তবুও আত্মজা

বাস থেকে নামার সময় মেয়েটা আমার কাছাকাছি এসে যেন একটা হোঁচট খেয়েই সামান্য থামলো। তার মাথার পেছনের দিকে গাঢ় বাদামি চুলগুলো একটি লম্বা ধাতব ক্লিপে উঁচু করে বাঁধা। যেতে যেতে আট মাসের অমত্মঃসত্ত্বা নারীর মতো পেটফোলা ব্যাকপ্যাকটাকে আরেকটু টেনে পিঠের ওপর সোজা করে বসিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো একবার। পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে। তারপর দ্রুত চোখ সরিয়ে অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে বাস থেকে নেমে পড়লো।

সিনিয়র সিটিজেন বলে বাসের এই নির্দিষ্ট সিটে উপবিষ্ট হয়ে যাতায়াত করা আমার নাগরিক অধিকার। অফিস যাতায়াতের সময়েও যখন বাসের ভেতর কণামাত্র জায়গা থাকে না, তখনো বাসযাত্রায় বেরোলে আমাকে কখনো দাঁড়িয়ে যেতে হয়নি। কেউ যদি এ রিজার্ভড, সিটে বসেও থাকে, সিনিয়র সিটিজেন উঠলে তাকে জায়গা করে দিয়ে অবধারিত নিজে উঠে দাঁড়াবে। এই ভদ্রতাবোধটি এদের আছে, মনে মনে সিট ছেড়ে দেওয়ার ক্ষোভে যতই অসন্তুষ্ট হোক না কেন।

বয়স আমার ছেষট্টি। মেয়েটির কত হবে? বড়জোর আঠাশ-তিরিশ! বাস থেকে নামার সময় আইল, ঠিক আমার পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটি যখন গভীরভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল, কেন যেন মনে হচ্ছিল লম্বাটে ওই কচি মুখখানা আমার ভীষণ চেনা। অনেক বেশি পরিচিত। এত বেশি কাছ থেকে বিশাল কোনো মূর্তি বা আর্ট পিস দেখলে বা লক্ষ করলে যেমন পূর্ণাঙ্গ মুখাবয়বটি নয়, সামান্য একটি অংশ বহুগুণ এনলার্জড হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কিন্তু সেটা কী বা কে তা সঙ্গে সঙ্গেই ঠাহর করা যায় না, এমনকি গালের রুজ বা ভুরুর কি চোখের পাতার ওপর আইব্রো পেনসিলের কালি কিংবা মাস্কারার রঙের দানাগুলোকেও বিকৃত, অতিকায় বড় ও বীভৎস রঙিন মনে হয়, আমার কাছেও তাকে এত কাছে থেকে তাই খানিকটা অপার্থিব মনে হয়েছিল। তেমন ভালো করে তাকাতে পারিনি।

কিন্তু বাস থেকে নেমে ফুটপাথ ধরে যখন সে যাচ্ছিল, যথেষ্ট দূরত্ব থাকায় পুবদিকে মুখ করে চলা অর্থাৎ বাসের সমান্তরালে হেঁটে যাওয়া মেয়েটির আধখানা মুখ আমি দেখলাম। জিন্সের প্যান্টের ওপর পাতলা হাফ হাতার সুতির টপ।

বাস আবার চলতে শুরু করে। সামান্য কয়েক সেকেন্ডের জন্যে যখন বাস আর মেয়েটি প্রায় পাশাপাশি চলতে থাকে, আমার গলা চিড়ে বেরিয়ে প্রচ- শব্দে আছড়ে পড়ে দুটি শব্দ – আসলে একই শব্দ দুইবারে।

‘সোনিয়া! সো-নি-য়া।’

