পরি-দর্শন

নীহারুল ইসলাম

মাইকে ধর্মীয় জলসার ঘোষণা শুনে পানুকে আমার স্মরণ হয়। পানু আমার দোস্ত লাগে। কিছুদিন আগে পানুদোস্ত চুপ করে আমাকে বলেছিল, আমি জোড়পুকুরে জলসা শুনতে গেলে সে আমাকে পরিদর্শন করাবে। পানি-থইথই জোড়পুকুরে যে এককালে পরি গোসলে নামত, সে-কথা আমি জানি। সেই কোন জন্মকাল থেকে মা-খালার মুখে শুনে আসছি! কিন্তু এদিকে আজ ক-বছর জোড়পুকুরে পানি নেই। তাহলে শুধু শুধু জোড়পুকুরে পরি নামতে যাবে কোন দুঃখে? আমার তাজ্জব লেগেছিল। যদিও আরো বেশি তাজ্জব হয়েছিলাম সব ছেড়ে জোড়পুকুরে জলসা হবে শুনে! আমি জানি, জলসা হয় মাদ্রাসা, মসজিদ কিংবা কোনো ফাঁকা পাক্পবিত্র

জায়গায়! যেখানে প্রচুর মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হতে পারে! অথচ জলসা হচ্ছে আমাদের জোড়পুকুরে! মাইকে তার জোর ঘোষণা শুরু হয়েছে।

যদিও পরি কিংবা জলসা সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। আমি কখনো পরি দেখিনি। কখনো কোথাও জলসা শুনতেও যাইনি। আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ কোথাও কিছু দেখাতে কিংবা শোনাতে নিয়ে যায়নি। তাই হয়তো পানুর কথায় আমি উৎসাহিত বোধ করেছিলাম এবং জোড়পুকুরে জলসা শুনতে যাওয়ার ইন্তেজারে ছিলাম। মনে করেছিলাম, যদি যেতে পারি, আমার রথ দেখা কলা বেচা দুটোই সার্থক হবে।

কিন্তু আজকেই যে সেই দিন! একেবারে মনে ছিল না। মনে না থাকারই কথা! আমার ছোট মনে কত কী আর মনে রাখব? ইতিহাস, ভূগোল, অংক, ইংরেজি, বিজ্ঞান! জ্ঞানে পড়ে এইসব মনে রাখতেই আমার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়! অথচ পানু আমাকে এ-কথা বলেছিল মাত্র কিছুদিন আগে! এও বলেছিল, দেশ-বিদেশ থেকে নামজাদা আলেমগণ আসবেন। তাঁরা সব ধর্ম নিয়ে বক্তব্য রাখবেন। তারপর সেই জলসাকে কেন্দ্র করে একটা মেলাও বসবে নাকি! তাহলে ওই মেলা দেখতেই পরি আসবে জোড়পুকুরে! নাকি জলসা শুনতে? যখন তারাও খোদাতালার সৃষ্টি! আমি এমনটাই ভেবেছিলাম।

যাই হোক, ধর্ম নিয়ে বক্তব্য শোনার ইচ্ছে কিংবা মেলা দেখার বাসনা জাগেনি আমার। তবে পরি দেখার লোভ হয়েছিল। এখন মাইকে জলসার ঘোষণা শুনে আমার সে-লোভ আরো তীব্র হয়। কিন্তু জোড়পুকুরে আমি যাই কী করে? বাড়ি থেকে যাওয়ার অনুমতি মিলবে কিনা সন্দেহ! আমার মা আবার এসবে বিশ্বাস করেন না। তাঁর কথা, এসব হলো বেদাত (শরিয়তবিরোধী)! এসব করলে খোদাতালা নারাজ হন।

