ধানের বয়ান

গরিবের বাসস্থানে গোলাঘর খুব বেমানান
সেই গোলাঘরে ফসল দেখলে সন্দিহান হয় পড়শীরা
দৃষ্টি বাঁকা হয়ে আসে সহসা তাদের
গরিবের গোলাভরা ধানকে সবাই চিটা ভাবে
চিটা ভেবে আনন্দিত হয়।
তুমি গো দয়াল, সোনার বরণ হৃষ্টপুষ্ট ধান
আদর করিয়া দান করিয়াছো – এই অভাজনে।
আরেকটু অধিক সহায় হও,
স্বপ্নময় ফসলের সাথে ছিটেফোঁটা মান মাগিতেছি।

গরিবের দেউড়িতে কাঁটাঝোপ যতোটা মানায়
গোলাপের ঝাড় তেমনটা নয়
যদিও গোলাপঝাড় সর্বদেহে কাঁটা ধরে
কাঁটাঝোপ – সেও এককালে ফোটায় বিরল মূল্যবান ফুল
তবু তারা কখনো অভিন্ন নয়, পরস্পরে প্রেম নেই
প্রতি পদে পদে অনৈক্য অনেক
গরিবের দেউড়িতে প্রসন্ন গোলাপ হেসে উঠলেই
মানুষের দৃষ্টি খুব সরু হয়ে আসে
খর হয় তীক্ষèধার শরের মতন।
গোলাপ দিয়াছো প্রভু, সুবাসিত দিলখোশ বিরল কুসুম
আরেকটু অধিক দয়ালু হও
পুষ্পের মায়ার সাথে খানিকটা মান যাচিতেছি।

গরিব জেলের জালে মুক্তোগর্ভ ঝিনুক আটকে গেলে
মানুষেরা ওতে নীরক্ত রাবিশ খোঁজে অদম্য নিষ্ঠায়
দেখতে খায়েশ করে মরা কর্দমের দলা –
আকস্মিক মুক্তোর ঝলক ওদের কাতর করে বড়
দু’ধারি ছুরির ফলার মতন ধার হয়ে ওঠে
মর্ষকামী মানুষের জোড়া জোড়া চোখ।
তুমি গো ঈশ্বর, জীবনের জীর্ণ ছেঁড়া জালে
মুক্তোভরা ঝিনুক দিয়াছো, রতœ ধরিয়াছি হাতে
আরেকটু প্রসারিত করো করুণার ধারা –
অমূল্য এ-ধন ধারণ করার মতো উপযুক্ত আধার মিলাও।
একদার স্বর্ণরেণু কালচক্রে ধুলা হয়ে ধুলায় মিশেছি, প্রভু
সমগ্র আয়ুর রিক্ত বিপরীতে পুনর্বার মান মাগিতেছি।