তালাশ

রিভিউ নয়, শাহীন আখতারের তালাশ নিয়ে এক হ্রস্ব গদ্য পাঠ লিখতে বসেছি। বসেই বুঝতে পারছি কাজটা কঠিন। যে-অভিজ্ঞতার আখ্যান তা তাতে সমানুকম্পন খুব সহজ নয়। ‘অনাস্থার অস্থায়ী অপনোদন’ ঘটিয়ে সত্যিই কতদূর এগোনো যায়? স্থানকালের দিশা মিলতে পারে, ঘটনাবৃত্তের নির্ঘণ্টসাধনও অসম্ভব নয়, এমনকি ঘূর্ণিসদৃশ আকস্মিকতাও ইতিহাসের ওজর তুলে জায়গা করে নিতে পারে। কিন্তু যারা একাত্তরের অগণিত, অগণিত, উচ্ছিষ্টস্বরূপ, বর্জ্যপ্রায়, মুর্দা না হয়েও সামাজিক মুর্দা, খানসেনাদের হাতে নিত্যবলাৎকৃত, ধর্ষিত, জারজ গর্ভধারিণী রমণীসমাজ, তারা কি কেবল থেঁতলানো শরীরই, বিন্দুমাত্রও মন নয়? আর সে-মনে উঁকি দেবার মুরোদ কজন পুরুষ পাঠকের আছে? দশক দুই আগে অভিজিৎ সেনের গল্প ‘মানুষের পিছন দিক’ পড়ে যে-ধাক্কা খেয়েছিলাম, এটা তার পুনরাবৃত্তি নয়। সেখানে এক হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার যোগ হয়েছিল – ছেলে অযোধ্যা যেতে চায়, তাই তার মাকে বলতে হলো : ‘এই চ্যাংড়ার বাপ হইল পঞ্চাশ-ষাট-সত্তরজনা মিলিটারির একজনা, আর সেই একজনা যে কে তা আমিও কবার পারমো না!’ ‘সারাটা জীবন আমার নিজেকে অশুচি লাগিছে, আর সারাটা জীবন তোকে বুকে জড়ায়ে নিজেকে শুচি করিছি – সারাটা জীবন আমি পাপপুণ্যের ধন্দে ফালাফালা হইছি – আর তুই!’ অন্যদিকে যে-ধাক্কা তালাশে খাচ্ছি তা মুহুর্মুহু – পুরুষাঙ্গ-যৌনাঙ্গ যেন মুড়িমুড়কি, নগ্নপ্রায় নারীদেহই একমাত্র বাস্তব, এবং অবাঞ্ছিত গর্ভসঞ্চার নিতান্তই প্রাত্যহিক। আর হেথা-হোথা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অজস্র নারী-লাশও। খান সেনাদের আচরণ কোথাও কোথাও নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অধিনায়কদের মতো, অহেতুক অজাচারেই সুখ। আর যার ওপর সেই অজাচার সে মরল কি বাঁচল তাতে কিছু এসে-যায় না।
এই একাত্তরের নরকই কেবল নয়, তার তিন দশকের অনুবর্তনও এ-উপন্যাসের উপজীব্য। কিন্তু তা নিরালম্ব ইতিহাস বা ঘটনাক্রমিক বিবরণ নয়, অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতার অধিকারী নারী। এবং যে-নারীকে আমরা আগাগোড়া দেখি সে মরিয়ম ওরফে মেরি। এক গর্ভোৎপাটিত যিশুভ্রূণের মাতা। আরো হাজারো বলাৎকৃতা-ধর্ষিতা নারীর মতো তারও ভূষণ ‘বীরাঙ্গনা’, এবং আরো হাজারো
