রিজিয়া রহমান : রক্তের অক্ষরে জোনাকির আলো

ময়দান পেরিয়ে অভিজাত ভবানীপুর এলাকা থেকে দক্ষিণ কলকাতার শুরু। ৮০ বছর আগে অবিভক্ত বাংলার সেই বনেদিপাড়ায় জোনাকি নামে একটি শিশুর জন্ম হলো। রাজনৈতিক দোলাচল, দেশবিভাগ ইত্যাদি কারণে শিশুটি পরিবারের অন্য সবার সঙ্গে বাংলার পশ্চিমাংশ ছেড়ে চলে আসেন পূর্বাঞ্চলের আজকের বাংলাদেশে। নানারকম বাধাবিঘ্নের মধ্যেও থেমে থেমে অর্জন করেন উচ্চশিক্ষা। চালিয়ে যান গল্প-উপন্যাস রচনা।
তাঁর হাত দিয়ে বের হয় বং থেকে বাংলা, শিলায় শিলায় আগুন, রক্তের অক্ষরের মতো মানুষ ও জীবনের সুগভীর বর্ণনাসমৃদ্ধ, ঐতিহাসিক বিন্যাসের আখ্যান। ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’সহ অনেক স্বীকৃতি। ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরে জন্ম নিয়ে ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যু হয় যে-জোনাকির, তিনি রক্তের অক্ষরের শরীরে জোনাকির মতো আলো ছড়িয়ে বেঁচে থাকবেন বাংলা কথাসাহিত্যে। তাঁর মৃত্যু হলেও তাঁর বইগুলো বেঁচে থাকবে বাংলাসাহিত্যের ভান্ডারে ও পাঠকের চিত্তে। অক্ষয় মলাটে লিপিবদ্ধ থাকবে তাঁর নাম, রিজিয়া রহমান।

দুই
রিজিয়া রহমান অসামান্য ভাষায় বহুবিধ বিষয়বস্ত্তর বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর রচনাসমূহের প্রতিটি অক্ষরে। শুধু পাঠেই নয়, অনুভূতির গভীরতম মর্মমূলে পৌঁছে যায় সেসব চিত্ররূপ কাহিনিপ্রবাহ। রক্তের অক্ষর উপন্যাসে এই লেখকের কৃতিত্বের ছাপ সুস্পষ্ট :
সবাই বিস্ফারিত দৃষ্টিতে দেখল কয়েকবার দাপাদাপি করে পেটে ছুরির ঘাই খাওয়া ইয়াসমীনের অর্ধনগ্ন দেহটা নিস্পন্দ হয়ে গেল। হীরুর চোখ টকটকে লাল! হাতে রক্তমাখা ছুরি। হীরু বাইরে এলো।
মেঝেতে পড়ে থাকা ইয়াসমীনের বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে রক্ত মুছে কাগজটা ছুড়ে দিল হীরু কিছুক্ষণের জন্য বজ্রাহত, নির্বাক হয়ে যাওয়া মেয়েদের সামনে।
তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল – দ্যাখ ছিনালেরা! এইবার চক্ষু মেইল্যা দ্যাখ হীরু কী করবার পারে।
পিছিয়ে গেল মেয়েরা। মার খাওয়া পরাজিত পশুর মতো বেদনাহত চোখে ইয়াসমীনের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
রক্তমাখা কাগজটা ওদের সামনে। ওরা শুধু কাগজের এক পিঠের রক্ত দেখল। ওরা জানল না কাগজের আরেক পিঠে লেখা সর্বকালীন সত্যের সেই বিখ্যাত বিদগ্ধ উক্তি : ‘ম্যান ইজ বর্ন ফ্রি, বাট এভরিহোয়্যার ইজ ইন চেইন।’
নিস্তব্ধ বজ্রাহত বাড়িটায় তখন একটি শিশুর স্বাধীন প্রতিবাদের কান্না বেজে উঠল। ফুলমতীর বাচ্চা কাঁদছে প্রবল চিৎকারে।

তিন
রক্তের অক্ষর উপন্যাসে নির্মম মৃত্যুবরণকারী নারী ইয়াসমীন কে? এই প্রশ্ন ও সংশিস্নষ্ট ঘটনাবলি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবেই। ১৯৭৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত রিজিয়া রহমানের উপন্যাসটি ছিল নারী ও মুক্তিযুদ্ধের মিলিত সংগ্রামের ধারাভাষ্য।
স্মরণ করা দরকার যে, বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে যাঁরা সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন, তিনি তাঁদের অগ্রণী। বিশেষত নারী-কথাশিল্পীদের মধ্যে রিজিয়া রহমানের সমকালে রাবেয়া খাতুন (ফেরারী সূর্য, ১৯৭৪), ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ (বন্দী দিন বন্দী শিবির, ১৯৭৬), সেলিনা হোসেন (হাঙর নদী গ্রেনেড, ১৯৭৬) ছাড়া আর কাউকে মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে কথাসাহিত্যচর্চায় এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
