কেবল একটি তর্জনী

জগদ্দল পাথরটি যখন সমুদয় বাংলা বর্ণমালাসহ জঙ্গলখাইন ফ্রি
প্রাইমারি স্কুলের বাংলার শিক্ষক কসিমুদ্দিকে গিলে খাচ্ছিল,
নবরত্নসভা তখনো তর্কে বিভোর। তর্কের বিষয়টি ছিল অতীব
গুরুত্বপূর্ণ : জনগণ ঘুমিয়েছিল, নাকি তাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা
হয়েছিল!
পাথরটি যথার্থই ক্ষুধার্ত ছিল। তার ক্ষুধা ছিল ভারতসমান, অথচ
তার জন্যে বরাদ্দ ছিল মাত্র পাঁচটি অপুষ্ট ভেড়া। স্বভাবতই তার
লকলকে জিহ্বা প্রসারিত হয়েছিল ‘রাশি রাশি ভারা ভারা’ধানে ভরা
রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীটির দিকে। জমিদার-কবির শ্রেণিচরিত্র
নিয়ে নবরত্নসভা তখনো তর্কে বিভোর।
পাথরটি এবার তার তীক্ষ্ণ ধারালো চঞ্চু বাড়িয়ে দেয় ছাপান্ন হাজার
বর্গমাইলে বিস্তৃত বাংলার শ্যামল কোমল মানচিত্রের দিকে। সাড়ে
সাত কোটি ভূমিপুত্র আর তেরোশত নদী একে অপরকে জড়িয়ে
ধরে যখন আর্তনাদ করছে, ক্লান্ত-ক্রুদ্ধ-বাকরুদ্ধ নবরত্নসভা তখন
ফিনফিনে পাঞ্জাবির আস্তিন গুটিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে পরস্পরের দিকে।
একটি তর্জনী, কেবল একটি তর্জনী, তখন গর্জন করে উঠেছিল।
আর তাতেই বদলে গিয়েছিল আমাদের হাজার বছরের দাসত্বের
ইতিহাস।
ধানমন্ডি : ২১ ডিসেম্বর ২০১৯