বলাৎকৃতা-ধর্ষিতা নারীর মতো সেই ভূষণজনিত দ্বিচারিতার সেও শিকার – মানবিকতা কি পরিপার্শ্বের স্বতঃউৎক্ষিপ্ত নিষ্ঠীবনের খোঁজ রাখে? অথচ প্রতিবেশী দোতলার যে-জান্তব কৌতূহল একদা তাকে চোখে চোখে রাখত, সেখানেই যে শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল তা কী করে ভোলা যায়! সেই টানেই তো ওই আপাত অমানুষ মানুষটি তার দিকে ছুটে আসতে আসতে পিঠে গুলি খেয়ে শূন্যে উঠে গিয়েছিল। তার শেষ পারানির অন্তে তো মরিয়মের মনে হচ্ছিল তার দেখা পেয়ে যাবে, যেমন পেয়ে যাবে তার সেই ভয়কাতুরে ছোটভাইয়েরও দেখা, যে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে অচিরেই হানাদারদের মোটরগাড়ির
হা-হা আলোয় বীরবিক্রমে ঝাঁপ দিয়েছিল। অবশ্য তার শেষ পারানির প্রাথমিক গন্তব্য ছিল সেই সহ‘বীরাঙ্গনা’ যে মনে হচ্ছিল সব বুঝতে পারছে, কেন এ-নৈরাজ্য, এই অর্থহীনতার অর্থ – ‘বীরাঙ্গনা’দের ভবিষ্যৎ যে ছকে দিয়েছিল হয় বেশ্যালয়, নয় পচাগলা লাশ – আর যার অন্য এক নামে মৃত্যু হয়েছিল বেশ্যালয়েই – কোনো গোলাপবাগিচার স্বপ্ন যার কোথাও ছিল না।
স্বপ্ন মরিয়মের ছিল। অবশ্য তা গোড়ায়, বিয়ের। তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে করতেই উপন্যাসের শুরু। আর তার হতাশার চটি সেলাইয়ের জন্যও যেন এক মুচিও ছিল দৃশ্যপটে যে পঁচিশ মার্চের আগুনে ছাই হতে যাচ্ছিল। ‘বীরাঙ্গনা’ হয়ে সে যখন ফিরে এলো তখন সে নিরাশা চিনেছে, তার ভূতপূর্ব দয়িতের কাছে আর কিছু চাইবার নেই। খালি বেঁচে থাকতে চায়; আর সাহেব যদি মুক্তিযুদ্ধের আখের গোছাতে লেগে গিয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো তিনিই হতে পারেন তার নতুন জুতোসেলাই। আর যদি তা না হয়ে তিনি ক্ষমতা হাঁকেন, তাহলে এই দৃশ্যপট মেরির ছাড়তে হবে। তার এক বন্ধুর প্রেম ও বিবাহ কি তারই না ফল-ফলানো প্রেমের স্বপ্নপূরণ? বোধহয় না, বোধহয় তা মুক্তিযুদ্ধের আড়ালে-আবডালে যে শহুরে বিত্তবানেরা কেউ কেউ অক্ষত থেকে গেছে তারই অভিজ্ঞান। তার জন্য হয়তো আপসও করতে হয়েছে – আদর্শহীনতা বা আত্মবিক্রয়। কারো কারো বুঝি স্বভাবেই সে-বক্রতা ছিল, যেমন স্বতঃপ্রণোদিত সেই অভিভাবক প্রতিবেশী যিনি ধর্মে জিরাফে দুয়েই থাকেন। ‘বীরাঙ্গনা’ হয়ে উঠবার এক তুঙ্গমুহূর্তে যে এক অন্য ছবি উঁকি মারে মরিয়মের মনে – এক দূরের বীথিকাশোভিত শহর ও সেখানে শোভমান এক সুশ্রী নারী – তা বোধ করি তার তৎকালিক মানসিক বিপর্যাসেরই সাক্ষী। কিন্তু পুরোপুরি কি তাই-ই?
