এক ভয়াল সময়ের ছবি

প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা, আর ঘুমাতে যাওয়ার মাঝে যা দাঁড়িয়ে থাকে একখ- মহাকাল। পথ হাঁটার মাঝে চারপাশ ফিরে পৃথিবীর রংটা একটু একটু করে পূরণ করে নিতে থাকে, আমাদের স্নায়ুতে স্পর্শ করে বোধের ছোঁয়া। কিন্তু এখনকার সকাল, আলো রাতের অন্ধকারকেও মস্নান করে দেয়। চারপাশে শুষ্ক মস্তিষ্কের তীব্র উৎসব আর জ্ঞানহীনতার স্তাবকতায় মুখর মানবজাতি, তখন ‘কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো?’ এরকম সংকটজনক সময়েই বইয়ের পাতার কাছে আসতে হয়। যেখানে আরো স্পষ্টভাবে ছবিটা গড়ে কীভাবে তেড়ে যায় সময়ে কাঁচ-ঘড়ি, মানুষের রক্তাক্ত মুখেও হাসি – কারণ তারা অন্ধ। ঘাম আর রক্ত তাদের কাছে এক। আমার কালি ও কলম এক ভয়াল সময়ের ছবির দিকে বারবার ঝুঁকে পড়ে।

এমন সময়ই দেখতে পাই, একজন মানুষ অনুভবের সিম্ফনিতে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে শব্দে রং। তাঁর সামনে কাগজ যেন গলনহীন স্নিগ্ধ মোম, যার বোধের ছোঁয়ায় জ্বলে উঠবে শিখা। তিনি চিন্ময় গুহ। অন্ধকারে পথ যখন হারিয়ে যাচ্ছিল, আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না কিছুই, এমন সময়ই হাতে এলো তাঁর দুটি স্নায়বিক গ্রন্থ ঘুমের দরজা ঠেলে, হে অনন্তক্ষত্রবীথি

চারপাশটা যখন আশাহীন হয়ে পড়ে, মুখ আর মুখোশের পার্থক্য করাটা যখন হয়ে পড়ে কঠিন তখন ভালো বই আমাদের বাঁচাতে পারে। রলাঁ বলেছেন, একা মানুষ একটা বই, অন্যভাবে বলা যায় একটা বইও একটা গোটা মানব, কিংবা অনেক মানবের হৃদয়-উষ্ণতায় গড়ে ওঠা এক একটি বিশ্ব মানবিকতার চিহ্ন, কাফকার মন্দ্রিত চিন্তা ‘আমি খুঁজে পাই না, আমি খুঁজি’ – এই বিশ্বজনীন খোঁজ কে লেখকের ‘শিল্পের বীজমন্ত্র’ রূপে ধারণ করে গঠন করেছেন সেসব মানব-শিল্পীকে, যেন আমরা তাদের স্পর্শহীনতার মধ্যেও স্পর্শ করতে পারি। আমি ঘুমের মধ্যে পাতা ওলটাতে থাকি, আর তারা এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। কে নেই সেখানে – ভলতেয়ার, শেক্সপিয়র, কোলরিজ, বঙ্কিমচন্দ্র, মার্লো, রমাঁ রলাঁ, য়্যজেন গিলভিক, পল এলুয়ার, ফাদার দ্যতিয়েন, শেলি, তরু দত্ত, জ্যোতিভূষণ চাকী, অরুণ মিত্র, ফিলিপ সিডনি, সত্যজিৎ রায়, জাক প্রেভের, চার্লি চ্যাপলিন, টিএস এলিয়ট, কার্ল স্যান্ডবার্গ, নিৎশে, মপাসাঁ, লরেন্স স্টার্ন, বুদ্ধদেব বসু, ডবিস্নউ বি ইয়েটস, মার্সেল প্রম্নস্ত, তলস্তয়, সার্ত্র, আর্তুর, শোপেনহাওয়ার, স্যামুয়েল বেকেট, আর কত নাম বলব, পাতা ওলটাতে ওলটাতে আমার সামনে খুলে যাচ্ছে পৃথিবীর এক-একটা সময়মানচিত্র। সময়ের সঙ্গে জীবনের কি অলৌকিক মিশ্রণে চিন্ময় গুহ গঠন করেছেন এক একজন মহানুভব মানুষকে, যাঁদের আমরা খুঁজে ফিরি, কিন্তু খুঁজে পাই না। কিন্তু লেখক, ফাদার দ্যতিয়েনের প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তিনি নিজেও আসলে তাই-ই করেছেন : ‘তাঁকে দেখছি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের গোথ্যেলস গ্রন্থাগারে অথবা উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরিতে। এত একাগ্রচিত্তে কী নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি?

