নিশিমন-বিসর্জন : সৌন্দর্য ও সাহসের মঞ্চাভাষ

কাজল রশীদ শাহীনু
 

জার্মান নাট্যকার বের্টল্ট ব্রেখটের মতে, নাটক একই সঙ্গে বিনোদন ও শিক্ষামূলক মাধ্যম। যে-কোনো মানসম্পন্ন নাটক বিনোদনকে করে তোলে শিক্ষা, শিক্ষাকে করে তোলে বিনোদন। কাজটা মোটেই সহজ নয়। মনোরঞ্জন পদ্ধতিতে এ-শিক্ষাদানের জন্য একটি দলকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। ভাবনার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে পৌঁছাতে হয় সৃষ্টিশীলতার জগতে। সে-সৃষ্টিশীলতার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষকে কিছু শেখানো। সম্প্রতি সে-বিষয়কে সুন্দরভাবে মঞ্চে উপস্থাপনের সাহস দেখাল মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। সরাসরি নয়, বিসর্জন আশ্রয় করে নির্মিত নাটক নিশিমন-বিসর্জনে।

বিসর্জন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য। রচনাকাল ১২৯৭ বঙ্গাব্দ। ১৪১৮ বঙ্গাব্দে এসে যার নব নাট্যায়ন হলো নিশিমন-বিসর্জন। লিখেছেন আনন জামান। আশিক রহমান লিয়নের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চে এনেছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মঞ্চস্থ হওয়া রবীন্দ্র নাটকসমূহের অন্যতম হলো নিশিমন-বিসর্জন।

রবীন্দ্রনাথের বিসর্জনে রয়েছে, রঘুপতি একসময় নিজেও স্বীকার করে দেবী নেই। তারপরও তাদের প্রেতাত্মারা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় পরও অন্ধকারে যায় না। নাটকের শেষভাগে গোবিন্দমাণিক্য, গুণবতী একে অপরের মধ্যে দেবী ও দেবতার সন্ধান। পরশপাথরসম এ-আলো যতটা না ছড়িয়ে পড়ে, তার চেয়ে অধিক অন্ধকার এসে আলোকে আড়াল করে, ম্রিয়মাণ করে। রঘুপতি, গোবিন্দমাণিক্য, গুণবতী ও অপর্ণার সংলাপ :

গোবিন্দমাণিক্য : দেবী কই?

রঘুপতি : দেবী নাই।

গোবিন্দমাণিক্য : এ কী রক্তধারা!

রঘুপতি : এই শেষ পুণ্যরক্ত ও পাপ-মন্দিরে/ জয়সিংহ নিবায়েছে নিজ রক্ত দিয়ে হিংসারক্তশিখা।

গোবিন্দমাণিক্য : ধন্য ধন্য জয়সিংহ,/ এক পূজার পুষ্পাঞ্জলি সঁপিনু তোমারে।

গুণবতী : মহারাজ।

গোবিন্দমাণিক্য : প্রিয়তমে!

গুণবতী : আজ দেবী নাই -/ তুমি মোর রয়েছ একমাত্র দেবতা। (প্রণাম)

গোবিন্দমাণিক্য : গেছে পাপ। দেবী আজ এসেছে ফিরিয়া আমার দেবীর মাঝে।

অপর্ণা : পিতা, চলে এসো!

রঘুপতি : পাষাণ ভাঙিয়া গেল জননী আমার/ এবার দিয়েছে দেখা প্রত্যক্ষ প্রতিমা!/ জননী অমৃতময়ী!

অপর্ণা : পিতা, চলে এসো!