ব্যাকপ্যাক পিঠে ঝুলিয়ে মেয়েটি আনমনে পথ চলছিল। আমার চিৎকার তার কানে পৌঁছামাত্র সে ত্বরিতে একবার বাসের ভেতর আমার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই অতিদ্রুত তার গতি পরিবর্তন করে। সামনের দিকে আর পা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে তার বাঁদিকের সরু পথটা বেছে নেয়। তার আগে বাসের ভেতর বসা আমার সঙ্গে আরেকবার মুহূর্তের জন্যে চোখাচোখি হয়। আমি তখন আর চিৎকার করছি না। নিবিষ্টমনে নাম জপ করার মতোই অস্ফুটে ঠোঁট নেড়ে নিজের কাছেই নিজে বলে চলি, ‘সোনিয়া, সোনিয়া। সোনিয়া।’

বুঝি বাসের অনেকেই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিন্তু আমার তাতে কোনো ভ্রম্নক্ষেপ নেই। আমি দুই হাত খুলে নিজের মুখম-লে চেপে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে শুরু করি, ‘ও মাই গড! জলজ্যান্ত মেয়েটাকে চোখের সামনে দেখেও চিনতে পারলাম না! স্ট্রেঞ্জ।’

আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকায় বাস ড্রাইভার। কী জানি কী বোঝে! হয়তো কিছুটা মায়া হয়। অনুচ্চ কণ্ঠে জানতে চায়, আমি সেখানে বাস থেকে নেমে পড়তে চাই কিনা। অপস্রিয়মাণ তরুণীর পিষ্ঠদেশের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেকে সংযত করি। বলি, ‘না, ধন্যবাদ। দরকার নেই।’

একটু দ্রুতগতিতেই বাসটা এবার চলতে শুরু করে।

 

দুই

আজ পুরো আট বছর চার মাস দশ দিন।

আট বছর আগে সোনিয়া বাড়ি ছেড়ে, আমাকে ছেড়ে, তার প্রাণপ্রিয় ঘরটি ছেড়ে, সোনিয়ার একুশ বছর জীবনে নিজের বলে যা কিছু পার্থিব, আত্মিক, অনুভূতির বস্ত্ত ছিল, অর্জিত, অনার্জিত, সবকিছু ছেড়ে এক রাতে চলে যায়। যে-কাপড় পরা ছিল ঘরে, গায়ের সে-পোশাকেই বেরিয়ে গিয়েছিল। পায়ে স্যান্ডেল। সময়টা এপ্রিলের শেষভাগ। সঙ্গে নিয়েছিল শুধু হাত ব্যাগখানা আর সেলুলার ফোনটি। সেই যে গেল সোনিয়া, আর কখনো ফিরে আসেনি।

আজ রাস্তায় প্রথম তার সঙ্গে যখন দেখা হলো, সে প্রতিদিন পৃথিবীতে দেখা হওয়া অগুনতি মানুষের একজন বই কেউ ছিল না। আমরা পরস্পরের জন্য কোনো উত্তাপ বোধ করিনি। একজনের শরীরের রক্তও নেচে ওঠেনি একই রক্তকে পাশে দেখে। আসলে নিজের আত্মজাকে আজ নিজেই চিনতে পারিনি। কেবল ঘটনাচক্রে সে ছিল একই বাসের যাত্রী।

 

চূড়ান্ত ঘটনাটা এক রাতে হঠাৎ করে ঘটলেও তলে তলে চারপাশটা ধূমায়িত হচ্ছিল অনেকদিন থেকেই। সারাবাড়িতে দুটো মাত্র প্রাণী। এভাবেই চলছিল বসবাস সোনিয়ার সাত বছর বয়স থেকে। রবি, সোনিয়ার বাবা, সারারাত কাজ করে ভোররাতে ফ্যাক্টরি থেকে ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরার সময় এক রাতে হাইওয়েতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সেই চকিত নিদ্রা আর মৃত্যুর মাঝখানে সে আদৌ জেগে উঠেছিল কিনা কেউ জানে না। তার মাত্র এক সপ্তাহ আগেই সোনিয়ার সাত বছর পূর্ণ হয়েছিল।