খুঁজছেন। অনন্তকাল ধরে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষেরা যা করেছেন, খোঁজা।’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ৭৯)

আমরা আস্তে আস্তে এবার প্রবেশ করবো, সেই স্বপ্ন মাত্রায় যেখানে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে সেই ইতিহাস – যা আমাদের প্রাণে ভরে দেবে প্রাণময় বাতাস। শুধু মহান শিল্পীরাই এ-বইয়ের অংশীদার নন, সেই সঙ্গে তাঁরাও আছেন কিন্তু ‘… তাঁদের মুখ ঢাকা। তাঁরাও এই শিশ্নোদরতন্ত্রী পৃথিবীর অন্ধকারকে কমাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের আমরা চিনি না।

ওঁদের ছাড়া পৃথিবী অচল। ওঁদের ছাড়া ভেঙে পড়বে যোগাযোগের সেতু, তৈরি হবে অলঙ্ঘনীয় সব পাঁচিল, আলোর পথযাত্রীদের সমস্ত অভিজ্ঞান মিথ্যে হয়ে যাবে।

ওরা অনুবাদক।’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ২৪)

সাহিত্যপথের পথযাত্রী হয়ে তিনি একজন সাহিত্য সেবকের ভূমিকা নিয়েছেন, সাংস্কৃতিক দায়বোধ যেখানে লুপ্ত হয় সাহিত্য তার স্রোতধারা হারিয়ে ফেলে। এই রচনাগুলি কোনোটাই প্রবন্ধ নয়, তাঁর লেখনীর জাদুময়তা, গদ্যের একটি নতুন আঙ্গিক যেন গঠন করেছে এক নতুন সাহিত্যধারা।

‘একটি লোক, ইউরোপীয় নবজাগরণের পৃথিবী বদলে দেওয়া মিছিলের শেষ দিকে সে কুণ্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে।

ছোট্ট এক শহর স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন থেকে সে এসেছে। তার নিজস্ব কোনো পয়সাকড়ি নেই, পারিবারিক প্রভাব নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নেই, ভাগ্যের সন্ধানে লন্ডনে এসেছিলেন ১৮৫০-এর দশকের শেষে।’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ২৯)

আমাদের যাত্রাপথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। জীবন সেই মানবিক ছোঁয়ায় এগিয়ে চলে। তাদের অন্ধকার ও আলো আমাদের ভেতরে এসে ছায়া ফেলে। চিন্ময় গুহ এমন এক পথ রচনা করেছেন তাঁর লেখায়, যেখানে আমরা প্রতিটি মানবিক পথযাত্রীর অক্লান্ত শ্রম আর অন্ধকার ঢেউ সাঁতরে আলোর দ্বীপপুঞ্জের দিকে যাত্রাপথ খুঁজে পাবো।