আববা বাড়িতে নেই। অফিস থেকে ফিরে পাহাড়পুর মোড়ে গণেশের চায়ের দোকানে তাস খেলতে গেছেন। মা রান্নাশালে, রাতের খাবার রান্নায় ব্যস্ত। আমি বারান্দায় বসে লণ্ঠনের আলোয় পাঠ্যবই পড়ছিলাম। কদিন পরে আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্ট। আমার পাশে বসে আছে আমাদের বাড়ির মাহিন্দার রাবিবভাই। সে আমার খাতা-কলম নিয়ে নিজের নামসই করা শিখতে ব্যস্ত। এই সময় তার কাজ বলতে ওটাই। আমি তার সেই কাজে বাগড়া দিলাম। আমি আমার মনের ইচ্ছেটা রাবিবভাইকে না বলে পারলাম না। সব শুনে রাবিবভাই বলল, দাঁড়া – হামি চাচিকে বুলে তোর যাবার বন্দোবস্ত করছি। তোর সুথে হামিও যাবো কিন্তু!

রাবিবভাই আমার মাকে চাচি বলে। আমি জানি, রাবিবভাইকে আমার মা খুব ভালোবাসেন। সেই বলে রাবিবভাইয়ের কথায় মা আমাকে জলসা শুনতে জোড়পুকুরে যেতে দেবেন, আমার বিশ্বাস হয় না। তবু আমি পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে ইন্তেজার করি। যদি আশ্চর্য কিছু ঘটে! যদি রাবিবভাইয়ের কথায় মা রাজি হয়ে যান! রাজি হয়ে যান কী, খুব বেশিক্ষণ ইন্তেজার করতে হয় না আমাকে, রাবিবভাই মায়ের সম্মতি আদায় করে আনে। আর, আমরা রাতের খাবার খেয়ে মহানন্দে জলসা শুনতে বেরিয়ে পড়ি।

সন্ধ্যা নামতে না নামতে চারদিক ঘোর অন্ধকার। শুধু জোড়পুকুরের আকাশে আলোর রোশনাই। সেই রোশনাই লক্ষ করে আমি আর রাবিবভাই হেঁটে চলেছি। দেশ-বিদেশ থেকে কত নামজাদা আলেম এসেছেন নাকি জলসার বক্তা হয়ে! নামাজ-রোজা, হাদিস-কোরান, নেকি-গুনাহ্! কোনটা করতে হবে, কোনটা করতে হবে না। আল��হ কিসে খুশি হবেন, কিসে গোসা করবেন! কী করলে জান্নাতে ঠাঁই মিলবে! আর কী করলে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে! বক্তারা মাইক ফাটিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছেন। যদিও আমি কিছু শুনছি না, আমি শুধু ভাবছি জোড়পুকুরের কথা। ক-বছর তেমনভাবে বর্ষা না হওয়ায় এবং গঙ্গা কিংবা পদ্মায় বান-বন্যা না আসায় জোড়পুকুর শুকিয়ে একেবারে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। মধ্যেকার বাঁধটাও কীভাবে উধাও হয়ে গিয়ে জোড়পুকুরের অস্তিত্ব আর নেই বললেই চলে। শুধু নামটাই আছে। যেখানে এপারে আমাদের শিকারপুর, ওপারে শাহাবাদ গ্রামের ছেলে-ছোকরার দল রীতিমতো ক্রিকেট খেলার স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছে। আমাদের শিকারপুরের মসজিদ কমিটি সেটাকেই নাকি অডিটোরিয়াম বানিয়ে জলসার আয়োজন করেছে।

আমি হাঁটছি না, রীতিমতো ছুটছি। রাবিবভাই তা দেখে বলল, জাহাজ ধরবি নাকি জি অমন ছুটছিস? রাবিবভাইয়ের কথার কোনো জবাব করি না আমি। তবে হাঁটার গতি কমাই। তারপর রাবিবভাইকে সওয়াল করি, হঠাৎ করে জোড়পুকুরে জলসার আয়োজন কেন? তুই কিছু জানিস রাবিবভাই?

রাবিবভাই বলে, সব ধান্দাবাজি!