ছাবিবশে মার্চ যে-মরিয়ম আরো কয়েকজনের সঙ্গে শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে তা আত্মরক্ষার্থে তো বটেই, মনে মনে আপন গ্রামের
উদ্দেশেও। যেতে যেতে একবার পদ্মাও পেরোয় আর বদল হয় দলেরও। এক আশ্রয় থেকে আরেক আশ্রয়, খোঁজ চলতে থাকে নিরাপত্তার, পেছনে খান সেনাদের ক্রমবর্ধমান বিভীষিকা – আছে কি কোনো দৈব-অভয়, কোনো শূন্য যেখানে সেঁধিয়ে যাওয়া যায়? অথচ যে-দলে তুমি আছ সেখানেও তোমার যৌবন নিয়ে ঈর্ষা, যেন তোমার টানেই ওই যৌন-ডাকাতেরা তাড়া করে আসছে। তুমি তো যাবেই, তোমার সঙ্গে অন্য নারীদেহীরাও যাবে, আর লাশ হবে কিছু পুরুষ। এ-ই তো ভবিতব্য। আবার, মুক্তিযুদ্ধের হঠাৎ ধাক্কায় কি ভবিতব্য নয় পাকসেনাদের উদোম ট্রাকে প্রায়নগ্নের দলে বাহিত হয়ে জনতার টিটকিরি খাওয়াও? ইতিহাস কি কখনো কখনো শাঁখের করাত হয়ে ওঠে না?
পঁচিশ মার্চ মধ্যরাত্রে না হয়ে ছাবিবশে মার্চ সকালে যে-মেয়ের জন্ম হয় তার তো নাম একটাই হতে পারে – মুক্তি। আর আটাশ বছর পরে কোনো হৃদয়বতী যদি ‘বীরাঙ্গনা’-গবেষণায় নামে, সেও নিশ্চয়ই সেই মুক্তিই। কোথায় যেন এক যুক্তি কাজ করে এই পারম্পর্যে, যখন স্বাধীনতার চার বছর কাটবার আগেই এক মর্মবিদারক হত্যালীলায় ‘মুক্তি’ কথাটার মানেই উলটেপালটে যায় এবং ‘বীরাঙ্গনা’-খাতাও মিলিয়ে যায়। সেই খাতা নতুন করে খোলার কাজই মুক্তির। এখন, এত বছর পর! বস্ত্তত ‘বীরাঙ্গনা’দের
যে-গল্প আমরা শুনছি তার এক সুতো বোধ করি মুক্তির হাতে – তার লেগে-থাকা তালাশের ফসল – অন্য সুতো ‘বীরাঙ্গনা’দের আপন হাতে – তাদের অভিজ্ঞতা। এই দ্বিতীয় সুতো কালানুক্রমিক, পাল্লা দিচ্ছে সময়ের সঙ্গে। প্রথম সুতো বিষয়ানুক্রমিক। তাতে মমতার ঢেউ উঠুক বা না উঠুক, সহৃদয় জিজ্ঞাসা আছে। তবে জিজ্ঞাসা বাইরের, সেখানে ঘটনার ক্রম ঋজুরেখ, যুক্তিগ্রাহ্য। তাতে ইতিহাসের উপাদান জোটে, কিন্তু জীবনের স্পন্দন মেলে না। স্পন্দন মেলে যেখানে দুর্ঘটন লাফিয়ে উঠে সব ফালাফালা করে দেয়, যুক্তিক্রমের কোনো বালাই থাকে না। থাকে প্রায় এক মনুষ্যেতর অসিত্মত্ব। অথচ মন তো পুরো উবে যায় না। সে চায় অন্য কারো সঙ্গে শরীর পালটে নিতে, কিন্তু কে তাকে দেবে তার আনকোরা, এমনকি বৈধব্যম–তও, শরীর! কে নেবে তার এই বহুভোগ্য, বহুহসেত্ম ধ্বস্ত, ঘৃণ্য শরীর।