‘আজ ৩ অক্টোবর ১৮৪৯। আমেরিকায় বল্টিমোরের ফুটপাথে পড়ে আছে একটি মাঝবয়সি লোক। মাঝে মাঝে জ্যোৎস্নায় ঝলসে উঠছে তার শরীর। গায়ে দুর্গন্ধ, ত্বক নষ্ট হয়ে গিয়েছে, পোশাকটি তার নিজের নয়। প্রলাপ বকছে, জোসেফ ওয়াকার বলে একটি লোক তাকে চিনতে পেরে ওয়াশিংটন মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তিনদিন পর ৭ অক্টোবর ভোরে সে মারা যাবে।

এর দুদিন পরে নিউইয়র্ক ট্রিবিউনে একটি শোকসংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘Edgar Allan Poe is dead. He died in Baltimore the day before yesterday.’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ১১৭)

আমরা দেখতে পাচ্ছি জীবনে সাহিত্যিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও, আর্থিকভাবে সংকটের কারণে কীভাবে ফালা ফালা হয়ে যায় একজন মানুষ। আলোর জন্য তাঁর পথহাঁটা বন্ধ হয় না।

‘তাঁর (এডগার অ্যালান পো) শ্বাসরোধকারী ছোট গল্পগুলির জন্য তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও আর্থিক সুবিধে হচ্ছে না। প্রাণপণে চেষ্টা করছেন সরকারি চাকরির।

ভার্জিনিয়া অসুস্থ। পো-র মদ খাওয়া বাড়ছে। পুরনো কাগজ ছেড়ে তিনি নিউইয়র্কে ‘ইভনিং মিরর’ ও ‘ব্রডওয়ে জার্নাল’-এ কাজ নিলেন। ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন তিনি। … ১৮৪৫ সালে ‘ইভনিং মিরর’-এ প্রকাশিত হল তাঁর কবিতা ‘দ্য র‌্যাভেন’, যা মুহূর্তের মধ্যে সারা দেশে পরিচিত করে তুলল তাঁকে।’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ১১৮)

আবার অন্যদিকে দেখতে পাচ্ছি যক্ষ্মাগ্রস্ত এক তরুণ, সহায়সম্বলহীন, ‘অন্ধকার মৃত্যু শব্দ, বিষণ্ণতা, চরম অর্থকষ্ট, আর ফ্যানির জন্য ভালোবাসার’ অনুভূতি নিয়ে লিখছে, – ‘Beauty is truth, truth beauty, – that is all/ Ye know on earth, and all ye need to know।’ সে চেয়েছিল এক ক্ষয়িষ্ণু যৌবন ও সৌন্দর্যের পৃথিবীতে অনন্ত ও অসীম এক ‘সত্য’-কে ছুঁতে। সে বিশ্বাস করেছিল সুন্দর সর্বত্র বিরাজমান, যা তাঁর সত্যান্বেষণের অঙ্গ।

… আজ ভোর রাতে তার ছ’টি ‘ওড’, একত্রিশটি সনেট আর কয়েকটি অসাধারণ কবিতা পড়তে পড়তে আনন্দে চিৎকার করছি আমি। না, দুঃখের না, আমার চোখে আনন্দের জল,’

(হে অনন্তক্ষত্রবীথি, ‘কীটস্’, পৃ ৬-৭)

বাতাসের ভেতর দিয়ে চলাচল করে সুন্দরের সিম্ফনি রাগরাগিণীর প্রাণের স্পর্শ। আর শব্দের গায়ে ফুটে ওঠে সময়ের সাংস্কৃতিক বিন্যাস। বইদুটির পাতা ওলটাতে গিয়ে বরফের মতো আমার হাত স্থির হয়ে যায়, কিন্তু ভেতরে জ্বলে ওঠে এক আগ্নেয়গিরির শিখাম-লী, যা ধ্বংস করে না – এক সুদূর অতীতকে অনেক বেশি কাছে এগিয়ে আসার আলো দেয়। রচনার প্রতিটি শব্দ যেন মানুষের জীবন অস্থি-মজ্জা দিয়ে নির্মিত – যাকে স্পর্শ করা যায়, আর হাতে লেগে যায় – হাত থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় মনের প্রতিটি অন্তরে –