– কী রকম? আমি জানতে চাই।

– চল। গেলেই দেখতে পাবি।

– সে তো দেখবোই। তবু তোর মুখে শুনি।

– হামার মুখে কী শুনবি? যারা চিলে� মাইক ফাটাইছে তাদের কথা শুন, তাহলেই মালুম পাবি। মানুষকে আল��হর ভয়-ডর দেখিয়ে জুম্মা মসজিদের নামে টাকা তুলছে।

– কিন্তু আমাদের তো জুম্মা মসজিদ আছে। ওই মসজিদেই তো গ্রামের কটা মুরবিব ছাড়া আর কেউ নামাজ পড়তে যায় না! তাহলে মসজিদের উন্নতি করে কী হবে?

– বুঝিস না, সব ধর্মের নামে ধান্দাবাজি!

কথা বলতে বলতে বলতে আমরা কখন জোড়পুকুর পাড়ে পৌঁছে গেছি, টের পাইনি। চোখের সামনে দেখছি সত্যি রীতিমতো মেলা বসেছে সেখানে। ঠিক যেন দেশওয়ালি পাড়ার শ্যামচাঁদের মেলা! দেশওয়ালি পাড়ার শ্যামচাঁদের মেলা স্কুল যাতায়াতের পথে যতটুকু দেখেছি, ঠিক সেরকম যেন। কত রকমের দোকান! খাবার দোকান। ইমিটেশনের দোকান। ধর্মীয় বইপত্রের দোকানও আছে। টুপি, জায়নামাজও বিক্রি হচ্ছে। নাগরদোলা বসেছে সুদ্দ। পাই পাই ঘুরছে। এসব দেখতে দেখতে আমি রাবিবভাইয়ের সঙ্গে ভিড় ঠেলে ক্রমশ এগিয়ে চলেছি জলসার মঞ্চের দিকে। পানু নিশ্চয় সেখানে থাকবে। তার সেখানেই থাকার কথা। আমার মনে পড়ে। পানু আমাকে বলেছিল, যদি আসিস মঞ্চের পাশেই পাবি আমাকে!

কিন্তু মঞ্চের এপাশ-ওপাশ, কোনো পাশেই পানুকে আমি দেখতে পাই না। বুঝতে পারি, এত ভিড়ে পানুকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কী করি? রাবিবভাইকে আমি আবার সওয়াল করি, পানুকে না পাওয়া গেলে আমাদের পরি দর্শনের কী হবে রাবিবভাই?

রাবিবভাই জবাব দিতে পারে না। তার আগেই জোর দমকা বাতাস ওঠে। সেই সঙ্গে আকাশ ভেঙে জোর বৃষ্টি শুরু হয়।

আমার আবার ঠান্ডার ধাত। হাত-পা ধুতে এক বদনা পানির জায়গায় দু-বদনা পানি খরচ করলে আমার সর্দি লাগে। কাশি হয়। গা গরম থাকে দু-চার দিন। আমার স্কুল কামাই হয়। বাড়িতে শুয়ে থাকি। ভাত-তরকারির বদলে আমার ভাগ্যে জোটে সাগু-বার্লি। গলা দিয়ে নামে না। তবু গিলতে হয়। সেই ভয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমি ছুটতে ছুটতে গিয়ে ঠাঁই নিই একটা ইমিটেশনের দোকানে। আমার পিছু পিছু রাবিবভাই।

কার দোকান কে জানে! আচমকা বৃষ্টিতে অস্থায়ী দোকানটার ভেতরে দাঁড়ানোর স্থান থাকে না। তবু আমরা দাঁড়িয়ে থাকি ঠাসাঠাসি। কে দোকানি, বোঝা যায় না। ভিড়ে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ দোকানি লোকটা দোকান সাজিয়ে বসেছিল বড় আশা নিয়ে। গ্রামের মেয়েরা জলসা শুনতে এসে ইমিটেশন কিনবে। তার দু-পয়সা রোজগার হবে। আমি এমন ভাবলেও লোকে কিন্তু ভাবছে জলসার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করছে। যদিও মাইকে বক্তার চিৎকার থামে না।

এসবের মধ্যে রাবিবভাই হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, ওইদ্যা তোর পানু!

কোথায় পানু! রাবিবভাইয়ের কথায় আমি এদিক-ওদিক তাকাই। পরিচিত-অপরিচিত অনেককেই দেখি। কিন্তু পানুকে আমি দেখতে পাই না। ছেলেবেলায় যেমন ঈদের চাঁদ দেখতে পেতাম না! রাবিবভাই সেটা বুঝতে পারে। আর বুঝতে পারে বলেই আমার ঘাড় ধরে পানুকে দেখানোর চেষ্টা করে। বলে, ওইদ্যা!

রংসাগর পাড়ে কাসিমনানা যেভাবে ঘাড় ধরে ঈদের চাঁদ দেখানোর চেষ্টা করত, ঠিক সেভাবেই রাবিবভাই আমাকে পানুকে দেখানোর চেষ্টা করে। আশ্চর্য! ছেলেবেলায় অত চেষ্টাতেও ঈদের চাঁদ দেখতে না পেলেও আমি কিন্তু এখন পানুকে দেখতে পাই। পানু দোকানের ঠাসা ভিড়ের এক জায়গায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে একমনে বিড়ি টানছে। দুনিয়ার কোনো কিছুতেই তার খেয়াল নেই। সে কিছু ভাবছে যেন! যদিও তার দিকে কারো নজর নেই। সবাই জলসার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। যে-উদ্দেশ্যে এই জোড়পুকুরে জলসার আয়োজন, সেই উদ্দেশ্য আচমকা বৃষ্টির ফলে মাঠে নয়, জোড়পুকুরে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা দেখছে। জলসা কমিটির জন্য সবাই আফসোস করছে। অথচ পানু কিছু বলছে না। দোকান উপচানো আলোয় সে অবিরাম বৃষ্টিধারার পতন দেখছে।

কিন্তু পানু ওভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছেলে তো নয় সে! যেখানে যে-অবস্থায় থাকুক তার মুখে সর্বদা খই ফোটে। সে তার উড়নচন্ডী জীবনের অভিজ্ঞতার গল্প বলে। ছোট থেকে বড় সবাই তার সেই অভিজ্ঞতার গল্প হাঁ করে শোনে। অথচ আজ সে একেবারে চুপচাপ! একেবারে সাধারণ। ভিড় থেকে তাকে আলাদা করা যাচ্ছে না।

থাকতে না পেরে আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করি, কী রে পানু – তুই ওরকমভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

পানু কোনো জবাব দেয় না। শুধু জ্বলজ্বল চোখে আমাকে দেখে। চোখ তো নয়, যেন লাদেন ভ্যানের হেডলাইট জ্বলছে! ওই চোখের দিকে তাকালে যে কেউ ভয় পাবে! আমি কিন্তু ভয় পাই না। সে যে আমার দোস্ত!

তাই আবার জিজ্ঞেস করি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে কী করছিস তুই এখানে?

– কী করবে আবার? দেখছো না দোকান দিয়াছে। ছেল্যার সুমতি হইয়াছে। দু-পয়সা রোজগার করবে! তারপর তারেক মুন্নার বিটিকে শাদি করবে! ভিড় থেকে কে যেন বলে উঠল।

আমার মগজে কিছুই ঢুকছে না। পানু ইমিটেশনের দোকান দিয়েছে দু-পয়সা রোজগারের জন্য? ধ্যাৎ! আমার বিশ্বাস হয় না। পানুর বাপ আমাদের অঞ্চলের আন্ডার সবচেয়ে বড় পাইকার। আসগর পাইকার। বাপের নির্দেশে পানু রোজ সকালে দুটো করে হাফ-বয়েল আন্ডা খায়। তার ওপর রোজ হাতখরচ পায় দশ টাকা করে। তাহলে সে কোন দুঃখে ইমিটেশনের দোকান দেবে? মনের কথা মনে রাখি না। উচ্চারণ করে জিজ্ঞেস করি, পানু ইমিটেশনের দোকান দিতে যাবে কোন দুঃখে?

