এক অসামান্য জন্মকথা

অমিত  বন্দ্যোপাধ্যায়

বা

ঙালিদের ছোটমাপের মানুষ ভাবা কেমন একটা অভ্যাস করে নিয়েছিল ‘মহামান্য’ পাক শাসকরা। মানুষ মেনে নিয়েও অসম্মান করা যায়। জাত তুলে, শারীরিক গঠন নিয়ে। এই অসম্মান করাটা যেন তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। কেউ বলেছে, বাঙালিরা নিচু জাত। কেউ আরো আক্রমণাত্মক, বাঙালিরা বেঁটে ও কুৎসিত।

পূর্ব পাকিস্তানের এই নিচু জাতের বেঁটে ও কুৎসিত মানুষগুলোকে শায়েস্তা করতে ২৫ মার্চ ১৯৭১ মধ্যরাতে কয়েক ব্যাটালিয়ন বাছাই করা ঘাতক নামিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ‘নয়া নবাব’রা। রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছিল ‘নিচু জাতে’র বাসভূমি।

সেদিনের পরিস্থিতি বুঝতে একটি প্রতিবেদন থেকে ছোট্ট অংশ উদ্ধৃত করা হলো : ২৫ মার্চ রাত বারোটা। ঢাকার হাটখোলা রোডের মোড়ে একটি সংবাদপত্র অফিসে টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলতেই প্রশ্ন হলো, শুনছি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আর ভুট্টো নাকি আজ রাতে প্লেনে ঢাকা ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সেনাবাহিনী রাজপথে নেমেছে? প্রশ্নের জবাব দেওয়া হলো না, টেলিফোনের তারে ভেসে এলো প্রচ- গোলাগুলির শব্দ, ক্ষীয়মাণ কণ্ঠে জয় বাংলা সেøাগান। রাত দুটোর আগেই ঢাকা শহরে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। চারদিকে তখন আগুনের লেলিহান শিখা আর হাজার কণ্ঠে অন্তিম আর্তনাদ। সারা বাংলাদেশে শুরু হলো জঙ্গি তা-ব।

যদিও তখন এই ভূখ-ের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পূর্ব পাকিস্তান। বাংলাদেশ জন্ম নিচ্ছে। ঘরে ঘরে কাঁপছে জন্মের বেদনা। রক্তস্নানে সূর্য উঠছে।

সাবেক নেত্রকোনা মহকুমার প্রান্তিক ও অনুন্নত ভাটি অঞ্চলের দুটি গ্রাম হিন্দুপ্রধান শ্রীমন্তপুর ও মুসলমানপ্রধান অমৃতপুরের মানুষজন তখন এই খবর থেকে অনেক দূরে। তাদের বসবাস সবদিক থেকে এতটা দূরে যে, ঢাকা শহরকে অনেকটা রূপকথার দেশ মনে করেন তারা। গণহত্যা শুরুর পরদিন অন্যান্য দিনের মতোই নিজস্ব নিয়মে চলেছে শ্রীমন্তপুর। কৃষকরা মাঠে গেছেন, ভোররাতে জাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন জেলেরা, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাওয়ায় মাদুর বিছিয়ে পড়তে বসে গেছে ছেলেরা-মেয়েরা, উনুনের ধোঁয়া উঠছে রান্নাঘর থেকে, ছোটরা ক্ষুধার জানান দিচ্ছে চেঁচিয়ে। অর্থাৎ রোজকার মতো স্বাভাবিক। মন্থরগতিতে হলেও একদিন সেই তা-ব, সেই হত্যালীলার খবর পৌঁছায়। যাবতীয় বীভৎসতা গ্রামের বাতাস দুঃস্বপ্নে ভরে দেয়। ভাতের থালায় আতঙ্ক, বালিশের গায়ে আতঙ্ক। কিন্তু বিস্মিত তারা একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান না : নিজের দেশের মিলিটারি নিজের দেশের মানুষদের মারে কী করে এবং ঘরের মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় কীভাবে? ক্রমে খবর আসে, হিন্দুরাই মিলিটারির প্রথম টার্গেট। শ্রীমন্তপুর ও অমৃতপুরের জোয়ান ছেলেপুলেরা হাত ধরাধরি করে দাঁড়ায়। রাত-পাহারা দেয়। কিন্তু যখন জানা গেল যে, মিলিটারির নৃশংস আক্রমণ রোখা রাত-পাহারার কর্ম নয় এবং হিন্দুদের নিকেশ করতে রাজাকার, শান্তিবাহিনী ইত্যাদি তৈরি হয়েছে, বয়স্করা বিবেচনা করলেন যে, হিন্দুদের গ্রাম তথা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই সমীচীন। কারণ হিন্দুদের মারতে এসে মিলিটারি মুসলিম পরিবারেও চড়াও হতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হিন্দুরা ফিরবে। ঘরবাড়ি, জমিজমা ও অন্য যা কিছু তা যেমন আছে তেমনই থাকবে। বয়স্ক মুসলিম প্রতিবেশীদের পরামর্শ, বর্ষা শুরু হয়ে গেছে, নৌকা করে বর্ডার পেরিয়ে চলে যাওয়া সমস্যা হবে না।