কান্না সামলে ওয়ালমার্টের পার্টটাইম কাজটিকে ফুলটাইম করে আর মেয়েকে যথারীতি স্কুলে পাঠিয়ে ভাঙা জীবনটাকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ও সহনীয় করে তোলার চেষ্টা করছিলাম আমি।

রান্না, বাজার, বাড়িঘর পরিষ্কার থেকে যাবতীয় গৃহস্থালি কাজ একা নিজের হাতে করেও ওয়ালমার্টে এক-আধটু ওভারটাইম করার চেষ্টা করি, কোনো মাসে সোনিয়ার শখের একটা ভিডিও গেম, কোনো মাসে ওর জন্যে নতুন একসেট পোশাক কিনে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু যা করি, যত করি, মেয়েকে খুশি করতে, মুহূর্তের জন্যেও আনন্দে ঝলমল করে উঠতে দেখি না তাকে। ক্ষণিকের জন্যেও কোনো কিছুতেই তৃপ্ত নয় সে। যেন কিছুতেই রাগ কমে না আমার ওপর থেকে। সংসারের অভাব, তাকে নিয়ে অন্য মায়েদের মতো বিকেলে পার্কে বেড়াতে না যাওয়া, অকালে পিতার মৃত্যু, সব, সবকিছুর জন্যে আমি সজ্ঞানে দায়ী বলে উঠতে-বসতে অভিযোগ করে সোনিয়া। আমি ওর অনেক কথাকেই উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করি এই ভেবে যে, এত অল্প বয়সে এতবড় একটা হারানো – পিতার মৃত্যু, তাও এমন ভয়ংকরভাবে, তাকে মেনে নিতে হয়েছে ওকে। হয়তো এসবই, বিশেষ করে অনর্থক রাগ, হয়তো অসময়ে পিতৃবিয়োগজনিত ট্রমারই চিহ্ন। কিন্তু আরো দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টের পাই, সেটি একটি কারণ হলেও সব নয়।

ক্লাস নাইনে পড়তে পড়তেই প্রথমে স্কুল কাউন্সেলর ও পরে একজন লাইসেন্সড সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে শুরু করলো সোনিয়া। সেইসঙ্গে দুবেলা নিয়মিত ওষুধ। আর তখন থেকেই যত তাকে কাছে ডাকি, যত তার একাকী জীবনে প্রবেশ করে তাকে সঙ্গ দিতে চাই, ততই তার রাগ ও উষ্মা বাড়তে থাকে। তার ধারণা অনধিকারচর্চা করে সুযোগ পেলেই ওর জগতে প্রবেশ করার চেষ্টা করি আমি। ওর পরীক্ষায় খারাপ করা, বন্ধুহীনতা, নিরানন্দ জীবন, রূপের ঘাটতি (স্বকল্পিত) সবকিছুর জন্যে একমাত্র দায়ী আমি। সেটাই  মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সে। বুঝি হাতের কাছে আছি আমিই। আর কার ওপরে দোষ চাপাবে?

হাইস্কুল পাশ করার আগেই এক রাতে ঘরে ফিরে সোনিয়া জানায়, ‘আমি প্রেগন্যান্ট।’

আমি সবে কাজ থেকে ঘরে ফিরেছি। মাথার ওপর বাজ পড়লেও যতটা সম্ভব শান্ত থেকে বলি, ‘তোমার বয়স এখনো আঠারো হয়নি। এতো তাড়াতাড়ি তুমি বড়দের জগতের বাসিন্দা হয়ে যাও আমি চাইনি। কিন্তু আমার চাওয়ায় কী আসে-যায়? এখন তুমি কী করতে চাও?’

‘আমি বেবিটিকে রাখতে চাই। ওকে আমি মনের মতো করে বড় করবো।’

‘রাখতে চাও বেবি? কেমন করে? তুমি স্কুল পর্যন্ত পাশ করোনি। ওর খরচ চালাবে কী করে? বাই দা ওয়ে এই শিশুর বাবা কে? রাখতে হলে আগে বিয়েটা তো করতে হবে! না কি?’

সঙ্গে সঙ্গে বিকট চিৎকার করে ওঠে সোনিয়া।

‘বাচ্চা নেবার সঙ্গে বিয়ের কী সম্পর্ক? আর সম্পর্ক থাকলেও সবাইকে তা মেনে নিতে হবে কেন?’

‘মানো না মানো, বলো, শিশুর বাবা কে? আমি তাকে ডেকে কথা বলবো। এ-ব্যাপারে তার মতও জানা দরকার।’

‘না। দরকার নেই।’

‘না কেন?’

‘কারণ এ আমার সন্তান। তুমি আর কারো সঙ্গে কথা বলতে পারবে না।’

‘এত কিছুর পরেও কি এটাকে তুমি তোমার জীবনে, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মনে করো?’

‘অফ কোর্স করি। তবে বেবির পিতার নামটা তোমাকে এজন্যেও বলতে পারবো না, কারণ আমি নিজেই তা জানি না।’

‘জানি না মানে?’

‘আসলেই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারবো না, আমার সন্তানের সত্যিকারের পিতা কে। নিশ্চিত জানতে হলে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।’

সোনিয়া হাসে। মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতগুলো বের করে হাসে। তার মধ্যে কোনো উদ্বেগ, কোনো অপরাধবোধ, কোনো সংকোচ দেখি না।

‘ডিএনএ টেস্ট করতে হবে!’ আমি পুনরাবৃত্তি করি। সেইসঙ্গে দুহাতে দুই কান চেপে ধরি।

সর্বাঙ্গ কাঁপছে আমার।

কোনোমতে বললাম, ‘কাল সকালে তৈরি থেকো। হাসপাতালে নিয়ে যাবো। ডাক্তার দেখানো দরকার। তুমি ডাক্তারের কাছে এখনো যাওনি নিশ্চয়?’

‘না।’

যাই হোক, আমার, স্কুল কাউন্সেলরের ও সাইকোলজিস্টের নিরলস প্রচেষ্টায় অবশেষে রাজি হয় সোনিয়া।

অ্যাবোরশনে তেমন কোনো ঝামেলা হয় না।

কিন্তু সেদিন থেকে আমি তার আরো চক্ষুশূল হয়ে উঠি। আমার কাছে গোপনীয়তাও বেড়ে যায়। জীবনের কোনো কিছু কখনো তেমন খুলে বলতো না আমাকে। এখন যে-কোনো কথা, সাধারণ কথা, পারলেও প্রচ- মেজাজ দেখায়।

কলেজ শেষ করতে না পারার ব্যর্থতা শুধু নয়, ওর জীবনের সকল পরাজয়, সকল বিপন্নতার জন্যে সে আমাকে সম্পূর্ণ দায়ী করে। লক্ষ করি, সোনিয়া দিন দিন আরো অসামাজিক, আরো ঘরকুনো, আরো স্বার্থপর, আরো বদমেজাজি ও সন্দেহকাতর হয়ে উঠছে।

অবশেষে এলো সেই রাত। কয়েক ঘণ্টা ওভারটাইম কাজ করে বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরি। কাজে গেছিলাম সেই সকাল সাড়ে আটটায়। সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে করতে কতবার যে চলে আসতে ইচ্ছে হয়েছে। পরক্ষণেই ভেবেছি এই একদিনের একটু কষ্টের বিনিময়ে আগামী কয়েকটা সপ্তাহের আর্থিক টানাটানি নিয়ে উতলা হতে হবে না সেটাই বা কম কীসে? যত কষ্টই হোক না কেন, এসব ভেবে টিকে যাই একটানা বারো ঘণ্টা ডিউটিতে।

