেন। কিছুটা চোর-পুলিশ খেলার পর ইলিয়াস নীরা কাদরীর কাছে সে কবিতাটি পৌঁছে দিলেন। পরে এই একই শিরোনামে প্রকাশিত হয় চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ।

ছয়

১৯৯২ সালে ঢাকার সাহিত্য প্রকাশ যখন কবির প্রথম তিনটি বই একত্রে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়, শহীদ কাদরী তাতে সানন্দ সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে এমন একটি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন, ‘মাত্র তিনখানা অপুষ্ট ক্ষীণ কলেবরের বই নিয়ে মহাকালের দ্বারে কড়া নাড়ার যে আগ্রহ আমি প্রকাশ করলাম তা আকাট মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।’ আমার নিজের বিশ্বাস, কবি তাঁর জীবদ্দশাতেই জেনে গিয়েছিলেন যত স্বল্পসংখ্যক কবিতাই তিনি লিখে থাকুন না কেন, বাংলা কবিতার বিশ্বকোষে তাঁর অন্তর্ভুক্তি অনিবার্য। অন্য কেউ নয়, নতুন প্রজন্মের কবি ও কবিতা পাঠক তাঁর কবিতার প্রতি যে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাতেই এই অনিবার্যতা প্রমাণিত হয়। নতুন দুটি কাব্যগ্রন্থ ও দুটি গদ্যগ্রন্থ সে কথারই আরেক প্রত্যয়ন।