রাজাকার, শান্তিবাহিনী সম্পর্কে লোকমুখে যে-খবর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে ছিল, তা একশ শতাংশ নির্ভুল। পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত তথ্য বলে যে, অবাঙালি ও বাঙালিদের ভেতর যারা পাকিস্তানের প্রতি অনুগত, তাদের নিয়ে সেনাবাহিনী এক লাখ রাজাকার বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সারাদেশ থেকে লোক জোগাড় করা হয়। এছাড়া তৈরি হয় আলবদর ও আলশামস। আলবদরের সদস্যরা পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থি অধ্যাপক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও চিকিৎসকদের হত্যা করে। শেখ মুজিবের সঙ্গে শেষ বৈঠকে মদের গ্লাস হাতে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, বাঙালিদের উচিত শাস্তি দেওয়া হবে। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন অসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি এক মার্কিন কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের মাটি হিন্দুশূন্য করা। সুতরাং শুরু হলো আবার দেশত্যাগ।

বাংলাদেশ যখন জন্ম নিচ্ছে, হাজার হাজার উদ্বাস্তুও তখন জন্ম নিচ্ছে।

একাত্তরের রক্তমথিত আবহে নতুন করে দেশত্যাগের ছবিটি তুলে ধরেন রাজা সরকার। মুক্তিযুদ্ধ এবং হিন্দুদের দেশত্যাগ এখানে পাশাপাশি আছে। বইয়ের নাম ফিরে দেখা এক জন্মকথা – একাত্তরের উত্তাল আবহে। এই ফিরে দেখায় দেশত্যাগ একটি বাস্তবতা, তার পাশে পূর্ণ মর্যাদায় আছে দেশে থেকে যাওয়ার তীব্র আকুতি, দেশের আবহমান অনুভবে সংলগ্ন থাকার গভীর আনন্দ। রাজা সরকারের দেখা ও লেখা এ-কারণেই অন্য বহুতর বিবরণ বা লেখালেখির চেয়ে স্বতন্ত্র, অন্যরকম। ঘরানাটাই আলাদা। দেশভাগ দেশত্যাগের নানাবিধ জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজেন লেখক জনজীবনে, সাধারণ মানুষের যাপনে।

দেশভাগ তথা বাংলাভাগ ও দেশত্যাগ সম্প্রতি বিশদ চর্চার বিষয় হয়েছে। অ্যাকাডেমিক স্তরেও আগ্রহ বাড়ছে ক্রমে। অনেক বই লেখা হচ্ছে। বাজার তৈরি হচ্ছে। বাণিজ্যও হচ্ছে। এটাই নিয়ম, বাজার সব জায়গাতেই ভাগ বসায়। রাজা সরকার বাজার থেকে দূরে থাকেন, বাজারের মুখ চেয়ে লেখেন না। কথাটা বলা যায় তাঁর এ-বিষয়ে আরেকটি বই ২০১৩ সালে প্রকাশিত আঁতুড়ঘরের ভিত্তিতে। সেখানে পড়েছিলাম, ‘আগ্রাসী মানুষের দয়ার উপর বাঁচা এক জিনিশ আর নিজের অধিকারে বাঁচা এক জিনিশ। ঐ সময়গুলোতে [ষাটের দশক] তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি হিন্দু নামক দুর্ভাগা সম্প্রদায়টির অবস্থাটা ছিল এই দুই ধরনের বেঁচে থাকার মধ্যে ছিবড়ে হওয়া। আইন কানুন দেশ রাষ্ট্র – সবই আছে। তবু যেন সব বিলীন। তখন পর্যন্ত শুধুমাত্র যেটুকু সৎ সামাজিকতা অবশিষ্ট ছিল একমাত্র তার উপর নির্ভরশীল ছিল সবাই। কিন্তু তা দিয়ে আর কতদিন চলে!’ ফলে সিদ্ধান্ত নিতে হলো দেশ ছাড়ার। একটি পরিবারের তিন ভাই, সঙ্গে তাদের আমাদের ঠাম্মা পালিয়ে বর্ডার পার হয়। তারপরও বাড়িতে থেকে যাবে মা-বাবাসমেত আরো দুই বোন এক ভাই। যারা তখনো নিতান্তই শৈশবে। অর্থাৎ মরলে যেন সবাই না মরে – অন্তত কেউ কেউ বাঁচুক। পরিবারটি এভাবেই প্রথম ভাঙল। যারা পালাবে তাদেরও ঠিকানা অনির্দিষ্ট। কোথায় যাবে, কোথায় উঠবে কোনোটারই ঠিক নেই। সেই পলায়নের সাল ছিল ১৯৬৪। রাজা সরকারের বয়স তখন মাত্র ১২। আঁতুড়ঘরে সেই দেশত্যাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের বর্ণনা আছে। সে-বর্ণনা বাস্তবিকের, বাজারের টানে অবাস্তবিকের আশ্রয় ও প্রশ্রয় নেই। দিন যায়, দশক দশক পেরিয়ে যায়, রাজা সরকারের বয়স বাড়ে, তবু ‘রাতে স্বপ্ন দেখি বালক বয়স। স্বপ্ন দেখি ঘুরে বেড়াচ্ছি শ্রীমন্তপুর