মরিয়মের তালাশই সবচেয়ে কঠিন তালাশ হয়ে দাঁড়ায় মুক্তির। প্রায় এক প্রতীকী মূল্য পেয়ে যায় তা। যে-‘মুক্তি’ মুক্তিযুদ্ধের মর্ম তার আস্বাদ কি পাবার নয় মরিয়মের? পেলেও কতটা? তার বাইশ বছর বয়সের ‘বীরাঙ্গনা’ অয়ন কি এই আটাশ বছর তাকে কেবল উচ্ছন্নই করে রেখেছে, কোনো দিশা দেয়নি। চবিবশ বছর বয়সের প্রথম বিবাহ না হয় বিফলে যায় – উদারতার ছদ্মবেশ ফুঁড়ে অচিরেই দেখা দেয় এক ধর্ষক স্বামী যার মদ্যাসক্ত আচরণ নিজগৃহে বেশ্যাগমনেরই শামিল। ‘মরিয়ম নিজেকে ধিক্কার দেয় – হাঁদারাম! বিয়ে কী এখনো জানে না। লোকটাকে যদি পার্কেই ফিরে যেতে হয়, সে ঘরে বউ রাখবে কেন। … যুদ্ধটা টুকরো টুকরো হয়ে তার জীবনে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ধর্ষণ-নির্যাতন কারো ওপর জীবনভর চলতে পারে না। তাহলে সে কি ঠাঁই বদলাবে? পুনর্বাসনকেন্দ্রে কতবার ফেরা যায়! সেখানে যেতে না চাইলে বা জায়গা না পেলে বাকি থাকে যা, তা বেশ্যালয়। … সেখানে মেয়েরা একবার ঢুকলে আর বেরোতে পারে না। কবরের মতো স্থায়ী এমন এক ঠিকানাই হয়তো তার দরকার।’
বিয়ে না হয় ফক্কাই হলো, কিন্তু ‘মা-মেয়ে টেইলারিং’? স্থায়ী না হলেও তো তার কিছু সদর্থ থাকার কথা – তার মায়ের সস্নেহ উদ্যম, স্বীয় শ্রমের দৈনন্দিনতা, তজ্জাত উপার্জন ও জাত-অজাত শিশুদের জামা বানানোর সুখ? আবার, তার ওপর এক অনভিজ্ঞ উঠতি কবির ক্রমশ বাড়তে-থাকা নির্ভরতা কি কোনো সম্পর্কের জন্ম দিতে পারত না? তাছাড়া, পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতায় তার প্রথম প্রেমিকের আকস্মিক প্রত্যাবর্তনে তার বিহবলতা ফলপ্রসূ হতেই পারত যদি না সেই প্রত্যাবর্তনই হতো পুরোমাত্রায় হিসেবি ও অন্যতর রাজনৈতিক সুবিধের অপেক্ষা। অবশ্য সেই সূত্রে একটা কাজ জুটে গিয়ে খাদ্যবস্ত্রের আশু সমস্যা মিটল, যদিও তার ‘বীরাঙ্গনা’ মার্কা অন্তরালে ঝুলেই রইল। আবার ওই কাজই তার কাছে নিয়ে এলো প্রায় আধবয়সী এক সমকামী যুবককে, যার তার সঙ্গে আপাত-ঘনিষ্ঠতা তথা তার গৃহে নিয়ত রাত্রিবাসে বিরূপ হয়ে প্রতিবেশীরা জোর করে তাদের বিয়ে দিয়ে দিলো। হিন্দু ছেলেটিকে অবশ্য তার জন্য ধর্মান্তরিত হতে হলো, যার বাড়তি ফায়দা বর্তাল মারমুখী উদ্যোক্তাদের কপালে। ছেলেটির নতুন নাম মরিয়মই দিলো, তার সেই প্রথম প্রেমিক ও তার এক বলাৎকারী প্রেমিকপ্রতিমের নাম জুড়ে – শেস্নষের সীমা রইল না। কিন্তু তার সমর্থ যৌনতা সত্ত্বেও এই দ্বিতীয় বিবাহ কি ঊষরই থেকে যাবার নয়?
