এই পথে আলো জ্বেলে

শেখ মুজিব আবদুল মোমিনকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন! আহা, কতদিন পর, ১৭ মাস পর, তাঁর নিঃসঙ্গতা ঘুচল! কারাগারে তিনি এখন একজন সঙ্গী পাবেন, যার সঙ্গে তিনি সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারবেন। তার কক্ষে আরেকজনকে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিন। রাতের বেলা যখন বাইরে থেকে দরজায় তালা পড়ে, একা থাকলে তখন পৃথিবীর সমস্ত নির্জনতা এসে ভর করে নিজের ওপরে। এই অনুভূতি যে জেলখানায় কখনো থাকে নাই, তাকে বোঝানো সম্ভব নয়। রাতের বেলা তোমার শরীর খারাপ হতে পারে, কোনো বিপদ-আপদ হতে পারে, কিন্তু সেই কথা কাউকে জানানোর কোনো উপায় নাই। শুধু বাইরে প্রহরীর বুটের শব্দ মাঝেমধ্যে ভেসে আসে। তখন একটা টিকটিকিকেও আপন বলে মনে হয়!

রোজ রাতে তিনি অনেকক্ষণ বই পড়েন। রেণু তাকে কতগুলো বাঁধাই করা খাতা দিয়ে গেছে, সেখানে রোজনামচা লেখেন। মোমিন আসার পর সুবিধা হয়েছে, নিজে বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে মোমিন বই পড়ে শোনায়। মুজিবও আওয়াজ করে বই পড়তে পছন্দ করেন।

মুজিব গুনগুন করে গান করেন। রবীন্দ্রসংগীত – ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ কিংবা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’

শীত পড়েছে ১৯৬৮-এর জানুয়ারিতে। জেলখানায় গরমের চেয়ে শীতকাল ভালো। সেদিন সন্ধ্যার পর দুইজনে গল্প করে খাওয়া-দাওয়া সেরে খানিকক্ষণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত দেশের খবর নিয়ে আলোচনা করলেন।

খবরের কাগজে বেরিয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ভারত-সমর্থিত চক্রামেত্ম জড়িত থাকার অভিযোগে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং রাজনীতির সঙ্গে সংশিস্নষ্ট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ ভারতীয় কূটনীতিক মিস্টার ওঝার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছিলেন। এরা আগরতলায় গিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিশ্র আর মেজর মেননের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ভারতের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং অর্থ সংগ্রহই এর উদ্দেশ্য।

ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দুই সিএসপি অফিসার ফজলুর রহমান এবং রুহুল কুদ্দুসকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মুজিব বললেন, ফজলু আর কুদ্দুসকেও ফাঁসিয়ে দিলো। আমার দুই বিশ্বস্ত আমলা! এদেরকে আমার দরকার! ফজলুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়েছে জেলের মধ্যে ঈদের দিন। বলল, আপনাকে জড়াবার খুব চেষ্টা চলছে। রেণুও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলল, তোমাকে জড়াবার খুব চেষ্টা করতেছে। জানি না খোদা কী করে। আলস্নাহর উপর নির্ভর করো।

মোমিন বললেন, কাউকেই বাইরে রাখবে না। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে চেনেন নাকি মুজিবভাই?

মুজিব বললেন, চিনি। রোমান্টিক বিপস্নবী। বহুদিন থেকেই তার মাথার মধ্যে সশস্ত্র বিপস্নবের চিমন্তা। আমি করাচি গেলাম ১৯৬৪ সালে। তার বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াল। তখন তার পোস্টিং করাচিতে। তার ড্রিগ রোডের বাসায় গেছি। তার একটা অবাস্তব স্বপ্ন আছে। পূর্ববাংলার সব সৈন্য একযোগে বিদ্রোহ করবে। দেখো, এইসব নিয়া আমি অনেক ভাবছি। জনগণকে সঙ্গে না নিলে কোনো বিদ্রোহ সফল হয় না। বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়া মানে সমস্ত সম্ভাবনা শেষ করে ফেলা। সিপাহি বিদ্রোহ কেন সফল হয় নাই! সব ফাঁসিতে ঝুলবে। জনগণ চায়া চায়া দেখবে। ব্রিটিশ আমলে যেমন দেখছে। সিরাজউদ্দৌলার পতন যেমন দেখছে। আমি যখন ছয় দফা পেশ করতে লাহোর যাই, সে গাফ্ফার চৌধুরীকে তার আগে আমার কাছে পাঠাইছিল। সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরী তার বার্তা নিয়া আমার ৩২ নম্বরের কাছে আসছিল। বলে যে, মুজিবভাই, কমান্ডার মোয়াজ্জেম তো আপনাকে যেতে মানা করে। আপনি যদি এখন যান, সেখানে কোনো বিপস্নবী দাবি জানান, আইয়ুব খান সতর্ক হয়ে যাবে। আমি মোয়াজ্জেমের নাম শুনেই গাফ্ফারকে থামতে বললাম। আমি তো জানি সে কী করতে চায়। ইদানীং সে চট্টগ্রামের মানিক চৌধুরীর সাথে মেলামেশা শুরু করছে, তাও আমার জানা।

