একুশে স্মরণে
বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ কিবরিয়া সমগ্র জীবন (১৯২৯-২০১১) একাগ্র চিত্র-সাধনা করে এদেশের চিত্রকলাকে উচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ ষাট বছরের নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মধ্য দিয়ে তাঁর হাতেই এদেশের আধুনিক চিত্রকলা পরিশীলিত বোধে উজ্জ্বল হয়েছে। বিশেষত জাপানে শিল্পশিক্ষাশেষে বিমূর্তধারায় তাঁর যে-অবগাহন হয়েছিল তখন থেকেই তাঁর সৃজন এক নবীন মাত্রা অর্জন করেছিল। জীবনের দুঃখ, বিষাদ, বিপন্নতা ও আনন্দ তাঁর চিত্রে আশ্চর্য এক সংবেদন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকেই তিনি এদেশের চিত্রকলায় সম্পূর্ণ নতুন এক বোধ সঞ্চার করেন। এই চিত্রসমূহ তাঁর সম্ভাবনার দিগন্তকে উন্মোচিত করেছিল। পরবর্তীকালে তাঁর সৃজনধারায় বিমূর্ততার ছায়াপাত হয়েছিল। মোহাম্মদ কিবরিয়া বিমূর্ত অভিব্যক্তি ও প্রকাশে সমকালকেও ছুঁয়ে যান। এই প্রকাশেও কালের সংকট নবীন মাত্রা অর্জন করে। পরবর্তীকালে বাস্তবধারার সৃষ্টিতে তিনি ঈর্ষণীয় খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিলেন। তা সত্ত্বেও এই ধারা তিনি পরিহার করে নতুন চিত্রশৈলী আবিষ্কার ও পথনির্মাণে উন্মুখ হয়ে উঠেছিলেন। নতুন এই ধারায় তিনি এমন এক তীব্র অনুভূতির জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন যার কোনো তুলনা নেই। এদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে তিনিই বোধকরি একমাত্র চিত্রী যাঁর সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে উত্তরকালের শিল্পীদের সৃজন-উৎকর্ষে।
মোহাম্মদ কিবরিয়া ব্যক্তিত্বের মাধুর্য, সৃষ্টি, চিত্রশৈলী ও শিল্পমনীষা – সব দিক থেকে হয়ে ওঠেন অনন্য।
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত চিত্রটি ১৯৯৯ সালে মিশ্রমাধ্যমে অঙ্কিত।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.