শেষ পর্যন্ত তেতাল্লিশে পা দিয়ে তার সঙ্গী জুটল এক সহ‘বীরাঙ্গনা’ই, এক নিরক্ষর কর্মপ্রাণ চঞ্চলমতি নারী, মুরগিপালিকা, যার সে মেরিআফা। তার নানা কৌতূহল, নানা দুঃখও – ঘরসংসার হলো না, সন্তান হলো না (একটা বাচ্চা যদিও হয়েছিল মিলিটারি ক্যাম্পে, ‘অত্যাচারের ফসল’, সে তো তা চায়নি), কী তার ভবিষ্যৎ! সে বকবক করলেও, তার মুরগিরা সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও, মরিয়মের এখন কিঞ্চিৎ সুখ যে কাজ থেকে বাড়ি ফিরলে একজন দরজা খুলে দেয়। চাইলে তার সঙ্গে গল্পগাছাও করা যায়, নিতিনিয়ত কী ঘটল আপিসে, কী খেল দুপুরে, ইত্যাদি ইত্যাদি। একটু-আধটু
মান-অভিমানও হয় দুজনে। এইভাবেই পঞ্চাশে পড়ল মরিয়ম। আর তার দরজায় পড়ল ‘বীরাঙ্গনা’-গবেষক মুক্তির টোকা।
দু-বছর মতো সময় মুক্তি পায় ‘বীরাঙ্গনা’ মরিয়মের জীবনীর মালমশলা জড়ো করতে। তাও কি ওর মনের তল পায়? আবছা একটা নৌকো যেন কোথায় ভাসে ওর স্বপ্নে। মুক্তির কাছে একটাই আর্জি মরিয়মের, সে যদি তার সেই প্রাজ্ঞ সহ‘বীরাঙ্গনা’ বন্ধু অনুরাধাকে খুঁজে বের করে মরিয়মকে তার কাছে নিয়ে চলে। সে অনুরাধার কাছে তার ভবিষ্যৎ জানতে চায়। এমনি এক ভবিষ্যৎ-বলনেওয়ালার কথা জানে মুক্তি, কিন্তু সে তো রাধারানী, এক অনতিদূর বেশ্যালয়ে তার বাস, নেশাখোর, তবে সকলের আপনজন। সেখানে গিয়ে শোনে মুক্তি, তার আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে আর সে নাকি আদতে রাধারানী নয়, অনুরাধা। এই রাধারানী-অনুরাধাই তার বন্ধু অনুরাধা তা বিশ্বাস যায় না মরিয়মের, কিন্তু সত্য কি অবধারিতই? তাই চলো মন তালাশ যাই।
আর কি কোনো তৃষ্ণা আছে মরিয়মের? এক রহস্যই বাকি আছে জীবনে, এক পাড়িই। নৌকা প্রস্ত্তত। এক মাঝি তো তাকে একাত্তরে পদ্মা পার করে দিয়েছিল। তখন সে পালাচ্ছিল। এবার সে নিজেই যাত্রা করছে। এই মাঝি কি নুহ? নাকি কারন? নাকি সেই মাঝিই? না, না, কোনো জীবনীকারের জায়গা নেই এই কুয়াশাকঠিন নৌকায়। তুমি এপারে বসে তোমার ভাষ্য লেখো। ছ-দিন জুড়ে পদ্মার অগাধ জল কাটবে এই নৌকা। যে-চরে নেমে যাবে মাঝি তার প্রান্তেই কি রুমাল ওড়াবে অনুরাধা? কী আনন্দ কী আনন্দ মরিয়ম ওরফে মেরির! সাক্ষী তুমি, মেয়ে, যে এই ক-বছর তার দিনানুদিনের সঙ্গী ছিলে, এখনো আছো। তোমার কথাই আমরা শুনব। যদি বলো এটা স্বপ্ন, তবুও শুনব।