রাত প্রায় দশটায় ঘরে ফিরেছি। প্রচ- খিদে পেটে। হাতমুখ ধুয়ে খেতে গিয়ে দেখি, ভাতের হাঁড়িতে একমুঠোর চাইতেও কম সামান্য কিছুটা ঠান্ডা ভাত বড় পাত্রটা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আছে। মুরগির ঝোলে দুই টুকরা আলু ছাড়া যা আছে তা অথই ঝোল। আজ সকালে রেঁধে যাওয়ার সময় হয়নি। ফলে কালকের রাঁধা যা ছিল তাই দিয়েই আজকের সান্ধ্য-আহার। আর কিছু না হোক দুটো ডিম ভেজে নিতে পারতো।

কন্যাকে ডাকলাম। শুয়ে শুয়ে সে গান শুনছিল। আমি ঘরে ফিরেছি নিশ্চয় টের পেয়েছে। উঠে আসার আগ্রহ বোধ করেনি।

‘তুমি খেয়েছ?’

‘হ্যাঁ খেয়েছি।’

‘খেতে খেতে একবারও ভাবলে না সারাদিন ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করে ফিরে এসে আমি কী খাব?’

‘সেটা আমার ভাবার বিষয় না। আমি কী করে জানবো তুমি এত রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকবে? কী করে বুঝবো অন্য কিছু খাবে কিনা। আসার সময় খাবার নিয়ে আসবে কিনা তাও আমার জানার কথা নয়।’

এখানে সোনিয়া মিথ্যার আশ্রয় নেয়, যদিও ক্বচিৎ অসত্য বলে সে। সোনিয়া ভালো করেই জানে, বাইরে থেকে কিনে এনে ডিনার কখনো করি না আমি। যত রাতই হোক, বাড়িতে ফিরে ঘরেই খাই। তর্কে না গিয়ে বলি,

‘তা তো ঠিকই। কিন্তু আশ্চর্য, তোমার একবার জানার কৌতূহলও হলো না।’

‘না, হলো না। তার চেয়ে ঢের জরুরি জিনিস নিয়ে আমার অনেক বেশি কৌতূহল রয়ে গেছে।’

সোনিয়া তার ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্যে পেছন ফেরে।

কৌতূহল পর্বের এখানেই ইতি।

কিন্তু সত্যি কি কৌতূহলে সমাপ্তি ঘোষণা করতে পেরেছিল সোনিয়া?

কিংবা আমি?

কথা না বাড়িয়ে টু পারসেন্ট ফ্যাটের ঠান্ডা দুধ দিয়ে ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল খেতে শুরু করি। অন্যদিন হলে অবশ্য চান করতে করতে ভাত আর আলু, কুমড়া সেদ্ধ করে নিয়ে গরম গরম সেদ্ধ ভাত ঘি সহকারে তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে ক্ষিদে মেটাতাম। কিন্তু শুক্রবার রাত সোমবার রাতের মতো নয়। মঙ্গলবার ভোরে আমাকে কাজে যেতে হয় না। কিন্তু কাল শনিবার সকালে উঠেই আমাকে কাজে যেতে হবে।

আমি সিরিয়াল-দুধ খাওয়া প্রায় শেষ করে এনেছি। আর এক-দুই চামচ বাকি।

সোনিয়া বলল, ‘আমি যাচ্ছি। দরজাটা আমি বেরোলে বন্ধ করে দিও।’

‘এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস সোনা? কোথায় যাচ্ছিস‌?’

সোনিয়া একবার ফিরে তাকায়। হয়তো বলার জন্যে সে জানে না কিছুই। তার ফাঁকা দৃষ্টি সে-কথাই বলে। সে চলে যায়।

 

তারপর এই আট বছর পরে দেখা আজ।

সাবালিকা সোনিয়ার খোঁজে নতুন করে পুলিশে রিপোর্টও করা যাবে না। কেননা এই অঞ্চলের একসময়ের মিসিং পারসনদের মধ্যে অনেকেই এখন আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। আর সাবালিকা হলে তো কথাই নেই। ইচ্ছেমতো তাদের জীবনধারণের তৃষ্ণাকে নস্যাৎ করে, কার সাধ্য?