শোনো, দেশ স্বাধীন করতে হলে প্রথমে লাগবে সংগঠন। আমি আওয়ামী লীগকে সেই লক্ষ্যে গড়ে তুলতেছি। এরপর লাগবে জনগণের ঐক্য। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জনগণ ঐকবদ্ধ হচ্ছে। ছয় দফা তারা রক্ত দিয়ে গ্রহণ করেছে। গণতান্ত্রিক ফ্রেমের মধ্যে ছয় দফা দিছি। এটা কাজ করতে শুরু করলে এক দফা সময়ের ব্যাপার মাত্র। মোয়াজ্জেমদের এই সব পরিকল্পনা সামরিক। সামরিক যুদ্ধ তো এটা নয়। এটা জনগণের সংগ্রাম। শোনো, আমার মনে হয় এই সময় আমাদের জেলে থাকাটা শাপে বর হলো। তা না হলে এইসব রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমাকেও ফাঁসাত। আইয়ুব খান আর মোনেম খানের একমাত্র লক্ষ্য আমাকে খতম করা।

মোমিন বললেন, আর আপনাকে খতমের উদ্দেশ্য হলো বাঙালিকে চিরদিনের জন্য শেষ করে দেওয়া।

মুজিব বললেন, তবে এইবার আমাকে জড়াতে পারবে না। ঘটনা যখন ঘটতেছে, তখন তো আমি জেলে। এত বড় মিথ্যা কথা বলে তারা বিপদে পড়তে চাবে না। তাই না।

 

শীতটা বেশ ভালোই জাঁকিয়ে পড়েছে। আলো নিভিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে দুজনেই শুয়ে পড়লেন। শেখ মুজিবের ঘুম আসছে না।

ফজলুর রহমান সিএসপি তো বললই আপনাকে জড়াবার চেষ্টা হচ্ছে। চট্টগ্রামের একজন কর্মী ঈদের জামাতশেষে মুজিবকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, ২১ দিন কাস্টোডিতে রেখেছিল। মেরে পা ভেঙে দিয়েছে। শুধু আপনার নাম বলার জন্য এত মেরেছে যে আর সহ্য করতে পারি নাই। যা লিখেছে, তাতেই সই করে দিয়ে এসেছি। মরো মরো অবস্থায় তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। এখন আবার জেলে দিয়েছে।

আরেকজন এসে সালাম দিয়েছিল। মুজিব তাকে বলেছেন, আপনাকে তো চিনলাম না।

তিনি বললেন, আমার নাম কামালউদ্দিন। আগে নৌবাহিনীতে ছিলাম। পুলিশ হাজতে নিয়ে আমাকে মেরে পুরা বডি পচায়া দিছে। সোজাভাবে শুইতে পারি না। পায়খানার দ্বার দিয়া কী যেন ঢুকায়া দিত, যন্ত্রণায় অস্থির হইতাম। এই দেখেন জ্বলন্ত সিগারেট দিয়া আমার শরীরের কত জায়গা পুড়ায়া দিছে। আপনার নাম লেখায়া নিছে। যদিও বলছি, আপনার সাথে আমার কোনোদিনও পরিচয় ছিল না। কী করব স্যার, মাইরের চোটে মিথ্যা বলছি। তবে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস করছি।

(ব্যাঙ্গমা বলে, কামালউদ্দিন কোর্টের কাছে এইসব কইছেনও।

ব্যাঙ্গমি বলে, সেই জবানবন্দি কাগজে ছাপাও হয়েছে। মুজিবের চোখে তা পড়ছেও।

ড. কামাল আর ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কামালউদ্দিনের পক্ষে হাইকোর্টে নির্যাতনের মামলা করছিলেন)এ

রেণুকে মুজিব বলেছিলেন, দেশরক্ষা আইনে জেলে রেখেছে, ১১টা মামলা করেছে, কয়েকটাতে সাজা হয়েছে, এরপরও এদের ঝাল পড়ল না। ছয় দফার এতই ঝাল! সামনে বসেছিলেন আইবি অফিসার আর এসবি অফিসার। তাই বেশি কথা আর রেণুকে তিনি বলতে পারেননি।

তাঁর শরীরটাও বেশ খারাপ। ওজন কমে যাচ্ছে দ্রম্নত। তিনি হাসপাতালের অধীনে আছেন। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের খাবার বরাদ্দ হচ্ছে তার নামে। যদিও হাসপাতালের বেডে তার জায়গা হয় নাই।

কখন যে মুজিব ঘুমিয়ে পড়েছেন জানেনও না।

 

খটখট খটখট। মোমিন সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল। জানালার কাছে কারা যেন শব্দ করছে।

তিনি ঘুমজড়িত কণ্ঠে বললেন, কে?