ত্রয়ী চরিত্রের দেবদেবী অন্বেষণ প্রকৃতপক্ষে চিরন্তন সত্যেরই প্রতিবিম্ব। মধ্যযুগের বাঙালি কবি চন্ডীদাসের কণ্ঠেও সেই অমিয় কথন গীত হয়েছিল : ‘শুনহ মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

লালন সাঁইয়েও যা অনুরণন হয় এভাবে : ‘দেবদেবীগণ করে আরাধন, জন্ম নিতে মানবে।’ অথচ সেই মানুষ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। আপন স্বার্থের জন্য একজন আরেকজনকে বলি দেয়। দেবীর রক্তপিপাসার নামে নিজের স্বার্থ হাসিল করে। শাস্ত্র বয়ানকেও নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দেয়, বিশ্লেষণ করে। রবীন্দ্রনাথের বিসর্জনে রঘুপতি ও জয়সিংহের সংলাপে প্রকট সত্য ব্যক্ত হয়েছে এভাবে :

জয়সিংহ : উপায়; কিসের/ উপায় প্রভু! হয় ঠিক! জননী, তোমার/ খড়গ নাই? রোষে তার বজ্রানল/ নাই চন্ডী? তব ইচ্ছা উপায় খুঁজিছে, খুঁড়িছে সুড়ঙ্গপথ চোরের মতন/ রসাতলগামী? এ কি পাপ!

রঘুপতি : পাপপুণ্য/ তুমি কিবা জানো!

জয়সিংহ : শিখেছি তোমারি কাছে।

রঘুপতি : তবে এসো বৎস, আর-এক শিক্ষা দিই। পাপপুণ্য কিছু নাই। কে বা ভ্রাতা, কে বা/ আত্মপর! কে বলিল হত্যাকান্ড পাপ/ এ জগৎ মহা হত্যাশালা। জানো না কি/ প্রত্যেক পলকপাতে লক্ষকোটি প্রাণী/ চির অাঁখি মুদিতেছে!

সে কাহার খেলা?/ হত্যায় খচিত এই ধরণীর ধূলি।/ প্রতিবাদ চরণে দলিত শতকীট -/ তাহারা কি জীব নহে? রক্তের অক্ষরে/ অবিশ্রাম লিখিতেছে বৃদ্ধ মহাকাল/ বিশ্বপত্রে জীবের ক্ষণিক ইতিহাস।/ হত্যা অরণ্যের মাঝে, হত্যা লোকালয়ে,/ হত্যা বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহবরে,/ অগাধ সাগর-জলে নির্মল আকাশে,/ হত্যা জীবিকার তরে, হত্যা খেলাচ্ছলে,/ হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বশে -/ চলেছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে/ ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপণে, ব্যাঘ্রের আক্রমে। মৃগসম, মুহূর্ত দাঁড়াতে নাহি পারে। মহাকালী কালস্বরূপিণী, রয়েছেন/ দাঁড়াইয়া তৃষাতীক্ষ্ণ লোলজিহবা মেলি – বিশ্বের চৌদিক বেয়ে চির রক্তধারা/ কেটে পড়িতেছে, নিষ্পেষিত দ্রাক্ষা হতে/ রসের মতন, অনন্ত খপ্পরে তাঁর –

জয়সিংহ : হোক বন্ধ! – না না, গুরুদেব, তুমি/ জানো ভালোমন্দ। সরল ভক্তিরবিধি/ শাস্ত্রবিধি নহে। আপন আলোকে অাঁখি/ দেখিতে না পায়, আলোক আকাশ হতে/ আসে। প্রভু, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো দাসে।/ ক্ষমা করো স্পর্ধা মূঢ়তার। ক্ষমা করো/ নিতান্ত বেদনাবেশে উদ্ভ্রান্ত প্রলাপ। বলো প্রভু, সত্যই কি রাজরক্ত চান/ মহাদেবী?

রঘুপতি : হায় বৎস, হায়! অবশেষে অবিশ্বাস মোর প্রতি?

