রেখার গরিমায় দীপ্র চিত্রপট

আবুল মনসুর

একেবারে প্রাচীনকাল থেকেই ছবি আঁকার প্রাথমিক প্রচেষ্টা রেখাঙ্কনের মাধ্যমে সূচিত হয়। এটা একটা কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার। কারণ, আসলে প্রকৃতিতে কোথাও রেখা নেই। একটি বস্ত্ত থেকে অন্য একটি বস্ত্তকে আলাদা করে দেখার জন্য বা একটি বস্ত্তর অভ্যন্তরীণ গঠনগুলো প্রতিভাত করার জন্য মানুষ রেখার সাহায্য নিয়েছে। একটি দ্বিমাত্রিক চিত্রতলের ওপর ত্রিমাত্রিক একটি বস্ত্তকে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারটা বরাবরই শিল্পীমানুষকে গুরুতর ঝামেলায় ফেলেছে। পঞ্চদশ শতকে ইতালীয় রেনেসাঁসের কালে এসে পরিপ্রেক্ষিত, অস্থিসংস্থান, আলোছায়া, রং ইত্যাকার ব্যাপার অনুধাবনের বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল রপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সমস্যাটা বরাবরই পীড়া দিয়েছে – বিশেষ করে পাশ্চাত্য সমাজে, যেখানে চক্ষুষ্মান বাস্তবতাকে অর্জনের একটি প্রবল আকাঙ্ক্ষা বিরাজিত ছিল। প্রাচ্যেও সমস্যাটি অনুভূত হতো, তবে তার শৈল্পিক সিদ্ধির আকাঙ্ক্ষা অতটা বাস্তবমুখী না হওয়ার কারণে এটি গুরুতর সংকটের সৃষ্টি করেনি।

একটি ত্রিমাত্রিক বস্ত্তকে তার সঠিক ও হুবহু চেহারায় দ্বিমাত্রিক চিত্রতলে ধারণ করার জন্য শুধুমাত্র রেখা মোটেই যথেষ্ট একটি অস্ত্র নয়, তবু দেখা যাচ্ছে, কি গুহাগাত্রে গুহামানবের চিত্রসৃষ্টির প্রথম প্রচেষ্টায়, কি শিশুর শিল্প-চেতনার প্রথম উন্মেষে, রেখাই তার সহজাত বাহন হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতিতে রেখার অস্তিত্ব না থাকলেও এমনকি শিশুটিও একটি বস্ত্তর কাঠামোকে ব্যক্ত করার জন্য একটি কাল্পনিক পরিলেখ বা বহিঃরেখার আশ্রয় গ্রহণ করে। রেখার এই অস্তিত্বহীনতা অথচ অবিসংবাদিতা তাকে শিল্পশিক্ষায় একটি অপরিহার্য ব্যাপারে পরিণত করেছে, অথচ একই সঙ্গে একটি স্বাধীন শিল্পমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি থেকেও বঞ্চিত করেছে। একেবারে বিংশ শতাব্দীতে এসেই এসব ভেদজ্ঞান মোটামুটি বিদূরিত হলেও শুধুমাত্র রেখাচিত্র একটি তৈলচিত্র বা ভাস্কর্যের সমান কৌলীন্য অর্জন করেছে, এমন কথা বলা যাবে না। একশ বছর আগেও রেখাকে চিত্রকরের বর্ণ প্রলেপনের আগে বস্ত্তর কাঠামোগুলো চিত্রতলে বিন্যস্ত করার কৌশল হিসেবে অথবা চিত্রের মক্শো কিংবা নবিশ শিল্পীর হাত পাকানোর কায়দার বেশি কিছু মনে করা হতো না। এগুলোর কোনো আলাদা শিল্পমূল্য ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না, স্বয়ং শিল্পীর কাছেও না। মধ্যযুগ পর্যন্ত বলা যেতে পারে রেখাচিত্রের স্বাধীন ব্যবহার একমাত্র চিত্রিত পাত্রের গায়েই হয়েছে। পাশ্চাত্যে রেনেসাঁস যুগে যখন সরাসরি প্রকৃতি থেকে এবং মডেল দেখে আঁকার রেওয়াজ চালু হলো তখনই মাত্র রেখাচিত্র শিল্পীর গুরুত্বপূর্ণ অভিনিবেশ দাবি করল এবং বলা যেতে পারে, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ড্রয়িংসমূহের মাধ্যমেই রেখাঙ্কন প্রথমবারের মতো শৈল্পিক অভিব্যক্তির একটি স্বাধীন মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। রাফায়েল ও মাইকেলেঞ্জেলোর প্রতিভা রেখাচিত্রের শিল্পগুণসমৃদ্ধির মহিমাকে আরো বিকশিত করে তোলে। ড্যুরর, হোলবেইন, পুস্যাঁ আরো এগিয়ে নিলেন রেখার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে। রেমব্রান্ট পশ্চিমের প্রথম শিল্পী যিনি তাঁর তৈলচিত্র বা এচিংয়ের অনুশীলন হিসেবে রেখাকে বিশেষ ব্যবহার করেননি, একে তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর শিল্পসত্তা প্রকাশের ও চিন্তাভাবনা বিবেচনার ক্ষেত্র হিসেবে। গোইয়া শৈল্পিক স্ফুরণের নতুন মাত্রা যোজনা করলেন এতে। অ্যাংগ্রে দিলেন একে চিত্রের মতো পরিপূর্ণতা। আধুনিককালে এসে আমরা ভ্যান গঘ, মাতিস, পিকাসো কিংবা একজন পল ক্লির মধ্যে রেখাঙ্কনের স্বাধীন সম্ভাবনার চূড়ান্ত প্রকাশ লক্ষ করি।

ভারতীয় কিংবা চৈনিক ও জাপানি ঐতিহ্যে রেখা আরো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। অজন্তার ভিত্তিচিত্রে কিংবা পাল বা জৈন অনুচিত্রে রঙের ব্যবহার থাকলেও রেখার ব্যঞ্জনাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। মুঘল ও পাহাড়ি অনুচিত্রেও স্পষ্ট ও দৃঢ় বহিঃরেখা ব্যবহৃত হয়েছে। তবে পশ্চিমের মতোই এখানেও শুধুমাত্র রেখাঙ্কন কখনোই পরিপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়নি। বাসওয়ানের মতো অসাধারণ রেখাচিত্রী বা মৃত্যুশয্যায় এনায়েত খাঁর মতো অপূর্ব রেখাচিত্রের কথা আমাদের জানা থাকলেও রং প্রলেপের মাধ্যমেই চিত্রের পরিপূর্ণতা বিবেচনা করা হতো। অনেক সময় রং ও রেখার আলাদা আলাদা পারদর্শী কারিগর থাকতেন। চীন ও জাপানের চিত্র-ঐতিহ্যেও রেখার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা সম্বন্ধে আমরা অবগত আছি। তাদের হস্তলিপিই তুলিতে টানা অসামান্য রেখাচিত্র। চীনা শিল্পীর জলরঙে আঁকা বাঁশের ঝাড় বর্ণে আঁকা হলেও আসলে তা রেখাচিত্রই। একইভাবে জাপানি শিল্পীর ছাপাই ছবিতেও রেখার বাহারই চোখকে আকর্ষণ করে। জাপানি শিল্পী হকুসাইয়ের বিখ্যাত ছাপচিত্র দ্য গ্রেট ওয়েভের এক অনবদ্য উদাহরণ। অবনীন্দ্রনাথের মাধ্যমেই আধুনিক ভারতীয় শিল্পের ও রেখাচিত্র অঙ্কনের সূচনা বলা যেতে পারে। পরবর্তীকালে নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনে এর ব্যাপক ব্যবহার প্রচলিত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও যামিনী রায় নিজেদের সৃজনশক্তিতে রেখাচিত্রকে আরো স্বাধীন সত্তায় এনে দাঁড় করান। এঁদের পরে আরো অনেকে পশ্চিমি উদাহরণে অনুপ্রাণিত হয়ে চিত্রসৃষ্টির পাশাপাশি স্বাধীন রেখাঙ্কনেও প্রবৃত্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গেই জয়নুল আবেদিন এবং তাঁর রেখাঙ্কনের পৃথক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

পাশ্চাত্যরীতির অনুশীলনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও জয়নুল আবেদিন লালিত হয়েছেন বেঙ্গল স্কুল ও তৎপরবর্তী আবেগপ্রবণ লালিত্যময় শিল্পরীতির আবহে। বেঙ্গল স্কুলের ঐতিহ্যে রেখা ব্যবহৃত হয়েছে মৃদু ও সূক্ষ্মভাবে, বঙ্কিম ও ছন্দোময় কাব্যিক সুষমায়। অন্যদিকে পাশ্চাত্যে বাস্তবের হুবহু অনুকৃতি চিত্রায়ণের প্রথায় বহিঃরেখা ব্যবহারের তেমন সুযোগ নেই। বেঙ্গল স্কুলের রীতি ও বিষয় কোনোটিই জয়নুলকে বিশেষ আকর্ষণ করেনি। বরং তাঁর পক্ষপাত পাশ্চাত্যের    বাস্তবমুখিনতার প্রতি। আবার তখনকার প্রচলিত ধর্ম ও পুরাণনির্ভর বিষয়বস্ত্ত এবং রোমান্টিক সৌন্দর্যের অতিশায়িত প্রকৃতিদৃশ্যেও ছিল তাঁর অনীহা। তিনি এসেছিলেন কৃষিপ্রধান পূর্ববঙ্গের একটি আধা-গ্রাম্য উৎস থেকে এবং নাগরিক শুদ্ধির মধ্যে ক্রমাগত অবস্থানও তাঁর এই গ্রামীণতা কেড়ে নিতে পারেনি। শিল্পেও তিনি সঞ্চার করতে চেয়েছেন এক প্রবল ও বেগবান গ্রাম্যতা। ফলে তিনি বিষয়বস্ত্ততে ঘটালেন এক বিপ্লবী পরিবর্তন – সুন্দর ও ললিত বিষয়বস্ত্তর রীতিবদ্ধতার মধ্যে তিনি আনলেন গ্রামজীবনের স্থূল বিষয়বস্ত্তর রুক্ষতা ও দুর্ভিক্ষের কদর্যরূপ। গ্রামজীবন ও দারিদ্র্য নিয়ে যে এর আগে ছবি আঁকা হয়নি তা নয়, কিন্তু সব সময়ই সুন্দর ও রোমান্টিকতার একটি আবরণে তাকে মুড়ে দেওয়া হতো যাতে তার শৈল্পিক সৌকর্য ক্ষুণ্ণ না হয়। জয়নুলের ছবিতেই শ্রমজীবী মানুষ দেখা দিলো রোমান্টিকতার সকল আবরণ ছিন্ন করে। আর এ-বৈশিষ্ট্য নির্মাণে রেখাঙ্কনের অতুলনীয় দক্ষতাই হয়ে উঠলো তাঁর হাতিয়ার, উপমহাদেশীয় চিত্রশিল্পজগতে জয়নুলীয় ছাপচিহ্ন।

এই প্রবল ও বেগবান গ্রামজীবন যা জয়নুলকে চিরকাল আবিষ্ট করেছে তা তাঁর শিল্পেও উপস্থিত করেছে নিজস্বতার দাবি। নিরেট বাস্তবতার রীতিবদ্ধতা বা বেঙ্গল স্কুলের ললিত সুষমা কোনোটাই এ-দাবি মেটাবার জন্য উপযুক্ত বা যথেষ্ট ছিল না। এজন্য জয়নুলকে উদ্ভাবন করতে হলো একটি ভিন্ন মিশ্রিত শিল্পরূপ। স্বাভাবিক ও বাস্তব আকৃতি এবং পশ্চিমা রীতির রং ও আলোছায়ার বিতরণের পাশাপাশি বস্ত্তর অবয়ব নির্মাণে তিনি যোজনা করলেন শক্তিশালী ও বেগবান তুলির পরিলেখ, যা বস্ত্তর কাঠামোকে একই সঙ্গে আকৃতি, শক্তি ও গতি দান করল। সাধারণত দ্রুত ও গতিশীল তুলির আঁচড়ে কালো রঙে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জয়নুল যোজনা করতেন এই রেখা যা এত বাঙ্ময় ও প্রাণদায়ী যে, দুর্ভিক্ষের স্কেচসমূহে অথবা মনপুরা স্ক্রলচিত্রে রঙের ব্যবহার ছাড়াই এগুলো প্রবল মানসিক প্রতিক্রিয়া-তাড়িত করতে পারে। বেঙ্গল স্কুল বা ভারতীয় অন্যান্য রীতির ছন্দিত ও কাব্যিক সুষমাময় রেখার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ রেখা জয়নুল অর্জন করেছেন পাশ্চাত্য রীতির ড্রইংয়ের সুদক্ষ অনুশীলনে এবং ক্রমশ এর সর্বোচ্চ পারঙ্গমতা আয়ত্তে এনে। জাপানি ও চীনা রেখাচিত্রের অসাধারণ স্বতঃস্ফূর্ততা ও বেগ এবং সাদা চিত্রতলে শক্তিশালী কালো রেখার যে নাটকীয় আবেদন জাপানি ও চীনা শিল্পীরা ঘটান, খুব সম্ভবত তা জয়নুলের দৃষ্টি এড়ায়নি। অন্যদিকে বাংলার লোকচিত্রেও রেখার অসাধারণ অভিব্যক্তিময়তা তাঁকে নিশ্চয়ই আকৃষ্ট করেছে। অতএব, জয়নুলের রেখাকে বিশেষ কোনো একটি রীতির বা প্রকারের আওতায় বিচার করা চলবে না। পাশ্চাত্য শিল্পরীতি, দেশজ লোকশিল্প, চীনা ও জাপানি রেখার আকর্ষণ – এসব মিলেই হয়তো তৈরি হয়েছে জয়নুলের নিজস্ব রীতি, যা তাঁর বিষয়বস্ত্ত ও বক্তব্যকে সার্থকভাবে ধারণ করেছে। এই রেখার মধ্যেই হয়তো তিনি ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রেখাঙ্কনরীতির এক ধরনের সমন্বয়, যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সমালোচক এরিক নিউটন।

১৯৪৩ সালেই দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্রমালার মাধ্যমে সর্বভারতীয় শিল্পজগতে স্বকীয় বিশিষ্টতায় জয়নুল আবেদিনের আত্মপ্রকাশ। তাঁর দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালার প্রতি খুব নিবিষ্ট দৃষ্টি স্থাপন করলেই উপলব্ধি করা সম্ভব যে, এগুলি নিছক রেখাচিত্র মাত্র নয়। এর সংক্ষিপ্ত অথচ নিশ্চিত রেখা কেবলমাত্র অবয়বকে বেষ্টন করে পরিলেখ রচনাই করেনি, আকৃতির ত্রিমাত্রিকতা ও উচ্চাবচকেও প্রতিভাত করছে। শুকনো কালির মোটা ঘষটানো রেখার ব্যবহার বিষয়ের কর্কশতা ও অলাবণ্যময়তার সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি শিল্পীর রেখাঙ্কনের মুন্শিয়ানাকে প্রতিভাত করে তোলার জন্যও যথাযথ নির্বাচন। ক্ষুধাদীর্ণ উদ্বাস্ত্ত মানুষগুলোর শরীরের ভগ্ন-বিদীর্ণ প্রায়-জান্তব অবয়বে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের অপ্রাকৃত অভিব্যক্তিতে লাঞ্ছিত মানবতার রূপ যে তীব্রতায় প্রকাশমান হয়েছে তাতে এগুলি নিছক রেখাচিত্র বা তাৎক্ষণিকতার সীমা অতিক্রম করে চিরায়তের ব্যঞ্জনা অর্জন করেছে। জয়নুলের ছবিতে উপবাসক্লিষ্ট গ্রামীণ মানুষের হাড্ডিসার দেহের পাশে ধূর্ত শহুরে কাকের পরিপুষ্ট শরীর এ-দুর্ভিক্ষের অন্তস্থিত নির্মম  বৈপরীত্যকেও যেন প্রতিভাত করে তোলে সুতীক্ষ্ণ রূপকে। কোথাও কোথাও পশ্চাৎপটে অট্টালিকা, ডাস্টবিন বা ফুটপাতের সামান্য আভাস নির্মম ও উদাসীন পটভূমিকে স্মরণে আনায় – যে-পটভূমি নাগরিক, জ্যামিতিক ও মজবুত। বৃক্ষগুল্ম, জল বা আকাশের মতো কোমল মায়াময় পশ্চাদভূমির স্থান সেখানে নেই। যে-পরিপার্শ্ব সুবেশী কিন্তু উদাসীন ও হৃদয়হীন তার পটভূমিতে জৈব মানবরূপের  বৈপরীত্যময় প্রকাশ ঘটনার ঘনঘটাকে আরো প্রখর করে তোলে। এ চিত্রমালায় আকৃতিসমূহের বিন্যাসও লক্ষণীয় – কাগজের ক্ষুদ্র পরিসরে অঙ্কিত হলেও মানব-অবয়বগুলি ভরে তোলে প্রায় সম্পূর্ণ পট। ভগ্নদেহ মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ, বিপর্যস্ত-পরাজিত, তবু তাদের শরীর এক সমুন্নত বিপুলতায় অধিকার করে রাখে পটের জমি। এভাবে নির্মিত হয় তাদের অস্তিত্বের বিপুলতা, অবিনাশিতা, এভাবে ওইসব ক্লিষ্ট মানুষের ললাটে জয়নুলের দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা এঁকে দেয় অপরাজেয় মানব-অস্তিত্বের জয়টিকা।

জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্রমালাকে পরিপূর্ণ চিত্রগুণসম্পন্ন সৃষ্টি বলা যাবে কি-না সে-বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু এগুলো কখনোই নিছক ইলাস্ট্রেশন নয়। দুর্ভিক্ষের এ-রেখাচিত্রমালা তাঁর পরবর্তী শিল্পীজীবনের ওপর স্থায়ী একটি প্রভাব হিসেবে রয়ে গিয়েছে। জয়নুলের শিল্পীজীবনের অন্যতম প্রণোদনা হিসেবে পল্লির দরিদ্র মানুষের নিত্য সংগ্রামশীলতা যেমন আজীবন রয়ে গেছে, তেমনি দুর্ভিক্ষের চিত্রমালার ক্ষীপ্র-চওড়া কালো কালির নিশ্চিত রেখা, বিবিধ রকমফের সত্ত্বেও, তাঁর পরবর্তী শিল্পীজীবনের স্বকীয় চিহ্ন ও  শৈলীর মনঃপুত ঝোঁক হিসেবে স্থায়ী হয়েছে। এই চিত্রমালাই তাঁকে অনুসন্ধান দিয়েছে পথের, যে-পথে অগ্রসর হয়ে তিনি এদেশীয় শিল্পঐতিহ্যে অন্ত্যজ শ্রেণির গ্রামীণ মানুষ ও প্রকৃতির এক নবতর ভাষ্য উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন।

তাঁর দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা ও পরবর্তীকালে কালো পরিলেখ বা বহিঃরেখার প্রাধান্যে রচিত প্রকৃতির পটে পূর্ব বাংলার গ্রামীণ মানুষের জীবনগাথার যাবতীয় সৃজনকে একত্র করে বিবেচনা করলে জয়নুল আবেদিনের রেখার মৌলিকত্ব ও প্রাসঙ্গিকতাকে চিহ্নিত করা সহজ হতে পারে। বস্ত্ততপক্ষে ১৯৫১ সাল থেকেই জয়নুল আবেদিনের শিল্পানুসন্ধানের পরবর্তী পর্যায়গুলি চিহ্নিত করা চলে। একান্নতেই তিনি এঁকেছেন তাঁর অতিপরিচিত বিদ্রোহী, মই দেওয়া, সাঁওতাল দম্পতি প্রভৃতি চিত্র। এই সময়েই পরিণতি পেয়েছে যাকে আমরা বলতে চাইছি জয়নুলের একান্ত চিহ্ন – মোটা তুলির দ্রুতচালের কালো পরিলেখয় অবয়বের ডৌলের ত্রিমাত্রিক আভাস, সঙ্গে জলরঙের যৎসামান্য প্রয়োগে বাস্তবানুগ বর্ণ ও আলোছায়ার ইঙ্গিত। অর্থাৎ বর্ণ ও ছায়ের বিলীয়মান মাত্রার প্রয়োগে আলোকচিত্র-সদৃশ সাদৃশ্যমূলক প্রতিনিধিত্বের ঐতিহ্য থেকে নিজকে বিমুক্ত করার প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রয়াস। চিত্রপটে শুধুমাত্র মূল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে পশ্চাদভূমি নিরলঙ্কার রাখার মাধ্যমে রেখার সৌকর্য আরো প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে, অবয়ব পেয়েছে সমুন্নত গরিমা (monumental quality), আর চিত্রের দ্বিমাত্রিক চরিত্র জোরালো হয়েছে। দুর্ভিক্ষের চিত্রমালারই এক সম্প্রসারিত রূপ বলা যায় একে। এই শৈলীটিতেই জয়নুল পরবর্তী বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে ফিরে ফিরে এসেছেন।

দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্রমালার পর এ-শৈলীতে জয়নুলের উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি ১৯৫১-তে আঁকা সাঁওতাল দম্পতি, সাঁওতাল রমণীদ্বয়, বিদ্রোহী, মই দেওয়া, অপেক্ষা প্রভৃতি এবং পরবর্তী বিভিন্ন পর্যায়ে প্রধানত নৌকা-নদী-বিধৃত নিসর্গ, মানুষজন। তাঁর রেখাঙ্কনের ধরন বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। একান্নতে আঁকা সাঁওতাল জীবন বা মই দেওয়া জাতীয় চিত্রে রেখা দুর্ভিক্ষচিত্রের মতো কর্কশ ও ভঙ্গুর নয়, প্রবহমান ও কিছুটা ছন্দিত – দুর্ভিক্ষচিত্রের মতো ত্রিমাত্রিকতার আভাসদায়ী নয়, বরং প্রাচ্য-ঐতিহ্য ধরনের পরিলেখ-বেষ্টনকারী। নব্যবঙ্গীয় চিত্রশৈলীর খানিকটা প্রভাবও এতে অনুভব করা যায়। সেইসঙ্গে বিষয়ের সরলীকরণে এবং পটভূমির ন্যূনতম প্রয়োগে বাংলার পটচিত্রের প্রেরণাও কি কাজ করে? আবার ষাটের দশকের নিসর্গপ্রধান চিত্রে দেখা যায়, খাগের কলমের এবড়ো-খেবড়ো ভাঙা রেখা, দ্রুতচালের খসড়া রেখায় অবয়বের আভাসমাত্র। নবান্ন ও মনপুরা ’৭০-এ আবার মানব-অবয়বের প্রাধান্য, মোমের প্রয়োগে বিপরীত রেখার ব্যবহার। এ ছাড়া কালি-তুলি-কলমে রয়েছে তাঁর অগণন ছোট-বড় খসড়া, যা ছড়িয়ে আছে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাংলাভূমের নিসর্গ আর নিম্নবর্গীয় মানুষ এসবের বিষয়। ১৯৪৭-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও উপমহাদেশীয় শিল্পভাবনার প্রাসঙ্গিকতায় এ-চিত্রসম্ভারের খানিকটা ভিন্নতর পাঠ-প্রয়াস হয়তো খুলে দিতে পারে এসবের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিবেচনার দ্বার।

দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্রমালায় আমরা আবিষ্কার করি অবনীন্দ্রনাথ-নন্দলাল-যামিনী রায় ও চল্লিশের বাস্তবতাপন্থীদের সঙ্গে জয়নুলের পার্থক্য – রোমান্টিকতার রেশ ছিন্ন করে জীবনের শ্রমমগ্ন বাস্তবিকতায় উত্তরণ, ধর্ম-প্রভাবিত বিষয়ের নিগঢ় থেকে অসাম্প্রদায়িক মানবিকতার উদ্বোধন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের ভেদনীতির বিরুদ্ধে জয়নুল আবেদিন একজন শিল্পীর অবস্থান থেকে কীভাবে প্রতিরোধের একটি প্রতীকী অথচ শক্তিদৃপ্ত রূপকল্প নির্মাণ করেন সেটি লক্ষণীয়। তাঁর প্রতিরোধের অস্ত্র প্রথমত এবং প্রধানত বিষয়বস্ত্ত। জয়নুল তাঁর বিষয়ের কেন্দ্রে স্থাপন করেন পল্লির সাব-অলটার্ন বা নিম্নবর্গীয় মানুষকে। পাকিস্তানের সূচনালগ্নে, ১৯৫১ সালেই, ধর্মীয় ভেদবুদ্ধিবাদী রাজনৈতিক মৌতাতের আড়ালে পুঁজিবাদী শোষণের ভন্ডামিকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন সম্প্রদায়-চিহ্নহীন কর্মিষ্ঠ অন্ত্যজ মানুষের মনুমেন্টাল ও মানবিক উপস্থাপনার মাধ্যমে। আদিবাসী ও নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রাত্যহিক জীবনচিত্র ধর্মীয় ও শ্রেণিগত ভেদচেতনার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানকে জানান দেয়। কাক ও গরুকে ঘুরেফিরে ছবির বিষয় হিসেবে নিয়ে আসার মধ্যে বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গের উল্লেখ শুধু নয়, বাঙালিত্বের প্রতিবাদী উপস্থাপন যেন আমরা দেখতে পাই।