শেখ সাহেবকে একটু উঠতে বলেন।

কে?

আমি ডেপুটি জেলর তোজাম্মেল।

এত রাত্রে কেন আসছেন? মুজিব জিগ্যেস করলেন।

দরজা খুলে ভিতরে এসে বলছি।

ডিউটি জমাদার দরজা খুলে দিলেন।

তোজাম্মেল ভেতরে প্রবেশ করে শেখ মুজিবকে বললেন, আপনার রিলিজের অর্ডার আসছে। আপনি মুক্ত। এখনই আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে।

শেখ মুজিব বললেন, হতেই পারে না।

তোজাম্মেল হোসেন বললেন, সত্যিই আপনাকে মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। কাপড়চোপড় নিয়া চলেন।

মুজিব বললেন, আমার তো অনেক মামলা। বহু মামলাতে আমি জামিন নিই নাই। চট্টগ্রাম থেকে আছে কাস্টোডি ওয়ারেন্ট, যশোর সিলেট নোয়াখালি পাবনা থেকে আছে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট। ছাড়বেন কী করে? বেআইনি হবে।

তোজাম্মেল ভাঙা গলায় বললেন, সরকার চাইলে আপনাকে মুক্ত করা সম্ভব। আপনি চলেন।

মুজিব বললেন, আপনি আমার রিলিজ অর্ডার আনেন। কাগজ না দেখে আমি বাইর হবো না।

তোজাম্মেল সাহেব কাগজ আনতে গেলেন।

মোমিন সাহেবকে মুজিব বললেন, কী বুঝতেছেন?

মোমিন সাহেব বললেন, হয় আপনাকে অন্য জেলে ট্রান্সফার করবে, তা না হলে কোনো খারাপ ষড়যন্ত্র আছে। ভাবি যা আশংকা করতেছিলেন, তাই বোধহয় হতে যাচ্ছে।

ডেপুটি জেলার তোজাম্মেল সাহেব কাগজ নিয়ে এলেন। মুজিব চোখে চশমাটা দিয়ে ভালো করে পড়লেন। দেশরক্ষা আইন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে।

মোমিন সাহেব বললেন, সত্যি তো মুক্তি দিচ্ছে।

শেখ মুজিব বললেন, দেখেন, বিছানা কাপড় যারা বাঁধছে, কারো মুখে হাসি নাই। সবাই গম্ভীর।

আবদুল মোমিন বললেন, আর তা ছাড়া সাজা হওয়া কয়েদির মুক্তির ফরমান কই?

শেখ মুজিব বললেন, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি জানি না। বোধহয় আর কোনোদিনও দেখা হবে না। আপনি রেণুকে বলবেন, আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে। এই খবরটা পৌঁছায়া দিবেন। আর আমি তো চললাম। আপনারা আছেন। দেশের জন্য দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালায়া যাবেন। খোদা আপনাদের সহায় হবে।

তিনি মোমিনকে জড়িয়ে ধরলেন, মোমিনের কাঁধে মাথা রাখলেন, তারপর তার কানে স্পষ্ট নিচু স্বরে বললেন, বাংলাদেশ রইল। এই দেশকে আপনারা স্বাধীনতার পথে আগায়া নিয়া যাবেন। আমার সারাজীবনের একটাই স্বপ্ন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমি থাকব না, কিন্তু এই দেশ থাকবে, আমাদের ছেলেমেয়েরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বড় হবে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

মুজিবের দুচোখ দিয়ে দু-ফোঁটা অশ্রম্ন নির্গত হলো। সেই অশ্রম্ন সিক্ত করল আবদুল মোমিনের কাঁধের জামা।

আবদুল মোমিন হু-হু করে কাঁদছেন। কান্নার প্রবল বেগে যেন তিনি ভেসে যাবেন।

শেখ মুজিব একজন একজন করে মেট, জমাদার, বাবুর্চি, ফালতু সবার কাছে গেলেন। বললেন, চললাম। তোমরা আমার জন্য দোয়া করিও। জানি না আমার ভাগ্যে কী আছে। কোনো ভুলত্রম্নটি অপরাধ যদি করে থাকি, মাফ করে দিও।

