দুটি কবিতা

শঙ্খ ঘোষ

বাস্ত্ত
ঘরের দখল নিতে আসিনি তোমার কাছে আজ
মাটির দখল নিতে নয়। আমি শুধু আগন্তুক।
আমি শুধু নিমেষের দৃষ্টি মেখে চলে যাব ভেবে
এসেছি ভিটের কাছে শতাব্দী পেরিয়ে। তুমি আছো,
তাই আমি এসে বসি এখানে এ-সিঁড়ির কোনায়
চা খাই মাটির ভাঁড়ে, দেয়ালে বুলিয়ে নিই হাত,
সামনেই শুকোতে-দেওয়া হলুদ সুপুরিগুলি থেকে
দুটো-একটা তুলে নিই। উঠি। বলি : যাই। তুমি আছো
এটুকু বিশ্বাস পেলে আর সবই তুচ্ছ হয়ে যায়
এটুকু বিশ্বাস পেলে কন্দরও প্রাসাদ হয়ে ওঠে
এটুকু বিশ্বাস পেলে ফিরে যেতে পারি সহজেই –
স্মৃতির চেয়েও কোনো বাস্তবিক বাস্ত্তভূমি নেই!

আছে
খালপাড় থেকে উঠে বাদাড়ের পাশ দিয়ে ঘুরে
সেখানে এসেছি আজ কিংবদন্তি বলেছিলে যাকে।
সুপুরিগাছের সারি পথ জুড়ে দাঁড়ানো সটান
মুখোমুখি বেনেবাড়ি, সাতমহলার কোণে কোণে
নীললালসবুজের জাফরিকাটা, ভাঙা আলিসায়
কবুতরগুলি শুধু ঝিমোয় এ নিঝুম দুপুরে
তা ছাড়া কোথাও কোনো বনপ্রাণী চিহ্নমাত্র নেই।
অথচ চমক দিয়ে বেজে ওঠে অলৌকিক ঢাক
ধুনুচিতে ধোঁয়া ওঠে নাটমন্দিরের বুক ভেঙে
একা এক পুরোহিত মন্ডপের দুয়োরে দাঁড়িয়ে
জপেন : ‘সময় হলো, তিন চোখ ফোটাবার শেষে
এবারে গর্জনতেল মাখাবার লগ্ন এসে গেছে -’
প্রতিভাত দশ দিক অম্নি ভরে যায় দশ হাতে
বুঝি যে সমস্ত হয়ে আমারই ভিতরে সব আছে।