জয়সিংহ : অবিশ্বাস? কভু/ নহে। তোমারে ছাড়িলে, বিশ্বাস আমার/ দাঁড়াবে কোথায়? বাসুকির শিরশ্চ্যুত/ বসুধার মতো, শূন্য হতে শূন্যে পাবে/ লোপ। রাজরক্ত চায় তবে মহামায়া/ সে রক্ত আনিব আমি। দিব না ঘটিতে ভ্রাতৃহত্যা।

১৪১৮ বঙ্গাব্দের কনে দেখা আলো শেষের রাত্রিবেলায় রাজধানী ঢাকার শিল্পকলায় আমরা জয়সিংহর প্রতিরূপ দেখি তারাতাজের সংলাপে।

তারাতাজ : না। আপনি নিশ্চিত থাকুন। খোদার আইনে বাধাদানকারীর রক্তে ভেজাবো চাপাতির চকচকে ধার দেওয়া পিঠ।

রঘুপতির রূপে আবির্ভূত হয় নেতা। ঠিক যেন মুদ্রার এ-পিঠ, ও-পিঠ। তাঁর সংলাপে আমরা একজন মিথ্যুক, ঠকবাজ, ধূর্ত, প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ী, স্বার্থান্ধ মানুষের চিত্র খুঁজে পাই।

নেতা : সর্বনাশের আগেই তারাতাজের মহান ধর্মব্রত পালনের পরিকল্পনা করো – ওর জন্য নিয়ে আসো বেহেশতের টিকিট।

নেতার উক্তির প্রামাণ্যকরণও আমাদের অজানা নয়। একটু অতীত হাতড়ালে এরকম নিন্দনীয় বাস্তবতার হদিস মেলে। আজ থেকে ঠিক দুই দশক আগে এদেশে যে-জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে একটি রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার বিনিময়ে বেহেশতের টিকিট বিতরণ করেছিল। (সূত্র : ঈদসংখ্যা, বিচিত্রা, ’৯১, সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের বিশেষ প্রবন্ধ)

রঘুপতিরা ভাইয়ের হাতে ভাইকে নিঃশেষ করতেও পারঙ্গম। নক্ষত্র রায়কে তাই দাঁড় করিয়ে দেয় গোবিন্দমাণিক্যর মুখোমুখি, হত্যার নিমিত্তে। বিসর্জনে যেমন আছে :

নক্ষত্র রায় : যেথা যাই সকলেই বলে, ‘রাজা হবে?’ -/ ‘রাজা হবে?’-

এ বড়ো আশ্চর্য কান্ড। একা/ বসে থাকি, তবু শুনি কেমন বলিছে – রাজা হবে? রাজা হবে? দুই কানে যেন/ বাসা করিয়াছে দুই টিয়ে পাখি, এক/ বুলি জানে শুধু – রাজা হবে রাজা হবে? ভালো বাবু, তাই হব, কিন্তু রাজরক্ত সেকি তোরা এসে দিবি?

গোবিন্দমাণিক্য : নক্ষত্র/ (নক্ষত্র সচকিত) নক্ষত্র!/ আমারে মারিবে তুমি? বলো, সত্য বলো,/ আমারে মারিবে? এই কথা জাগিতেছে/ হূদয়ে তোমার নিশিদিন? এই কথা/ মনে নিয়ে মোর সাথে হাসিয়া বলেছ/ কথা, প্রণাম করেছ পায়ে, আশীর্বাদ/ করেছ গ্রহণ, মধ্যাহ্নে আহার কালে/ এক অন্ন ভাগ করে করেছে ভোজন/ এই কথা নিয়ে? বুকে ছুরি দেবে? ওরে/ ভাই, এই বুকে টেনে নিয়েছিনু তোরে/ এ কঠিন মর্ত্যভূমি প্রথম চরণে/ তোর বেজেছিল যবে – এই বুকে টেনে/ নিয়েছিনু তোরে, যেদিন জননী, তোর/ শিরে শেষ স্নেহহস্ত রেখে, চলে গেল/ ধরাধাম শূন্য করি – আজ সেই তুই/ সেই বুকে ছুরি দিবি? এক রক্তধারা/ বহিতেছে দোঁহার শরীরে, যেই রক্ত/ পিতৃপিতামহ হতে বহিয়া এসেছে/ চিরদিন ভাইদের শিরায় শিরায়-/ সেই শিরা ছিন্ন করে দিয়ে সেই রক্ত/ ফেলিবি ভূতলে? এই বন্ধ করেছিনু/ দ্বার, এই নে আমার তরবারি, মার অবারিত রক্তে, পূর্ণ হোক মনস্কাম!

নিশিমন-বিসর্জনে রঘুপতিরূপী নেতা তারাতাজদের হত্যায় উদ্বুদ্ধ করে এভাবে –

নেতা : তোমাদের জন্য আছে শান্তির সংবাদ – এক নতুন মন্ত্রণা। খোদার ডাক, ঘরে এসেছে বেহেশতের টিকিট, যার আছে ইমানি তাকদ, শুধু সেই পাবে টিকিট।

বটগাছের পান্তামেলায়, গানের আসরে, মোনাফেকদের ভারে মাজারের শিরনি মিনারে, রাষ্ট্রনেতা, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিকদের উদ্যত মুন্ডুতে শরীরে বোমা বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ো, বোমা নাও টিফিনের বাক্সে, চায়ের ফ্লাস্কে, মিষ্টির প্যাকেটে, সাইকেলের ক্যারিয়ারে, গাড়ির বনেটে। কাফের কতল করো।

এভাবেই মৃত্যুর উপত্যকায় ঠেলে দেওয়া হয় জয়সিংহ কিংবা তারাতাজদের মতো সহজ-সরল কিন্তু দীপ্র যুবকদের। এরা নিজেদের স্বার্থকে এতটাই বড় করে দেখে যে, কখনো কখনো মনে হয় মৃত্যুও বুঝি তাদের কাছে পরাজিত, পরাভূত হবে। প্রকৃতপক্ষে তা হয় না, হতেও পারে না।

রবীন্দ্রনাথের জন্মের দেড়শো বছর পর আজও তাঁর ভাবিত মৃত্যুচেতনা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা পড়ে বর্তমান সৃষ্ট  বাস্তবতাতে, নিশিমন-বিসর্জন নাটকে মৃত্যুকে পদানত করেই জীবনের জয় উত্তরণ। তাঁর জীবনচেতনায় বলতেই হয়,

‘…যত বড় হও

তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড় নও।

আমি মৃত্যু – চেয়ে বড়, এই শেষ কথা বলে

যাব আমি চলে।’

নিশিমন-বিসর্জন মঞ্চায়িত হয়েছে বর্ণনাত্মক রীতিতে, বৃত্তাকার মঞ্চে। নাটকের প্রারম্ভে গৌরচন্দ্রিকা দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর নাটক নিয়ে, কতটা প্রাসঙ্গিক এই বয়ান নির্দেশক-নাট্যকার ভেবে দেখতে পারেন। বিসর্জনের মধ্যেই একটা স্ফুলিঙ্গ আছে, যাকে উপজীব্য, অবলম্বন করে প্রারম্ভিক পাঠ হতে পারে কি?

মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় টিমওয়ার্কে বিশ্বাসী। বারবার কাজ দিয়ে এ-সত্যকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে চলেছে। শিখন্ডীকথার পর আলোচ্য নাটক দলটির উষ্ণীষে একটি স্বর্ণপালকের সংযোজন ঘটিয়েছে।

বর্ণনাত্মক রীতিতে অভিনয়শিল্পীদের মধ্য থেকেই সূত্রধর বা কথকের আগমন ঘটে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। রঘুপতির চরিত্রাভিনেতা মীর জাহিদ হাসান এ-কাজটি করেছেন। এমনিতেই রঘুপতি একটি দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, এর সঙ্গে যদি যোগ হয় দলপতির ভূমিকা, তাহলে এই অভিনয়শিল্পীর প্রতি বোধহয় একটু অবিচার করা হয়। তাকে যদি একটু ফ্রি রাখা যেত বা রিলিফ নেওয়ার সুযোগ পেত, তাহলে রঘুপতি চরিত্রে আরো বেশি মনোযোগ ও যত্নবান হওয়ার সুযোগ ঘটত। কুশীলবরা সবাই মঞ্চে দৃশ্যমান থেকেছেন। বাদ্যযন্ত্রীদের সঙ্গেও যদি অভিনয়শিল্পীদের যোগসূত্র ঘটানো যেত, তাহলে মনে হয় নাটকটি আরো বেশি উপভোগ্য ও প্রাণময় হতো। অভিজ্ঞতা বলে, মঞ্চে এঁরা বাদ্যযন্ত্রী ছাড়াও কমবেশি অভিনয়েও ভূমিকা রাখেন, যা করলে মন্দ হতো কি? অবশ্য নির্দেশক যদি সচেতনভাবে এমনটি করেন, তাহলে নিশ্চয় তার কোনো যুক্তি আছে।

নাট্যকারের বয়ান, শুভবোধসম্পন্ন সকল মানুষের বয়ান। তিনি বলেছেন : মানুষের খাপের ভেতর ঢুকে পড়েছে দানব। ধর্মের জোববা পরে খোদার নামে মানুষ হত্যা করছে। আর কী শক্তিমান তোমার জয়সিংহ। ধর্মনেতাদের তালিকাভুক্ত না করে আপন প্রাণ উড়িয়ে দিলো। ডুমুরের জোড়া পাতার বাসা থেকে উড়ে গেল নীলটুনুই-শূন্যে। আর ফিরে আসবে না কোনোদিন। জয়সিংহের হত্যাকারীদের ক্ষমা নাই।

তারাতাজের হত্যাকারীদের ক্ষমা নাই। আমাদেরও ইচ্ছে তাই। আলো আসবেই। রঘুপতি, নেতাদের মুখোশ খুলবেই। আমাদের নাটক, আমাদের সংস্কৃতি সেই সাহস ও সৌন্দর্যে অনুপম। নিশিমন-বিসর্জন যা ধারণ করেছে। সুতরাং আমাদের হতাশার কিছু নেই।

নির্দেশক আশিক রহমান লিয়নকে ধন্যবাদ। পুরো নাটককে তিনি একটা মালায় গাঁথতে পেরেছেন। সম্ভবত নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি পরিকল্পনা, মঞ্চ, আলো ও প্রপসের কাজটিও করেছেন বলে দুরূহ কাজটি অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পাদন করতে পেরেছেন। অভিনয়শিল্পীদের থেকেও প্রয়োজনানুগ অভিনয় আদায় করে নিতে পেরেছেন। ঢাকঢাক-গুড়গুড় না করে বলা যায়, এ-নাটক মহাকালের প্রযোজনার মধ্যে আলাদা মাত্রা সংযোজন করেছে। রঘুপতি, নেতা, তারাতাজ, নিশিমন, গোবিন্দমানিক্যের অভিনয় ও প্রাসঙ্গিক ক্যারিশমা অন্যদের থেকে দৃষ্টিনন্দন মনে হয়। অন্যরাও নিকট-দূরত্বে ছিলেন, তবে ততটা উজ্জ্বল নয়। নেপথ্য কুশীলবরা অর্পিত দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট নিষ্ঠাবান ছিল। একটা নাট্য-প্রযোজনা, কতজনের শ্রমে-ঘামে-ত্যাগে-তিতিক্ষায়-অর্থনাশে গড়ে ওঠে, তা ভাবলে স্যালুট জানাতে হয় মহাকালকে। তাঁদের এই প্রয়াস আগামীতেও ফলবতী হোক, সেটাই প্রত্যাশিত।

অপর্ণা, নিশিমনরা আশার মুক্ত বিহঙ্গ। মানবতার নিশান তুলে প্রেমকে হাতিয়ার করে তারা যুদ্ধ করে যায়। সেই যুদ্ধ চিরন্তন; কিন্তু জয় তো হয়েই চলেছে। তাই আজো বিসর্জন প্রযোজনা হয়। বিসর্জন আশ্রয়ে নিশিমন-বিসর্জন নামক নিরীক্ষাধর্মী নাটক মঞ্চস্থ হয়। ভাবনার আড়ালে আরো আরো অপর্ণা, নিশিমনদের  জন্ম হয়।