তারা সবাই কাঁদতে লাগল।

তিনি জেলগেটে পৌঁছালেন।

এসে দেখেন, রীতিমতো যুদ্ধ যুদ্ধ সাজ। হেডলাইট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামরিক কনভয়।

খাকি পোশাক পরে হাতে অস্ত্র মাথায় হেলমেট পরে সামরিক কায়দায় দাঁড়িয়ে আছে সৈন্যদল।

মুজিব ডেপুটি জেলারের রুমে গিয়ে বসলেন। একজন মিলিটারি অফিসার এগিয়ে এলো, বলল, শেখসাহেব, আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।

মুজিব বললেন, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। সেটা দেখালে বাধিত হবো।

অফিসার একজন সাদা পোশাকপরা কর্মচারীকে বললেন, পড়ে শোনাও।

তিনি পড়তে লাগলেন, ‘আর্মি, নেভি ও এয়ারফোর্স আইন অনুসারে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’

মুজিব বললেন, ঠিক আছে কোথায় যেতে হবে চলেন।

অফিসার বলল, আপনার জিনিসপাতি নিয়ে চিমন্তা করবেন না। আপনি যেখানে থাকবেন সেখানে ঠিকঠাক পৌঁছে যাবে।

লোহার গেট খুলে দেওয়া হলো। মুজিবের জন্য জেলের ছোট গেট খুললে হয় না। তিনি মাথা নিচু করে বের হন না। তার জন্য শব্দ করে বড় গেটটাই খুলতে হলো। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান হয়ে গেল লোহার বড় ফটক খোলার শব্দে।

পুরো জেলখানা যেন মিলিটারি জওয়ানরা ঘিরে রেখেছে। সামনে মিলিটারি গাড়ি।

মুজিব বললেন, এক মিনিট।

তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বাংলার ধূলিমাটি তিনি স্পর্শ করলেন পরম মমতায়। বিড়বিড় করতে লাগলেন, আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি…

 

তারপর একমুঠো মাটি তিনি তুলে নিয়ে নিজের রুমালে বাঁধলেন। সেটা রেখে দিলেন পকেটে।

সামনে একটা গাড়ি। মেজর পদের একজন বললেন, আপনি গাড়িতে উঠুন।

তিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসলেন। তার দুই পাশে দুজন সশস্ত্র সৈনিক বসল। সামনের সিটে মেজর আর ড্রাইভার। হেডলাইটের আলো ফেলে গাড়ি নড়তে লাগল। সামনে-পেছনে মিলিটারি গাড়ির এসকর্ট।

দুই সৈনিকের গা থেকে বোঁটকা গন্ধ আসছে। মুজিব বিরক্ত হতে যাবেন, তার আগেই গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের শীতের বাতাস এসে তার মনকে প্রফুলস্ন করে ফেলল। আহ্, কতদিন পরে তিনি খোলা আকাশের নিচে চলেছেন। কতদিন পরে তিনি দেখছেন নাজিমউদ্দীন রোড। এই সেই ঢাকা শহর। এই সেই চেনা পথঘাট। তিনি পাইপ ধরালেন। গাড়ি এলো রমনা এলাকায়। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমউদ্দীনের কবর দেখতে পেলেন। তিনি সালাম জানালেন নেতাদের। বললেন, একবারও কি তোমাদের মনে পড়ে না হতভাগা দেশবাসীর কথা!

শাহবাগ হোটেল পার হয়ে গাড়ি চলেছে এয়ারপোর্টের দিকে। মুজিব বুঝে ফেললেন, তারা চলেছেন কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের দিকে। তিনি বাংলার মাটি স্পর্শ করে বললেন, মা গো, তোমাকে আমি ভালোবাসি। মৃত্যুর পরে তোমার মাটিতে যেন স্থান হয় মা।

তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবার কথা মনে পড়ল। তাঁর আববার বয়স ৮৪, মায়ের বয়স ৭৫। এই বৃদ্ধ বয়সে যদি তাঁরা শোনেন, তাঁদের ছেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে অজানার উদ্দেশে, এই আঘাত তাঁরা সইবেন কেমন করে!

একটা ঘরের সামনে এসে গাড়ি থামল। সেখানেও সশস্ত্র সৈনিকদের সতর্ক প্রহরা। তিনি বুঝলেন, তিনি ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এসে গেছেন …

(বিভিন্ন বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে)