তিনটি সনেট

ফরিদ আহমদ দুলাল

ক.
প্রতিটি স্পর্শের আছে নিজস্ব অলীক অভিধান
স্পর্শ-অভিঘাতে ভাঙে সকালের ক্ষোভ-অভিমান,
আঙুলের ডগা থেকে স্পর্শ হেঁটে যায় করতলে
চিবুক অধর কখনো সুগন্ধ ঘন কালো চুলে;
বুদ্ধ-পূর্ণিমা জ্বালায় রাতে আকাশের বাতি
চন্দ্রালোকে কনকচন্দ্রিমা উজ্জ্বল নক্ষত্র-স্বাতী,
সুচারু চোখের সুনিপুণ কারুকাজে কী মুগ্ধতা খেলে
অরণ্য সবুজ সমুদ্র মাতাল স্পর্শরা স্পর্শকে পেলে।

স্পর্শ এবং স্পর্শরা হাঁটে দুপুরের রোদ ভাঙে
ছত্রছায়া হাঁটে সাথে দোলা জেগেছে প্রণয়াকুল মহাগাঙে,
সমুদ্র উদার হয়ে দিয়েছে বিশ্বাস কনক-চরণ ছুঁয়ে
স্পর্শরা তখনো অপেক্ষায় প্রার্থনায় মগ্ন ভুঁয়ে,
রাত আসে কোলাহল ভেঙে মিলনের বার্তা নিয়ে
সবুজ দিয়েছে সবুজের জাদু স্পর্শামৃত পিয়ে।

খ.
স্পর্শ কেন করলে তুমি আমায় ভেজা হাতে
স্পর্শ ছিল দুহাত ভরা দুহাত অজুহাতে
স্পর্শে তুমি সাহস দিলে চন্দ্রাহত হতে
বোশেখ রোদে শরীর ছিল রৌদ্রতাপে তেতে
অনামিকায় তর্জনীটি যখন ছুঁয়ে ছিল
স্পর্শামোদে করতলটি দুপা সামনে এলো
কনকচাঁপা পুষ্প তুমি ফুটলে নিরিবিলি
ভ্রমরকালো চোখের কোলে বরষা বুলবুলি।

ঠোঁটে যখন তৃষ্ণা কাঁদে অধর চুমিবারে
তোমার সাথে আমার চলা অবাক শনিবারে
স্পর্শ নিয়ে কাব্য করা সহজ কথা নয়
স্পর্শমাঝে স্পর্শরা যে কষ্ট-কথা কয়
স্পর্শমাঝে মৌনতারা কী যে চমৎকার
চাঁদের আলো মেখে দুজন মুগ্ধ একাকার।

গ.
স্পর্শ দিয়ে স্পর্শ নেবো স্পর্শ হবো ঠোঁটে
চন্দ্র যেমন স্পর্শ দিয়ে জাগায় চন্দ্রিমাকে
সমুদ্র-ঢেউ দৌড়ে আসে কনক চরণ ছুঁতে
মেঘবালিকা আহ্লাদিত রাঙা চরণ ধুতে
স্পর্শ জানে কখন যাবে ফিরবে কখন ঘরে
স্পর্শ-কথার স্পর্শ-জবাব স্পর্শ বুঝতে পারে
স্পর্শ যখন ঘনিষ্ঠ হয় স্পর্শ ডেকে নিলে
স্পর্শ দিয়ে দাগ কেটে যাই স্পর্শকাতর দিলে।

ঝিনুকমালা-বালিকারা দৌড়ে কাছে এসে
রংবাহারি মালায় সাজায় ফুল ‘কণা’কে হেসে
বুকের ঢেউয়ে অরূপ চাঁদের স্পর্শ-সাঁতার খেলা
স্পর্শ কাঁদে অভিমানে পেলে অবহেলা,
শিষ্ট পাখি নম্র সুরে শিস দিয়ে গান গায়
স্পর্শ ছোঁবার সাহস আসে বোশেখ পূর্ণিমায়।