রিজিয়া রহমানের রক্তের অক্ষর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধর্ষিত, লাঞ্ছিত বাঙালি নারীদের করুণ জীবনের আখ্যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা ধর্ষিত ও নির্যাতিত লাখ লাখ নারীকে স্বাধীনতার পর সরকার যে সম্মানসূচক বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করেছিল, নৃশংস আঘাতে মৃত্যুবরণকারী ইয়াসমীন তাদের অন্যতম।
তৎকালীন সরকার রণাঙ্গনে ও যুদ্ধের সময় নিপীড়িত-নির্যাতিত নারীদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসন, তাঁদের বিয়ে ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছিল। এসব রাজনৈতিক উদ্যোগ-আয়োজন সামাজিক বাস্তবতায় বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হচ্ছিল। যুদ্ধোত্তর সমাজের একটি অংশ বীরাঙ্গনা নারীদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। তাঁদের পরিবারও এই বীর নারীদের ফিরিয়ে নিতে ছিল কুণ্ঠিত। ফলে লাঞ্ছিত মেয়েদের জায়গা হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্র, পতিতালয় বা অন্য কোথাও।
রিজিয়া রহমান তাঁর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে এমনই এক ভাগ্যাহত নারী ইয়াসমীনকে বেছে নিয়েছিলেন। ইয়াসমীন চরিত্রের মধ্য দিয়ে রিজিয়া রহমান তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের একটি ভিন্ন বাস্তবতা, যেখানে এই বীরাঙ্গনাদের জীবনকাহিনি বর্ণনার পাশাপাশি অঙ্কিত হয়েছে পতিতাপল্লির অন্ধকারময় বীভৎস জীবনে নারীনির্যাতনের মর্মন্তুদ কাহিনিচিত্র।

চার
রক্তের অক্ষর আবর্তিত হয়েছে ইয়াসমীনের জীবন, সংগ্রাম ও অস্তিত্বের সংকটকে ঘিরে। পটভূমিতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে পাকিস্তানি সেনারা ইয়াসমীনের বাবা, মা, ভাই, বোনকে হত্যা করে। ইয়াসমীনকে ধরে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। মাসের পর মাসের পাশবিকতায় নিত্যজর্জরিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধশেষে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পায় ইয়াসমীন। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মুক্ত স্বদেশে নিপীড়িত ইয়াসমীনের ঠাঁই হয় একটি নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
কিন্তু কঠিন বাস্তবতা ইয়াসমীনের পিছু ছাড়ে না। আক্রান্ত ও ক্ষত-বিক্ষত ইয়াসমীনের জীবনকে অন্ধকারের স্তব্ধতায় রেখে আর সবকিছু চলতে থাকে ঠিক আগের মতোই। পরিবারের সবাই পাকিস্তানি বর্বরদের হাতে নিহত ও ইয়াসমীন নিজে চরম লাঞ্ছিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যে প্রেমিক সারাজীবন সুখে-দুঃখে ইয়াসমীনের সঙ্গী হওয়ার সংকল্প করেছিল, সে এখন আরেকজনের স্বামী।
এমনই পরিস্থিতিতে ইয়াসমীন একদিন তার চাচার বাসা খুঁজে পায়। কিন্তু এতদিন পর তাকে দেখে চমকে ওঠে চাচা। ইয়াসমীন বুঝতে পারে, তাকে আর আগের মতো গ্রহণ করছে না। চাচা ইয়াসমীনকে চাকরি ও অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও নিজের পরিচয় দিতে কুণ্ঠিত।
ক্ষুব্ধ ইয়াসমীন আবার ফিরে আসে তার শেষ ভরসাস্থল পুনর্বাসন কেন্দ্রে। ইয়াসমীনের চাচা তার একটি চাকরির ব্যবস্থা করলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে ইয়াসমীনকে সম্মুখীন হতে হয় চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির। সর্বত্র তার বীরাঙ্গনা পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে। উচচশিক্ষিত ইয়াসমীনের যোগ্যতার চেয়ে তার লাঞ্ছিত জীবনের কাহিনিই প্রশ্নকর্তাদের কৌতূহলের বিষয় হয়ে ওঠে। প্রশ্নকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ইয়াসমীনের বিক্ষুব্ধ উক্তির মাধ্যমে ঔপন্যাসিক নারীর আত্মসম্মানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত্ব করেন :
আমার সম্পর্কে আপনাদের আগ্রহের চেয়ে কৌতূহল বেশি। কারণ আমি সরকারের দেয়া বীরাঙ্গনা খেতাব নিয়ে এসেছি। আপনাদের দৃষ্টি, আপনাদের ভঙ্গি বলে দিচ্ছে যে, আমি সমাজ ছাড়া মানুষ। সরকার বোধহয় বারাঙ্গনা বলতে ভুলে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে ফেলেছে। … পাকিস্তানি সৈন্যরা আমার দেহের ক্ষতি করেছে। আর আমার মনের ক্ষতি করছেন আপনারা। আপনাদের মতো মানুষেরা যারা কিছু না হারিয়েও স্বাধীনতার ফল ভোগ করছেন।

পাঁচ
ইয়াসমীনের সংক্ষুব্ধ বক্তব্যের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে তীব্র বিদ্রূপ, ঘৃণা এবং পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির স্বরূপ। মুক্তিযুদ্ধের বীর নারীদের প্রতি সমাজ ও কিছু মানুষের হীন মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ইয়াসমীনের ঘটনায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিত ও লাঞ্ছিতরা বীরাঙ্গনা খেতাব পেলেও সামাজিক ক্ষুদ্রতার কারণে কিছু মানুষ তাদের গ্রহণ ও যথাযথ মূল্যায়ন করেনি। পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় এবং সমাজের বিভিন্ন পেশায় আসীনরাও দেখাতে পারেনি উদারতা ও সম্মান।
ইয়াসমীনের জীবন-বাস্তবতার কঠিন পরীক্ষার এখানেই শেষ নয়। শারীরিক লাঞ্ছনা ও মানসিক পীড়নের পাশাপাশি তার ওপর নেমে আসে শোষণ ও অবদমন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে দেখা যায়, আশ্রয়কেন্দ্র থেকে একজনের সঙ্গে ইয়াসমীনের বিয়ে হলেও তার পেছনে ছিল নোংরা ষড়যন্ত্র, লোভ ও অসাধু মনোভাব।
অল্প সময়ের মধ্যেই ইয়াসমীন আবিষ্কার করে যে, তার বিবাহিত স্বামীর আসল উদ্দেশ্য দাম্পত্য ও প্রেম নয়, অন্য কিছু। মুক্তিযুদ্ধের সংকুল পরিস্থিতিতে ইয়াসমীনের দখল হয়ে যাওয়া বাড়িটি উদ্ধার ও ভোগদখল করতে এবং ইয়াসমীনের শরীরকে ব্যবহার করে ফায়দা লোটার জন্যই বিয়ে নামক প্রহসন করেছে। প্রতিদিনই নিত্যনতুন পুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে ইয়াসমীনকে তার কথিত স্বামী বাধ্য করছে। স্বামীর অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত ইয়াসমীনের ঠাঁই হয় নিষিদ্ধপল্লি পতিতালয়ের অন্ধকার জগতে। জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে মেনে প্রতিবাদী ইয়াসমীন তারপরেও বলতে থাকে তার ক্ষুব্ধ কথামালা :
যুদ্ধ যদি আমাকে বেশ্যাই বানাল, তবে তার ফলভোগ ওই ক্রীম খাওয়া লোকদের করতে দেব না। আমি বেশ্যা। আমি বেশ্যা হয়েই যাব।

ছয়
মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত রণাঙ্গন আর জীবনযুদ্ধের কঠিন ক্ষেত্র পেরিয়ে পতিতালয়ের অন্ধ-অন্ধকার জগতেই শেষ পর্যন্ত ইয়াসমীনের করুণ মৃত্যু ঘটে বেশ্যাপল্লির পাষ- গুন্ডার ছুরিকাঘাতে। এভাবে উপন্যাসের সমাপ্তির মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে মহান মুক্তিযুদ্ধে সবকিছু হারানো এক বীরাঙ্গনা নারীর।
ইয়াসমীনের মর্মামিত্মক মৃত্যু পুরুষশাসিত ও শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নারীর বিপন্ন অস্তিত্বকেই কেবল নির্দেশ করে না, একটি জাতির স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গজনিত ট্র্যাজেডির স্বরূপও উন্মোচিত করে। ব্যক্তির করুণ আখ্যান ও আত্মত্যাগ জাতীয় জীবনকে উজ্জ্বল করলেও সামাজিক অন্ধকার আর ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ ইয়াসমীনের মতো সেইসব উজ্জ্বল মুখচ্ছবিকে ঢেকে দেয়। জীবনের প্রয়োজনে ও জাতীয় তাগিদে এক মহান মানবীর ত্যাগ ও লড়াইয়ের গৌরবকে লুটেরা সমাজ ও স্বার্থান্ধ মানুষ নস্যাৎ করে। যার অবদান হওয়ার কথা ইতিহাসের স্বীকৃতিতে ধন্য এবং তার অবস্থান হওয়ার কথা জাতীয় জীবনের উচ্চতর স্থানে, তাকে যুদ্ধোত্তর সমাজবাস্তবতা লাগাতার শোষণ ও লাঞ্ছনার পর নৃশংসভাবে হত্যা করে পাঠিয়ে দেয় মৃত্যুর ঠিকানায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রামে এদেশের নারীসমাজের একটি ব্যাপক অংশের আত্মত্যাগ ও বীরোচিত ভূমিকা ইতিহাসের গৌরবময় অংশ হলেও সেসব নির্যাতিত নারীর যথাযথ মূল্যায়ন, পুনর্বাসন ও সম্মানজনক স্থান নির্ধারণ করতে ব্যক্তি, সমাজ ও প্রশাসন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। রিজিয়া রহমান রক্তের অক্ষর উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে নারীর আত্মত্যাগ, মানবিক বিপর্যয় এবং সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক ব্যর্থতার প্রকট চিত্রটিই তুলে ধরেছেন ইয়াসমীনের বিয়োগান্ত করুণ পরিণতির আখ্যান নির্মাণের মধ্য দিয়ে।

সাত
শুধু রক্তের অক্ষর নয়, রিজিয়া রহমান মুক্তিযুদ্ধকে বারবার এবং বহুমাত্রিকভাবে স্পর্শ করেছেন তাঁর কথাশিল্পের মাধ্যমে। একটি ফুলের জন্য উপন্যাসে তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজজীবন ও সময়প্রবাহকে নানামুখী ঘাত-প্রতিঘাতে চিত্রিত করেছেন। তুলে ধরেছেন তৎকালীন সামাজিক বৈষম্যের পাশাপাশি জীবনযুদ্ধে পরাজিত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ, হতাশা ও বঞ্চনার আখ্যান। মনে রাখা দরকার যে, সে-সময় সমাজবাস্তবতা বদলে গিয়েছিল বিপরীত মেরুতে এবং অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাই বাস্তব জীবনে নিদারুণ অবহেলা ও করুণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা রণাঙ্গনের কঠিন সমরে হারিয়েছিলেন তাঁদের হাত-পা এবং হয়েছিলেন পঙ্গু, তাঁদের বড় গলায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নামে ডাকা হলেও যথাযথ সামাজিক সম্মান, স্বীকৃতি দেওয়ার বদলে একধরনের অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকারে পরিণত করা হয়। বীরাঙ্গনার মতো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারেও সমাজ ছিল কুণ্ঠিত। এইসব বীরের স্থান হয়েছিল সরকারি হোমে। কেউ কেউ জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার তাগিদে রিকশা চালিয়েছেন। অনেকে বেছে নিয়েছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি। এমনই ছিল যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের অতি নির্মম আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা।
রিজিয়া রহমানের একটি ফুলের জন্য উপন্যাসের নায়ক আলফু তেমনই একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে তার একটি পা হারিয়েছে। অন্যদিকে তার সহযোদ্ধা সাজ্জাদ পঙ্গু হয়ে সরকারি হোমে আশ্রিত হয়ে থাকে। রণাঙ্গনের আরেক সহযোদ্ধা ফরহাদ একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করে। অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সমীহ করলেও তারা তার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজকেই বাণিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগাতে চায়।