গ্রামে। শ্রীমন্তপুর আমার জন্মগ্রাম। এখন সেটা অন্য দেশ। ওখানে এখন ইচ্ছে করলেই যাওয়া যায় না। এসব কথা কি কাউকে বলা যায়? সত্যি আর বলা যায় না। বললেই বলবে নস্টালজিক। এ তো ভাল লক্ষণ নয়।’

তবু আবার আসে শ্রীমন্তপুর। নিছক নস্টালজিয়া নয়। জিজ্ঞাসার উত্তরের খোঁজে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিপ্রতীপে মুক্তিযুদ্ধ ধর্মের ঊর্ধ্বে মানুষকে দেশপ্রেমে কতটা সংহত করেছে? একাত্তরের ফৌজি তা-বে শহর-গ্রামাঞ্চল কাঁপছে তখন। ‘নেত্রকোনায় এখন আর লোক কই, যা আছে সব রাজাকার, শান্তি [বাহিনী। পাক মিলিটারিকে মদদ দেওয়ার জন্য তৈরি] আর মিলিটারি। সব পলাইছে। হিন্দু তো একঘরও নাই – আওয়ামী করা মুসলমান নেতাকর্মী কেউ নাই। আর রাত হলেই শুধু খুনাখুনি আর গোলাগুলি।’ প্রসঙ্গত, ইতিহাস থেকে কিছু তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। সেই সময়ের পাকসেনা কমান্ডার টিক্কা খান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলার কসাই হিসেবে চিহ্নিত হন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি স্মৃতিচারণায় বলেছেন, টিক্কা খান পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে অসামরিক মানুষকে হত্যার হুকুম দেন। টিক্কা খানের হুকুম ছিল – আমি জমিন চাই, মানুষ চাই না। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি বলেছেন, সবুজ পূর্ব পাকিস্তানকে লাল করে দেওয়া হবে। ফিরে দেখা এক জন্মকথায় এ-ছবিটা এভাবে আছে : ‘উপর মহল থেকে বলা হয়েছে মানুষ চাই না – মাটি চাই। প্রয়োজনে সব শেষ করে দাও। মানুষ আমরা পয়দা করে নেব। একদম খাঁটি মুসলমান।’ দেশজোড়া রক্তপ্লাবন, অরাজকতার মধ্যে একটা শব্দ ক্রমে অঞ্চলে অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। শব্দটা হলো ‘সংগ্রাম’, যা মুক্তিযুদ্ধের পরিপূরক একটি অসামরিক শব্দ। ‘অমুক জায়গার সংগ্রামের খবরডা হুনছুইন নাহি’ বা ‘হালার পুতেরা সংগ্রামের ডরে আর এই বর আইত না।’ পাক ফৌজের কর্তারা এ-প্রশ্নের জবাব পায় না যে, নিচু জাতের, বেঁটে ও কুৎসিত লোকগুলো এত সাহস পায় কোথায়? এত খুন-ধর্ষণের পরও লড়ার হিম্মত কীভাবে থাকে? ব্রিজের পর ব্রিজ ভেঙে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। পাকসেনা ফাঁদে পড়ার ভয়ে পালায়। মুখোমুখি যুদ্ধে হেরে পালায়। ‘ব্ল্যাডি বাঙালি’ দেশপ্রেম শিখল কবে? ফিরে দেখা এক জন্মকথায় মুক্তিযুদ্ধের অনুষঙ্গ আছে প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে দৃশ্যে-কথোপকথনে। এত বাস্তব সেসব যে, যুদ্ধ না দেখেও যুদ্ধের আবহে বসবাস করতে হয়।