‘তরুণ নর্তকীটি নাচতে নাচতে ফুলের স্তবক নিয়ে নত হয়ে আছে।

পোশাকে জ্বলছে স্নিগ্ধ শ্বেত আগুন, মুখে এক অলৌকিক আভা। দূরে নৃত্যরতা অন্য মেয়েরা, আরও দূরে জলস্রোত। …

খুব কম, প্রায় কবোষ্ণ মৃদু আলো এখানে, যেন মোমবাতির। স্নান করে উঠে তোয়ালে দিয়ে গলা মুছছে রাজহংসীর মতো এক নারী (‘Apres le bain femmes s‘essuyant le cou’), যার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সেই সৌন্দর্য যেন কোনও অজানা সমুদ্রের চুনি-পান্নার ভেতর থেকে বিকশিত হচ্ছে … আমি ঘুমের মধ্যে বলি, দ্যগা।’

(হে অনন্তক্ষত্রবীথি, ‘দ্যগা’, পৃ ৫৯-৬০)

প্রতিটি মহান শিল্পীর অলৌকিকতা, লেখকের গদ্যেও কাব্যময়তায় নিপুণ রূপ খুঁজে পাচ্ছে – ‘দ্যগার ছবির ফ্রেম একটি হারিয়ে যাওয়া সুরের মতো যেন।’ কিংবা ‘শিশু দুটির পাশ থেকে উঠে চাঁদ ডুবে যাওয়া অন্ধকারে কখন আত্মহত্যা করল সে? যখন ‘fever soaks me like honey …’ তখন কি সে বুঝেছিল সমস্ত ফুলের পাপড়ি এখন পাথর হয়ে গিয়েছে?

সরে যাও।

ওইখানে সিলভিয়া পস্নাথ শুয়ে আছে।’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ১৪৩)

সাহিত্যের তন্ময় বোধ আকর্ষণ করে মানবচিত্ত। সৎ প্রকাশ শব্দের গঠনকে উজ্জ্বল কেলাসে পরিণত করে। হীরক দ্যুতি যেমন আমাদের চোখে তীব্রতার ঝলক দেয়, চিন্ময় গুহর ভাষার ছোঁয়া যেন ভোরবেলার শিশিরের মতো কোমল, কিন্তু কাচের মতো মর্মভেদী। গদ্যের এমন চলন, এই সময়ের বাংলা সাহিত্যে আর কেউ সৃষ্টি করেছেন কিনা আমার জানা নেই। পাঠক হারিয়ে যেতে থাকে তার পারিপার্শ্বিক বিশ্ব থেকে এক মোহময় জাদুবাস্তবতায়, আর তিনি স্থাপন করতে থাকেন এমন এক একটি স্থানাঙ্ক যেখানে আপনি ছুঁয়ে ফেলবেন ‘সুদূর ইতালির লেরিচি উপসাগরে ভেসে’ আসা ‘এক অবিশ্বাস্য রূপবান যুবকের শব।’ যাকে পরমুহূর্তেই আপনি ‘আবিষ্কার’ করবেন তিনি আর কেউ নন – স্বয়ং শেলি। কিংবা জানালার বাইরে থেকে আপনি দেখতে পাবেন আপনাকে কেউ লক্ষ করছে স্থিরভাবে ‘মঁপারনামের এক কাফেতে একা বসে। তাঁর চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে আমাদের আবরণ। আমাদের কঙ্কালের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন তিনি।’ কে উনি? বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেট। আবার হে অনন্তক্ষত্রবীথির পাতা উলটে দেখি ‘অসীম আকাশের নিচে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ, বলছেন গ্রহ-নক্ষত্রের কথা। আকাশের ওপরে যে আকাশ, তার কথা। আরও ওপরে, আরো ওপরে। তারও ওপরের কথা।’ একবার তিনি মিলিয়ে দিচ্ছেন, ধরা পড়িয়ে দিচ্ছে সমস্ত মহামানবের চোখের সামনে আবার সেখান থেকে সরিয়ে দূর থেকে দেখাচ্ছেন – প্রসারিত করছেন আমাদের দৃষ্টিপট সমস্ত বিশ্বজুড়ে কিংবা তার চেয়েও বেশি। এই গদ্যকে কি বলা যায়? কবিতা!