এমন বিরূপ পরিস্থিতি ও বাস্তবতা টের পায় উপন্যাসের চরিত্রসমূহ। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তারা যে কখনো কখনো লৌকিক সম্মানের বাইরে বাস্তবে অবজ্ঞা-অবহেলা ছাড়া কিছুই পাচ্ছে না, সেটাও অনুভব করে। ফলে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা একধরনের অবসাদ ও বিচ্ছিন্নতায় আক্রান্ত হয়। বঙ্গভবন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দাওয়াত দেওয়া হলেও সেখানে এই পঙ্গু বীর যোদ্ধারা যেতে চায় না। এই অব্যক্ত বেদনা ও প্রামিত্মকীকরণের মনস্তত্ত্ব মূর্ত হয় রিজিয়া রহমানের প্রাঞ্জল ভাষায় :
গণ্যমান্য সম্মানী মানুষের ভিড়ের মধ্যে বুকের সেই ভয়টা ওদের প্রত্যেকটা মুহূর্তে সচেতন করে রেখেছে। কি যেন এখানে যে মুখগুলো ওদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে, তাদের দৃষ্টির গভীরেও কি সেই কথাটা লুকানো আছে কিনা, তোমরা পঙ্গু।
উপন্যাসে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবহেলা এবং তাঁদের হতাশা ও গস্নানির স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সমাজে তাঁরা যে অপাঙ্ক্তেয় ও করুণার পাত্র, তা-ও পরিস্ফুট হয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনে রাষ্ট্র ও সরকার তাঁদের স্মরণ করলেও তা তাঁদের কোনো কাজেই আসে না। যে-সত্য প্রকাশ পায় উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র পঙ্গু-যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুনিরের হতাশামিশ্রিত কথায় :
ভোর থেকে সবাই সাভারের শহীদ মিনারে ছুটছে। এদেশে মানুষের চেয়ে মিনারের দাম বেশী; মরে গেলেই বোধ হয় দাম বাড়ে।
যাঁরা জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, হারিয়েছিলেন অঙ্গ, সেইসব জীবিত ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার ক্ষোভ, বিদ্রূপ, হতাশার মধ্য দিয়ে যে-বাস্তবতার দেখা উপন্যাসে পাওয়া যায়, তা হলো, দেশের বীর ও শ্রেষ্ঠ সমত্মানরা রাষ্ট্র ও সমাজে প্রকৃত স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত ও চরম অবহেলার শিকার। রিজিয়া রহমান তাঁদের মর্যাদা না দেওয়ার বেদনাকে শিল্পিত করে তুলেছেন তাঁর লেখায়। উন্মোচিত করেছেন নির্মম সমাজবাস্তবতার প্রবঞ্চনা ও ব্যর্থতাকেও।

আট
উপন্যাসের এক প্রামেত্ম প্রকৃত ও ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলিত পরিস্থিতির পাশাপাশি আরেক প্রামেত্ম দেখা পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে আরেক নিকৃষ্ট খেলা। যে-খেলায় জড়িত অসৎ রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসক ও স্বার্থান্ধ মানুষ। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের মতো মহৎ ও ঐতিহাসিক প্রপঞ্চকেও ক্ষুদ্র স্বার্থে ব্যবহার করতে পিছপা হয় না।
আখ্যানের এ পর্যায়ে দেখা যায়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ভব, মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট ও নাম ভাঙিয়ে স্বার্থবাদী মহলের আখের গুছিয়ে নেওয়ার মচ্ছব। একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে পুনর্বাসন ও সামাজিক মর্যাদায় পুনরাধিষ্ঠানের ঘটনা অতি দ্রম্নততার সঙ্গে ঘটতে থাকে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে ও অবক্ষয়ের ফলে বিকৃত ও কোণঠাসা হওয়ার এ-চিত্র উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
রিজিয়া রহমান সাহসের সঙ্গে এবং শৈল্পিক সুষমায় দেখান যে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রের ফলে সাধারণ জনমানসে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির একটা অপচেষ্টা সন্তর্পণে চলছে, তাঁদের কোণঠাসা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উপন্যাসে দেখানো হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদের ছোটভাই আহাদ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান না করেও কৌশলে দ্রম্নত প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। বাংলাদেশের সমাজে এই নেতিবাচক রাজনৈতিক বিবর্তন উন্মোচন করেছেন তিনি পারঙ্গম বর্ণনায় :