একটি পারিবারিক কাহিনির আধারে গড়ে ওঠে ফিরে দেখা এক জন্মকথা। অধ্যাত্মচর্চায় সংসার-উদাসীন রবীন্দ্রবাবু এবং তাঁর স্ত্রী বাধ্যত বৈষয়িক সুপ্রভা। দেশে কী হলো বা না হলো তাতে কিছুমাত্র আগ্রহ নেই রবীন্দ্রবাবুর। ১৯৬৪ সালে পরিবারটি ভেঙেছে। রবীন্দ্রবাবুর তিন ছেলে আর তার বৃদ্ধ মা দেশান্তরি হন। এক ছেলে ও এক মেয়ে এখনো তাদের সঙ্গে। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। তাদের একজন নিয়তি মুক্তাগাছার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি এলো দেশের ও নিজের অনেক দুঃসংবাদ নিয়ে। তিন সন্তানের মা নিয়তি জানাল, চেনা-অচেনা লোকজন বাড়ির সামনে ঘুরছে। বলছে, বাঁচতে চাইলে টেহা দেওন লাগব। মাইয়া দেওন লাগব। তারা কারা বোঝা যায় না। কেউ কয় রেজাকার, কেউ কয় শান্তিবাহিনী – আরো কিতা কিতা যেন তারারে কয়। হাতে হাতে তাদের বন্দুক থাকে, তলোয়ার থাকে। তিন সন্তানের মা নিয়তি আবার অন্তঃসত্ত্বা। মুক্তাগাছা আর নিরাপদ নয় বলে শ্রীমন্তপুরে বাপের বাড়ি এসেছে। কিন্তু মেয়েকে দেখে মোটেও খুশি নন সুপ্রভা। তিনি দেশান্তরি ছেলেদের কাছে যাবেন ঠিক করেছেন। যেতে অনিচ্ছুক রবীন্দ্রবাবুকেও রাজি করিয়েছেন। মায়ের এই সিদ্ধান্ত শুনে নিয়তি মুক্তাগাছা ফিরে যেতে চায়। ফেরার পথে নদী বিলের বাঁকে বাঁকে মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের সঙ্গ পাওয়া গেল। তবু যাওয়া হলো না। কারণ পথে অনেক বিপদ। অগত্যা আবার বাপের বাড়িতে। রবীন্দ্রবাবুরা রওনা হন বর্ডার পেরিয়ে চলে যেতে। চলে যান। শ্রীমন্তপুরের বাড়িতে থাকে নিয়তি, তার স্বামী দিবাকর ও তাদের তিন সন্তান।

সুনসান গ্রামে নিয়তির প্রসব-বেদনা ওঠে একদিন। দিবাকর ডেকে আনে সাবিত্রীর মাকে। সাবিত্রীর মা বলে, বাবা, বাড়িত গিয়া মায়েরে আঁতুড়ঘরে শুয়াইয়া দেওগা আর এক গামলা জল চুলার উপর বসাইয়া নিচে আগুন জ্বালাইয়া রাহ গিয়া। আমি এই আইতাছি। খবর পেয়ে করিমের বউ চলে আসে। করিমও আসে। নিয়তির তিন ছেলে ঘুম থেকে উঠতেই করিম নিজের বাড়িতে তাদের পাঠিয়ে দেয়। সাবিত্রীর মা আর করিমের বউ মিলে প্রসবকালীন প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে। একসময় আঁতুড়ঘরের পর্দা সরিয়ে সাবিত্রীর মা হাসিমুখে দিবাকরকে বলে, সৌন্দর একখান মাইয়া আইছে গো বাপ, ঘরে লক্ষ্মী আইছে। কিন্তু উলু দেওয়ার যে কেউ নেই। আঁতুড়ঘর থেকে বেরিয়ে দিবাকর দেখে, দলে দলে মানুষ চলেছে মোহনগঞ্জের দিকে। এরা বেশিরভাগই অমৃতপুরের বাসিন্দা। সবার মুখে হাসি। যুদ্ধ থাইমা গেছে। পাকিস্তান হাইরা গেছে। মোহনগঞ্জে নাহি বাংলাদেশের নিশান উড়াইছে।

এ-সময় খুব ভালো হতো যদি শ্রীমন্তপুরের বাসিন্দারা তাঁদের গ্রামে থাকতে পারতেন। দিবাকর-নিয়তির সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। স্বাধীন বাংলাদেশের নিশান উড়ল। কিন্তু শ্রীমন্তপুরের হিন্দুরা যে বেশি ঘরে নেই। দিবাকরের চোখ ভেজা ভেজা লাগে। অনবদ্য বর্ণনায়, আঞ্চলিক সংলাপে গ্রন্থটি বড় জীবন্ত, মন ছুঁয়ে থাকে। বইটি পাওয়া যাচ্ছে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তক্ষশীলায়।