সাঁওতাল জীবন বা মই দেওয়ার দৃশ্যে যেমন, তেমনি ব্রহ্মপুত্র নদ পারাপারের জন্য অপেক্ষারত ছবিতে দেখি  গ্রামীণ কৌম সমাজের পারিবারিক বন্ধনের মাধুর্যময় রূপ। দুর্ভিক্ষের চিত্রমালারও একদিকে যেমন রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের লাঞ্ছনার অমানবিক দিক, তার ভেতরেই আবার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও অন্ত্যজ মানুষের বাৎসল্য, আত্মত্যাগ ও পারিবারিক সহমর্মিতার মনুষ্যত্বমন্ডিত দিকটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন জয়নুল। এভাবে আমাদের নাগরিক খোলসের আড়াল ভেঙে দেন তিনি, সামনে দাঁড় করিয়ে দেন তাঁর গ্রামীণ কিষানের গরিমাদৃপ্ত মুখচ্ছবি। তাঁর স্বকীয়তা-চিহ্নিত এই অঙ্কনরীতিতে পরবর্তীকালেও যত ভূদৃশ্য, মানুষী রূপ তিনি এঁকেছেন, সর্বত্রই পল্লিবাংলার প্রকৃতি ও মানুষের অবয়বে বুলিয়ে দিয়েছেন সমুন্নত মহিমার ব্যঞ্জনা। বিষয়ের সামান্যতাকে এভাবে অতিক্রম করেন তিনি এবং তাঁর শিল্পকৃতির অন্যতম আয়ুধ শক্তিমান রেখার উপস্থাপনে তাৎপর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে জয়নুলের চিত্রসমূহ। তাঁর শিল্পবোধ জীবনোপলব্ধির যৌগক্রিয়ায় এসব চিত্র এ-অঞ্চলের শিল্প-ইতিহাসে জাগতিক সত্যরূপের এক নবতর পাঠ রচনা করে।

নবান্ন ও মনপুরা ’৭০ – এ দুটি বৃহদাকার শিল্পকর্মে জয়নুল পুনরায় তাঁর দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালার শৈলী ও আবেগে ফিরে গেছেন, ফলে এগুলি যেন হয়ে উঠেছে তাঁর পরিণত জীবনের টেস্টামেন্ট। জয়নুল তাঁর চিত্রে ভূমিপুত্র পল্লিবাসীকে রূপায়িত করেছেন নিসর্গলগ্ন করে, তাকে বেষ্টন করে থাকা নিসর্গের সঙ্গে অবিরাম সহাবস্থান ও সংঘর্ষের মধ্যে। নিসর্গের সঙ্গে মানবের অধুনা-বিরল এ দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের এক পুনর্নির্মাণ যেন রচিত হয় নবান্ন স্ক্রলচিত্রে। ঊনসত্তরের গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে সম্প্রদায়-চিহ্নহীন বাঙালিজীবনের আনুপূর্বিক এক বয়ান উপস্থাপন করে গণজাগরণের চেতনার সমান্তরাল বোধকে বিবৃত করেন তিনি, অস্বীকার করেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিশ্বাসের ভিত্তিকে। একইভাবে বিধ্বংসী ঘূর্ণিবার্তায় বিধ্বস্ত মনপুরার ভেদাভেদ-লুপ্ত মৃতের স্তূপ যেমন আঘাত হানে সম্প্রদায়-পরিচয়ের বিভাজন-বিশ্বাসে, উন্মোচন করে দেয় শোষকের ভন্ডামির রূপ, তেমনই মৃতের উত্থিত হাতের ভঙ্গিতে যেন প্রতীকায়িত হয়ে ওঠে প্রত্যাঘাতের প্রতিজ্ঞা। স্ক্রলচিত্রটির সর্বশেষ প্রান্তে একটিমাত্র জীবিত মানুষ যেন সকল ধ্বংসের বিপরীতে জীবনের জয়গান, অপরাজেয় মানবের পুনরুত্থানের বার্তাবাহী। এ দুটি শিল্পকর্মে জয়নুল ব্যবহার করেছেন তাঁর রেখার শক্তিকে আর বাংলার জড়ানো পটের ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে বক্তব্যকে বর্ণনাত্মক বা ন্যারেটিভ ভঙ্গিতে উপস্থাপন করে দেশজ সংস্কৃতির শেকড়ের সঙ্গেও জ্ঞাপন করেন নিজের একাত্মতা । এভাবে প্রকৃতির একই সঙ্গে শ্রীময় ও করাল রূপ এবং তার সঙ্গে গ্রামীণ ভূমিসংলগ্ন জীবনের এ আদিম ও দ্বান্দ্বিক অবস্থান জয়নুলের রেখাচিত্রে সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী রূপকল্প হিসেবে বিধৃত হয়েছে।