ফরহাদের দু’বছরের ছোট আহাদ। মুক্তিযুদ্ধে যায় নি সে। সেই আহাদ স্বাধীনতার পর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হয়ে গিয়েছিল। অমুক্তিবাহিনী বন্ধুদের নিয়ে সে দল তৈরি করে ফেলেছে। … মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট যোগাড় করেছিল সে। ম্যাট্রিক পাশ আহাদ কি চমৎকারভাবে অন্ধকারের সিঁড়িগুলো টপকে গেলো। ব্যবসা করল। … এখন বিলাতে চাকুরী করে। ফ্ল্যাট কিনেছে।
কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভাই ফরহাদ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে পারেনি বলেই পিছিয়ে পড়ল। এসব মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাঁরাই দেশ ও সমাজ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছরের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এবং চেতনার বিলুপ্তি ঘটল রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে। উপন্যাসে সেই যুদ্ধোত্তর বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধবাদীদের উত্থান ও বিকাশের বাস্তবতাকেই রিজিয়া রহমান মূর্ত করেছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মজৈবনিক ধারাক্রমের বর্ণনার মাধ্যমে।
একসময় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তির চরম শক্তি সঞ্চয়ের ফলে এমন একটি প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে তো বটেই, খোদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও উচ্চারিত হতে থাকে যে, কেন তাঁরা যুদ্ধে গিয়েছিলেন? উপন্যাসে এই আত্মজিজ্ঞাসায় ক্রমাগত ক্ষত-বিক্ষত হয়ে উপসংহারে একটি আশাবাদী প্রত্যয় তুলে ধরেন রিজিয়া রহমান। কোনো ব্যক্তিগত আকাঙক্ষা নয়, যুদ্ধ ও ত্যাগ শুধুমাত্র দেশের জন্য, স্বাধীনতার ফুলকে ধরার জন্য। এ চিরায়ত মনোভাব তিনি ব্যক্ত করেন উপন্যাসের শেষদিকে, মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদের কণ্ঠে :
আমরা চাই না কোনও বিদেশী ট্যাংকের নীচে আমাদের সে ফুল পিষে কলঙ্কিত করা হোক। অনেক দুঃখ নিয়েও অনেক কষ্ট করেও আমরা এই ফুলকে মুক্ত রেখেছি। এ ফুলকে আমরা বাঁচাবোই।
স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে, স্বাধীনতাকে পেতেই মানুষের যুদ্ধযাত্রা সম্পন্ন হয়। শত ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও না-পাওয়ার বেদনাকে ভুলেই বীর যোদ্ধারা স্বাধীনতার ফুলকে ধরে রাখেন। উপন্যাসে রিজিয়া রহমান নৈরাশ্য, অন্ধকার, জীবনযন্ত্রণা ও হতাশার বিরুদ্ধে সন্ধান করেছেন আলোকিত ভবিষ্যতের সোনালি দিন। ব্যর্থতা, যন্ত্রণা ও পরাজয়ের সর্বগ্রাসী প্রতিষ্ঠার মধ্যেও রিজিয়া রহমান সন্ধান করেছেন আলো ও শুশ্রূষা। তাঁর জীবনবাদী মন ও মনন বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিমেয় প্রেমশক্তিতে উত্তরণের শক্তিমত্তাকে আবিষ্কার করেছে।

নয়
রিজিয়া রহমানের উপন্যাসে প্রত্ন-ঐতিহাসিক আবহ আধুনিক বাংলা উপন্যাসের এক উজ্জ্বল অর্জন। বেলুচিস্তানের পটভূমিতে তাঁর রচিত উপন্যাস শিলায় শিলায় আগুন শুধু শক্তিশালী রচনাই নয়, সুগভীর সমীক্ষাও বটে। তিনি প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতো ইতিহাস আর ঐতিহ্য খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে এনেছেন তাঁর প্রায় প্রতিটি উপন্যাসে।