ঘুমের দরজা ঠেলে-তে ৬৪টি অধ্যায় ও হে অনন্তক্ষত্রবীথি জুড়ে ১৯টি গদ্য নক্ষত্রমালার প্রকাশ কণ্ঠে ‘প্রত্যেকে কথা বলছিল বড় আস্তে/ আমি চিৎকারের গ– সরিয়ে দিয়েছি।’

(‘চিৎকার’, পল এলুয়ার, অনুবাদ : অরুণ মিত্র)

চারপাশে মিথ্যা ভ-ামির প্রবল মেধাশূন্য চিৎকারে অস্থির গোটা পৃথিবী, হিংসা, যুদ্ধ আর বিভাজন যখন উপড়ে দিতে চাইছে মানবসভ্যতার খুলি, কর্ণপটহ লেখক খুঁজছেন সেই সমস্ত মানবদরদি শিল্পীকে, যাঁরা চেয়েছিলেন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের হাত অন্তত ধরতে, এলুয়ারের জীবনকথন করছেন ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এক কবি, মানবযন্ত্রণা যাঁকে এক একাকী নির্জন গৃহকোণ থেকে নিঃশব্দে টেনে আনে বহু মানুষের স্পেসে ‘de I‘horizon d‘un seul a I‘horizon de tous,’ একজনের দিগন্ত থেকে সকলের দিগন্তে।’

(ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃ ৩২২)

নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখাগুলি পড়তে গিয়ে বারবার সুরের ওঠানামা চলতে থাকে। শান্ত ও তীব্র, সমাহিত ও দোলায়িত – এই মূর্ছনায় মনে আসে রবার্ট লিন্ডের বিখ্যাত উক্তি – ‘It is strange that the essay, which at first sight looks the easiest and most natural thing in the world to write, has so seldom achieved excellence. Yet it is an indisputable fact that the greatest essayist like the greatest letter writer is rare even them the great poet.’

সেই গদ্যকার লিখে চলেন দৃশ্যপটের চলন, ‘কে যেন ইতালীয় ভাষায় আমায় বলে ‘কমে স্তা’? আমি ধড়মড় করে উঠে বসি।

আমেত্মানিওনি-র ছবির নৈঃশব্দ্য ও শূন্যতা। শূন্যতার নৈঃশব্দ্য … নৈঃশব্দ্যের শূন্যতা, নৈঃশব্দ্য কি এক সমাধিক্ষক্ষত্র?’ (হে অনন্তক্ষত্রবীথি, ‘আমেত্মানিওনি’,
পৃ ২৬)

ঘুমের দরজা ঠেলে আমাদের জেগে ওঠা খুব প্রয়োজন এখন, নক্ষত্রবীথিদের সামনে দাঁড়িয়ে চিনতে হয় ক্ষয়িষ্ণু সময়ে সার্ত্র, রলাঁ কিংবা নিৎশে আবার জ্যোতিভূষণ চাকী, অরুণ মিত্র, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তদের নক্ষত্রপ্রতিম জীবনবীক্ষণের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বাঁচাটা এই পৃথিবীতে বড় প্রয়োজনীয়। বাঁচার জন্য তন্ময় রসদ যখন চারপাশ থেকে শুকিয়ে যায় করুণাধারার মতো যুগে যুগে বইয়ের জন্ম হয় – এই সময়ে তার প্রকৃষ্ট দুটি নমুনাচিহ্ন ঘুমের দরজা ঠেলেহে অনন্ত নক্ষত্রবীথি