শুধু রেখার প্রয়োগে নয়, রেখার বিপরীতে পরিসরের শূন্যতাকে বক্তব্যের বাহন হিসেবে সূক্ষ্ম কৌশলে ব্যবহার করেছেন তিনি। শূন্য পরিসরের অর্থবহ প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই চীনা ও জাপানি চিত্রে। সম্ভবত এ-বৈশিষ্ট্য জয়নুলকে আকৃষ্ট করেছিল এবং নিজের সৃষ্টিতে এর প্রয়োগ তিনি ঘটাতে আগ্রহী হয়েছিলেন। প্রথমত দুর্ভিক্ষচিত্রগুলোতে এর ব্যবহার দেখা যায়। কালো রেখার ন্যূনতম প্রয়োগের বিপরীতে কাগজের বিশাল মলিন শূন্যতা যেন মন্বন্তরের হাহাকার হয়ে আমাদের চৈতন্যে হানা দেয়। মনুষ্য-অবয়বের মনুমেন্টালিটিকে আভাসিত করার জন্য পরিসরের শূন্যতাকে তিনি পরবর্তীকালেও বারবার ব্যবহার করেছেন। সেটি সাঁওতাল দম্পতি, বিদ্রোহী পর্যায়ের চিত্রে যেমন, তেমনি লোককলা-আশ্রয়ী চিত্রে লক্ষ করা যাবে। সাঁওতাল দম্পতিতে আদিবাসী তরুণ-তরুণীকে তিনি উপস্থাপন করেন পেছনের দিক থেকে, আকাশের শূন্য পরিসরের বিপরীতে। এতে মুখাবয়বহীন মানুষদুটি হয়ে ওঠে সমস্ত জাতি-অস্তিত্বের প্রতিনিধি, বিশেষ দুজন মানুষ নয়। প্রায় মাটির দৃষ্টিতল থেকে দেখার ফলে ছবিটিতে প্রকৃতি নেমে যায় নিচে, হয়ে পড়ে গৌণ, আর আকাশছোঁয়া মানুষদুটি হয়ে ওঠে মনুমেন্টাল, মহীয়ান। মই দেওয়ায় সমস্ত চিত্রপট শূন্য রেখে চিত্রের ওপর-অংশের ডান কোনায় স্থাপিত হয়েছে পুরো বিষয়। এতে মই দেওয়ার বেগ শূন্য পরিসরের গতিপথ বেয়ে তীব্রতা লাভ করেছে। পরবর্তীকালের নিছক ভূদৃশ্য রচনায়ও দেখি এ-কৌশলের প্রয়োগ। পটের অর্ধাংশেরও বেশি এলাকা জুড়ে আকাশের   বিস্তারে আবারো শূন্যতার অর্থপূর্ণ ব্যবহার, পূর্ব বাংলার নিসর্গের ব্যাপ্তি এতে স্বতন্ত্র মাত্রা অর্জন করে।

প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক নানান ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহারের ফলে জয়নুলের প্রধান চিত্রমালার সঙ্গে আমাদের এক ধরনের অভ্যস্ততার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে, ফলে এগুলোর দিকে একটি আনকোরা ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকানো আমাদের কাছে কিছুটা কষ্টসাধ্য মনে হতে পারে। এসব চিত্র আমাদের কাছে ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের বয়ান,  ১৯৭০-এর ঘূর্ণিবার্তার দৃশ্য অথবা গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও মানুষের নৈমিত্তিক জীবনচিত্র হিসেবেই মোটামুটি প্রতিভাত। রেখার স্বকীয়তা ও শক্তির উপরন্তু এগুলোর যে আরো কোনো পর্যবেক্ষণ সম্ভব – চিত্রপটের বিন্যাসকৌশল ও পরিসরের ব্যবহার, বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির স্বকীয়তা কিংবা সমসাময়িক চিত্রায়ণধারার সঙ্গে পার্থক্য ও অভিনবত্ব, সেসব বিষয়ে আমরা তেমন সচেতন হই না। জয়নুলের চিত্রমালার দিকে আরো একটু ব্যতিক্রমী ও তন্বিষ্ঠ মনোযোগ হয়তো তাঁর সৃষ্ট কর্মের যথাযোগ্য সমীক্ষণের কাছাকাছি পৌঁছতে আমাদের সাহায্য করবে।