যেমন, বং থেকে বাংলা উপন্যাসটির ব্যাপ্তি বাঙালির জাতি গঠন ও ভাষার বিবর্তনের ইতিহাস। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বং গোত্র থেকে শুরু হয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পর্যন্ত এই উপন্যাসের বিসত্মৃতি।
আবার নীল বিদ্রোহ-পরবর্তী সময়ে খুলনা অঞ্চলের এক বিপস্নবী রহিমউল্লাহর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচচার হওয়ার বীরত্বগাথা নিয়ে লিখেছেন অলিখিত উপাখ্যান।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সাঁওতাল শ্রমিকদের জীবনচিত্র পর্যবেক্ষণ করে তিনি রচনা করেছেন একাল চিরকাল।
প্রাচীন নগরীতে যাত্রায় লিখেছেন ঢাকার অতীত ও বর্তমান জীবনযাপন।
চট্টগ্রামে হার্মাদ পর্তুগিজ জলদস্যুদের অত্যাচার এবং পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের দখলদারিত্বের চিত্র তুলে ধরেছেন
উত্তরপুরুষ উপন্যাসে, যেখানে চিত্রিত হয়েছে আরাকান-রাজ-সন্দ-সুধর্মার অত্যাচার, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বীরত্ব, পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের গোয়া, হুগলি, চট্টগ্রাম দখলের ইতিহাস।
গভীর মননশীলতায় রিজিয়া রহমান নির্মাণ করেছেন তাঁর লেখালেখির জগৎ। এত বড়মাপের এই লেখক শুধু তাঁর সমকালেই নয়, অনাগতকালেও আলো ছড়াতে থাকবেন। শেষ জীবনে তিনি ছিলেন নিভৃতচারী, এবং অবশেষে জীবনের চেয়ে দূরের ঠিকানায় তিনি চলে গেছেন চিরকালের জন্য। তথাপি পাঠকচিত্তে তিনি জাগ্রত থাকবেন তাঁর অক্ষয় অক্ষরমালায় সজ্জিত গল্প-উপন্যাস, কথাশিল্পের সম্ভারে।

দশ
খুব কাছ থেকে পর্বতকে বড় ও বিশাল দেখায় না। মনে হয় দেয়াল মাত্র। তেমনি আশপাশের বড়মাপের মানুষদের বিশালতাও আমরা টের পাই না। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমরা অজ্ঞতা বা ক্ষুদ্রতার জন্য নিজস্ব মেধাকে এড়িয়ে যাই। ঔপন্যাসিক রিজিয়া রহমান তেমনি বড়মাপের একজন কথাকার। যদিও আমরা আমাদের কাছের মেধাবীদের বিশালত্ব মূল্যায়ন করতে পারি না। দূরের কেউ হলে সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার বন্যা শুরু হয় সাহিত্যের পাতায়। অথচ বিশ্ববরেণ্য লেখকদের মতোই তাঁর লেখার মান, তা আমরা মূল্যায়নের আলোয় আনতে পারিনি।
রিজিয়া রহমান ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল জোনাকি। তাঁর বাবা আবুল খায়ের মোহম্মদ সিদ্দিক ছিলেন একজন চিকিৎসক ও মা মরিয়াম বেগম একজন গৃহিণী। তাঁদের পরিবার ছিল সংস্কৃতিমনা। তাঁর দাদা মুন্সী আব্দুল খালেকের পড়ালেখার অভ্যাস ছিল। তাঁর ঘরে সেলফভর্তি ছিল ইংরেজি আর ফার্সি বই। তাঁর বাবা ছিলেন সংগীত-অনুরাগী। তিনি এস্রাজ ও বাঁশি বাজাতেন এবং উচ্চাঙ্গসংগীত শুনতেন।
রিজিয়া রহমানের বাবার চাকরির কারণে তাঁদের ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর তাঁরা বাংলাদেশে চলে আসেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুরে। সেই সময় শখের বশে কবিতা লিখতেন। তখনি তাঁর লেখালেখির সূচনা। পরে তিনি কষ্ট করে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
পুরোটা জীবন তিনি কাটিয়েছেন সাহিত্য-সাধনায়। তাঁর প্রচেষ্টায় আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্য ঋদ্ধ হয়েছে। তিনি তাঁর অনন্য সাহিত্যসম্ভারের মধ্যে বেঁচে থাকবেন মৃত্যুর পরও। নারী, মুক্তিযোদ্ধা, সংগ্রামী মানুষ, প্রামিত্মক জনজীবনের কথা যে-রক্তের অক্ষরে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন, তা জোনাকির আলোর মতো প্রজ্বলিত থাকবে বাংলাদেশের সাহিত্যের আকাশে।