ভিড় থেকে উত্তর ভেসে আসে, কুকুরে কামড়ালে আর প্রেমে পড়লে মানুষ কত কী করে তার ঠিক আছে নাকি? এতক্ষণে আমার মনে পড়ে, পানু শাহাবাদের একটি মেয়েকে প্রাণের অধিক ভালোবাসে। মেয়েটির নাম চামেলি, যার জন্য সে একেবারে দিওয়ানা। অথচ আসগর পাইকার বেটাকে চামেলির সঙ্গে মিশতে দেয় না। আসগর পাইকারের চোখে চামেলি নাকি চাষার ঘরের বিটি! আর, চাষার ঘরের বিটির কোনো ইজ্জত থাকে না। মাঠ-ঘাটের ফারাক বোঝে না! ওরকম আখাড্ডা চাষার ঘরের বিটির সঙ্গে সে কিছুতেই নিজের বেটার বিয়ে দেবে না।

কিন্তু পানু চামেলিকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। আবার চামেলির সঙ্গে দেখাও করতে পারছে না। বাপের বারণ আছে। সঙ্গে হুমকি, দেখা করলে সকালের জোড়া হাফ-বয়েল আন্ডা এবং হাতখরচের দশ টাকা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই হয়তো ভেবেছে জলসার হিল��য় যদি চামেলির দেখা পাই!

ঠিক তাই। তাহলে সেই আশায় পানু ইমিটেশনের দোকান দিয়েছে, দু-পয়সা রোজগারের জন্য দেয়নি। পানুকে আমি চিনি। বয়সে একটু বড় হলেও পানু আমার দোস্ত লাগে। আমরা এক ক্লাসে পড়ি। যদিও পানু তার ইচ্ছে-অনিচ্ছের কথা আমাকে বলে না। কাউকেই বলে না। বলবে কী? সে তো ক্লাসেই থাকে না। ক্লাসে বইয়ের ব্যাগ রেখে দিয়ে কোথায় কী করে বেড়ায়, সে-ই জানে। যতক্ষণ না সে আমাদের গল্প শোনায়, আমরা কিছু জানতে পারি না। সেইসব গল্প শুনেই আমি বুঝতে পারি, চামেলির জন্য সে জান দিতে কসুর করবে না। সেখানে চামেলির জন্য জলসার মেলায় ইমিটেশনের দোকান দেওয়াটা তার কাছে ডাল-ভাত। হয়তো ভেবেছে, চামেলি জলসা শুনতে আসবে। জলসা শুনতে এসে ইমিটেশন কিনতে এসে দাঁড়াবে তার দোকানে। তখন সে চামেলির সরু ফর্সা হাতে গোছা গোছা চুড়ি পরিয়ে দেবে! লিকলিকে আঙুলে পরিয়ে দেবে আংটি। আর ধবধবে ফর্সা পায়ে তোড়া!

আমি এসব ভাবি না, রীতিমতো চামেলিকে নিয়ে পানুর স্বপ্নকে দেখতে পাই! পানু চামেলির ধবধবে ফর্সা পায়ে তোড়া পরিয়ে দিচ্ছে। সরু ফর্সা হাতে চুরি পরিয়ে দিচ্ছে। সরু আঙুলে আংটি পরিয়ে দিচ্ছে। পানু তার স্বপ্ন পূরণ করছে…

হঠাৎ রাবিবভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে, কী দেখছিস তু?

– পরি।

– পরি! কুন্ঠে পরি দেখছিস তু?

রাবিবভাইয়ের কথায় আমার স্বপ্ন ভেঙে যায়। আমি আমার অবস্থান টের পাই। দেখি, পানুর দোকানে আমি, রাবিবভাই এবং পানু ছাড়া আর কেউ নেই। বৃষ্টি থেমে গেছে বহুক্ষণ। যে যার বাড়ি হেঁটেছে। ওরসের মাইক বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ প্রেমিক পানু যেমনকার তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে জ্বলন্ত বিড়ি। দুই চোখে প্রেমের দাউ-দাউ আগুন!