বায়তুল্লাহ্ কাদেরী
এক
আমাকে জলজ ভেবে কেন তুমি ভিজে উঠেছিলে স্বিন্নতায়
নিজের ভিতরে? কেন গোধূলিকে গাভিছায়াময় স্মৃতিভূমি
ভেবে বসেছিলে খুব নিচু, থুতুনিতে দেখি গম্ভীর মৌসুমি
বায়ুর নিঃসঙ্গ ঘূর্ণি, মুখ ছেয়ে গেছে শৈতিক বিষণ্ণতায়,
মনে পড়ে, তুমি ছিলে অগ্নিসঙ্গিনী। জীয়নকাঠি। শূন্যতায়
আমার আগুনে এসে এলোমেলো কখনো তোমার মৃতধূপ
জঙ্গমপারঙ্গমতা পায়, বিস্মৃতির নগ্ন তাসের তুরুপ
তুমি জলহীনা, আমাকে ডেকেছো তার নির্জলার যৌনতায়।
এমন দখিনা টান, যেন মারফতি! লগির নাগালে ঠেকে
দৈবের বোয়াল। জলে অদ্ভুত ফালায় বিবেকের কালো মাছ,
শোণিতের মতো উষ্ণ উন্মাতাল আমার এ-হীরণ্ময় গাছ
অবশেষে শান্ত হয়, পাতা তার ছেঁড়া ঝিরিঝিরি শব্দময় :
কখন ফুরিয়ে যায় বেলার ধূসর রেখা, ভাসানো সময়;
রয়ে যায় কিছু ছায়া, জলছাপ, না-ফেরার নির্জন বৈঠকে।
দুই
কী ধূসর রূপ কায়াহীন মেঘপুঞ্জ-ডোবা এই মুখচ্ছদ
আকাশে রয়েছে ভেসে! রয়েছে চুলের মধ্যে সুগভীর বুঁদ
হয়ে-থাকা চিন্তকের শ্রেণী, ওরাও খুঁজেছে শরীরের বুথ
তোমার হৃদয়ে : উস্কে দিয়েছে অরণ্যময় জলমগ্ন হ্রদ।
এ পর্যন্ত উল্কাপাত বলা যেতে পারে। ঊষসীর সিক্তপথ –
তাকে বলা যায় বলার আলস্যে; অাঁচলখসার সন্ধেবেলা
গভীর হাঁসের ঘুম ডাকে ঘুমদেবী, চেলি বুঝি বা পহেলা
বৈশাখের কৃষ্ণচূড়া, ভাগ্য মধুসূদনীয় ‘মেঘনাদবধ’!
এতটুকু প্রাপ্তি। এর বেশি লোকবরেণ্যের জলীয় দেবতা
আমি নই। ঘটহীন আমার সোমুত্থপ্রাণ। তুমি যদি তাকে
সামান্য স্বীকৃতি দাও তাহলেই ভিড়বাট্টা : পড়ি দুর্বিপাকে।
কিন্তু তারও বেশি তোমার চোখের আলো যে-উজ্জ্বল কথকতা
ছড়িয়ে গিয়েছে… তারই বহুদিনের বিবর্ণ এক স্মৃতিলতা
এখন আমার ঘরে অপদেবতার রক্তচিহ্ন হয়ে থাকে!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.